কুষ্টিয়ার মিরপুরে ফের সার সিন্ডিকেট সক্রিয়!
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধ অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ
- আপডেট সময় : ২৯ বার পড়া হয়েছে
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত কুর্শা ইউনিয়নের বিসিআইসি ও বিএডিসি সার ডিলারদের বিরুদ্ধে আনিত দীর্ঘদিনের অভিযোগের কোনো সুরাহা না হওয়ায় এই পুরানো চক্র আবারো নতুন কৌশলে অবলম্বন করতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব ডিলারদের বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়মতান্ত্রিক উপায়ে নিয়োগ লাভ, নীতিমালা উপেক্ষা করে কালো বাজারে সার বিক্রয়, সারের বাজারে অস্থিতিশীলতা ও কৃত্রিম সার সংকট তৈরি এবং কৃষকদের কাছে নায্যমূল্যে সার বিক্রয় না করার মতো গুরুতর অভিযোগ। ২০২৫ সালের নীতিমালায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের বাসিন্দা ছাড়া ডিলারশিপ নিয়োগ দেয়া যাবে না উল্লেখ করা হলেও পুরানোচক্র আবারো নতুন কৌশলে নিয়োগ পেতে তৎপর। আর এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা করছেন মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ ২০০৯ সালে কৃষি মন্ত্রনালয়ের সার বিতরণ সংক্রান্ত নীতিমালার আলোকে পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার বাসিন্দা মীর মুসা ওলিউল্লাহ নিজ তথ্য গোপন করে মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের নাগরিক হিসেবে কাগজপত্র দাখিল করে কুর্শা ইউনিয়নের ডিলারশিপ হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। কুর্শা ইউনিয়নের মাজিহাট বাজার ডিলার পয়েন্টে মীর মুসা ওলিউল্লাহ নিয়োগ পরবর্তী কোনো প্রকার সার বিতরণ না করায় অসন্ত্রেষ দেখা দেয় স্থানীয় কৃষক ও চাষীদের মধ্যে। এসময় অত্র এলাকার স্থানীয় কৃষকরা প্রতিকার চেয়ে ১২ অক্টোবর ২০০৯ তারিখে জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের নির্দেশে মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মুসা ওলিউল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে পত্র প্রেরণ করা। মীর মুসা ওলিউল্লাহর বিরুদ্ধে এমন প্রতিয়মান সত্যের পরেও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে মাঝপথে থেমে যায় সে তদন্ত রিপোর্টের কার্যকারিতা। অভিযোগ রয়েছে- সে সময় কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ির তৎকালিন উপপরিচালক গোলাম মর্তজার যোগসাজসে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।
অনুসন্ধানকালে মিরপুরের কুর্শা ইউনিয়নের আরেক বিএডিসি সার ডিলারের বিরুদ্ধে অবৈধ ডিলারশিপ নিয়োগ ও বিক্রয় বিতরণ অনিয়মের মেলে। তিনি মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের কুন্টিয়ারচর বাজারের বিএডিসি সার ডিলার সোলাইমান হোসেন। তার পিতার নাম মৃত ইয়ার চাঁদ হড়। এদিকে তার নিজ পুত্র বিল্লাল হোসেনের নামেও মিরপুর উপজেলার ৬ নং আমলা ইউনিয়নের আমলা বাজারে রয়েছে আরো একটি বিএডিসি অনুমোদিত ডিলারশিপ। অর্থাৎ একই পরিবারের একান্নভূক্ত দুই সদস্যের নামে পৃথক দুটি বিএডিসি অনুমোদিত সার ডিলারশিপ, যা নীতিমালার পরিপন্থী। তারা পিতা-পুত্র উভয়ে মিরপুর উপজেলার ৬ নং আমলা ইউনিয়নের আমলা গ্রামের বাসিন্দা ও তালিকাভুক্ত ভোটার।
২০২৫ সালের সার ডিলার নিয়োগ নীতিমালায় আবারো আলোচনায় এসেছে মীর মুসা ওলিউল্লাহ ও সোলাইমান গং এর দুর্নীতির বিষয়টি। এবারের নীতিমালায় আবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের বাসিন্দা হতে হবে এবং এর প্রমাণক হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/প্রশাসক কর্তৃক ডিজিটাল নাগরিক সনদ দাখিল করতে বলায় এচক্র জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অবৈধ উপায়ে কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং নাগরিক সনদ লাভের জন্য। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদের এক ওয়ার্ড সদস্য। ভূক্তভোগিদের দাবি দীর্ঘদিন ধরে ডিলার মালিকরা এলাকায় সার বিক্রি না করে কালো বাজারে বিক্রি করলেও মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঘুষ বাণিজ্যের সুবিধা এসব দুর্নীতির বিষয় এড়িয়ে যান। ঐ এলাকার ভূক্তভোগি কৃষক ও সংশ্লিষ্ট মহলের মন্তব্য কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন উৎকোচ নেয় অফিসের টেবিলে বসে হাতে হাতে। তার এই লাগামীন ঘুষ বাণিজ্যের কারনে প্রশ্নের সম্মুখিন হচ্ছেন জেলা সার বীজ মনিটিরিং কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক। অবিলম্বে এই দুর্নীতিবাজ ঘুষখোর কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন সহ অবৈধ ডিলারশিপ বাতিল করে নতুন ডিলার নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন।
১৩ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে ঘোষিত সার ডিলার নিয়োগ ও বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালায় মিরপুর উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির অধিক্ষেত্রের আওতাধীন কুর্শা ইউনিয়নের মাজিহাট বাজার এবং কুষ্টিয়ারচর বাজার পুনর্বণ্টন কার্যক্রম প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না বলে এলাকার সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দাবি। সেকারনে কুর্শা ইউনিয়নের মাজিহাট বাজার এবং কুন্টিয়ারচর বাজারে বর্তমানে নিয়োজিত বিসিআইসি ও বিএডিসির বর্তমান ডিলারদের মধ্যে দায়িত্ব পুনর্বণ্টন না করে সংশ্লিষ্ট ডিলার ইউনিট শূণ্য ঘোষণা সাপেক্ষে নীতিমালা অনুযায়ী সার ডিলার লাইসেন্স প্রদান করা যুক্তিযুক্ত বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে, কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. শওকত হোসেন ভূইয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।













