কক্সবাজারে ১৬ অক্টোবরের মধ্যে সকল অবৈধ দোকান সরানোর আলটিমেটাম
- আপডেট সময় : ৮৯ বার পড়া হয়েছে
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের পরিবেশ ও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) রক্ষায় কঠোর হয়েছে জেলা প্রশাসন। হাইকোর্টের নির্দেশ ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশের পর সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে তোলা ৫০টিরও বেশি অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এসব অবৈধ দোকান পাট ও স্থাপনা উচ্ছেদে বিশেষ তৎপর হয়ে উঠেন কক্সবাজার রিজিয়ন ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি ( এডিআইজি) আপেল মাহমুদ। তিনি বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে পরিবেশ সুরক্ষায় আপসহীন ভূমিকা পালন করেছেন।বিশেষ করে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর দেশে পুলিশ বাহিনীর কঠিন সংকটময় পরিস্হিতিতে ও অসীম সাহসীকতার সাথে সমুদ্রদস্যুদের কবল থেকে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র শহর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত কে নান্দনিক ও পরিবেশ সুরক্ষায় এক প্রকার দৃশ্যমান লড়াই সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। যা সৈকতের সুন্দর্য বিনষ্টকারী কতিপয় সিন্ডিকেটের “জম” মনে করছেন। তারা কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ পত্র-পত্রিকায় মিথ্যা প্রপাগান্ড ছড়াচ্ছে। এমন কি এসব চিহ্নিত সৈকত অবৈধ দখল বাজরা ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ কে কক্সবাজার থেকে সরানোর জন্য সরকারের উপরি মহলের কান ভারি করে যাচ্ছেন। কিন্তু কোন ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত করতে নারাজ কক্সাবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ। তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সাব জানিয়েছেন, যত বড় সিন্ডিকেটই হউক না কেন কাউ কে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পরিবেশ নষ্ট করে দোকান অথবা স্থপনা করতে দেওয়া হবে না।
রোববার (১২ অক্টোবর) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত পরিচালিত এই অভিযানে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, র্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশের সদস্যরা অংশ নেন। একটি এক্সকাভেটর ব্যবহার করে স্থাপনাগুলো গুড়িয়ে দেওয়া হয়।
নির্দেশ অমান্য: তাৎক্ষণিক উচ্ছেদ
জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান জানান, পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা থেকে সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে এই অভিযান শুরু হয়েছে। শনিবার দুপুরে জরুরি বৈঠকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলেও মালিকরা তা অমান্য করায় এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (এডিআইজি) আপেল মাহমুদ বলেন, “কার্ড থাকুক বা না থাকুক, দোকান সরিয়ে ফেলতে হবে — এই নির্দেশনার পর সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মালিকরা তা না করায় অন্তত ৫০টির বেশি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।”
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম নিশ্চিত করেন, শনিবার রাতের মধ্যে স্থাপনা সরানোর নির্দেশনা অমান্য হওয়ায় রবিবার এই অভিযান পরিচালিত হয়।
১৬ অক্টোবরের পর ‘বড়সড়’ অভিযান
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম আরও কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে বালিয়াড়িতে কোনো স্থাপনা থাকবে না। সুগন্ধা পয়েন্টে উচ্ছেদ হওয়া দোকানগুলোসহ অন্য সব স্থাপনা আগামী ১৬ অক্টোবরের মধ্যে নিজ উদ্যোগে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, “নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সরিয়ে না নেওয়া হলে, ১৬ অক্টোবরের পর বড়সড় অভিযানের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে। সুগন্ধা ছাড়াও অন্যান্য পয়েন্টে বালিয়াড়ি দখল করে গড়ে ওঠা সকল অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধেও এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দুর্নীতির অভিযোগ এবং আইনি প্রেক্ষাপট
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকার ১৯৯৯ সালে কক্সবাজার সৈকতকে ‘প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা’ (ECA) ঘোষণা করে, যেখানে জোয়ার-ভাটার অঞ্চল থেকে ৩০০ মিটার পর্যন্ত এলাকায় যেকোনো স্থাপনা নির্মাণ ও উন্নয়ন নিষিদ্ধ।
অভিযোগ রয়েছে, গত এক বছরে সুগন্ধা, লাবণী ও কলাতলী পয়েন্টে কার্ডবিহীন প্রায় ৫ শতাধিকের বেশি অবৈধ দোকান গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে বিদায়ী জেলা প্রশাসকের বদলির ঠিক আগ মূহুর্তে সুগন্ধা সৈকতে দ্রুতগতিতে নতুন করে টংঘর ও দোকান বসানো হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাঝে মাঝে অভিযান চললেও তা স্থায়ী হয় না। এর কারণ হলো বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির কিছু কর্মী অবৈধভাবে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কার্ডবিহীন দোকান বসাতে সহায়তা করে, ফলে উচ্ছেদের পরদিনই আবার সেসব দোকান বসে যায়। প্রশাসনকে এই সিন্ডিকেটকেও আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল। এর আগেও গত বছরের ডিসেম্বর এবং ২০২৩ সালেও একাধিকবার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছিল জেলা প্রশাসন।




















