নওগাঁ জেলা বিএনপির সম্মেলন
আশা-উদ্দীপনার পাশাপাশি সময়সঙ্কট ও প্রস্তুতির প্রশ্ন

- আপডেট সময় : ৬১ বার পড়া হয়েছে
দীর্ঘ ১৪ বছর পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র নওগাঁ জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১১ আগস্ট ২০২৫। এ উপলক্ষে দলের ভেতরে যেমন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে, তেমনি সম্মেলনের প্রস্তুতি, সময়সীমা ও সাংগঠনিক কাঠামো নিয়ে নেতাদের মধ্যে উঠছে নানা প্রশ্ন ও উদ্বেগও।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১১ সালে। তখন সামসুজ্জোহা খান সভাপতি ও জাহিদুল ইসলাম ধলু সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ১৫১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। তবে ২০১৪ সালে সেই কমিটি বিলুপ্ত হয়ে গঠিত হয় আহ্বায়ক কমিটি, যার নেতৃত্বেই এতদিন সংগঠন চলেছে। এবারের সম্মেলন সেই দীর্ঘস্থায়ী স্থবিরতা ভেঙে নতুন নেতৃত্ব গঠনের পথ তৈরি করবে বলে নেতাকর্মীরা আশাবাদী।
এ সম্মেলন ঘিরে যেমন আশা তৈরি হয়েছে, তেমনি সময়সীমা, প্রস্তুতি ও সাংগঠনিক স্বচ্ছতা নিয়ে বেশ কিছু নেতার মত প্রকাশ করেছে।
নওগাঁ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম টুকু বলেন, “আমি মনে করি, এই কাউন্সিলটি আমাদের গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুযায়ী হওয়া উচিত। কিন্তু এখনো ১১টি থানায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি এবং ভোটার তালিকাও হাতে পাওয়া যায়নি। এত কম সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা অপ্রত্যাশিত। এই সম্মেলনটি যেন উৎসবমুখর ও গ্রহণযোগ্য হয়, সে বিষয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যথাযথ মনোযোগ কামনা করছি।”
নওগাঁ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আমিনুল হক বেলাল বলেন, “আমরা দেখছি নির্বাচন হবে—তবে এখনো যেসব থানায় কাউন্সিল হয়েছে, তার অধিকাংশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন হয়নি। ভোটার তালিকা হাতে না পাওয়া, তফসিল ঘোষণা এবং নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় সময় না থাকায় আমি মনে করি ১১ তারিখ সময়সীমা সঠিক নয়। এই তারিখ কমপক্ষে ১০ দিন পিছিয়ে দেওয়া উচিত। ১৪টি ইউনিটের প্রতিটির জন্য একদিন সময় ধরলে অন্তত ১৪ দিন সময় প্রয়োজন। যদি প্রার্থীরা ঠিকভাবে ভোট চাইতেই না পারেন, তাহলে নির্বাচনের কী মানে?”
সাবেক সভাপতি নওগাঁ জেলা বিএনপি নাজমুল হক সনি বলেন, “এই সম্মেলনের তারিখ এত কম সময়ের মধ্যে নির্ধারণ করাটা বাস্তবতাবিরোধী এবং অপ্রত্যাশিত। যদি ভোটার তালিকা অন্তত ১৪ দিন আগেই হাতে থাকত, কিছুটা হলেও তা গ্রহণযোগ্য হতো। এখানে এখনো আমরা নিরপেক্ষতার কোনো ছাপ দেখছি না।”
অন্যদিকে, আশাবাদী বক্তব্যও পাওয়া গেছে বর্তমান দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে।
নওগাঁ জেলার বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু বলেন, “আজকের মধ্যেই সবগুলো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়ে যাবে বলে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে আমরা ভোটারদের কাছে যাচ্ছি এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এছাড়াও নওগাঁ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং বিশিষ্ট সমাজসেবক মাসুদ হাসান তুহিন বলেন,
আপনারা ইতোমধ্যে অবগত হয়েছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান সাহেবের বলিষ্ঠ নির্দেশনায় আগামী ১১ আগষ্ট ২০২৫ দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় পর, নওগাঁ জেলার বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যেখানে তিনি উপস্থিত থাকার সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। যা নওগাঁ জেলা বিএনপি ও সকল অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মী, সমথর্ক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এই সম্মেলন নিঃসন্দেহে দলের গতিশীলতা বৃদ্ধি এবং নতুন নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাবে। আমরা নওগাঁ জেলার জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী নওগাঁর সকল স্তরের মানুষ দেশনায়ক তারেক রহমানকে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করলাম, নওগাঁ জেলার ১১টি উপজেলা, ৩টি পৌরসভার সমন্বয়ে ১৪টি রাজনৈতিক ইউনিটের মধ্যে মাত্র ৩টি ইউনিট মহাদেবপুর, বদলগাছি, পোরশা উপজেলা বিএনপির পূর্নাঙ্গ কমিটি অনুমোদিত রয়েছে। বাকি ১১টি ইউনিটের মধ্যে রাণীনগর, আত্রাই , নিয়ামতপুর, সাপাহাড়, ধামুইরহাট পৌরসভা, নওগাঁ সদর উপজেলা, নওগাঁ পৌরসভা এবং পত্নীতলা উপজেলা কমিটি যথাক্রমে ১০থেকে ৪ মাস পূর্বে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, দুইজন সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হলেও দীর্ঘদিন যাবত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় নাই। যা রাজনৈতিক হীন স্বার্থ চরিতার্থে করা হয়েছে বলে সচেতন নেতাকর্মীবৃন্দ মনে করে। এর ফলে উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ এই দীর্ঘ সময় পর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির দ্বারা ঘড়ি-ঘণ্টা বেঁধে দিয়ে ইউনিট কমিটি জমা দেয়ার নির্দেশ দেওয়ায় নির্বাচিত ইউনিটগুলোর নেতৃবৃন্দ তাদের স্ব স্ব এলাকায় স্বল্প সময়ের মধ্যে এই বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে বিভিন্নরকম বিভ্রান্তি এবং বিড়ম্বনার সম্মুখিন হচ্ছেন। যা আগামীদিনে এই উপজেলা গুলোতে রাজনীতির মাঠকে দুর্বল করবে।
স্বাধীনতার ঘোষক, বীর উত্তম, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারক ও বাহক আপোষহীন দেশনেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ঐক্যবদ্ধ মানবিক বাংলাদেশ গড়ার রূপকার জনাব তারেক রহমান এর হাতকে শক্তিশালী ও সমুন্নত রাখতে সকলকে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আমি মাসুদ হাসান তুহিন ১৯৮৫ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পতাকাতলে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হই। দীর্ঘ ৪০ বছর পথপরিক্রমায় নানা বাধাবিপত্তি, ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে নিজেকে জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে নিয়োজিত রেখেছি।
নওগাঁ জেলা বিএনপির বহুল প্রতীক্ষিত এই সম্মেলন একদিকে নতুন নেতৃত্বের সম্ভাবনা তৈরি করছে, অন্যদিকে প্রস্তুতি ও অংশগ্রহণের পর্যাপ্ত সময় নিয়ে প্রশ্নও তুলছে নেতৃবৃন্দ। সময়মতো পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও ভোটার তালিকা নিশ্চিত করে এই সম্মেলনকে উৎসবমুখর, গ্রহণযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলার দাবি উঠেছে বিভিন্ন পক্ষ থেকে।
এছাড়া, নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে—২০১৯ সালের ৩ জুলাই গঠিত আহ্বায়ক কমিটির জন্য প্রেরিত কেন্দ্রীয় চিঠি ও নির্দেশনাবলিতে যা বলা হয়েছিল, তা কি এবারও মানা হচ্ছে?
২০১৯ সালের ওই নির্দেশনায় (সূত্র নং: বিএনপি/সাধারণ/৭৬/১০৪/২০১৯), রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ ছিল—আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক জেলা কাউন্সিলের সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। সেই চিঠিটি জনাব হাফিজুর রহমান মাস্টার, আহ্বায়ক, নওগাঁ জেলা বিএনপি বরাবর পাঠানো হয়েছিল।
এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে—১১ আগস্টের এই কাউন্সিলের জন্য কি নতুন কোনো নির্দেশনা জারি হয়েছে? নাকি পুরোনো নীতিমালাই অনুসরণ করা হবে? এসব বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক স্পষ্টতা নেই। ফলে সাধারণ ভোটার ও নেতাকর্মীদের মনে স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ ও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নওগাঁ জেলা বিএনপির বহুল প্রতীক্ষিত এই সম্মেলন একদিকে নতুন নেতৃত্বের আশাব্যঞ্জক সম্ভাবনা তৈরি করছে, অন্যদিকে প্রস্তুতি, সময়সীমা ও নীতিমালা নিয়ে অনিশ্চয়তা ও প্রশ্নের সৃষ্টি করছে। সময়মতো পূর্ণাঙ্গ কমিটি ও ভোটার তালিকা নিশ্চিত করে, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পরিষ্কারভাবে অনুসরণ করে এই সম্মেলনকে উৎসবমুখর, গ্রহণযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।