ঐক্যে ফাটল, চলছে কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি

- আপডেট সময় : ৪০৪ বার পড়া হয়েছে
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার যে সুযোগ এসেছে, তা কাজে লাগাতে রাজনৈতিক ঐক্যের বিকল্প নেই। শুরুর দিকে এমন কথা উচ্চারিত হয়েছে বড় রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সব মহল থেকে। সম্প্রতি দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হয়েছে কয়েকদফা, ধারাবাহিক সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে ঐকমত্য কমিশনও। কিন্তু, মাঠের বাস্তবতা ভিন্ন। বড় রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে ব্যাপক কাদা ছোড়া ছুড়িতে ঐক্যে ফাটল দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, জন সাধারনের কাছে সংশ্লিষ্ট দলগুলোর গ্রহনযোগ্যতা জারাচ্ছে। এমনই মন্তব্য করেছেন প্রাবীণ রাৈিজতক নেতারা।
বর্তমান পরিস্থিতির অবস্থাদৃষ্টে গত এক বছরের ব্যবধানে নির্বাচনি হিসাব-নিকাশ মেলাতে গিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে বড় দলগুলো। একে-অপরের প্রতি ছুড়ছে আক্রমণাত্মক ভাষা। বড় দলগুলোর রাজনীতিতে এমন অসহিষ্ণুতাকে অশনি সংকেত বলছে অন্যান্য দলগুলো। তাদের মধ্যে নেই বন্ধুসুলভ আচরন। নেই সৌহার্দপূন ব্যবহার।
এবিষয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিএনপি সরাসরি রাজপথে বলছে এনসিপি-জামায়াত রাজাকার সবমিলে একাকার। ডাইরেক্ট এক পক্ষ আরেক পক্ষকে আক্রমণ করা শুরু করেছে। এটা যদি সমাধানে না যায় তাহলে এটা খারাপ পরিণতির দিকে যাবে।
মান্না আরও বলেন, এই মূহুর্তে কাদা ছোড়াছুড়ি করলে দেশের প্রতি আপনি সুবিচার করছেন না। দেশকে ভালোবাসেন সেটা বলতে পারছেন না, বরং দেশের ক্ষতি হবে। সেই বিবেচনায় এটা পরিহার করে তাদেরকে বলবো যেটা রাজনৈতিক সেটা রাজনৈতিকভাবে নিষ্পত্তি করেন। গায়ের জোড়ে কোনো কিছু করার চেষ্টা বাদ দেন। তারা মনে করেন, এবার রাজনীতিবিদরা ব্যর্থ হলে গেঁড়ে বসতে পারে তৃতীয় কোনো পক্ষ, যা বহুদিনের জন্য পিছিয়ে দিবে একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক দেশের স্বপ্ন।
এদিকে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ বলেন, যদি কেউ ক্ষমতার লোভে আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে তাহলে সংঘাত বাড়তে পারে, তা আমরা চাই না। কারণ এদেশে যদি কেউ খুন হয় সে তো আমাদের ভাই, আমাদের ছেলে। দেশের তো কোনো ফায়দা হলো না। এ জন্য শান্তিপূর্ণভাবে দেশটাকে গড়ার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাই। আসুন সবাই মিলে দেশটাকে সুন্দরভাবে গড়ি। তিনি বলেন, দলগুলো নিজেরদের মধ্যে সংঘাতে জড়ালে কেবল বিচার-সংস্কারই বাধাগ্রস্ত হবে না, অনিশ্চিত হয়ে পড়বে নির্বাচন। এই শঙ্কা থেকে শান্তির পথ খোজার আহবান তাদের।
অন্যদিকে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, যেহেতু আমরা একটা ব্যবস্থা নির্মাণের প্রক্রিয়ায় আছি, এই মূহুর্তে আমাদের নূন্যতম ঐকমত্য রক্ষা করা দরকার। যাতে করে আমরা এ উত্তরণটা মসৃণভাবে করতে পারি। আমরা যদি ঐকমত্যের বদলে দ-কে প্রধান করে নেই তাহলে পতিত ফ্যাসিস্টরা এবং দেশি বিদেশি নানা পৃষ্ঠপোষকরা সুযোগ নিবে।
এব্যাপারে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতনের পর রাজনীতির মাঠে নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা দলগুলো এখন পারস্পরিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। এই দ্বন্দ্বে একদিকে আছে বিএনপি, আরেকদিকে জামায়াত। তাদের এই দ্বন্দ্বের কারণে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী ফিরে আসার পথ সুগম হবে। এ বিষয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রবীণ একাধিক রাজনীতিবিদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখছি কিছু কিছু নেতা তাদের বক্তব্যে রাজনৈতিক শালীনতা বা শিষ্টাচারেরও সীমা অতিক্রম করছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ও ক্ষমতার রাজনীতিকে কেন্দ্র করে এই কাদা-ছোড়াছুঁড়ি বাড়ছে।
নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির বিপরীতে একটি নির্বাচনী জোট বা সমঝোতার প্রচেষ্টা চলছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলন বা যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্য দলগুলো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তাদের কেউ কেউ ভেতরে ভেতরে দুই শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে বলে জানা গেছে।
তারা বলেন, দলমতের পার্থক্য থাকলেও ফ্যাসিবাদের প্রশ্নে সবাইকে এক হওয়ার আহ্বান জানাই। আওয়ামী লীগকেও রিকনসিলেশন করা যায় তবে তার আগে তাদেরকে ভুল স্বীকার করতে হবে, জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। গণহত্যা, গুম, খুন, লুটপাট এবং দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করার পরও যারা গলা উঁচু করে কথা বলে তাদের কপালে দুঃখ ছাড়া আর কিছু নেই।
অপরদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীন বলেছেন, জীবনের শেষপ্রান্তে এসে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছি। ব্যক্তিগত লক্ষ্য বা স্বার্থ নয়, বরং দেশের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করে যেতে চাই। তবে এটি শুধু আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য আমি দেশবাসীর সার্বিক সহযোগিতা এবং দোয়া কামনা করছি। গত শুক্রবার যশোর কালেক্টরেট মসজিদে জুমার নামাজের আগে মুসল্লিদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীন। যশোর কালেক্টরেট মসজিদে জুমার নামাজের আগে মুসল্লিদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ঢাকার মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্তে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে যশোরে কালেক্টরেট মসজিদে বাদ জুমা বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন তিনি। খুলনায় যাওয়ার পথে যশোরে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতির সময় তিনি এই মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ‘শাহী ও ছ্যাঁচড়া চাঁদাবাজ’ আখ্যা দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে ইসলামী যুব আন্দোলনের জেলা শাখা সমাবেশে একথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি ভারত প্রসঙ্গে কঠোর ভাষায় ইসলামের অস্তিত্ব রক্ষার আহ্বান জানান এবং আগামী নির্বাচনে নতুন শক্তি হাতপাখার পক্ষে রায় দেয়ার ডাক দেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে, তারা শাহী চোর। আর বিএনপি রিকশাওয়ালা, মুচি, টেম্পু চালকের কাছ থেকে চাঁদা তোলে তারা ছ্যাঁচড়া চাঁদাবাজ।
আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের ভৌগোলিক নয়, আসল পার্থক্য ইসলামের। যদি ইসলাম ধ্বংস হয়, তবে বাংলাদেশ একদিন ভারতের অংশ হয়ে যাবে। একই সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনে পুরোনো শক্তিগুলোর ব্যর্থতা তুলে ধরে হাতপাখা প্রতীককে একবার সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অপরদিকে দেশে অস্থিরতা বাড়াতে বিএনপির ওপর ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দায় চাপানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। সম্প্রতি নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মশাল মিছিল শেষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
নয়া পল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, মিটফোর্ডের হত্যাকা- একটি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এ ঘটনার জের ধরে বিএনপির ওপর দায় চাপিয়ে একটি চক্র অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে যে পথে বিএনপি হাঁটবে না। তিনি বলেন, গণমাধ্যম এখনো স্বাধীন হতে পারেনি। তারা মব জাস্টিসকে ভয় পায়। মব দেখলে আপনারা প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। দিল্লী নয়, সবার আগে বাংলাদেশ।
মিটফোর্ডের সাম্প্রতিক সহিংসতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি নিছক একটি ব্যবসায়িক ও বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বিএনপি কখনোই দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় না। বিএনপিকে চাঁদাবাজের দল বলা হলে তা প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, ‘বরং সরকারি দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাই ঘুষখোর যারা ছাত্র প্রতিনিধি ও সচিবদের ব্যবহার করে ঘুষের বিনিময়ে কাজ আদায় করছে।
ইশরাক বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান দ্রুত ফিরবেন। আমরা এয়ারপোর্টে তাকে বরণ করব। দেশ পুনর্গঠনে লেগে পড়ব। একইসঙ্গে, দেশের তরুণ রাজনীতিবিদদের মানুষের অনুভূতি ও সেন্টিমেন্টকে গুরুত্ব দিয়ে রাজনীতি করার আহ্বান জানান তিনি।