কক্সবাজারে পর্যটক নিরাপত্তায় রিজিয়ন ট্যুরিস্ট পুলিশের এডিআইজি আপেল মাহমুদ

- আপডেট সময় : ৭৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যস্ত ও সংবেদনশীল পর্যটন এলাকা কক্সবাজার। প্রতিদিন হাজারও দেশি-বিদেশি পর্যটক ভিড় করেন বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে।
এত মানুষের আগমন যেমন পর্যটন অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে, তেমনি তৈরি করছে অপরাধ ও বিশৃঙ্খলার নতুন ঝুঁকি।
এই বাস্তবতায় ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়ন ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। অপরাধ দমন থেকে মানবিক সেবা প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা রেখেছে কার্যকর ভূমিকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে এই রিজিয়নের ট্যুরিস্ট পুলিশ ২৫ জন ছিনতাইকারী, ৩৪ জন ভাসমান অপরাধী, ৮ জন ইভটিজার ও ৩ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে।
এ সময়ে উদ্ধার করা হয়েছে ১৩৪ জন হারানো শিশু, ২৪টি মোবাইল ফোন, ১০ জন জীবিত ব্যক্তি ও ১৯টি মৃতদেহ। একই সময়ের মধ্যে আদালতের আদেশে ১৬৯টি সিআর মামলা তদন্তের আদেশ পায় ট্যুরিস্ট পুলিশ। যার মধ্যে ১১৫টি নিষ্পত্তি হয়েছে এবং ৫৪টি এখনো মুলতবি করেছে তারা। এ ছাড়া ১৪টি জিআর মামলার মধ্যে ১০টি নিষ্পত্তি হয়েছে। যার ৬টি চার্জশিট ও ৪টি ফাইনাল রিপোর্ট আকারে।
অপরাধ দমনে ট্যুরিস্ট পুলিশের দ্রুত ও প্রযুক্তিনির্ভর পদক্ষেপ এখন কক্সবাজারে আলোচ্য বিষয়।
এগুলো হলো, এক পর্যটকের ছিনতাইকৃত সাড়ে ১০ হাজার টাকা ও আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স উদ্ধার করে ৫ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। রাশিয়ান পর্যটক মনিকা কবিরের হারানো ব্যাগ মাত্র দুই দিনের মধ্যে উদ্ধার করে ফিরিয়ে দেওয়া। পর্যটক হয়রানির ঘটনায় ১৭টি ক্যামেরা জব্দ করা হয়, দায়ীদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয় ব্যবস্থা।
পর্যটকের হারানো ক্যামেরা সংবাদ প্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই উদ্ধার। হাউজ এলাকায় অসামাজিক কার্যক্রম রোধে অভিযান চালিয়ে ১৩ জন নারী-পুরুষকে আটক করা হয়। এ সময় একটি সুড়ঙ্গ পথও আবিষ্কৃত হয়। সমুদ্র সৈকতে হয়রানি, টিকটক ভিডিও ধারণ ও অবৈধ স্পা কার্যক্রম বন্ধে একাধিক অভিযান পরিচালনা করা হয়।
কক্সবাজারে ট্যুরিস্ট পুলিশের মানবিক কার্যক্রম প্রশংসিত হয়েছে সাধারণ পর্যটক ও স্থানীয়দের কাছে। হারিয়ে যাওয়া অন্ধ শিশু, প্রেমিক যুগল, ও প্রতারিত নারীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বরগুনা থেকে পালিয়ে আসা নারীকে উদ্ধার করে তার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়। ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্ভিস সেন্টার স্থাপন করে দ্রুত সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে, পাশাপাশি ১০টি হুইলচেয়ার প্রদান করা হয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক পর্যটকদের জন্য।
দুই নারী পুলিশ সদস্য অর্জন করেছেন ‘উইমেন ট্যুরিজম লিডার অ্যাওয়ার্ড’, যা নারীর নেতৃত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্যুরিস্ট পুলিশের ভূমিকাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরেছে।
অপরাধ দমন ছাড়াও কক্সবাজার রিজিয়নের ট্যুরিস্ট পুলিশ পরিবেশ ও শৃঙ্খলা রক্ষায়ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। মারমেইড বিচ রিসোর্টের সম্প্রসারিত অংশ উচ্ছেদ করে সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংরক্ষণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সৈকতে বিচ ক্লিনিং কর্মসূচি পালন ও বর্জ্য সরবরাহ করা হয়। পঁচা মাছ বিক্রেতা, অসাধু ব্যবসায়ী ও হোটেল মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়।
জার্মান পর্যটককে মিনারেল ওয়াটারের পরিবর্তে টিউবওয়েলের পানি দেওয়ার অভিযোগে হোটেল কর্মীকে আটক করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অবৈধ দোকান ও বালিয়াড়ি দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ট্যুরিস্ট পুলিশের এসব উদ্যোগকে স্বীকৃতি দিয়েছে স্থানীয় পর্যটন খাতের উদ্যোক্তারাও। কক্সবাজার ট্যুরিজম বিজনেস সোসাইটি ও কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতি সম্প্রতি ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সনদপত্র প্রদান করেছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটকবান্ধব কক্সবাজার গড়তে ট্যুরিস্ট পুলিশ শুধু আইন প্রয়োগ নয়, বরং সচেতনতা, সহযোগিতা ও সেবার মাধ্যমে নিরাপত্তা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চায়।
পর্যটন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, কক্সবাজারে ট্যুরিস্ট পুলিশের সাফল্য শুধু অপরাধ দমনেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তাদের কার্যক্রম এখন একটি মানবিক ও সেবামুখী পুলিশিং মডেল হিসেবে দেখা যাচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, অপরাধের ধরন ও কৌশল দ্রুত বদলে যাচ্ছে। তাই ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও মানবসম্পদ আরও বাড়ানো জরুরি।
তারা বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের এই সাফল্য ধরে রাখতে হলে স্থায়ী জনবল, পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও একটি সমন্বিত পর্যটন নিরাপত্তা নীতি দরকার।