ঢাকা ১১:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo কালিগঞ্জে নিরাপদ সড়ক দিবসে র‍্যালি ও আলোচনা সভা Logo মোংলায় জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালন Logo কক্সবাজারে পর্যটক নিরাপত্তায় রিজিয়ন ট্যুরিস্ট পুলিশের এডিআইজি আপেল মাহমুদ Logo সিরাজদিখানে গ্রাম পুলিশের মাঝে পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ Logo কালিগঞ্জে মাংসের দোকানে ভ্রাম্যমান আদালত Logo পলাশবাড়ী পৌরসভার বহুমুখী উন্নয়নে কাস্টার ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান শীর্ষক দিনব্যাপি কর্মশালা Logo টেকনাফে পাহাড়ের পর সাগর পথে পাচার কালে ২৯ জন ভুক্তভোগী সহ মানব পাচারকারী চক্রের ৩ সদস্য আটক Logo তিতাসে বিএনপির লিপলেট বিতরণ Logo গোমস্তাপুরে জোরপূর্বক ধানীজমি দখলের চেষ্টা Logo কিশোরগঞ্জে রেলের গাছ কেটে বিক্রি করলেন কর্মচারীরা

এবার ময়লা নৈরাজ্য অতিষ্ঠ নগরবাসী

হালিম মোহাম্মদ
  • আপডেট সময় : ২৩৮ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ক্ষমতার পালাবদলে রাজধানী ঢাকার বর্জ্য পরিবহন ব্যবস্থায় হাত বদল হয়েছে। পাড়া মহল্লায় নতুন মুখের লোকজনের দাপটে অতিষ্ঠ লোকজন। ময়লা অপসারনে প্রতি ফ্ল্যাট বা বাসা থেকে দেড়শ থেকে দুইশ টাকা নিচ্ছে। তাছাড়া কম দিতে চাইলে তাদের মাস্তানির কাছে রীতিমত অপমানিত হতে হচ্ছে লোকজনের। রাজধানীর পাড়া মহল্লায় ময়লা অপসারনের ক্ষেত্রে চলছে নৈরাজ্য। বিষয়টি দেখার কেউ নেই। এমন মন্তব্য করছেন রাজধানীর স্থায়ী বাসিন্দারা।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, বর্জ্য ঠিকাদাররা একেক বাসা থেকে ১০০ টাকার বেশি বর্জ্য নেওয়ার চার্জ বা বিল নিতে পারবেনা। এর ব্যত্যয় হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নিজ কার্যালয়ে গনমাধ্যমকর্মীদের তিনি এ কথা বলেন। ডিএসসিসির প্রশাসক বলেন, নাগরিকদের সেবা প্রদানে সিটি কর্পোরেশন সর্বদা নিয়োজিত আছে। নাগরিকদের থেকে যে কোনো সেবার বিপরীতে কোনো অসদুপায় অবলম্বন করলে সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ময়লা অপসারন নিয়ে নৈরাজ্য করা চলবে না। তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে। প্রশাসক বলেন, সিটি কর্পোরেশনে বসে আমাদের পক্ষে প্রতিটি ওয়ার্ডের বাসা বাড়ির খোঁজ-খবর নেয়া সম্ভব না। তবে কেউ যদি অভিযোগ করেন তবে তাৎক্ষণিকভাবে সেটার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন ৭৫টি ওয়ার্ডে প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহ সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে নতুন করে আবেদন আহ্বান করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে অচিরেই নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। বর্তমানে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মেয়াদ আগামী দুই মাসের মধ্যে শেষ হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গতি ও মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে নতুন নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
প্রশাসক বলেন, অত্যন্ত মানবিক কারণে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত আগের ঠিকাদার কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। তবে কারো বিরুদ্ধে বেশি চার্জ নেওয়ার অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, দক্ষিণ সিটির ৭৫টি ওয়ার্ডে একই নিয়মে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চার্জ নিতে হবে। এ বিষয়ে বেশি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে ডিএসসিসির প্রশাসকের নির্দেশ উপেক্ষা করে ময়লা অপসারনের ক্ষেত্রে বাসা বাড়ি থেকে বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা গা ঢাকা দেওয়ায় ঢাকার দুই সিটি করপোরশেনের ওয়ার্ডে বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের কাজের দখল নিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। কিছু ওয়ার্ডে আগে অবৈধভাবে যেসব কাজ দখল করে রাখা হয়েছিল সেগুলোর দায়িত্ব নিয়োগ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফিরে পেয়েছে।
ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক ধাপের কাজটি করে প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডার বা পিডব্লিউসিএসপি’রা। এসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে ভ্যানে করে গৃহস্থালী বর্জ্য সংগ্রহ করে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ট্রাকে করে বর্জ্য নিয়ে যাওয়া হয় ল্যান্ডফিলে।
উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪টি ওয়ার্ডে প্রায় ৩০০টি প্রতিষ্ঠান বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজটি করে। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি প্রতিষ্ঠানকে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ দেওয়া হয়। সেসব প্রতিষ্ঠান আবার একাধিক ব্যক্তিকে এলাকা ভাগ করে দেয়।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য পিডব্লিউসিএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিটি বাড়ির জন্য নির্দিষ্ট টাকা আদায় করে। এলাকাভেদে ওই চাঁদার হার ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছিল। বর্জ্য সংগ্রহের কাজটি এতদিন নিয়ন্ত্রণ করত স্থানীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ খাতে প্রতি মাসে শত কোটি টাকার বেশি আদায় করা হয়। আওয়ামী সিন্ডিকেটের লোকজনই লুটে পুটে খাচ্ছিল।
ডিএনসিসির ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের (আগারগাঁও) এলাকার বর্জ্য সংগ্রহের লাইসেন্স ছিল এটুজেড মিডিয়া অ্যান্ড সোশ্যাল সার্ভিস সেন্টার নামে একটি কোম্পানির। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ফোরকান হোসেন এতদিন এটি দখলে রেখেছিলেন। ৫ অগাস্টের পর ফোরকান এলাকা ছেড়েছেন। এখন বর্জ্য সংগ্রহের কাজটি নিয়েছেন এটুজেড মিডিয়া অ্যান্ড সোশ্যাল সার্ভিস সেন্টারের মালিক মো. নাজমুল হক পান্না।
নাজমুল হক পান্না বলেন, লাইসেন্স ছিল আমার নামে, কিন্তু ফোরকান এটি গত সাড়ে চার বছর ধরে তার দখলে রেখেছিল। আমি অনেক জায়গায় গিয়েছি, অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু কোনো প্রতিকার হয়নি। ৫ তারিখের পর আমারটা আমি বুঝে নিয়েছি।
ঢাকার মহাখালীর বিভিন্ন এলাকা থেকে যারা বর্জ্য সংগ্রহ করে টিঅ্যান্ডটি কলেজের পাশের এসটিএসে এনে ফেলা হয়। সেখানে নিয়ে বর্জ্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ভ্যানচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে যারা নিয়ন্ত্রণ করতেন তারা এখন নেই। নতুন লোকজন এসেছে। নতুনরা আগের চেয়ে আরো বেশি টাকা নিচ্ছে।
রাশিদুল হাসান নামে একজন ভ্যানচালক বলেন, তিনিসহ চারজন ভ্যানচালক সানোয়ার নামে একজনের অধীনে কাজ করতেন। ভ্যানচালকদের বেতন ১২ হাজার টাকা। গত ৫ অগাস্টের পর থেকে সানোয়ার পলাতক। বিএনপির লোকজন পুরো দখল নিয়েছে। এখন বিএনপির যারা আছে তারা এইটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করতেছে। আজকে আমাকে বলছে বিল তুইলা তাদের কাছে জমা দিতে। তাদের কথায় আমি ঘর প্রতি দুইশ টাকা করে তুলেছি।
ডিএসসিসির ওয়ার্ডের বর্জ্য অপসারণের লাইসেন্স আছে এমন একজন আওয়ামী লীগ কর্মী বলেন, প্রতি বছর জুলাই মাসে টেন্ডারের মাধ্যমে ওয়ার্ডভিত্তিক বর্জ্য সংগ্রহের কাজ দেওয়া হয়। তিনি ১২ লাখ টাকা দিয়ে কাজটি নিয়েছিলেন। পরে পুরো ওয়ার্ডের বর্জ্য সংগ্রহের কাজ আরও পাঁচজনকে দিয়েছেন। ৫ অগাস্টের পর থেকে তিনি এলাকা ছাড়া। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা সেগুলোর দখল নিয়েছে। পুরো কন্ট্রোল ওরা দখলে নিয়ে গেছে। এক গ্রুপকে ঠা-া করলে আরেক গ্রুপ নিয়ে টাকা নিতে আসে। টাকা না দিলে মারে। সম্প্রতি আমাদের ম্যানেজারের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে টাকা না দেওয়ায়। আমি এমনিতেই ঝামেলায় আছি, পালিয়ে বেড়াচ্ছি। নাম বললে বাসাবাড়িতে হামলা করতে পারে।
অপরদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ, কদমতলী, দোলাইর পাড় ও রসুলপুর এলাকায় বাসা বাড়ি থেকে বর্জ্য নেওয়ার ব্যবস্থাপনায় নিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে একটি গ্রুপ। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত পরিচয় দিয়ে এসব এলাকার কিছু ব্যক্তি দায়িত্ব বুঝে নিয়ে এলাকায় নৈরাজ্য শুরু করেছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নির্বাচিত বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কাছ থেকে সমঝোতার মাধ্যমে পতিত দলের নেতাকর্মিরা কাজ নিয়েছিলেন। মূলত ওয়ার্ড কাউন্সিলররা এসব নিয়ন্ত্রণ করে পরিচালনা করেন পছন্দ অনুযায়ী দলীয় ব্যক্তিদের দিয়ে। ক্ষমতার পালাবদল হওয়ায় এ এলাকার নির্বাচিত কাউন্সিলররাও গা ঢাকা দিয়েছেন। এরফলে পাড়া মহল্লায় এক শ্রেনীর নব্য বিএনপি নেতা সেজে ময়লা অপসারনের কাজে নৈরাজ্য করছে।
এবিষয়ে দনিয়া নিয়ে গঠিত ৬১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জুম্মন মিয়া, দোলাইর পাড়-গেন্ডারিয়া এলাকা নিয়ে গঠিত ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী হাবিবুর রহমান হাবু ও কদমতলী-মুরাদপুর এলাকা নিয়ে গঠিত ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রুহুল আমিনের বক্তব্য জানতে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি।
কাউন্সিলর রুহুল আমিনের মোবাইলে ফোন করা হলে আরেক ব্যক্তি তা রিসিভ করেন। নিজের পরিচয় না দিয়ে তিনি বলেন, নম্বরটি রুহুল আমিনের। আমি তার কাছের লোক। তিনি বাইরে আছেন, তাকে এখন পাওয়া যাবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

এবার ময়লা নৈরাজ্য অতিষ্ঠ নগরবাসী

আপডেট সময় :

ক্ষমতার পালাবদলে রাজধানী ঢাকার বর্জ্য পরিবহন ব্যবস্থায় হাত বদল হয়েছে। পাড়া মহল্লায় নতুন মুখের লোকজনের দাপটে অতিষ্ঠ লোকজন। ময়লা অপসারনে প্রতি ফ্ল্যাট বা বাসা থেকে দেড়শ থেকে দুইশ টাকা নিচ্ছে। তাছাড়া কম দিতে চাইলে তাদের মাস্তানির কাছে রীতিমত অপমানিত হতে হচ্ছে লোকজনের। রাজধানীর পাড়া মহল্লায় ময়লা অপসারনের ক্ষেত্রে চলছে নৈরাজ্য। বিষয়টি দেখার কেউ নেই। এমন মন্তব্য করছেন রাজধানীর স্থায়ী বাসিন্দারা।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, বর্জ্য ঠিকাদাররা একেক বাসা থেকে ১০০ টাকার বেশি বর্জ্য নেওয়ার চার্জ বা বিল নিতে পারবেনা। এর ব্যত্যয় হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নিজ কার্যালয়ে গনমাধ্যমকর্মীদের তিনি এ কথা বলেন। ডিএসসিসির প্রশাসক বলেন, নাগরিকদের সেবা প্রদানে সিটি কর্পোরেশন সর্বদা নিয়োজিত আছে। নাগরিকদের থেকে যে কোনো সেবার বিপরীতে কোনো অসদুপায় অবলম্বন করলে সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ময়লা অপসারন নিয়ে নৈরাজ্য করা চলবে না। তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে। প্রশাসক বলেন, সিটি কর্পোরেশনে বসে আমাদের পক্ষে প্রতিটি ওয়ার্ডের বাসা বাড়ির খোঁজ-খবর নেয়া সম্ভব না। তবে কেউ যদি অভিযোগ করেন তবে তাৎক্ষণিকভাবে সেটার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন ৭৫টি ওয়ার্ডে প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহ সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে নতুন করে আবেদন আহ্বান করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে অচিরেই নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। বর্তমানে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মেয়াদ আগামী দুই মাসের মধ্যে শেষ হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গতি ও মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে নতুন নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।
প্রশাসক বলেন, অত্যন্ত মানবিক কারণে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত আগের ঠিকাদার কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। তবে কারো বিরুদ্ধে বেশি চার্জ নেওয়ার অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, দক্ষিণ সিটির ৭৫টি ওয়ার্ডে একই নিয়মে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চার্জ নিতে হবে। এ বিষয়ে বেশি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে ডিএসসিসির প্রশাসকের নির্দেশ উপেক্ষা করে ময়লা অপসারনের ক্ষেত্রে বাসা বাড়ি থেকে বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা গা ঢাকা দেওয়ায় ঢাকার দুই সিটি করপোরশেনের ওয়ার্ডে বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের কাজের দখল নিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। কিছু ওয়ার্ডে আগে অবৈধভাবে যেসব কাজ দখল করে রাখা হয়েছিল সেগুলোর দায়িত্ব নিয়োগ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফিরে পেয়েছে।
ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক ধাপের কাজটি করে প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডার বা পিডব্লিউসিএসপি’রা। এসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে ভ্যানে করে গৃহস্থালী বর্জ্য সংগ্রহ করে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ট্রাকে করে বর্জ্য নিয়ে যাওয়া হয় ল্যান্ডফিলে।
উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪টি ওয়ার্ডে প্রায় ৩০০টি প্রতিষ্ঠান বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজটি করে। আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি প্রতিষ্ঠানকে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ দেওয়া হয়। সেসব প্রতিষ্ঠান আবার একাধিক ব্যক্তিকে এলাকা ভাগ করে দেয়।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য পিডব্লিউসিএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিটি বাড়ির জন্য নির্দিষ্ট টাকা আদায় করে। এলাকাভেদে ওই চাঁদার হার ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছিল। বর্জ্য সংগ্রহের কাজটি এতদিন নিয়ন্ত্রণ করত স্থানীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ খাতে প্রতি মাসে শত কোটি টাকার বেশি আদায় করা হয়। আওয়ামী সিন্ডিকেটের লোকজনই লুটে পুটে খাচ্ছিল।
ডিএনসিসির ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের (আগারগাঁও) এলাকার বর্জ্য সংগ্রহের লাইসেন্স ছিল এটুজেড মিডিয়া অ্যান্ড সোশ্যাল সার্ভিস সেন্টার নামে একটি কোম্পানির। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ফোরকান হোসেন এতদিন এটি দখলে রেখেছিলেন। ৫ অগাস্টের পর ফোরকান এলাকা ছেড়েছেন। এখন বর্জ্য সংগ্রহের কাজটি নিয়েছেন এটুজেড মিডিয়া অ্যান্ড সোশ্যাল সার্ভিস সেন্টারের মালিক মো. নাজমুল হক পান্না।
নাজমুল হক পান্না বলেন, লাইসেন্স ছিল আমার নামে, কিন্তু ফোরকান এটি গত সাড়ে চার বছর ধরে তার দখলে রেখেছিল। আমি অনেক জায়গায় গিয়েছি, অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু কোনো প্রতিকার হয়নি। ৫ তারিখের পর আমারটা আমি বুঝে নিয়েছি।
ঢাকার মহাখালীর বিভিন্ন এলাকা থেকে যারা বর্জ্য সংগ্রহ করে টিঅ্যান্ডটি কলেজের পাশের এসটিএসে এনে ফেলা হয়। সেখানে নিয়ে বর্জ্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ভ্যানচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে যারা নিয়ন্ত্রণ করতেন তারা এখন নেই। নতুন লোকজন এসেছে। নতুনরা আগের চেয়ে আরো বেশি টাকা নিচ্ছে।
রাশিদুল হাসান নামে একজন ভ্যানচালক বলেন, তিনিসহ চারজন ভ্যানচালক সানোয়ার নামে একজনের অধীনে কাজ করতেন। ভ্যানচালকদের বেতন ১২ হাজার টাকা। গত ৫ অগাস্টের পর থেকে সানোয়ার পলাতক। বিএনপির লোকজন পুরো দখল নিয়েছে। এখন বিএনপির যারা আছে তারা এইটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করতেছে। আজকে আমাকে বলছে বিল তুইলা তাদের কাছে জমা দিতে। তাদের কথায় আমি ঘর প্রতি দুইশ টাকা করে তুলেছি।
ডিএসসিসির ওয়ার্ডের বর্জ্য অপসারণের লাইসেন্স আছে এমন একজন আওয়ামী লীগ কর্মী বলেন, প্রতি বছর জুলাই মাসে টেন্ডারের মাধ্যমে ওয়ার্ডভিত্তিক বর্জ্য সংগ্রহের কাজ দেওয়া হয়। তিনি ১২ লাখ টাকা দিয়ে কাজটি নিয়েছিলেন। পরে পুরো ওয়ার্ডের বর্জ্য সংগ্রহের কাজ আরও পাঁচজনকে দিয়েছেন। ৫ অগাস্টের পর থেকে তিনি এলাকা ছাড়া। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা সেগুলোর দখল নিয়েছে। পুরো কন্ট্রোল ওরা দখলে নিয়ে গেছে। এক গ্রুপকে ঠা-া করলে আরেক গ্রুপ নিয়ে টাকা নিতে আসে। টাকা না দিলে মারে। সম্প্রতি আমাদের ম্যানেজারের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে টাকা না দেওয়ায়। আমি এমনিতেই ঝামেলায় আছি, পালিয়ে বেড়াচ্ছি। নাম বললে বাসাবাড়িতে হামলা করতে পারে।
অপরদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ, কদমতলী, দোলাইর পাড় ও রসুলপুর এলাকায় বাসা বাড়ি থেকে বর্জ্য নেওয়ার ব্যবস্থাপনায় নিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে একটি গ্রুপ। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত পরিচয় দিয়ে এসব এলাকার কিছু ব্যক্তি দায়িত্ব বুঝে নিয়ে এলাকায় নৈরাজ্য শুরু করেছে।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নির্বাচিত বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কাছ থেকে সমঝোতার মাধ্যমে পতিত দলের নেতাকর্মিরা কাজ নিয়েছিলেন। মূলত ওয়ার্ড কাউন্সিলররা এসব নিয়ন্ত্রণ করে পরিচালনা করেন পছন্দ অনুযায়ী দলীয় ব্যক্তিদের দিয়ে। ক্ষমতার পালাবদল হওয়ায় এ এলাকার নির্বাচিত কাউন্সিলররাও গা ঢাকা দিয়েছেন। এরফলে পাড়া মহল্লায় এক শ্রেনীর নব্য বিএনপি নেতা সেজে ময়লা অপসারনের কাজে নৈরাজ্য করছে।
এবিষয়ে দনিয়া নিয়ে গঠিত ৬১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জুম্মন মিয়া, দোলাইর পাড়-গেন্ডারিয়া এলাকা নিয়ে গঠিত ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী হাবিবুর রহমান হাবু ও কদমতলী-মুরাদপুর এলাকা নিয়ে গঠিত ৫২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রুহুল আমিনের বক্তব্য জানতে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি।
কাউন্সিলর রুহুল আমিনের মোবাইলে ফোন করা হলে আরেক ব্যক্তি তা রিসিভ করেন। নিজের পরিচয় না দিয়ে তিনি বলেন, নম্বরটি রুহুল আমিনের। আমি তার কাছের লোক। তিনি বাইরে আছেন, তাকে এখন পাওয়া যাবে না।