ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা

- আপডেট সময় : ১০:৩২:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫ ৭ বার পড়া হয়েছে
- তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসের দাবি ট্রাম্পের
- ইসরাইলের ১০ স্থানে ইরানের ভয়াবহ হামলা
- পুতিনের সঙ্গে আজ আলোচনায় বসবেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইরানের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার দাবি জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং পরে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে হামলার বিষয়ে উল্লেখ করেন তিনি। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। ওভাল অফিস থেকে সম্প্রচারিত তিন মিনিটের ওই ভাষণে তিনি বলেন, হামলাটি ছিল অসাধারণ সামরিক সাফল্য। তেহরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের প্রধান অবকাঠামো পুরো ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে ইরানের প্রধান তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বাহিনী বড় ধরনের হামলা চালানোর পর ইসরায়েলের অন্তত ১০টি স্থান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইরান। এর মধ্যে বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে আজ সোমবার আলোচনায় বসবেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি।
ইরানের সামনে শান্তি অথবা ট্র্যাজেডির পথ খোলা রয়েছে বলে সতর্ক করে ট্রাম্প জানান, হামলা করার জন্য আরও লক্ষ্যবস্তু রয়েছে। শিগগিরই শান্তি না এলে আমরা ক্ষিপ্রতা, দক্ষতা এবং নৈপুণ্যের সঙ্গে সেখানে হামলা চালাবো। ইরান ও ইসরায়েলের সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে কিছুটা রহস্য ধরে রাখা হচ্ছিল। গত বৃহস্পতিবার তিনি নিজেই ইরানকে দু সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। অথচ সময় শেষ হওয়ার বহু আগেই হামলা চালিয়ে বসলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ভাষণের আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লিখেছিলেন, ইরানের প্রধান তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা নাতানজ, ইসফাহান এবং ফোর্দোতে হামলা চালানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ফোর্দোতে পুরো এক পে-লোড (বিমানে যে কার্গো বহন করা হয়) বোমা ফেলা হয়েছে। ফোর্দোর আর অস্তিত্ব নেই। যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইরানের এখনই রাজি হয়ে যাওয়া উচিত। ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিমকে দেশটির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শত্রুপক্ষের হামলায় ফোর্দোর একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে ট্রাম্প বলেছিলেন, ফোর্দোতে ছয়টি বাংকার বাস্টার ফেলা হয়েছে আর অন্য স্থাপনাগুলোয় ৩০টি টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হামলায় বি টু বোম্বার ব্যবহার করা হয়েছে। বি টু বিমানের গতিবিধি নিয়ে গত শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে হামলার অনেক আগেই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল রয়টার্স।
এদিকে, মার্কিন হামলার জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ট্রাম্পের পদক্ষেপকে সাহসী সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক রাষ্ট্রকে সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখতে পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ইতিহাসের পাতায় এটি লেখা থাকবে।
গত ১৩ জুন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলি হামলা থেকে চলমান সংকটের সূচনা। তেল আবিবের দাবি, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতে এই অভিযান চলছে। অপরদিকে, বরাবরের মতো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কথা অস্বীকার করে এসেছে ইরান। ইরানি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে দেশটির সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, চলমান হামলায় অন্তত ৪৩০ জন মানুষ নিহত এবং সাড়ে তিন হাজারের বেশি আহত হয়েছে। অন্যদিকে, ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের অন্তত ২৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে নেতানিয়াহুর কার্যালয়।
ইসরাইলের দশ স্থানে ইরানের ভয়াবহ হামলা ঃ ইরানের প্রধান তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বাহিনী বড় ধরনের হামলা চালানোর পর ইসরায়েলের অন্তত ১০টি স্থান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইরান। এর মধ্যে বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও রয়েছে।
গতকাল রোববার সকালে ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চল লক্ষ্য করে ইরান থেকে ছোড়া প্রায় ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। বিমানবন্দর ছাড়াও অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে রয়েছে সাহায্যকারী ঘাঁটি, কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার এবং একটি জৈব গবেষণা কেন্দ্র।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা মেগান ডেভিড আদম (এমডিএ) জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে এমন অন্তত ১০টি এলাকার দিকে যাচ্ছে তাদের দলগুলো। হামলার এসব ঘটনায় ১৬ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এমডিএ মুখপাত্র বলেছেন, ইসরায়েলের ১০টি স্থানে রকেট ও গোলা হামলা হয়েছে। কারমেল, হাইফা, তেল আবিব ও ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে এসব হামলা হয়েছে। আইডিএফ জানিয়েছে, প্রাথমিক সাইরেন বাজার পর মধ্যাঞ্চলে হামলা হয়, এরপর উত্তরাঞ্চলের দিকে আরেক পশলা ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে যাওয়ার সময় সেখানকার এলাকাগুলোতে সাইরেন বেজে ওঠে।
মস্কো যাচ্ছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঃ যে মুহূর্তে ইরানে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র, সে মুহূর্তে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ওআইসির এক সভায় যোগ দিতে তুরস্কের ইস্তানবুলে অবস্থান করছিলেন। তিনি সেখানে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন এবং তা অমার্জনীয়। এ অবস্থায় তুরস্কের রাজধানী ইস্তানবুলে অবস্থানরত ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি রোববারই তিনি মস্কো যাচ্ছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে সোমবার তিনি আলোচনায় বসবেন।
সাংবাদিক জানতে চান হামলার পরও কূটনীতির অবকাশ রয়েছে কি না? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে নয়। কূটনীতির দরজা সবসময় খোলা থাকা উচিত, কিন্তু এখন তা সম্ভব নয়। ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমার দেশ এখন আক্রমণ, আগ্রাসনের মুখে রয়েছে এবং আত্মরক্ষার বৈধ অধিকার অনুযায়ী জবাব দিতে হবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবাজ ও আইনের তোয়াক্কা না করা প্রশাসন এই আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের বিপজ্জনক পরিণতির জন্য একক ও সম্পূর্ণভাবে দায়ী থাকবে।
জাতিসংঘের এক সদস্য রাষ্ট্রের ভূখন্ডগত অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর মার্কিন সামরিক হামলা, গণহত্যাকারী (ইসরায়েলি) সরকারের সহযোগিতায় সংঘটিত হয়েছে, যা আবারও প্রমাণ করে, যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ ইরানি জনগণের প্রতি কতটা বৈরী। আমরা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেব না। তুরস্কের রাজধানী ইস্তানবুলে অবস্থানরত ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, রোববারই (গতকাল) তিনি মস্কো যাচ্ছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে আজ সোমবার তিনি আলোচনায় বসবেন। রাশিয়া হচ্ছে ইরানের বন্ধু এবং আমরা কৌশলগত বন্ধুত্ব উপভোগ করি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে ইরানের সঙ্গে একটি পারমাণবিক চুক্তি হয়েছিল। রাশিয়া ওই চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী দেশ উল্লেখ করে আব্বাস আরাগচি বলেন, আমরা সবসময় একে অপরের সঙ্গে পরামর্শ করি এবং আমাদের অবস্থান সমন্বয় করি। আমি আগামীকাল রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জরুরি আলোচনা করব এবং আমরা একে অপরের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব।