কিশোরগঞ্জে রেলের গাছ কেটে বিক্রি করলেন কর্মচারীরা

- আপডেট সময় : ৮৯ বার পড়া হয়েছে
কিশোরগঞ্জে রেলওয়ের সম্পদ রক্ষার দায়িত্বে থাকা কর্মচারীর বিরুদ্ধেই উঠেছে রেলওয়ের গাছ কেটে বিক্রির গুরুতর অভিযোগ। ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার দিবাগত রাতে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদলপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায়।
স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, স্টেশন সংলগ্ন রেললাইনের ধারে বহু বছর ধরে একটি বড় সেগুন গাছ ছিল। গাছটির বয়স অন্তত ১৫ থেকে ২০ বছর এবং আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৩০ হাজার টাকা। রাতের আঁধারে হঠাৎ করেই গাছটি কেটে ফেলা হয়। পরদিন সকালে এলাকাবাসী বিষয়টি জানতে পারে।
পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাছটি কেটে স্থানীয় বাসিন্দা জালাল উদ্দীনের বাড়িতে রাখা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, রেলওয়ের উর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী কার্যালয়ের অধীনে কর্মরত হেডমেইট উজ্জ্বল মিয়া গোপনে গাছটি কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, গাছ কাটার সময় কোনো অনুমোদন বা অফিসিয়াল নির্দেশনা ছিল না। সবকিছুই রাতের অন্ধকারে করা হয়, যাতে বিষয়টি কেউ বুঝতে না পারে। তারা আরও বলেন, এমন ঘটনা রেলওয়ের সম্পদ রক্ষায় দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের গাফিলতির পরিচায়ক। রেলওয়ের কর্মচারীরাই যদি এমনভাবে সম্পদ বিক্রি করে দেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কিভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করবে? তারা দ্রুত তদন্ত শেষে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা জালাল উদ্দীন বলেন, কি-ম্যান শফিক আমার বাড়িতে এসে বলে, হেডমেইট উজ্জ্বল গাছের টাকা নিতে পাঠিয়েছেন। তিনি বলেন, ওয়েম্যান সালাউদ্দিন, মাহমুদুল, সোনাই এবং প্রকৌশলী অফিস ম্যানেজ করতে টাকা দিতে হবে। তখন আমি তাকে পাঁচ হাজার টাকা দিই। পরে তিনি টাকা নিয়ে চলে যান।
অভিযুক্ত কি-ম্যান শফিক অভিযোগ স্বীকার করে বলেন,জালাল উদ্দীনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই হেডমেইট উজ্জ্বল মিয়াকে বিকাশে পাঠিয়ে দিই। আমি শুধু নির্দেশ পালন করেছি।
তবে হেডমেইট উজ্জ্বল মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, গাছ কাটা বা টাকার বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই। কে বা কারা এটা করেছে আমি জানি না।”
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ রেলওয়ের উর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) জুলহাস মিয়া বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। ইতিমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে যেই দোষী প্রমাণিত হবে, তার বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, রেলওয়ের কোনো সম্পদ বিক্রি করার অধিকার কোনো ব্যক্তি বা কর্মকর্তা রাখেন না। এসব সরকারি সম্পদ দেশের সম্পদ, এগুলো কেউ ব্যক্তিগতভাবে বিক্রি করতে পারে না।
কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (কার্য্য) শেখ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বিষয়টি জানার পর খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২১ অক্টোবর (মঙ্গলবার) প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে থানা ও উর্ধ্বতন কর্মকতাদের জানিয়েছি। উনারা এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন। রেলওয়ে সম্পদ ব্যক্তিগত বিক্রি করার কোন সুযোগ নেই।
কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বাহাউদ্দিন ফারুকী বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রেলওয়ের সম্পদ জনগণের সম্পদ। এই স্লোগান বাস্তবে রক্ষার দায়িত্ব যাদের হাতে, সেই কর্মচারীদের বিরুদ্ধেই যখন এমন অভিযোগ ওঠে, তখন প্রশ্ন জাগে প্রশাসনিক নজরদারি কতটা কার্যকর?