ইউনূস-তারেক ঐকমত্যের সামনে নানা চ্যালেঞ্জ
- আপডেট সময় : ৩১৫ বার পড়া হয়েছে
লন্ডন বৈঠকের ফসল ভালোভাবে ঘরে তুলতে হলে অবশিষ্ট এই চ্যালেঞ্জগুলো দ্রুত দূর করতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে প্রতিপক্ষরা আরও সক্রিয় হবে। এর ফলে লন্ডন বৈঠকের স্বস্তির পরিবেশ বেশিদিন ধরে রাখা কঠিন হবে
লন্ডন বৈঠকে বেশ স্বস্তির আভাস মিললেও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ইশরাক হোসেনের সমর্থকদের আন্দোলন কিছুটা অস্বস্তি ছড়াচ্ছে। এছাড়া সরকারি কর্মচারীদের শায়েস্তা করতে বিতর্কিত অধ্যাদেশ নিয়ে পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত। সচিবালয়ে কর্মচারী আন্দোলনের এমন দৃশ্য অতীতে কেউ দেখেনি। এনবিআর অধ্যাদেশ বিতর্কও রয়ে গেছে সেই তিমিরে। আন্দোলন থামলেও বাড়ছে চাপা ক্ষোভ।
পর্যবেক্ষক মহল বলছে, দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন নিয়ে অস্বস্তিতে থাকা বিএনপিতে এখন স্বস্তি বিরাজ করছে। লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর দূরত্ব মিটে গেছে সরকার ও বিএনপির মধ্যে। লন্ডন বৈঠকের ফসল ভালোভাবে ঘরে তুলতে হলে অবশিষ্ট এই চ্যালেঞ্জগুলো দ্রুত দূর করতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে প্রতিপক্ষরা আরও সক্রিয় হবে। এর ফলে লন্ডন বৈঠকের স্বস্তির পরিবেশ বেশিদিন ধরে রাখা কঠিন হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অনিশ্চয়তা পুরোপুরি কাটেনি।
সংস্কার ও বিচার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া হলেও এ সরকারের সময়ে বিগত ১০ মাসে যেভাবে কাজ হওয়া দরকার ছিল, সেভাবে গতি পায়নি। বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের বোঝাপড়া হলেও জামায়াত ও এনসিপি কিছুটা দূরত্বে আছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এছাড়া ভোটের রাজনীতি নিয়ে তাদের নিজস্ব এজেন্ডাও রয়েছে।
বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, কিছু তো পলিটিক্যাল চ্যালেঞ্জ থাকবেই। এখন যে কথা বলা হচ্ছে, সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন-সেক্ষেত্রে ছোটখাটো সংস্কার ছাড়া বড় সংস্কার নির্বাচিত সরকারের আমলেই হতে হবে। বিচার অনেক বিস্তৃত বিষয়। এই বিচার শেষ করতে কম করে হলেও পাঁচ বছর সময় লাগবে। ২/১টা বিচার বড়জোর করা সম্ভব। বিচারের কথা বলে তো নির্বাচন পাঁচ বছর বিলম্বিত করা যায় না। আর সবাই সব বিষয়ে একমত হবে এই বিষয়ে আমি একমত না। তিনি আরও বলেন, বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল যদি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চায়, তাহলে ওই সময়ে নির্বাচনে তেমন কোনো বাধা দেখছি না। বরং বেশির ভাগ দল ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না চাইলে হয়তো পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু এমন কোনো অবস্থা দেখতে পাচ্ছি না। শাহদীন মালিক বলেন, স্বৈরাচার হটানো হয়েছে গণতন্ত্র আনার জন্য। কিন্তু নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র আনা সম্ভব নয়। তাই আমি মনে করি, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বড় কোনো চ্যালেঞ্জ নেই।
বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর মতে, লন্ডনে বৈঠক সত্ত্বেও সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। লন্ডন বৈঠকের কারণে রাজনীতিতে আপাতত উত্তজনা প্রশমিত হয়েছে। সরকার ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে বৈঠকটির ফল কতটা কার্যকর হয়, সেটা নির্ভর করবে অন্য রাজনৈতিক শক্তিগুলো বিষয়টিকে কীভাবে নিচ্ছে তার ওপর। ইতোমধ্যে জামায়াত ও এনসিপি ভালোভাবে নেয়নি। তাদের ভিন্ন এজেন্ডা আছে। তারা সহজভাবে নাও নিতে পারে। ফলে অনিশ্চয়তা এখনো রয়ে গেছে। অনিশ্চয়তা দূর হয়নি। তিনি আরও বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কি না, সেটা নির্ভর করছে আগামী দুই মাসে পরিস্থিতি কোনদিকে অগ্রসর হয় তার ওপর। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করাটা এত সহজ হবে না। এ সময়ে নির্বাচন করা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে জানতে চাইলে আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী বলেন, অনিশ্চিত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য। ফ্যাসিবাদবিরোধীদের মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে। পাশাপাশি ত্যাগের মনোভাব রাখাও জরুরি। আমি যা চাই, সেই স্থানে স্থির থাকলে চলবে না। গিভ অ্যান্ড টেক থাকতে হবে। কিছু পাওয়ার জন্য কিছু ছাড় দেওয়ার মনোভাব থাকতে হবে। যার যা অবস্থান থাকুক-ত্যাগের মনোভাব থাকলে আবার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করাটা অসম্ভবও নয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কার ও বিচার-এই দুইটা হওয়ার কথা সবাই বলছে। কিন্তু সংস্কারে মন্থরগতি দেখা যাচ্ছে। সংস্কারকাজে সরকারকে গতি বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকেও সরকারকে সহায়তা করতে হবে। তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, বিচারের গতি একেবারেই মন্থর। এই বিচার যে কবে শেষ হবে কে জানে! সরকারের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, গুম ঠেকাতে স্থায়ী কমিশন হবে। এ বিষয়ে দিলারা চৌধুরী প্রশ্ন রাখেন, তাহলে এতদিন তারা কী করেছেন? কমিশন গঠন করা নিয়ে আগে কিছু করেছে বলে তো মনে হয় না। তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, এভাবে ধীরগতিতে চলতে থাকলে নির্বাচন ঝুলে যেতে পারে। ফলে সংস্কার ও বিচারে অনেক বেশি গতি বাড়াতে হবে। এ কাজে সরকারের দায়িত্ব বেশি। এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আরও বলেন, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মধ্যে বৈঠক হওয়া ইতিবাচক। তবে বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গতি না বাড়ালে সংকট কাটবে না। সংকট থেকেই যাবে।























