ঢাকা ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

এনবিআর ঘিরে আন্দোলন হয়ে উঠছে প্রশ্নবিদ্ধ

আমিনুল হক ভূইয়া
  • আপডেট সময় : ১২:১২:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫ ১০ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
  • লঙ্ঘন হচ্ছে সরকারী কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯

  • দেশজুড়ে শুল্ক-কর কার্যালয়ে অচলাবস্থা

 

এনবিআর ঘিরে কয়েকদিন যাবত আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। চলতি মাসের ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের এই অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। তারা সরকারী চাকুরী বিধিমালা ভঙ্গ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই অর্থনীতিখাতে অনেকটা স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ১২ মে অধ্যাদেশ জারির পর এনবিআর এখন রাজস্ব নীতি প্রণয়ন এবং আদায় দুটি কাজ করে থাকে। নতুন অধ্যাদেশ বাস্তবায়িত হলে রাজস্ব নীতি প্রণয়ন বিভাগ এবং আদায় করবে আরেক বিভাগ। অধ্যাদেশে রাজস্ব নীতি বিভাগের কাজের পরিধিতে কিছুটা পরিবর্তন এনে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক পদে প্রশাসন ক্যাডারসহ আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর আইন বাস্তবায়ন ও কর আদায়ের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ মূলত রাজস্ব আদায়ে কাজ পরিচালনা করবে।
আইনে বলা হয়েছে, নতুন রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব পদে যেকোনো যোগ্য সরকারি কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিতে পারবে সরকার। এমনকি কাস্টমস, এক্সাইজ ও মূল্য সংযোজন কর আপিল ট্রাইব্যুনাল এবং আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনালকেও রাজস্ব নীতি বিভাগের অধীনে নিয়ে আসা হবে, যা থাকবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতায়। আইন অনুযায়ী, রাজস্ব নীতি বিভাগের বিভিন্ন পদে আয়কর, মূসক, কাস্টমস, অর্থনীতি, ব্যবসায় প্রশাসন, গবেষণা ও পরিসংখ্যান, প্রশাসন, অডিট ও হিসাবরক্ষণ এবং আইন সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে। অথচ আইন লঙ্গল করে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারিদের এমন কর্মসূচি পালন কতটুকু যুক্তিসঙ্গত, সেই প্রশ্ন এসেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের করা আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ দেশজুড়ে শুল্ক-কর কার্যালয়ে কয়েক দিন ধরে অচলাবস্থা চলছে। মূলত অধ্যাদেশ জারির পর থেকে প্রতিবাদ করে আসছে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। টানা-পাঁচ কর্মদিবস কলমবিরতির মতো কর্মসূচি পালন করেছেন। তাতে করে চলমান কাজকর্মের স্থবিরতা বিরাজ করছে। এমন অবস্থায় গত মঙ্গলবার অধ্যাদেশ বাতিল এবং টেকসই রাজস্ব সংস্কারের দাবি আদায়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা বসেন কর্মসূচিতে থাকা কর্মকর্ত-কর্মচারিরা। কিন্তু সরকারের সঙ্গে তাদের বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়ায় বুধবার থেকে ফের স্ব স্ব কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়। সর্বশেষ এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, অধ্যাদেশ নিয়ে তাদের কোন আপত্তি নেই। আপত্তি পদ-পদবি নিয়ে। এজন্য এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন করছেন শুল্ক-কর বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ জারির পাশাপাশি রাজস্ব নীতি বিভাগে রাজস্ব খাতের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান তারা। তবে, অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সরকার উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে এই বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ দেবে। সেখানে রাজস্ব খাতের অভিজ্ঞতার কথা বলা নেই। এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারিরা আন্দোলন আইন লঙ্গন করছেন।
সরকারী কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯ এর (ক-তে) স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যেকোনো সরকারী কর্মচারী এমন কোনো কাজে নিয়োজিত থাকেন যাহার ফলে অন্যান্য কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয় বা শৃংখলা ব্যাহত হয় বা কোনো সরকারী কর্মচারীর কর্তব্য সম্পাদনের বিঘ্ন ঘটে, অথবা (খ) অন্যদের সাথে সংঘবদ্ধভাবে হউক বা না-ই হউক কোন সরকারী কর্মচারী নিজে ছুটি ব্যতীত বা কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত অনুপস্থিত থাকেন অথবা কর্তব্য সম্পাদনের অন্যভাবে বিরত থাকেন বা ব্যর্থ হন, অথবা (গ) অন্য কোনো সরকারী কর্মচারীকে অনুপস্থিত থাকিতে বা বিরত থাকতে বা তার কর্তব্যকর্ম সম্পাদন না করতে প্ররোচিত বা অন্য যেকোনো উপায়ে নিবৃত্ত করেন, অথবা (ঘ) অন্য কোনো সরকারী কর্মচারীকে তাহার কর্তব্যকর্মে উপস্থিত হতে অথবা কর্তব্য কর্মসম্পাদন করিতে বাধাদান করেন, তাহা হলে তিনি ৪ ধারায় উল্লেখিত যেকোনো দন্ডে দন্ডিত হবেন।
গত বছরের জুলাই আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের পর ২৮ অগাস্ট দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক চিত্র জানতে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এনবিআরকে আলাদা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। হাসিনার পনের বছরে চামচা পুঁজিবাদ থেকেই চোরতন্ত্র তৈরি হয়েছিলো, যাতে রাজনীতিক, সামরিক ও বেসামরিক আমলা, বিচার বিভাগসহ সবাই অংশ নিয়েছে। হাসিনার আমলে বাংলাদেশ থেকে ২৮ উপায়ে দুর্নীতির মাধ্যমে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে, এমনটা বলা হচ্ছে শ্বেতপত্রে। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর ড. দেপ্রিয় ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলের দুর্নীতি, লুণ্ঠন ও আর্থিক কারচুপির যে তথ্য পাওয়া গেছে তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো। এই কমিটি দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাটসহ অর্থনীতির নানা বিষয়ে তাদের প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে প্রায় ৪০০ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্র তৈরি করেছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-এর মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা ৬০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় ১৪ থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলার (১.৬১ থেকে ২.৮০ লাখ কোটি টাকা) রাজনৈতিক চাঁদাবাজি, ঘুষ, এবং বাজেট বাড়ানোর মতো বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে নষ্ট হয়েছে। বিগত ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক খাতে যে মন্দ ঋণ তৈরি হয়েছে, তা দিয়ে ১৪টি মেট্রোরেল বা ২৪টি পদ্মা সেতু করা যেত।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

এনবিআর ঘিরে আন্দোলন হয়ে উঠছে প্রশ্নবিদ্ধ

আপডেট সময় : ১২:১২:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫
  • লঙ্ঘন হচ্ছে সরকারী কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯

  • দেশজুড়ে শুল্ক-কর কার্যালয়ে অচলাবস্থা

 

এনবিআর ঘিরে কয়েকদিন যাবত আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। চলতি মাসের ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের এই অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। তারা সরকারী চাকুরী বিধিমালা ভঙ্গ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই অর্থনীতিখাতে অনেকটা স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ১২ মে অধ্যাদেশ জারির পর এনবিআর এখন রাজস্ব নীতি প্রণয়ন এবং আদায় দুটি কাজ করে থাকে। নতুন অধ্যাদেশ বাস্তবায়িত হলে রাজস্ব নীতি প্রণয়ন বিভাগ এবং আদায় করবে আরেক বিভাগ। অধ্যাদেশে রাজস্ব নীতি বিভাগের কাজের পরিধিতে কিছুটা পরিবর্তন এনে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক পদে প্রশাসন ক্যাডারসহ আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর আইন বাস্তবায়ন ও কর আদায়ের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ মূলত রাজস্ব আদায়ে কাজ পরিচালনা করবে।
আইনে বলা হয়েছে, নতুন রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব পদে যেকোনো যোগ্য সরকারি কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিতে পারবে সরকার। এমনকি কাস্টমস, এক্সাইজ ও মূল্য সংযোজন কর আপিল ট্রাইব্যুনাল এবং আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনালকেও রাজস্ব নীতি বিভাগের অধীনে নিয়ে আসা হবে, যা থাকবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতায়। আইন অনুযায়ী, রাজস্ব নীতি বিভাগের বিভিন্ন পদে আয়কর, মূসক, কাস্টমস, অর্থনীতি, ব্যবসায় প্রশাসন, গবেষণা ও পরিসংখ্যান, প্রশাসন, অডিট ও হিসাবরক্ষণ এবং আইন সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে। অথচ আইন লঙ্গল করে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারিদের এমন কর্মসূচি পালন কতটুকু যুক্তিসঙ্গত, সেই প্রশ্ন এসেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের করা আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ দেশজুড়ে শুল্ক-কর কার্যালয়ে কয়েক দিন ধরে অচলাবস্থা চলছে। মূলত অধ্যাদেশ জারির পর থেকে প্রতিবাদ করে আসছে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। টানা-পাঁচ কর্মদিবস কলমবিরতির মতো কর্মসূচি পালন করেছেন। তাতে করে চলমান কাজকর্মের স্থবিরতা বিরাজ করছে। এমন অবস্থায় গত মঙ্গলবার অধ্যাদেশ বাতিল এবং টেকসই রাজস্ব সংস্কারের দাবি আদায়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা বসেন কর্মসূচিতে থাকা কর্মকর্ত-কর্মচারিরা। কিন্তু সরকারের সঙ্গে তাদের বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়ায় বুধবার থেকে ফের স্ব স্ব কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়। সর্বশেষ এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, অধ্যাদেশ নিয়ে তাদের কোন আপত্তি নেই। আপত্তি পদ-পদবি নিয়ে। এজন্য এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আন্দোলন করছেন শুল্ক-কর বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ জারির পাশাপাশি রাজস্ব নীতি বিভাগে রাজস্ব খাতের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান তারা। তবে, অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সরকার উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে এই বিভাগের সচিব পদে নিয়োগ দেবে। সেখানে রাজস্ব খাতের অভিজ্ঞতার কথা বলা নেই। এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারিরা আন্দোলন আইন লঙ্গন করছেন।
সরকারী কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯ এর (ক-তে) স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যেকোনো সরকারী কর্মচারী এমন কোনো কাজে নিয়োজিত থাকেন যাহার ফলে অন্যান্য কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয় বা শৃংখলা ব্যাহত হয় বা কোনো সরকারী কর্মচারীর কর্তব্য সম্পাদনের বিঘ্ন ঘটে, অথবা (খ) অন্যদের সাথে সংঘবদ্ধভাবে হউক বা না-ই হউক কোন সরকারী কর্মচারী নিজে ছুটি ব্যতীত বা কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত অনুপস্থিত থাকেন অথবা কর্তব্য সম্পাদনের অন্যভাবে বিরত থাকেন বা ব্যর্থ হন, অথবা (গ) অন্য কোনো সরকারী কর্মচারীকে অনুপস্থিত থাকিতে বা বিরত থাকতে বা তার কর্তব্যকর্ম সম্পাদন না করতে প্ররোচিত বা অন্য যেকোনো উপায়ে নিবৃত্ত করেন, অথবা (ঘ) অন্য কোনো সরকারী কর্মচারীকে তাহার কর্তব্যকর্মে উপস্থিত হতে অথবা কর্তব্য কর্মসম্পাদন করিতে বাধাদান করেন, তাহা হলে তিনি ৪ ধারায় উল্লেখিত যেকোনো দন্ডে দন্ডিত হবেন।
গত বছরের জুলাই আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতনের পর ২৮ অগাস্ট দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক চিত্র জানতে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এনবিআরকে আলাদা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। হাসিনার পনের বছরে চামচা পুঁজিবাদ থেকেই চোরতন্ত্র তৈরি হয়েছিলো, যাতে রাজনীতিক, সামরিক ও বেসামরিক আমলা, বিচার বিভাগসহ সবাই অংশ নিয়েছে। হাসিনার আমলে বাংলাদেশ থেকে ২৮ উপায়ে দুর্নীতির মাধ্যমে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে, এমনটা বলা হচ্ছে শ্বেতপত্রে। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর ড. দেপ্রিয় ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলের দুর্নীতি, লুণ্ঠন ও আর্থিক কারচুপির যে তথ্য পাওয়া গেছে তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো। এই কমিটি দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাটসহ অর্থনীতির নানা বিষয়ে তাদের প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে প্রায় ৪০০ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্র তৈরি করেছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-এর মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা ৬০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় ১৪ থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলার (১.৬১ থেকে ২.৮০ লাখ কোটি টাকা) রাজনৈতিক চাঁদাবাজি, ঘুষ, এবং বাজেট বাড়ানোর মতো বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে নষ্ট হয়েছে। বিগত ১৫ বছরে দেশের ব্যাংক খাতে যে মন্দ ঋণ তৈরি হয়েছে, তা দিয়ে ১৪টি মেট্রোরেল বা ২৪টি পদ্মা সেতু করা যেত।