ঢাকা ০৭:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫

এসএসসি পরীক্ষায় দেশসেরা দৃষ্টি চিকিৎসক হতে চায়

বগুড়া অফিস
  • আপডেট সময় : ১২৫ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বগুড়ার বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় স্বর্ণালী আক্তার দৃষ্টি। ফলাফলে দেখা যায়, বিজ্ঞান বিভাগের এই ছাত্রী মোট এক হাজার ৩০০ নম্বরের মধ্যে এক হাজার ২৮৩ পেয়েছে। এই ফলে সারাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় এবং রাজশাহী বোর্ড ও সারাদেশে মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়েছে দৃষ্টি। তাঁর সাফল্যে খুশি মা-বাবা, শিক্ষক ও স্বজন-প্রতিবেশী। দৃষ্টির স্বপ্ন, সে চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করবে।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ লক্ষ্মীকোলার চক গোপালপাড়ার কাঁচামাল ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন ও গৃহিণী রাবেয়া সুলতানার মেয়ে দৃষ্টি। আর্থিক সংকটে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারেননি দেলোয়ার হোসেন। তবে ছেলেমেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করবেন– এমন চিন্তা ছিল সবসময়। এ কারণে বাড়ি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে বগুড়া শহরের বারোপুরে বিএএফ শাহীন কলেজে মেয়েকে ভর্তি করিয়েছিলেন। শিবগঞ্জের এই নিভৃত পল্লির বাড়ি থেকেই প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পাড়ি দিত দৃষ্টি। ভালোভাবে পড়াশোনা করবে, ভালো ফল করবে– এমন প্রত্যাশা ছিল তার।
তার মা রাবেয়া সুলতানা জানান, ছোটবেলা থেকেই সব ক্লাসে প্রথম হয়ে আসছে দৃষ্টি। পেয়েছে অনেক পুরস্কার। প্রতিদিন ভোর ৫টায় ঘুম থেকে ওঠে সে। দূরে হওয়ায় ৬টার দিকে বাড়ি থেকে স্কুলের উদ্দেশে রওনা দিত। ফিরত দুপুরে। এরপর খাওয়া শেষে প্রাইভেট টিউটরের কাছে যেত। বাড়ি ফিরে আরও ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পড়ত দৃষ্টি।
রাবেয়া বলেন, ‘বোর্ড বইগুলো প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছে সে। এসএসসি পরীক্ষায় সাফল্যের জন্য ক্লাস নাইন থেকেই সব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে পড়েছে সে। যার ফলও সে পেয়েছে। গণিত, উচ্চতর গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, শারীরিক শিক্ষা ও ক্যারিয়ার শিক্ষায় পেয়েছে পূর্ণ নম্বর।’
দৃষ্টির বাবা দেলোয়ার বলেন, ‘মেয়ে রাজশাহী বোর্ডে প্রথম ও দেশে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। এটি যে কত গর্বের বিষয়, বলে বোঝানো যাবে না। প্রত্যেক বাবা-মা সন্তানের সাফল্য প্রত্যাশা করেন।’
তিনি বলেন, ‘সন্তানদের ভালোভাবে পড়াশোনা করাব– আমার মাথায় সব সময় এই চিন্তা। দৃষ্টির চেষ্টা সফল হয়েছে। মেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় বিস্ময়কর সাফল্য পেয়েছে, আর বড় ছেলে রবিউল ইসলাম রাব্বি পুলিশে এসআই পদে ট্রেনিং নিচ্ছে।’
দৃষ্টি জানায়, সে ভালো ফল করবে– এমন প্রত্যাশা ছিল। তবে এত ভালো হবে, তা প্রত্যাশা করেনি। সে বলে, ‘আমি নিয়মিত বোর্ড বই পড়তাম, রিভিশন দিতাম। গাইড পড়তাম না।’ স্বপ্নের বিষয়ে জানতে চাইলে দৃষ্টি বলে, ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করব।
বগুড়ার বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ গ্রুপ ক্যাপ্টেন শান্তনু চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের সব কৃতী শিক্ষার্থীর জন্য আমরা গর্বিত। দৃষ্টি এ বছর বোর্ডে সেরা হওয়ায় আমাদের প্রতিষ্ঠান আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।’
দৃষ্টির লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁর এই বার্তা গত ১৩ জুলাই দৃষ্টির পরিবারের কাছে পৌঁছে দেন শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওহাব ও উপজেলা যুবদলের সভাপতি আরমান হোসেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

এসএসসি পরীক্ষায় দেশসেরা দৃষ্টি চিকিৎসক হতে চায়

আপডেট সময় :

বগুড়ার বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় স্বর্ণালী আক্তার দৃষ্টি। ফলাফলে দেখা যায়, বিজ্ঞান বিভাগের এই ছাত্রী মোট এক হাজার ৩০০ নম্বরের মধ্যে এক হাজার ২৮৩ পেয়েছে। এই ফলে সারাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় এবং রাজশাহী বোর্ড ও সারাদেশে মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়েছে দৃষ্টি। তাঁর সাফল্যে খুশি মা-বাবা, শিক্ষক ও স্বজন-প্রতিবেশী। দৃষ্টির স্বপ্ন, সে চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করবে।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ লক্ষ্মীকোলার চক গোপালপাড়ার কাঁচামাল ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন ও গৃহিণী রাবেয়া সুলতানার মেয়ে দৃষ্টি। আর্থিক সংকটে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারেননি দেলোয়ার হোসেন। তবে ছেলেমেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করবেন– এমন চিন্তা ছিল সবসময়। এ কারণে বাড়ি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে বগুড়া শহরের বারোপুরে বিএএফ শাহীন কলেজে মেয়েকে ভর্তি করিয়েছিলেন। শিবগঞ্জের এই নিভৃত পল্লির বাড়ি থেকেই প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পাড়ি দিত দৃষ্টি। ভালোভাবে পড়াশোনা করবে, ভালো ফল করবে– এমন প্রত্যাশা ছিল তার।
তার মা রাবেয়া সুলতানা জানান, ছোটবেলা থেকেই সব ক্লাসে প্রথম হয়ে আসছে দৃষ্টি। পেয়েছে অনেক পুরস্কার। প্রতিদিন ভোর ৫টায় ঘুম থেকে ওঠে সে। দূরে হওয়ায় ৬টার দিকে বাড়ি থেকে স্কুলের উদ্দেশে রওনা দিত। ফিরত দুপুরে। এরপর খাওয়া শেষে প্রাইভেট টিউটরের কাছে যেত। বাড়ি ফিরে আরও ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পড়ত দৃষ্টি।
রাবেয়া বলেন, ‘বোর্ড বইগুলো প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছে সে। এসএসসি পরীক্ষায় সাফল্যের জন্য ক্লাস নাইন থেকেই সব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে পড়েছে সে। যার ফলও সে পেয়েছে। গণিত, উচ্চতর গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, শারীরিক শিক্ষা ও ক্যারিয়ার শিক্ষায় পেয়েছে পূর্ণ নম্বর।’
দৃষ্টির বাবা দেলোয়ার বলেন, ‘মেয়ে রাজশাহী বোর্ডে প্রথম ও দেশে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। এটি যে কত গর্বের বিষয়, বলে বোঝানো যাবে না। প্রত্যেক বাবা-মা সন্তানের সাফল্য প্রত্যাশা করেন।’
তিনি বলেন, ‘সন্তানদের ভালোভাবে পড়াশোনা করাব– আমার মাথায় সব সময় এই চিন্তা। দৃষ্টির চেষ্টা সফল হয়েছে। মেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় বিস্ময়কর সাফল্য পেয়েছে, আর বড় ছেলে রবিউল ইসলাম রাব্বি পুলিশে এসআই পদে ট্রেনিং নিচ্ছে।’
দৃষ্টি জানায়, সে ভালো ফল করবে– এমন প্রত্যাশা ছিল। তবে এত ভালো হবে, তা প্রত্যাশা করেনি। সে বলে, ‘আমি নিয়মিত বোর্ড বই পড়তাম, রিভিশন দিতাম। গাইড পড়তাম না।’ স্বপ্নের বিষয়ে জানতে চাইলে দৃষ্টি বলে, ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করব।
বগুড়ার বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ গ্রুপ ক্যাপ্টেন শান্তনু চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের সব কৃতী শিক্ষার্থীর জন্য আমরা গর্বিত। দৃষ্টি এ বছর বোর্ডে সেরা হওয়ায় আমাদের প্রতিষ্ঠান আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।’
দৃষ্টির লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁর এই বার্তা গত ১৩ জুলাই দৃষ্টির পরিবারের কাছে পৌঁছে দেন শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওহাব ও উপজেলা যুবদলের সভাপতি আরমান হোসেন।