ঢাকা ১২:০২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ইলিশ উৎপাদনে সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে, অবৈধ মাছ ধরার সংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:২৫:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪ ১০২ বার পড়া হয়েছে

ভোলার দৌলতখানে জনসচেতনতা সভায় বক্তব্য দেন ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্যাহ

দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

আমিনুল হক ভূইয়া

দূষিত ইটপাথরের নগর ছেড়ে আমাদের গন্তব্য ভোলা। তবে, ভোলা মানে ভোলা সদর নয়, সঙ্গে যাতায়তের পরিধি বিস্তৃত। হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মাছঘাট, মৎস্য আড়ৎ এবং জেলে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সমন্বয়ে ইলিশ রক্ষায় জনসচেতনতা সভার কর্মসূচী। ইলিশের প্রজনন মৌসুমকে সামনে রেখে প্রাক সচেতনতায় মাঠে নামে মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প। দুপুরে হিজলার উলানিয়া নৌঘাটে লঞ্চ থেকে নামার পর স্থানীয় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ইমরান হোসেন জানালেন, সব কিছু ঠিকঠাক। খাওয়ার পরই জনসচেতনতা সভায় যোগ দিতে হবে।

মাথার ওপরের উদার আকাশ। দেখা মিললো ভুবন চিলের খুনসুটি। দিগন্ত প্রসারীত মেঘনা। যতদূর চোখ যায়, পানি আর পানি। এই বিশালতায় প্রাকৃতিক সম্পদ ইলিশের বিচরণ। যে সম্পদের জন্য কোন বিনিয়োগ করতে হয় না। আছে কেবল প্রাপ্যতা। এই সম্পদকে রক্ষায় দায়িত্বশীলতার অভাব চরমে। গডফাদারের কালো থাবায় মা ইলিশ এবং পরবর্তীতে জাটকা ইলিশ ধ্বংস হচ্ছে। এর নেপথ্যে কুশলিব যারা, তাদের কাছে সমাজ কতটুকু নিরাপদ?

২৩০ হর্জ পাওয়ার ইঞ্জিনের স্পিড বোট মেঘনার বুক চিড়ে দূরন্ত গতিতে এগিয়ে চলছে। নানা আকারের নৌকা নিয়ে জেলেরা মছ শিকার করছেন। এই মেঘনাই তাদের জীবীকার ঠিকানা। হাজারো প্রান্তিক জেলে জীবীকা নির্বাহ করেন মেঘনায় মাছ ধরে। মেঘনায় ভাটা চলছে। স্পিড বোট গিয়ে থামলো চরের সাত নম্বর মাছঘাটে। তুলতুলে মাটির ওপর দিয়ে কিছুটা পথ এগিয়ে বাঁশের সিঁড়ি বেয়ে মাছের আড়তে পৌছালাম। দেখা গেলো বরফ দিয়ে টাটকা ইলিশ মাছ প্যাকেট করা হচ্ছে। এগুলো জেলা শহরে যাবে।

মাছ ব্যবসায়ী ও জেলেরা ঘিরে আছেন ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্যাহকে। সবাই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন হুজুর স্যারের দিকে, শুনতে চান তার নির্দেশনা। প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ বন্ধ। এসময় ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বাজারজাত এবং বিক্রি নিষিদ্ধ। মাছের খনি ভোলার মেঘনা-তেতুঁলিয়া নদীতে ইলিশ আহরণনন্ধকালীন সময়ে জেলেদের সহযোগিতা চান মোল্লা এমদাদুল্যাহ। জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীরা একবক্যে সমর্থন জানিয়ে বলেন, ২২ দিন নদীতে তারা জাল ফেলবে না। কিন্তু এসময়েও অসৎ একটি চক্র মাছ ধরে নিয়ে যাবার অভিযোগ করেন। মোল্লা এমদাদুল্যাহর কঠোর উচ্চারণ, এবারে নদীতে কোন জাল ফেলতে দেওয়া হবে না। আপনার সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে। এ সময় জেলে ও ব্যবসায়ীরা করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানান।

এবারের গন্তব্য ওরাকল মাছ ঘাট। এই অঞ্চলের একটা বড় মাছের আড়ৎ। দূর থেকেই চোখে পড়ে জনসচেনতা সভার বড় আকারের প্যান্ডেল। বহু সংখ্যক মানুষ অপেক্ষায়। তীরে স্পিড বোট থামতেই জনাত্রিশেক লোক দৌড়ে এসে একের এক সালাম দিচ্ছেন। কেউ কেউ জানতে চান স্যার কেমন আছেন, কেউ বলেন অনেক দিন পর দেখা হলো স্যার। প্রতিকূল আবহাওয়া। এরই মধ্যেও প্যান্ডেল ভর্তি মানুষ। জেলে ও ব্যবসায়ীরা মোল্লা এমদাদুল্যাকে পেয়ে খুশি। অনেকে বক্তব্যে বলেছেন, আমরা স্যারের কথা মান্য করে নদীতে ২২ দিন মাছ ধরবো না। এমন সরল স্বীকারোক্তি সবার। এর মধ্যে একদফা বৃষ্টি হয়ে গেলো। জনসচেতনতা সভায় সবার সহযোগিতা চেয়ে মোল্লা এমদাদুল্যা বলেন, আপনরাই আমার শক্তি। ২২দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকলে অনেকেরই কষ্ট হবে। তবে, আগামীর ভালোর জন্য আমাদের এ সময়ে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে।

মোল্লা এমদাদুল্যা বলেন, ইলিশের নিরাপদ চলাচলের কিছু বাধাও রয়েছে। চর পরে নদীর গতিপথ পরিবর্তন, দূষণ, খাবার, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশের ইলিশ উৎপাদন চ্যালেঞ্জের মুখে। তারপরও যে সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে, সেটা কাজে লাগিয়ে আগামীতে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যেই আমাদের এই দৌড়-ঝাপ। তিনি বলেন, একটা ভালো দিক হলো জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই এতে সহমত জানিয়েছেন। তারা চান মাছে-ভাতে বাঙালির উন্নতি হোক। কিন্তু এক শ্রেণীর অসাধু মানুষ নিষিদ্ধকালীন সময়ে মাছ ধরে জাতীয় সম্পদ নষ্ট করছেন। এই সংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে আসা উচিৎ। আমরা চাই সুন্দর পরিবর্তন আসুক। তাই সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ঐক্যবদ্ধ অংশিদার যতোটা জোরদার হবে, ততটাই ইলিশ রক্ষার অভিযানটা মজবুত হবে। তবে আমরা জেলে ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। একটা পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি থাকার কারণে তা সম্ভব হয়েছে। আমরা আশাবাদী।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ইলিশ উৎপাদনে সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে, অবৈধ মাছ ধরার সংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে

আপডেট সময় : ১২:২৫:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

 

আমিনুল হক ভূইয়া

দূষিত ইটপাথরের নগর ছেড়ে আমাদের গন্তব্য ভোলা। তবে, ভোলা মানে ভোলা সদর নয়, সঙ্গে যাতায়তের পরিধি বিস্তৃত। হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মাছঘাট, মৎস্য আড়ৎ এবং জেলে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সমন্বয়ে ইলিশ রক্ষায় জনসচেতনতা সভার কর্মসূচী। ইলিশের প্রজনন মৌসুমকে সামনে রেখে প্রাক সচেতনতায় মাঠে নামে মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প। দুপুরে হিজলার উলানিয়া নৌঘাটে লঞ্চ থেকে নামার পর স্থানীয় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ইমরান হোসেন জানালেন, সব কিছু ঠিকঠাক। খাওয়ার পরই জনসচেতনতা সভায় যোগ দিতে হবে।

মাথার ওপরের উদার আকাশ। দেখা মিললো ভুবন চিলের খুনসুটি। দিগন্ত প্রসারীত মেঘনা। যতদূর চোখ যায়, পানি আর পানি। এই বিশালতায় প্রাকৃতিক সম্পদ ইলিশের বিচরণ। যে সম্পদের জন্য কোন বিনিয়োগ করতে হয় না। আছে কেবল প্রাপ্যতা। এই সম্পদকে রক্ষায় দায়িত্বশীলতার অভাব চরমে। গডফাদারের কালো থাবায় মা ইলিশ এবং পরবর্তীতে জাটকা ইলিশ ধ্বংস হচ্ছে। এর নেপথ্যে কুশলিব যারা, তাদের কাছে সমাজ কতটুকু নিরাপদ?

২৩০ হর্জ পাওয়ার ইঞ্জিনের স্পিড বোট মেঘনার বুক চিড়ে দূরন্ত গতিতে এগিয়ে চলছে। নানা আকারের নৌকা নিয়ে জেলেরা মছ শিকার করছেন। এই মেঘনাই তাদের জীবীকার ঠিকানা। হাজারো প্রান্তিক জেলে জীবীকা নির্বাহ করেন মেঘনায় মাছ ধরে। মেঘনায় ভাটা চলছে। স্পিড বোট গিয়ে থামলো চরের সাত নম্বর মাছঘাটে। তুলতুলে মাটির ওপর দিয়ে কিছুটা পথ এগিয়ে বাঁশের সিঁড়ি বেয়ে মাছের আড়তে পৌছালাম। দেখা গেলো বরফ দিয়ে টাটকা ইলিশ মাছ প্যাকেট করা হচ্ছে। এগুলো জেলা শহরে যাবে।

মাছ ব্যবসায়ী ও জেলেরা ঘিরে আছেন ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্যাহকে। সবাই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন হুজুর স্যারের দিকে, শুনতে চান তার নির্দেশনা। প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ বন্ধ। এসময় ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বাজারজাত এবং বিক্রি নিষিদ্ধ। মাছের খনি ভোলার মেঘনা-তেতুঁলিয়া নদীতে ইলিশ আহরণনন্ধকালীন সময়ে জেলেদের সহযোগিতা চান মোল্লা এমদাদুল্যাহ। জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীরা একবক্যে সমর্থন জানিয়ে বলেন, ২২ দিন নদীতে তারা জাল ফেলবে না। কিন্তু এসময়েও অসৎ একটি চক্র মাছ ধরে নিয়ে যাবার অভিযোগ করেন। মোল্লা এমদাদুল্যাহর কঠোর উচ্চারণ, এবারে নদীতে কোন জাল ফেলতে দেওয়া হবে না। আপনার সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে। এ সময় জেলে ও ব্যবসায়ীরা করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানান।

এবারের গন্তব্য ওরাকল মাছ ঘাট। এই অঞ্চলের একটা বড় মাছের আড়ৎ। দূর থেকেই চোখে পড়ে জনসচেনতা সভার বড় আকারের প্যান্ডেল। বহু সংখ্যক মানুষ অপেক্ষায়। তীরে স্পিড বোট থামতেই জনাত্রিশেক লোক দৌড়ে এসে একের এক সালাম দিচ্ছেন। কেউ কেউ জানতে চান স্যার কেমন আছেন, কেউ বলেন অনেক দিন পর দেখা হলো স্যার। প্রতিকূল আবহাওয়া। এরই মধ্যেও প্যান্ডেল ভর্তি মানুষ। জেলে ও ব্যবসায়ীরা মোল্লা এমদাদুল্যাকে পেয়ে খুশি। অনেকে বক্তব্যে বলেছেন, আমরা স্যারের কথা মান্য করে নদীতে ২২ দিন মাছ ধরবো না। এমন সরল স্বীকারোক্তি সবার। এর মধ্যে একদফা বৃষ্টি হয়ে গেলো। জনসচেতনতা সভায় সবার সহযোগিতা চেয়ে মোল্লা এমদাদুল্যা বলেন, আপনরাই আমার শক্তি। ২২দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকলে অনেকেরই কষ্ট হবে। তবে, আগামীর ভালোর জন্য আমাদের এ সময়ে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে।

মোল্লা এমদাদুল্যা বলেন, ইলিশের নিরাপদ চলাচলের কিছু বাধাও রয়েছে। চর পরে নদীর গতিপথ পরিবর্তন, দূষণ, খাবার, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশের ইলিশ উৎপাদন চ্যালেঞ্জের মুখে। তারপরও যে সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে, সেটা কাজে লাগিয়ে আগামীতে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যেই আমাদের এই দৌড়-ঝাপ। তিনি বলেন, একটা ভালো দিক হলো জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই এতে সহমত জানিয়েছেন। তারা চান মাছে-ভাতে বাঙালির উন্নতি হোক। কিন্তু এক শ্রেণীর অসাধু মানুষ নিষিদ্ধকালীন সময়ে মাছ ধরে জাতীয় সম্পদ নষ্ট করছেন। এই সংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে আসা উচিৎ। আমরা চাই সুন্দর পরিবর্তন আসুক। তাই সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ঐক্যবদ্ধ অংশিদার যতোটা জোরদার হবে, ততটাই ইলিশ রক্ষার অভিযানটা মজবুত হবে। তবে আমরা জেলে ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। একটা পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি থাকার কারণে তা সম্ভব হয়েছে। আমরা আশাবাদী।