ইলিশ উৎপাদনে রেকর্ড গড়ার পথে বাংলাদেশ

- আপডেট সময় : ০২:২৫:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫ ৬৩ বার পড়া হয়েছে
ইলিশ উৎপাদনে রেকর্ড গড়ার পথে বাংলাদেশ। মা ইলিশ সংরক্ষণের সফলতার পর এবারে জাটকা সংক্ষরণে মাঠে নেমেছে মৎস্য অধিদপ্তর। ২০২৪ সালের মা ইলিশ সংরক্ষণে ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা ফলে সামগ্রিক প্রজনন সফলতার হার ৫২.৫ শতাংশ এবং ৪৪ কোটি জাটকা/রেণু ইলিশ পরিবারে যুক্ত হয়েছে। এটি যেকোন সময়ের তুলনায় ৩.৬৬ কোটি বেশি। যা কিনা এ যাবকালের সর্বোচ্চ হার। ২০২৪ সালে প্রতি একক প্রচেষ্টায় ধৃত জাটকার পরিমাণ বিগত বছরের তুলনায় দেড় গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা প্রজনন সফলতার ইঙ্গিত দেয় এবং পরীক্ষামূলক জালে ৯১ শতাংশ ইলিশ লার্ভি পাওয়া গেছে। যা কিনা নিষেধাজ্ঞার সময়ে উৎপাদনের সাফল্য। একই সঙ্গে অন্যান্য মাছের লার্ভিও উল্লেখযোগ্য হারে পাওয়া গেছে অর্থাৎ জলজ প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা পেয়েছে।
এপ্রিল মাসজুড়ে জাটকা ইলিশ রক্ষায় সর্বাত্মক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, মৎস্য প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়। জাটকা ধরা বন্ধ হলে, ইলিশ উঠবে জাল ভরে স্লোগানকে সামনে রেখে ৮ এপ্রিল শুরু হওয়া জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২৫ এর উদ্বোধন মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। জাটকা সংরক্ষণে অধিকতর জনসচেতনতা সৃষ্টি ও জাটকা নিধন রোধে জেলেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত ও উৎসাহিত করতে বরিশাল থেকে এই কর্মসূচী শুরু হচ্ছে। জাটকা সংরক্ষণ সম্প্রাহ পালন উপলক্ষ্যে উপজেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উদ্যোগে জেলে পল্লী, মাছ ঘাট, মাছ বাজারগুলোতে সচেতনতা বৈঠক আয়োজন করা হলে এই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে। দেশের জাটকা প্রধান ২০টি জেলায় ১১-১৭ মার্চ, জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উদযাপিত হলেও এবারে পবিত্র রমযান এবং ঈদ-উল-ফিতরের ছুটির কারণে মার্চ মাসে তা আয়োজন করা সম্ভব না হওয়ায় ৮ এপ্রিল পিছিয়ে আনা হয়।
বাংলাদেশের অন্যতম ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে বাচ্চা জাটকা অভয়াশ্রমে আশ্রয় গ্রহণ নেয়। একে আমরা শৈশব বলতে পারি। পরবর্তী কৈশোরে পা রাখার আগ মুহূর্তে এপ্রিলের শেষার্ধে সমুদ্রে চলে যায়। জটকা সংরক্ষণে ৬টি অভয় অভয়াশ্রম ঘিরে ব্যাপক কর্মসূচী পালন করে মৎস্য অধিদপ্তর। বিশেষ করে অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প অভয়াশ্রম সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা নিয়ে নদী পাহারার ব্যবস্থা করে থাকেন। জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ ফেব্রুয়ারি মাসে উদযাপন করা সবচেয়ে ফলপ্রসু হবে। জাটকা সংরক্ষণ যদিও ২০টি জেলায় জাটকার প্রাপ্যতা বেশি হলেও সারাদেশে দেশেই জাটকার বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা উচিৎ। জাটকা সংরক্ষণের সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি কোন বাজার বা আড়তে জাটকা মাছ যাতে বিক্রি না হয়, সেটি নিশ্চিত করার জন্য মৎস্যজীবী এবং আড়তদার সমিতিকেও সচেতন থাকতে হবে। ৮-১৪ এপ্রিল জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উপলক্ষ্যে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, চাঁদপুর, লক্ষীপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বাগেরহাট ও সিরাজগঞ্জসহ মোট ২০টি জেলায় জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২৫ উদযাপিত হবে। বরিশাল সদর উপজেলার বেলস পার্ক ৮ এপ্রিল জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২৫ উদ্বোধন অনুষ্ঠান ও সংলগ্ন নদীতে নৌ-র্যালির আয়োজন করা হবে। মার্চ-এপ্রিল ২ মাস অভয়াশ্রমে জাটকাসহ সকল মাছ ধরা নিষিদ্ধকালীন সময়ে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি জেলেদের নিকট এনজিওসমূহের মাধ্যমে বিতরণকৃত ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি আদায় স্থগিতের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রম ২০২৪ সালের ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর সফলভাবে পালিত হয়েছে। এই সময়ে সারাদেশে সাগরসহ নদ-নদীতে ২২ দিন ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিপণন নিষিদ্ধ করে মৎস্য অধিদপ্তর প্রজ্ঞাপন জারি করে। মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়