ঢাকা ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo জাকসুতে ৪০ ঘণ্টার নাটকীয়তা Logo কাশিয়ানীতে যুবকের মরদেহ উদ্ধার Logo মহেশখালীতে হত্যা চেষ্টা ও ডাকাতির প্রস্তুতি মামলার ৭ আসামি গ্রেপ্তার Logo ইসলামপুরে মিথ্যাচার ও ন্যায় বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন Logo সালথা প্রেসক্লাবের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে সভাপতি নাহিদ সাধারণ সম্পাদক সাইফুল Logo কালীগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিএনপির মতবিনিময় সভা Logo রুপগঞ্জে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ দুই কিশোরের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড Logo বাগেরহাটে বিআরটিসি গাড়ির অবৈধ কাউন্টার ও মহাসড়কে ইজিবাইক, মাহেন্দ্র, নসিমন, করিমন বন্ধের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন Logo জামালপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত Logo বাংলাদেশ ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বড়াইগ্রাম শাখা অফিস শুভ উদ্বোধন

আওয়ামী দাপটে একই কর্মস্থলে ১ যুগে পদার্পণ তালতলীর গৌতম চন্দ্র বসুর

তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১১০ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আমি প্রিজাইডিং অফিসার, সব দায়িত্ব আমার। আমার ভোট কেন্দ্র থেকে শতভাগ ভোট নৌকায় যাবে। ২০১৮ সালে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালনকালে ভোট কেন্দ্র থেকে দিনের ভোট রাতে গ্রহণকালে আওয়ামী নেতাদের এমনই বক্তব্য দিয়েছিলেন তালতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে কর্মরত একাডেমিক সুপারভাইজার গৌতম চন্দ্র বসু ওরফে গৌতম বাবু। এমনকি ২০২৪ সালের একতরফা নির্বাচনেও তার ভূমিকা ছিল আকাশচুম্বী।
২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পরেও শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত ক্রেস্ট বিতরণের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন আওয়ামী অন্ধভক্ত অনুসারী গৌতম চন্দ্র বসু। শেখ হাসিনার প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত অভিনীত অভিনেতার পরিবর্তে কর্মস্থল থেকে বদলি করা হয় তৎকালীন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লিটু চট্টোপাধ্যায়কে। বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবং স্থানীয় আওয়ামী নেতাদের নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন বিক্রি, নিয়োগ বাণিজ্য সহ একাধিক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দক্ষিণ ঝাড়াখালী ছালেহিয়া দাখিল মাদ্রাসার টেন্ডার ছাড়া ভবন বিক্রি ও নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ সহ বিভিন্ন অনিয়ম আর দূর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হলেও এমপি শম্ভুর ছত্রছায়ায় তিনি জবাবদিহিতার আড়ালে থাকতেন।
২০১৫ সালে অবহেলিত তালতলী উপজেলায় খুঁটি গেড়ে বসেন গৌতম চন্দ্র বসু। এক পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকে দূর্নীতির আখড়ায় পরিনত করে। দীর্ঘ বছরের বিভিন্ন সময় শিক্ষা অফিসার পদ শূন্য থাকায় উপজেলা আ. লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে রমরমা নিয়োগ-বাণিজ্যে মেতে উঠেন। যে সকল নিয়োগ বানিজ্যের সিংহভাগ যেত জেলা আ.লীগের সভাপতি এবং সাবেক এমপি শম্ভুর কাছে। এমপি শম্ভু এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের বিতর্কিত সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান তনুর ছত্রছায়ায় থেকে দীর্ঘ ১১ বছরের পথচলা একাডেমিক সুপারভাইজার গৌতম চন্দ্র বসুর। যার ফলে তিনি তার স্থায়ী ঠিকানা পটুয়াখালীর গলাচিপায় বসে অদৃশ্য ভাবে কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে নিয়মিত সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করছেন তার নিয়োগকৃত প্রকল্প থেকে। যদিও উপস্থিতি ছিলনা অবহেলিত তালতলীর কর্মস্থলে।
বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বরগুনা ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর পূর্ব পরিচিত ও পরম আত্মীয় এবং একই ধর্মের লোক হওয়ার সুবাদে ২০১৫ সালের প্রথম দিকে তালতলী উপজেলায় যোগদান করে গৌতম চন্দ্র বসু। ২০১৫ সাল থেকে সরকার পতনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত দাপটের সাথে কর্মস্থল পরিচালনা করেছেন। গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত শম্ভুর অসহযোগিতায় উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিস নিয়ন্ত্রণ করে কর্মস্থল ফাঁকি দিয়ে গলাচিপা বসে নির্বিঘ্নে নামমাত্র চাকরি করেছে গৌতম।
দীর্ঘ বছর ধরে একই কর্মস্থলে চাকুরীরত থাকায় এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সাথে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে আওয়ামী নেতাকর্মী নিয়ে তালতলী উপজেলাকে আপন বৈঠকখানায় পরিনত করে। শম্ভুর প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়োগ-বাণিজ্য সহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে আওয়ামী নেতাকর্মীদের দ্বারা ম্যানেজিং কমিটির নামে পকেট গঠন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত করে। যার ফলে একাধিক মেধাবী, শিক্ষিত এবং প্রকৃত পদপ্রার্থী বেকার যুবক-যুবতী বঞ্চিত হয় তার ন্যায্য অধিকার থেকে। গৌতম চন্দ্র বসুর যোগদানের পর তালতলী উপজেলা নিয়োগ বাণিজ্য ও অনিয়ম দুর্নীতির শীর্ষে অবস্থান করতে শুরু করে। একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় তালতলী উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম আর দুর্নীতির খবর।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর) হরিণখোলা চরপাড়া ভোট কেন্দ্রে প্রিজাইটিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা গৌতম চন্দ্র বসু নিজেই ছিলেন একজন শম্ভু। যার ফলে দিনের ভোট রাতে গ্রহণের প্রতিবাদ করতে গেলে বিএনপি ও জামায়েতের নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। ভোট চুরি করে এমপি হওয়ায় নির্যাতিত নিপিড়ীত এ সকল মানুষ গুলো উল্টো দিনের পর দিন পালিয়ে বেড়াতে থাকে।
২০২৪ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে ৫ই আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় সাবেক প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা পলায়নের পরেও “শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ” এই স্লোগান সম্বলিত পূর্বের গচ্ছিত ক্রেস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী ফারুকের যোগসাজশে তৎকালীন একজন ভদ্র, সহজ সরল এবং অন্যায়ের প্রতিবাদী শিক্ষা অফিসারকে বদলি করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে , ২৪শে অক্টোবর পূর্বের ক্রেস্ট গুলো বিতরণ করে নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে তা প্রকাশ করা হয়। পরক্ষণে শিক্ষা অফিসার লিটু চট্টোপাধ্যায়কে বদলি করা হয়, তবে কর্মস্থলে এখন পর্যন্ত বহালতবিয়তে রয়েছেন আওয়ামী একাডেমিক সুপারভাইজার গৌতম চন্দ্র বসু এবং ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী ফারুক।
হয়রানীর ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষক-কর্মচারীরা বলেন, আওয়ামী শাসনামলে গৌতম চন্দ্র বসু আমাদের থেকে বিভিন্ন তথ্য নিয়েছে। আওয়ামী পন্থী শিক্ষকরা ছিল তার অতি ঘনিষ্ঠ। তিনি প্রতিষ্ঠানিক সব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতেন। তাকে সাবেক এমপি শম্ভু পুষতেন। এখনও তার প্রভাবের বিরলতার জুরি নেই।
সদ্য অবসরপ্রাপ্ত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার অলি আহাদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, একাডেমিক সুপারভাইজার সরকার পতনের পরে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে আসেননি। তার দাবি একাডেমিক সুপারভাইজার, যে প্রকল্পে চাকুরী করে সরকার পতনের পর ওই প্রকল্পের কোনো নিশ্চয়তা ছিলো না। তবে ঘটনা পুরো উল্টো। একাডেমিক সুপারভাইজার গৌতম চন্দ্র বসু একজন পাক্কা ভারতীয় দালাল এবং আওয়ামী লীগের দোসর। শম্ভুর সাথে তার জাতিগত এবং দলীও গভীর ঘনিষ্ঠতার কথা অনেকে জানে এবং আওয়ামী শাসনামলে যে সকল অপকর্মে জড়িত ছিলেন তার ভয়েই তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। তালতলী উপজেলার মানুষ সভ্য শান্ত হওয়ায় বর্তমানে আবারও তাদের ঘাড়ে চেপে বসার পায়তারা করছেন গৌতম।
অন্যায়ের প্রতিবাদী শিক্ষক ইউসুফ আলী বলেন, গৌতম চন্দ্র বসু আওয়ামী পন্থী একাডেমিক সুপারভাইজার হওয়ায় আওয়ামী পন্থী শিক্ষকের সুযোগসুবিধা দিতেন।
আওয়ামী বিরোধী মনোভাব শিক্ষকদের বিভিন্ন চাপের মুখে রাখতেন। তার ষড়যন্ত্রে আমাদের মাদ্রাসায় মামলা জটিলতার কারনে সুপার ও অন্যান্য শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ বন্ধ থাকায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। একাডেমিক সুপারভাইজার গৌতম চন্দ্র বসুর কাছে এসকল বিয়ে জানতে গেলে তিনি সাংবাদিকের ওপর চড়াও হয়ে শটকে পরে। তালতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. জিয়াদ হাসান বলেন, একই কর্মস্থলে ১২ বছর হলে এটা কতৃপক্ষের বিষয়, তারা বিবেচনা করবে। ক্রেস্টের বিষয়টা অনেক আগের আমার জানা নাই। আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি বিষয়টি দেখব। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, এগুলো উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছ থেকে নেন। আমাদের সেন্টাল পারমিশন ছাড়া কিছু বলা যাবেনা।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

আওয়ামী দাপটে একই কর্মস্থলে ১ যুগে পদার্পণ তালতলীর গৌতম চন্দ্র বসুর

আপডেট সময় :

আমি প্রিজাইডিং অফিসার, সব দায়িত্ব আমার। আমার ভোট কেন্দ্র থেকে শতভাগ ভোট নৌকায় যাবে। ২০১৮ সালে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালনকালে ভোট কেন্দ্র থেকে দিনের ভোট রাতে গ্রহণকালে আওয়ামী নেতাদের এমনই বক্তব্য দিয়েছিলেন তালতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে কর্মরত একাডেমিক সুপারভাইজার গৌতম চন্দ্র বসু ওরফে গৌতম বাবু। এমনকি ২০২৪ সালের একতরফা নির্বাচনেও তার ভূমিকা ছিল আকাশচুম্বী।
২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পরেও শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত ক্রেস্ট বিতরণের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন আওয়ামী অন্ধভক্ত অনুসারী গৌতম চন্দ্র বসু। শেখ হাসিনার প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত অভিনীত অভিনেতার পরিবর্তে কর্মস্থল থেকে বদলি করা হয় তৎকালীন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লিটু চট্টোপাধ্যায়কে। বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবং স্থানীয় আওয়ামী নেতাদের নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন বিক্রি, নিয়োগ বাণিজ্য সহ একাধিক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দক্ষিণ ঝাড়াখালী ছালেহিয়া দাখিল মাদ্রাসার টেন্ডার ছাড়া ভবন বিক্রি ও নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ সহ বিভিন্ন অনিয়ম আর দূর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হলেও এমপি শম্ভুর ছত্রছায়ায় তিনি জবাবদিহিতার আড়ালে থাকতেন।
২০১৫ সালে অবহেলিত তালতলী উপজেলায় খুঁটি গেড়ে বসেন গৌতম চন্দ্র বসু। এক পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকে দূর্নীতির আখড়ায় পরিনত করে। দীর্ঘ বছরের বিভিন্ন সময় শিক্ষা অফিসার পদ শূন্য থাকায় উপজেলা আ. লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে রমরমা নিয়োগ-বাণিজ্যে মেতে উঠেন। যে সকল নিয়োগ বানিজ্যের সিংহভাগ যেত জেলা আ.লীগের সভাপতি এবং সাবেক এমপি শম্ভুর কাছে। এমপি শম্ভু এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের বিতর্কিত সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান তনুর ছত্রছায়ায় থেকে দীর্ঘ ১১ বছরের পথচলা একাডেমিক সুপারভাইজার গৌতম চন্দ্র বসুর। যার ফলে তিনি তার স্থায়ী ঠিকানা পটুয়াখালীর গলাচিপায় বসে অদৃশ্য ভাবে কর্মস্থলে উপস্থিত হয়ে নিয়মিত সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করছেন তার নিয়োগকৃত প্রকল্প থেকে। যদিও উপস্থিতি ছিলনা অবহেলিত তালতলীর কর্মস্থলে।
বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বরগুনা ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর পূর্ব পরিচিত ও পরম আত্মীয় এবং একই ধর্মের লোক হওয়ার সুবাদে ২০১৫ সালের প্রথম দিকে তালতলী উপজেলায় যোগদান করে গৌতম চন্দ্র বসু। ২০১৫ সাল থেকে সরকার পতনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত দাপটের সাথে কর্মস্থল পরিচালনা করেছেন। গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত শম্ভুর অসহযোগিতায় উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিস নিয়ন্ত্রণ করে কর্মস্থল ফাঁকি দিয়ে গলাচিপা বসে নির্বিঘ্নে নামমাত্র চাকরি করেছে গৌতম।
দীর্ঘ বছর ধরে একই কর্মস্থলে চাকুরীরত থাকায় এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সাথে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে আওয়ামী নেতাকর্মী নিয়ে তালতলী উপজেলাকে আপন বৈঠকখানায় পরিনত করে। শম্ভুর প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়োগ-বাণিজ্য সহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে আওয়ামী নেতাকর্মীদের দ্বারা ম্যানেজিং কমিটির নামে পকেট গঠন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত করে। যার ফলে একাধিক মেধাবী, শিক্ষিত এবং প্রকৃত পদপ্রার্থী বেকার যুবক-যুবতী বঞ্চিত হয় তার ন্যায্য অধিকার থেকে। গৌতম চন্দ্র বসুর যোগদানের পর তালতলী উপজেলা নিয়োগ বাণিজ্য ও অনিয়ম দুর্নীতির শীর্ষে অবস্থান করতে শুরু করে। একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় তালতলী উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম আর দুর্নীতির খবর।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর) হরিণখোলা চরপাড়া ভোট কেন্দ্রে প্রিজাইটিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা গৌতম চন্দ্র বসু নিজেই ছিলেন একজন শম্ভু। যার ফলে দিনের ভোট রাতে গ্রহণের প্রতিবাদ করতে গেলে বিএনপি ও জামায়েতের নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। ভোট চুরি করে এমপি হওয়ায় নির্যাতিত নিপিড়ীত এ সকল মানুষ গুলো উল্টো দিনের পর দিন পালিয়ে বেড়াতে থাকে।
২০২৪ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে ৫ই আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় সাবেক প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা পলায়নের পরেও “শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ” এই স্লোগান সম্বলিত পূর্বের গচ্ছিত ক্রেস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী ফারুকের যোগসাজশে তৎকালীন একজন ভদ্র, সহজ সরল এবং অন্যায়ের প্রতিবাদী শিক্ষা অফিসারকে বদলি করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে , ২৪শে অক্টোবর পূর্বের ক্রেস্ট গুলো বিতরণ করে নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে তা প্রকাশ করা হয়। পরক্ষণে শিক্ষা অফিসার লিটু চট্টোপাধ্যায়কে বদলি করা হয়, তবে কর্মস্থলে এখন পর্যন্ত বহালতবিয়তে রয়েছেন আওয়ামী একাডেমিক সুপারভাইজার গৌতম চন্দ্র বসু এবং ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী ফারুক।
হয়রানীর ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষক-কর্মচারীরা বলেন, আওয়ামী শাসনামলে গৌতম চন্দ্র বসু আমাদের থেকে বিভিন্ন তথ্য নিয়েছে। আওয়ামী পন্থী শিক্ষকরা ছিল তার অতি ঘনিষ্ঠ। তিনি প্রতিষ্ঠানিক সব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতেন। তাকে সাবেক এমপি শম্ভু পুষতেন। এখনও তার প্রভাবের বিরলতার জুরি নেই।
সদ্য অবসরপ্রাপ্ত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার অলি আহাদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, একাডেমিক সুপারভাইজার সরকার পতনের পরে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে আসেননি। তার দাবি একাডেমিক সুপারভাইজার, যে প্রকল্পে চাকুরী করে সরকার পতনের পর ওই প্রকল্পের কোনো নিশ্চয়তা ছিলো না। তবে ঘটনা পুরো উল্টো। একাডেমিক সুপারভাইজার গৌতম চন্দ্র বসু একজন পাক্কা ভারতীয় দালাল এবং আওয়ামী লীগের দোসর। শম্ভুর সাথে তার জাতিগত এবং দলীও গভীর ঘনিষ্ঠতার কথা অনেকে জানে এবং আওয়ামী শাসনামলে যে সকল অপকর্মে জড়িত ছিলেন তার ভয়েই তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। তালতলী উপজেলার মানুষ সভ্য শান্ত হওয়ায় বর্তমানে আবারও তাদের ঘাড়ে চেপে বসার পায়তারা করছেন গৌতম।
অন্যায়ের প্রতিবাদী শিক্ষক ইউসুফ আলী বলেন, গৌতম চন্দ্র বসু আওয়ামী পন্থী একাডেমিক সুপারভাইজার হওয়ায় আওয়ামী পন্থী শিক্ষকের সুযোগসুবিধা দিতেন।
আওয়ামী বিরোধী মনোভাব শিক্ষকদের বিভিন্ন চাপের মুখে রাখতেন। তার ষড়যন্ত্রে আমাদের মাদ্রাসায় মামলা জটিলতার কারনে সুপার ও অন্যান্য শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ বন্ধ থাকায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। একাডেমিক সুপারভাইজার গৌতম চন্দ্র বসুর কাছে এসকল বিয়ে জানতে গেলে তিনি সাংবাদিকের ওপর চড়াও হয়ে শটকে পরে। তালতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. জিয়াদ হাসান বলেন, একই কর্মস্থলে ১২ বছর হলে এটা কতৃপক্ষের বিষয়, তারা বিবেচনা করবে। ক্রেস্টের বিষয়টা অনেক আগের আমার জানা নাই। আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি বিষয়টি দেখব। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, এগুলো উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছ থেকে নেন। আমাদের সেন্টাল পারমিশন ছাড়া কিছু বলা যাবেনা।