রামুতে ভাতা প্রার্থীর কাছ থেকে সমাজসেবা কর্মকর্তার ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ
এতিম নিবাসী বৃদ্ধির নামে নিয়েছে ২৫ লক্ষ টাকা ঘুষ

- আপডেট সময় : ০১:৫৪:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫ ৮৫ বার পড়া হয়েছে
কক্সবাজােরে রামু উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আল গালিব এর বিরোদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘুষ বানিজ্য, অফিসে বসে অসামাজিক কার্যকলাপ, ভূয়া প্রকল্পের মাধ্যমে বরাদ্দের টাকা নয়ছয় সহ অভিযোগের পাহাড় এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এতে করে প্রতিনিয়ত উক্ত অফিসে সেবা নিতে আসা মানুষ হয়রানীর শিকার হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্যে ও ভুক্তভোগীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আল গালিব রামুতে যোগদানের পর থেকে নানান অসঙ্গতি চালিয়ে আসলেও বিষয়টি এতদিন যাবৎ অন্তরালেই ছিল।
এই অফিস থেকে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতা, হিজড়া ভাতা, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, হিজড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তি ভাতা সহ বিভিন্ন পরিসেবা দেয়ার কথা থাকলেও এখানে ঘুষ ছাড়া কোন কাজই হচ্ছেনা।
সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা যায়, সমাজসেবা কর্মকর্তা আল গালিবের নিজস্ব লোক মেরংলোয়া এলাকার আবদুল্লাহ আল নোমান এবং সমাজসেবা কার্যালয়ের নাইট গার্ড সৈয়দ মিয়ার পুত্র দিদারুল আলমের মাধ্যমেই মূলত ভাতা প্রার্থীর কাছ থেকে ঘুষ আদায় করা হচ্ছে।
এমন এক অভিযোগের সত্যতা মেলে গত শুক্রবার বিকেল ৩ টায়। ঐদিন বন্ধের দিন হলেও আবদুল্লাহ আল নোমান ও দিদারুল আলম তারা অফিসে বসে ভাতা প্রার্থী প্রতি জনের কাছ থেকে ৪ হাজার করে ঘুষের টাকা আদায় করছেন। এসময়ে কয়েকজন নারীকে টাকা দিয়েও ভাতা পাচ্ছেননা মর্মে উত্তেজিত হতে দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে বাক বিতন্ডা হলে স্থানীয় জনতা এসে ওই নারীদের কাছ থেকে নেয়া ঘুষের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য করা হয়। এসময় ঘুষ আদায়ের ব্যাপারে অভিযুক্ত আবদুল্লাহ আল নোমান ও দিদারুল আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সমাজসেবা কর্মকর্তা আল গালিবের নির্দেশে উক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে বলে তারা স্বীকারোক্তি প্রদান করেন।
ঐদিন রশিদ নগরের পানির ছড়া এলাকার রাশেদা বেগম বিধবা ভাতায় অন্তর্ভুক্তির জন্য ৪ হাজার এবং জোয়ারিয়ানালা হাসপাতাল পাড়া এলাকার মোমেনা বেগম নিজের প্রতিবন্ধী নাতিকে ভাতায় অন্তর্ভুক্ত করতে ৩ হাজার টাকা দিয়েছেন।
উক্ত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিএনপি নেতা মনজুর আলম জানান, রামু উপজেলা সমাজ সেবা কার্যালয় দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে। বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী এসব দুঃস্থ অসহায় মানুষের কাজ থেকে সরকারী বন্ধের দিনে অফিসে বসে দালালের মাধ্যমে প্রকাশ্য ঘুষ গ্রহন খুবই ধৃষ্টতা এবং সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার শামিল ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সমাজসেবা কর্মকর্তা আল গালিব নিয়মিত অফিস করেন না। যখনই অফিসে আসেন নিজ চেয়ারে বসেই ধুমপান করেন। অফিস কক্ষ থেকে স্পষ্ট ভেসে বেড়ায় মদের গন্ধ। সরকার যেখানে জনগনকে ধুমপান ও মাদকের বিরোদ্ধে সচেতন করছেন সেখানে সমাজসেবা কর্মকর্তা নিজেই অফিসে বসে এসব অসঙ্গতির সাথে সখ্য করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই অফিসের এক সাবেক কর্মচারী বলেন, এতিমখানার বিল প্রদানকালে মোটা অংকের ঘুষের টাকা না হলে বিল ছাড় দেননা সমাজসেবা কর্মকর্তা। চলতি বছরের মার্চ মাসে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৭ টি কওমী মাদ্রাসা কেন্দ্রীক এতিমখানা থেকে নিবাসী বৃদ্ধির নামে ২৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে ৫ আগস্টে সমাজ সেবা কার্যালয়ে ভাংচুর মর্মে ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে আনুমানিক ১০ লক্ষ টাকা নয়ছয় করেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদ্রাসা পরিচালক জানান, এতিম নিবাসী বৃদ্ধির কথা বলে প্রতি এতিম শিশুর জন্য মাথা পিছু ১০ হাজার টাকা করে দিয়েছেন সমাজ সেবা কার্যালয়ে।
স্থানীয় এক সংবাদকর্মী জানান, সমাজসেবা কর্মকর্তা আল গালিব একজন ধুরন্ধর প্রকৃতির লোক। দীর্ঘদিন ধরে তার বিরুদ্ধে স্থানীয় উপকার ভোগীরা নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করে আসছে। সাংবাদিকরা যখনি এসব অনিয়মের ব্যাপারে জানতে চাইত তিনি তখন নিজের স্ত্রীর অসুস্থতা (ক্যানসার) এর অজুহাতে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করত। তাই মানবিক খাতিরে অনেকে তার এসব অসঙ্গতি প্রকাশে সংকোচ বোধ করতো।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে সমাজ সেবা কর্মকর্তা আল গালিব তার পূর্বের চাকরীস্থল চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায় কর্মরত থাকাকালীন
আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সেখানকার উপজেলা পরিষদে অবরুদ্ধ সহ নানা ভাবে হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন। সেবা প্রার্থীদের ভাতায় দূর্নীতির কারণে তিনি ঐ স্টেশনে ক্রয় সংক্রান্ত দূর্নীতি ও হত্যা মামলার আসামীও হয়েছিলো।
বিগত ২৫ মে ২২ সালে নাচোল উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের একটি কক্ষ থেকে ইউনিয়ন সমাজকর্মী শামীম হোসেন গলায় ফাঁস দেয়া লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত শামীমের পরিবার ঘটনাটিকে হত্যাকাণ্ড দাবি করেন। এবং উক্ত হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে সমাজসেবা কর্মকর্তা আল গালিবকে আসামী করে হত্যা মামলা করা হয়। পরবর্তীতে বিশাল অংকের টাকার বিনিময়ে এসব মামলা থেকে অব্যাহতি পান বলে জানা যায়।
জানতে চাইলে রামু উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আল গালিব তার বিরোদ্ধে আনীত অভিযোগ এড়িয়ে যান। প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ এবং তিনি দীর্ঘদিন ধরে হ্যাকারের কবলে পড়েছেন বলে জানান। এতিম খানা থেকে নিবাসী বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রাপ্ত টাকা তিনি নেননি, এই অর্থ অফিসের নাইট গার্ড সৈয়দ মিয়া আত্মসাৎ করেছেন বলেও স্বীকারোক্তি দেন। অভিযোগের ব্যাপারে ছৈয়দ মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে লাইনে রেখে কোন কথা না বলে কিছুক্ষণ পর ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে তিনি আর ফোনকল রিসিভ করেননি।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, সমাজসেবা কর্মকর্তাকে অফিসে না পেয়ে অনেক ভাতা প্রার্থী তাকে অবগত করেছে। এছাড়া সামগ্রিক অভিযোগের ব্যাপারে তিনি খোঁজ নিবেন বলে জানান।