ঈদুল ফিতরে টানা ৯ দিনের ছুটি
ঈদে কঠোর নিরাপত্তায় থাকছে ফাঁকা রাজধানী

- আপডেট সময় : ১২:৪২:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫ ৭ বার পড়া হয়েছে
ব্যাংক বীমা অফিস আদালত ফ্ল্যাটে সিসিটিভি চালু রাখার পরামর্শ
ঈদুল ফিতরে লম্বা ছুটির ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে পুরো দেশ। সরকারী ছুটির ফাঁকে একদিন ছুটি নিলেই টানা নয়দিন ছুটি কাটাতে আর কোনো ঝামেলা থাকবে না। এমনটাই মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সচিবালয়ের জনৈক সহকারী সচিব। তিনি বলেন, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের আগামী ৩১ মার্চ (সোমবার) দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হতে পারে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর ঈদুল ফিতরে পাঁচ দিন ছুটির অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। আগে এ ছুটি ছিল ৩ দিন। গত ২১ অক্টোবর ছুটির বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ৩১ মার্চ সোমবার ঈদুল ফিতরের দিন সাধারণ ছুটি। ঈদের আগের দুই দিন ২৯ ও ৩০ মার্চ (শনি ও রবিবার) এবং ঈদের পরের দুই দিন ১ ও ২ এপ্রিল (মঙ্গলবার ও বুধবার) নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি থাকবে। ২৮ মার্চ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি। এ হিসাবে সব মিলিয়ে টানা ৬ দিন ছুটি পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। ৩১ মার্চ সোমবার ঈদুল ফিতরের দিন সাধারণ ছুটি। ঈদের আগের দুই দিন ২৯ ও ৩০ মার্চ (শনি ও রবিবার) এবং ঈদের পরের দুই দিন ১ ও ২ এপ্রিল (মঙ্গলবার ও বুধবার) নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি থাকবে।
এদিকে ২৮ মার্চ (শুক্রবার) সাপ্তাহিক ছুটি। এ হিসেবে সব মিলিয়ে টানা ছয় দিন ছুটি পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। হিসাব অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) অফিস খোলার কথা। তবে বৃহস্পতিবার ছুটি নিলে পরের দুই দিন ৪-৫ এপ্রিল (শুক্র ও শনিবার) ছুটি। অর্থাৎ ৩ এপ্রিল ছুটি নিলে ৯ দিনের ছুটি উপভোগ করতে পারবেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
এদিকে ফাঁকা ঢাকায় অপরাধী চক্র যাতে সক্রিয় হতে না পারে সেজন্য নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ছক তৈরি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির অপারেশন্স বিভাগ প্রণীত এ ছকে প্রাধান্য পাচ্ছে ঈদগাহ মাঠ, বিপণিবিতান, মার্কেট, ব্যাংক এবং এটিএম বুথ। এছাড়া গোয়েন্দা বিভাগের পক্ষ থেকে তৈরি করা হয়েছে আলাদা নিরাপত্তা ছক।
নিরাপত্তা পরিকল্পনার অংশ হিসাবে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের দেহ ও অন্যান্য বস্তু তল্লাশি করবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ঈদগাহ প্রাঙ্গণ এবং আশপাশের এলাকায় যাতে ভিক্ষুক বা হকার ঢুকতে না পারে, সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে পুলিশ কন্ট্রোল রুম বা হাইকোর্ট অভ্যন্তরে স্থাপিত সাব-কন্ট্রোলরুমে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফোর্স মোতায়েন হওয়ার আগে ইনচার্জ অফিসাররা দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে ব্রিফিং করবেন। ঈদের দিন থেকে বিপণিবিতান এবং স্বর্ণের দোকানে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। ব্যাংক এবং এটিএম বুথের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে।
অপরদিকে পুলিশ থাকলেও আসন্ন ঈদুল ফিতরে বাড়ি যাওয়ার সময় ঢাকাবাসীকে বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিজ দায়িত্বে নিশ্চিত করে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। গত ৮ মার্চ দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন ঈদ সামনে রেখে ঢাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কথা প্রসঙ্গে তিনি এ কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, আশা করছি ১৫ রোজার পরেই ঢাকাবাসী অনেকেই গ্রামে তাদের নিকটজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের জন্য চলে যাবে। আমি পুলিশ কমিশনার হিসেবে ডিএমপির পক্ষ থেকে আপনাদের জানাতে চাই, অনুরোধ করতে চাই, যখন বাড়ি (গ্রামের বাড়ি) যাবেন তখন দয়া করে আপনার বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিজ দায়িত্বে করে যাবেন।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি, তারপরও পুলিশের স্বল্পতা আছে। ঈদে আমাদের লোকও অনেকে ছুটিতে যাবেন, যেতে চান। যারা ব্যারাকে থাকেন তারা পরিবার-পরিজন ছাড়া সারাবছর ব্যারাকে থাকেন। তাদের একটি দাবি আছে, তারাও ঈদে বাড়ি যেতে চান। সরকারি নির্দেশ মোতাবেক একটা পার্সেন্টেজকে আমাদের ছুটি দিতে হয়। তারপরও আমি চাইবো তাদের বুঝিয়ে বলতে, যেহেতু ঢাকাবাসী ছুটিতে যাবে, আপনারা ছুটিতে পরে যান। আমাদের ব্যবস্থাপনাটা আমরা করবো, কিন্তু ঢাকাবাসীকে অনুরোধ করতে চাই, ওনারা যেন ওনাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাটা ঠিক রাখেন। বলেন সাজ্জাত আলী।
এছাড়া ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকার বিভিন্ন শপিংমল ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বেসরকারি কর্মীদের ‘অক্সিলারি ফোর্স’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, যারা পুলিশ অফিসারের মতোই গ্রেফতারের ক্ষমতা পাবেন বলেও জানান ঢাকার পুলিশ কমিশনার সাজ্জাত আলী।
তিনি বলেন, যেহেতু রাত পর্যন্ত শপিংসেন্টারগুলো খোলা থাকবে এবং আমাদের পুলিশের স্বল্পতা রয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশের আইনবলে অক্সিলারি পুলিশ ফোর্স নিয়োগের ক্ষমতা আমার ওপর আছে। আমি সেই মোতাবেক ‘অক্সিলারি পুলিশ ফোর্স’ হিসেবে প্রাইভেট নিরাপত্তার লোক যারা আছেন তাদের নিয়োগ দিচ্ছি। শপিংমল ও আবাসিক এলাকার বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীদের নিয়োগ দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের হাতে একটি ব্যান্ড থাকবে যে তারা সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা। আইন মোতাবেক ওনারা আমি বা আমার পুলিশ অফিসার যে দায়িত্ব পালন করেন, সেই একইরূপ দায়িত্ব পালন করবেন। যে কোনো ব্যক্তিকে ওনারা গ্রেফতারের ক্ষমতা পাবেন এবং সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অফিসারকে আইনগতভাবে যে প্রটেকশন দেওয়া হয়েছে ওনারা সেই প্রটেকশান পাবেন। এ কার্যক্রম আমি শুরু করেছি। তিনি বলেন, বসুন্ধরা শপিংমল, এখানে হয়তো ৫০ জন (নিরাপত্তাকর্মী) আছেন। ওনাদের তো একজন নেতা আছেন। আমরা ওনাকে অ্যাপয়েনমেন্ট দিয়ে দেবো। তারাবির সময় মুসল্লিরা দেড়-দুই ঘণ্টার জন্য নামাজে যান জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সে সময়টাতে একটু জনশূন্যতা বিভিন্ন রাস্তাঘাটে দেখা যায়। এ সময় আপনাদের বাড়ি, ফ্ল্যাট, দোকান একটু সযত্নে রেখে আসবেন, নিরাপত্তা খেয়াল করবেন।