ঢাকা ০৮:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ডামুড্যা উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত Logo কোম্পানীগঞ্জে প্রান্তিক পেশাজীবী জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন অবহিতকরণ সেমিনার Logo শেরপুর সীমান্তে অর্ধকোটি টাকার মালা মাল জব্দ Logo গোবিন্দগঞ্জে মাদক ও হ্যাকিং ডিভাইসসহ গ্রেপ্তার ২ Logo ৬ দফা দাবিতে বাংলাদেশ হেলথ্ এসিস্ট্যান এসোসিয়েশন গোলাপগঞ্জের অবস্থান কর্মসূচী Logo পাটগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ৭ জনকে পুশ-ইন করেছে বিএসএফ Logo শেরপুরে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের কর্মশালা অনুষ্ঠিত Logo বান্দরবানে অনূর্ধ্ব-১২ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা ও ক্রিকেট কার্নিভাল Logo টেকনাফে বিদেশী পিস্তল ইয়াবাসহ দুই মাদক পাচারকারী আটক Logo ৬ দফা দাবিতে ঝিনাইদহে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি পালিত

উৎপাদনমুখী শিল্পখাতে ত্রাহি অবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ০৪:০৩:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১৫২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

তীব্র গ্যাস সঙ্কটে ত্রাহি অবস্থায় দেশের উৎপাদনমুখী শিল্পখাত। ব্যাহত হচ্ছে রপ্তানিমুখী শিল্পসহ অন্যান্য কারখানার উৎপাদন। টেক্সটাইল, সিরামিক, তৈরি পোশাকসহ দেশের প্রধান শিল্পের ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টের গ্যাসের চাপ যেখানে ১৫ পিএসআই (পার স্কয়ার ইঞ্চি) থাকার কথা, সেখানে সাধারণত ২ বা ৩ পিএসআই চাপ পাওয়া যাচ্ছে। আবার মাঝেমধ্যে গ্যাসের চাপ শূন্যও হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর এবং ময়মনসিংহের মতো প্রধান শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত কারখানাগুলোতে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে গ্যাস সরবরাহ। দেশে দৈনিক প্রায় ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ) গ্যাসের প্রয়োজন হলেও বর্তমানে সরবরাহ আছে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে দিনে সরবরাহ ঘাটতি ১ হাজার এমএমসিএফ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। শিল্পখাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গ্যাস সংকটের কারণে দেশের ৫০ শতাংশ টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে গেছে।

বর্তমানে দেশে ১ হাজার ৮০০টি টেক্সটাইল মিল রয়েছে। তার মধ্যে ৭০০ স্পিনিং মিল। বিদ্যমান পরিস্থিতির সুযোগে ভারত থেকে বৈধ-অবৈধভাবে সুতা আমদানি হচ্ছে। অথচ দেশের মিলগুলো পুরোদমে চালু থাকলে আরো ১ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হতো। তাছাড়া বিশ্বব্যাপী চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের কারখানা স্থানান্তর হলেও তা এদেশের হাতছাড়া হচ্ছে। ওসব কারখানা এদেশে স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। সূত্র জানায়, সম্পূর্ণভাবে গ্যাসনির্ভর দেশের সিরামিক শিল্প। গ্যাসকে ওই শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ওই খাতে গ্যাসের বিকল্প জ্বালানি নেই। সিরামিক কারখানাগুলোতে গ্যাসের ১৫ পিএসআই চাপ প্রয়োজন। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ২ বা ৩ পিএসআই। আবার মাঝেমধ্যে তা শূন্যেও নেমে আসছে। ফলে সিরামিক শিল্পের বেশির ভাগ কারখানা উৎপাদন ক্ষমতার ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে। তীব্র গ্যাস সংকটের কারণে ওই শিল্পে প্রতি মাসে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতির জন্য পেট্রোবাংলাও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বরং সিরামিক খাতের উদ্যোক্তাদের পেট্রোবাংলা বলেছে, পর্যাপ্ত এলএনজি আমদানি করা হলে অথবা তারা নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান করতে পারলেই পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হতে পারে। যদিও বিগত ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গত ৯ বছরে সরকার গ্যাসের দাম প্রায় ৩৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। ২০২৩ সালে প্রায় ১৫০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি করেছে এবং নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো।

কিন্তু সরকার তা রক্ষা করতে পারেনি। ফলে শুধু গ্যাস সংকটের কারণে ৫০টিরও বেশি সিরামিক কোম্পানি তাদের পুনঃবিনিয়োগ স্থগিত করেছে। যার মধ্যে পাঁচটি নতুন স্থাপন করা কারখানাও রয়েছে। যারা উৎপাদনই শুরু করতে পারেনি। সূত্র আরো জানায়, তৈরি পোশাক খাত মূলত ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাস ব্যবহার করে। গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে ওই শিল্পও বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে পোশাক খাতের উৎপাদন প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে। তা ছাড়া টেক্সটাইল খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তৈরি পোশাক খাতও কাঁচামাল পেতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এদিকে গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে দেশের শিল্প খাতের প্রধান চারটি শীর্ষ বাণিজ্য সংস্থা- বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ এবং বিটিটিএলএমইএ যৌথভাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে উৎপাদকরা বলেছেন, কারখানাগুলো অপর্যাপ্ত গ্যাস চাপ এবং অনিশ্চয়তার ওপর পরিচালিত হচ্ছে এবং উল্লেখযোগ্য আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। গ্যাসের ঘাটতির কারণে শিল্পাঞ্চলে উৎপাদন ৫০-৬০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে; যা সরবরাহ শৃঙ্খল এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত করেছে। তৈরি পোশাক খাতে সময়মতো কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, যা সময়মতো সরবরাহ ব্যাহত করছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

উৎপাদনমুখী শিল্পখাতে ত্রাহি অবস্থা

আপডেট সময় : ০৪:০৩:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

 

তীব্র গ্যাস সঙ্কটে ত্রাহি অবস্থায় দেশের উৎপাদনমুখী শিল্পখাত। ব্যাহত হচ্ছে রপ্তানিমুখী শিল্পসহ অন্যান্য কারখানার উৎপাদন। টেক্সটাইল, সিরামিক, তৈরি পোশাকসহ দেশের প্রধান শিল্পের ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টের গ্যাসের চাপ যেখানে ১৫ পিএসআই (পার স্কয়ার ইঞ্চি) থাকার কথা, সেখানে সাধারণত ২ বা ৩ পিএসআই চাপ পাওয়া যাচ্ছে। আবার মাঝেমধ্যে গ্যাসের চাপ শূন্যও হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর এবং ময়মনসিংহের মতো প্রধান শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত কারখানাগুলোতে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে গ্যাস সরবরাহ। দেশে দৈনিক প্রায় ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ) গ্যাসের প্রয়োজন হলেও বর্তমানে সরবরাহ আছে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে দিনে সরবরাহ ঘাটতি ১ হাজার এমএমসিএফ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। শিল্পখাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গ্যাস সংকটের কারণে দেশের ৫০ শতাংশ টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে গেছে।

বর্তমানে দেশে ১ হাজার ৮০০টি টেক্সটাইল মিল রয়েছে। তার মধ্যে ৭০০ স্পিনিং মিল। বিদ্যমান পরিস্থিতির সুযোগে ভারত থেকে বৈধ-অবৈধভাবে সুতা আমদানি হচ্ছে। অথচ দেশের মিলগুলো পুরোদমে চালু থাকলে আরো ১ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হতো। তাছাড়া বিশ্বব্যাপী চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের কারখানা স্থানান্তর হলেও তা এদেশের হাতছাড়া হচ্ছে। ওসব কারখানা এদেশে স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। সূত্র জানায়, সম্পূর্ণভাবে গ্যাসনির্ভর দেশের সিরামিক শিল্প। গ্যাসকে ওই শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ওই খাতে গ্যাসের বিকল্প জ্বালানি নেই। সিরামিক কারখানাগুলোতে গ্যাসের ১৫ পিএসআই চাপ প্রয়োজন। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ২ বা ৩ পিএসআই। আবার মাঝেমধ্যে তা শূন্যেও নেমে আসছে। ফলে সিরামিক শিল্পের বেশির ভাগ কারখানা উৎপাদন ক্ষমতার ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে। তীব্র গ্যাস সংকটের কারণে ওই শিল্পে প্রতি মাসে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতির জন্য পেট্রোবাংলাও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বরং সিরামিক খাতের উদ্যোক্তাদের পেট্রোবাংলা বলেছে, পর্যাপ্ত এলএনজি আমদানি করা হলে অথবা তারা নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান করতে পারলেই পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হতে পারে। যদিও বিগত ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গত ৯ বছরে সরকার গ্যাসের দাম প্রায় ৩৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। ২০২৩ সালে প্রায় ১৫০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি করেছে এবং নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো।

কিন্তু সরকার তা রক্ষা করতে পারেনি। ফলে শুধু গ্যাস সংকটের কারণে ৫০টিরও বেশি সিরামিক কোম্পানি তাদের পুনঃবিনিয়োগ স্থগিত করেছে। যার মধ্যে পাঁচটি নতুন স্থাপন করা কারখানাও রয়েছে। যারা উৎপাদনই শুরু করতে পারেনি। সূত্র আরো জানায়, তৈরি পোশাক খাত মূলত ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাস ব্যবহার করে। গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার কারণে ওই শিল্পও বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। গ্যাস সংকটের কারণে পোশাক খাতের উৎপাদন প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে। তা ছাড়া টেক্সটাইল খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তৈরি পোশাক খাতও কাঁচামাল পেতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এদিকে গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে দেশের শিল্প খাতের প্রধান চারটি শীর্ষ বাণিজ্য সংস্থা- বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ এবং বিটিটিএলএমইএ যৌথভাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে উৎপাদকরা বলেছেন, কারখানাগুলো অপর্যাপ্ত গ্যাস চাপ এবং অনিশ্চয়তার ওপর পরিচালিত হচ্ছে এবং উল্লেখযোগ্য আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। গ্যাসের ঘাটতির কারণে শিল্পাঞ্চলে উৎপাদন ৫০-৬০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে; যা সরবরাহ শৃঙ্খল এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত করেছে। তৈরি পোশাক খাতে সময়মতো কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, যা সময়মতো সরবরাহ ব্যাহত করছে।