কাউন্সিলিং শেষ, আজ খুলছে মাইলস্টোন

- আপডেট সময় : ১০ বার পড়া হয়েছে
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ খোলার সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে নেয়া হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে মিলাদ মাহফিল হয়েছে। আজ রোববার থেকে নবম ও দশম শ্রেণির ক্লাস দিয়েই স্কুল চালু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রথম দিন পরিপূর্ণ ক্লাস না হলেও ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে খোঁজখবর এবং মতবিনিময়ের মধ্যদিয়ে পর্যায়ক্রমে স্কুল এবং কলেজ চালু করা হবে।
এদিকে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তের ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও স্বজনদের স্মৃতি খুঁজে বেড়াচ্ছেন অভিভাবকরা। দুর্ঘটনায় নিহতদের এক টুকরো স্মৃতিই যেন এখন শেষ সম্বল তাদের। কেউ কেউ সিসিটিভি ফুটেজও দেখতে চাইছেন। আর এ ঘটনায় ট্রমাটাইজড হয়ে পড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে নেয়া হয়েছে কাউন্সেলিং কর্মসূচি। মানসিক চিকিৎসক এবং মনোবিজ্ঞানী বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি মাইলষ্টোনের সকল শিক্ষাথী ও অভিভাবক এবং শিক্ষকদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে এবং ট্রমা কাটতে কর্মশালার পাশাপাশি কাউন্সিলিং করা হবে। ইতোমধ্যে এর সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ছলছল চোখে অভিমান, বুকে কষ্ট আর একরাশ আশা নিয়ে একটুখানি স্মৃতি খুঁজে পেতে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নিহতের স্বজনরা।
স্কুলটিতে বিমান বিধ্বস্তে নিহত হয় ১০ বছরের শিশু ফাতেমা আক্তার আনিশা। নিহত আনিশার মামা লিওন মীর তার একমাত্র ভাগনীর এক পাটি জুতা খুঁজে পেয়েছিলেন আগেই, এখনও আরেক পাটি খুঁজে চলেছেন। মানসিক চাপে জরাজীর্ণ হয়ে আছে আনিশার পুরো পরিবার। নিহত আনিশার মামা লিওন মীর বলেন, ‘সেখানে যদি সিসিটিভি ক্যামেরা থাকে, সেই ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চাই, আমার ভাগনী কোথায় দাঁড়ানো ছিল সেটা শুধু দেখতে চাই। ওর শরীরে প্রচুর ধুলা, ঘাস এগুলো পেয়েছি। কাপড়-চোপড় দেখে বুঝতে পেরেছি— ও আসলে আগুনে পোড়েনি, তেলে পুড়েছে।’ কেবল হতাহতদের স্বজনরা নয়, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সব অভিভাবকরাও রয়েছে মারাত্মক মানসিক চাপে। একসময় যে শিশুরা কাগজের প্লেন বানিয়ে খেলতো, নীল আকাশের প্লেনের সঙ্গে শিশুরা দৌড়ে বেড়াতো, এখন সেই প্লেনের শব্দ শুনলেই ভয়ে আতকে উঠছে মাইলস্টোনের কোমলমতি শিশুরা।
অভিভাবকরা জানান, বাচ্চারা এখন বিমানের শব্দ শুনলেও ভয় পায়। নিহত ও আহতের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতাও জানিয়েছেন কেউ কেউ। প্রাপ্ত বয়স্করাই কখনও কখনও মানসিক চাপ সামলে উঠতে পারেন না সেখানে সবেমাত্র যাদের জীবন শুরু তারা কেমন করে সামলে উঠবে এ মানসিক যন্ত্রণা? আর যারা বেঁচে নেই কী হবে তাদের পরিবার-পরিজনের? সন্তানের স্মৃতি হাতড়েই কি জীবন কাটবে তাদের?—বলছেন মায়েরা।
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, চোখ বন্ধ করলেও তার মেয়ের চোখে ভেসে ওঠে সেই ভয়াবহ আগুনের চিত্র। তিনি এখন এ বিষয়টি নিয়ে এতটাই আতঙ্কিত যে, পরিবর্তন করতে চান মেয়ের স্কুল ও ছাড়তে চান এ এলাকা। আরেক অভিভাবক জানান, এ ঘটনার পর থেকে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে তার সন্তান। আগে অনেক কথা বললেও এ ঘটনার পর অনেকটাই চুপচাপ প্রকৃতির হয়ে গেছে তার সন্তান।
আর তাই এ দুর্ঘটনায় ট্রমাটাইজ হয়ে পড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে শুরু করা হয়েছে কাউন্সেলিং কর্মসূচি। মাইলস্টোন স্কুল কর্তৃপক্ষ-বিমান বাহিনী ও ব্র্যাকের যৌথ উদ্যোগে ৭ দিনের এ কর্মসূচি হয়েছে। এ সময়টায় কীভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, নিজেরা কীভাবে ভালো থাকবেন, পরিবেশ-পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যাবে, সেগুলো নিয়ে নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অযৌক্তিক বা অপ্রাসঙ্গিক যেকোনো বিষয়ে আলোচনা এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মন খারাপ হয়, এমন কিছুই বলা যাবে না বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
এদিকে বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে বাড়ি ফিরছেন একজন, আইসিইউতে সংঘাহীন অবস্থায় রয়েছেন ২ জন। বার্ন হাসপাতাল সূত্র জানায়, রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসারতদের মধ্য থেকে ছাড়পত্র পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন ফারজানা ইয়াসমিন (৪৫)। তিনি ওই স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা। এ ঘটনায় এখনও আইসিইউতে ভর্তি আছেন ২ জন। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন।
পরিচালক বলেন, মঙ্গলবার আইসিইউতে ছিল তিন জন। তবে তাদের মধ্যে একজনের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় তাকে এইচডিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখন মোট ৩২ জন রোগী ভর্তি আছে। এর মধ্যে ৩ জন ক্রিটিক্যাল ক্যাটাগরিতে। আর তাদের চেয়ে কম গুরুতর ৭ জন রয়েছে সিভিয়ার ক্যাটাগরিতে। বাকিরা অন্যান্য ওয়ার্ড ও কেবিনে ভর্তি রয়েছেন। গত তিন দিনে নতুন করে কোনও মৃত্যু হয়নি।
ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, ৩২ জনের মধ্যে ১৪ জনের শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। বাকিরা স্টেবল রয়েছেন। ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত সব রোগীর একাধিকবারসহ সব মিলিয়ে ১৫৮টি ছোট-বড় অপারেশন করা হয়েছে। বার্ন ইনস্টিটিউটে আর আনুষ্ঠানিক ব্রিফ করা হবে না। প্রেস রিলিজের মাধ্যমে প্রতিদিনের আপডেট দেওয়া হবে বলে জানান ইনস্টিটিউটের পরিচালক।
সবশেষে গতকাল শনিবার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ৩৪ জন মারা গেছেন এবং বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৪৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হালনাগাদ তথ্যে একথা বলা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার ভিত্তিতে সিএমএইচের একটি মৃত্যু কমিয়ে তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হালানাগাদ তথ্য বলছে, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৩৬ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১১ জন, শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একজন এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে একজন চিকিৎসাধীন আছেন।তথ্য বলছে, নিহতদের মধ্যে ১৭ জন জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে, ১৪ জন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ), একজন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, একজন লুবানা জেনারেল হাসপাতালে এবং ইউনাইটেড হাসপাতালে একজন মারা গেছেন।