আন্দোলনে বিধ্বস্ত শিশু শিক্ষার্থীরা
- আপডেট সময় : ২১ বার পড়া হয়েছে
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী আগামী পহেলা ডিসেম্বর থেকে বিদ্যালয়ে তৃতীয় প্রান্তিক বা বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেই হিসাবে মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি আছে পরীক্ষার। এসময়ে শিক্ষকরা দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে নামায় এবং সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন অভিভাবকরা। সারাদেশের প্রায় ৬৫ হাজারেরও বেশী প্রাখমিক বিদ্যালয়ে অনিদ্দিষ্ট কালের জন্য তালা ঝুলছে। এ ঘটনায় এ সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেশের এক কোটির উপরে কোমলমতি শিশুরা থাকছেন শিক্ষার বাইরে। আসন্ন ডিসেম্বরের পহেলা থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছিল। এ সকল শিশুদের বার্ষিক ও বৃত্তি পরিক্ষা। এ সময়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে যাওয়ায় কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে শুধু অভিভাবকই নয়, দেশের আপমর মানুষ রয়েছেন শঙ্কায়।
এদিকে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদটি ১৩তম গ্রেডের। এটিকে এক লাফে ১০ম গ্রেডে আনার সপক্ষে তেমন কোনও যুক্তিই নেই।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ সহকারী শিক্ষক মনে করেন দশম গ্রেডের এ দাবি যৌক্তিক নয়। প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষকদের সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে তাদের দশম গ্রেডে আনা; এটি সম্ভব নয়। একবারে ১৩ থেকে ১০ম গ্রেডে আনার কোনও যুক্তিই নেই। তারা যেন ১১তম গ্রেড পেতে পারেন, সেজন্য আমরা কাজ করছি। তাদের এ মুহূর্তে আন্দোলনে যাওয়াটাও যৌক্তিক নয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির বিষয়ে সরকারের নীতি অনুযায়ী শতভাগ পদোন্নতি দেয়া যাবে না। আমরা সেজন্য ৮০ শতাংশ পদোন্নতি দিয়েছি। আগে ছিল ৬৫ শতাংশ। বাকি যে ২০ শতাংশ থাকছে, সেটা সরাসরি নিয়োগ করা হবে।
অপরদিকে দশম গ্রেডে বেতন প্রদানসহ তিন দফা দাবি আদায় ও শাহবাগে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন সহকারী শিক্ষকরা। গতকাল রোববার থেকে এ কর্মবিরতির শুরু হয়। এতে সারাদেশের প্রায় ৬৫ হাজারেরও বেশি বিদ্যালয়ে পাঠদান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। কোটিরও বেশী কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী পাঠদানের বাইরে রয়েছে। বার্ষিক পরীক্ষার আগে শিক্ষকদের এ সিদ্ধান্তে শঙ্কায় ফেলছে অভিভাবকরা। গত শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহবায়ক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি শামসুদ্দিন মাসুদ এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, দাবি বাস্তবায়ন ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে আমরা রবিবার থেকে সারা দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করব। একই সঙ্গে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চলবে।
গত শনিবার বিকেলে শাহবাগে শিক্ষকদের ‘কলম বিসর্জন’ কর্মসূচিতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে বহু শিক্ষক আহত হন। ঘটনার পর শাহবাগ এলাকা ছেড়ে শিক্ষকরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আশ্রয় নেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণের পর অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এদিকে শিক্ষকদের এ অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির কারণে দেশের প্রায় এক কোটি শিশু শিক্ষার্থীর ক্লাস বন্ধ হয়ে গেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এলেও শিক্ষকরা পাঠদান বন্ধ রেখেছেন। বাধ্য হয়ে ক্লাস না করেই ফিরে যেতে হচ্ছে শিশুশিক্ষার্থীদের।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, আগামী পহেলা ডিসেম্বর থেকে বিদ্যালয়ে তৃতীয় প্রান্তিক বা বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সে হিসাবে মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি আছে পরীক্ষার। এমন সময়ে শিক্ষকরা দাবি-দাওয়া নিয়ে মাঠে নামায় এবং সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন অভিভাবকরা।
এদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতি এবারই প্রথম নয়, চলতি বছর আরও একবার টানা কর্মবিরতি পালন করেছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। গত ৫ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত সারাদেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মদিবসে এক ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন তারা। এরপর ১৭ মে থেকে দুই ঘণ্টা এবং ২১ মে থেকে ২৫ মে পর্যন্ত আধাবেলা কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা।
শিক্ষকদের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে বেতন প্রদান। উচ্চতর গ্রেডের জটিলতার স্থায়ী সমাধান। সহকারী শিক্ষকদের শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি এবং এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার। শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে এসব বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।
অন্যদিকে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রজব আলী। তার সন্তান মোহাম্মদপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। এবার বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে সে। কিন্তু শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণায় সন্তানের লেখাপড়া নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন তিনি।
রজব আলী বলেন, ১৫-১৬ বছর পর এবার বৃত্তি পরীক্ষা চালু হচ্ছে। আমার মেয়েটা বৃত্তি দেবে। কিন্তু শিক্ষকরা ধর্মঘট (কর্মবিরতি) ডাকায় গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা তো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমন চলতে থাকলে প্রস্তুতি নিতে পারবে না। এমন হলে তো বৃত্তি পরীক্ষায় ভালো করা মেয়েটার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়বে। মেয়ের লেখাপড়া নিয়ে এমন শঙ্কার কথা বলেন রজব আলী। এরকম কোটি শিশু শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা বলেন, এ সময়ে শিক্ষকদেও আন্দোলনে যাওয়াটা কতটুকু যৌক্তিক তা ভাবিয়ে তুলেছে।



















