সংবাদ শিরোনাম ::
`ক্ষমতার অপব্যবহার’ সরকারি জমিতে আ.লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়
এ এইচ ইমরান
- আপডেট সময় : ৩৭ বার পড়া হয়েছে
রাজধানীর গুলিস্তানে ২৩, শহীদ আবরার ফাহাদ এভিনিউয়ে (সাবেক বঙ্গবন্ধু এভিনিউ) আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, দলটি দীর্ঘদিন ভোগদখলে থাকা সরকারি জমি পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসে নিজেদের নামে কিছু অংশ কিনে ও দীর্ঘমেয়াদী বরাদ্দ নিয়ে নিয়েছে যা আইন বিশেষজ্ঞদের মতে স্পষ্টভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে আওয়ামীলীগ।
দলটি প্রায় ২৮ বছর ভোগ দখলে থাকার পর জমির মালিকানা বদলিয়ে নেয়। মোট ১০.৪৪ শতাংশ (সোয়া ছয় কাঠা) জমির মধ্যে ৬.৩২ শতাংশ কেনা হয়েছে সরকারের পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ড থেকে এবং বাকি ৪.১২ শতাংশ ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ১০০ বছরের জন্য লিজ নেয়া হয়। তবে সরকারি নীতিমালায় কোনো রাজনৈতিক দলকে খাস জমি বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ নেই।
আওয়ামী লীগের এই কার্যালয়টি মোট সোয়া ছয় কাঠা বা ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত। এই জমির মালিকানা আবার সরকারের দুইটি ভিন্ন সংস্থার। একটি অংশ ৩ দশমিক ৮৩ কাঠা বা ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ জমি কেনা হয়েছে সরকারের পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের কাছ থেকে। এই অংশের ব্যাপারে আইনবিদেরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সরকারি মালিকানাধীন এই জমি নিজেদের নামে কিনে নিয়েছে, যা স্পষ্টতই ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। আর বাকি ৪ দশমিক ১২ শতাংশ জমি ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি লিজ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। লিজ পাওয়া নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, অকৃষি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালার আলোকে এই জমি আওয়ামী লীগকে ১০০ বছরের জন্য বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। তবে নীতিমালায় রাজনৈতিক দলকে খাসজমি বরাদ্দ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলেন, “১৯৮১ থেকে দখলে থাকা জমি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বৈধ করেছে। এটা একেবারে সরকারের সর্বোচ্চ স্তরের অনুমোদন ছাড়া সম্ভব নয়।”
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দাবি, লিজ নেওয়া অংশটি তাদের মালিকানাধীন, ভূমি মন্ত্রণালয় বেআইনিভাবে বরাদ্দ দিয়েছে এই জমি উদ্ধারের কাজ চলছে।
আওয়ামীলীগ দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কে এম দাশ লেনের রোজ গার্ডেনে আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে দলটির স্থায়ী কোন কার্যালয় ছিল না। ১৯৫৩ সালে কানকুন বাড়ি লেনে অস্থায়ী কার্যালয়ে কাজ চালানো হয়। এরপর ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা হয় পুরান ঢাকার ৫৬, সিমসন রোড।
দলীয় সূত্র জানায়, ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান ৯১, নবাবপুর রোডে দলীয় কার্যালয় খোলেন। এরপর ১৯৮১ সালের দিকে শেখ হাসিনা দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় গুলিস্তানের এই ঠিকানায় আসে।
দলীয় সূত্র জানায়, নিজস্ব অর্থায়নে ১০ কোটি টাকায় নির্মিত ১০ তলা ভবনটি ২০১৮ সালের ২৩ জুন উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা নিজেই। ভবনটিতে আছে সভাপতির জন্য বুলেটপ্রূফ কক্ষ ও সাধারণ সম্পাদকের অফিস, সম্মেলনকক্ষ, মিডিয়া রুম, লাইব্রেরি, ক্যান্টিন ও ভিআইপি লাউঞ্জ।
আইনজীবী ও নগর বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারি জমি রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার গণতন্ত্রের নৈতিক ভিত্তিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে শেখ হাসিনা নিজেই।
কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর বিক্ষুব্ধ জনতার আগুনে ভবনটি ভস্মীভূত হয়। এরপর দীর্ঘ সময় ভাসমান লোকজন ভবনটিকে শৌচাগার হিসাবে ব্যবহার শুরু করে। তবে বর্তমানে ফটকে তালা ঝুললেও ভবনটিকে আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউটের ব্যানার ঝুলিয়ে দখলে রেখেছে। তবে ভবনটির সামনের স্থানে বসেছে হকার, দোকানপাট ও চায়ের স্টল।



















