ঢাকা ০৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

খালি কলস নিয়ে অবস্থান, পানি দাও শান্তি নাও

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ৪১৪ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

খালি কলস নিয়ে অবস্থান: উপকূলে লবণ পানি নিয়ন্ত্রণ ও সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিতের দাবি

পানি দাও, শান্তি নাও এই স্লোগানকে ধারণ করে সুপেয় পানীয় জলের দাবিতে খালি কলস নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন হলো ঢাকায়।

শুক্রবার ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে নাগরিক সংগঠন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন আয়োজিত খালি কলসি হাতে নারীদের অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।

বাইট শরীফ জামিল বলেন,  সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন আয়োজিত পানির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি থেকে বলা হয়, জলশূন্য তিস্তার বুকে ঘোড়া গাড়ি চলে। শুষ্কমৌসুমে পদ্মায় হাটু জল। ফারাক্কার বাঁধের প্রভাবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে জলের হাহাকার। বিশেষ করে উজানের নদ-নদী থেকে পানি প্রত্যাহার এবং শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় জলের অভাবে বাংলাদেশ জুড়ে ভয়াবহ চিত্র ফুটে ওঠে। এমন চিত্র তুলে ধরেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল।

বাইট মোস্তাফা আলমগীর রতন বলেন,  এবারের পানি দিবসের স্লোগান হচ্ছে, ‘ওয়াটার ফর পিস’ শান্তির জন্য পানি। পানির প্রাপ্যতা নিয়ে যখন নানামুখী কর্মসূচি পালন হচ্ছে, তখনই দেখা যায় বাংলাদেশের সঙ্গে একমাত্র গঙ্গাচুক্তি রয়েছে। তাছাড়া ভারতের সঙ্গে ৫৪টি নদী রয়েছে, তার কোনটার সঙ্গেই চুক্তি নেই। তিস্তা চুক্তি কথা বার বার বলা হলেও তার কোন কার্যকরি পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ভাটির দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তাসহ অন্যান্য নদীর পানি চুক্তির দাবি তোলেন বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির সাবেক সভাপতি মোস্তাফা আলমগীর রতন।

সচেতন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও সমাজচিন্তক সাকিলা পারভীন বলেন, পানির জন্য উপকূলের নারীরা ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার পথ হেটে খাবার পানি সংগ্রহ করে থাকেন। লবনজলে কাজ করে বহুনারী নানা রকমের জটিল ব্যধিতে ভুগছেন। কোন কোন নারীর জরায়ু পর্যন্ত কেটে ফেলতে হচ্ছে। তেমনটিই তুলে ধরেন সচেতন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও সমাজচিন্তক সাকিলা পারভীন।

সভাপতির বক্তব্যে সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র উপকূল অঞ্চলে লবণ পানি নিয়ন্ত্রণ ও সুপেয় পানির সরবরাহ নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের পাশাপাশি মনুষ্য সৃষ্ট নানা কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট ভয়াবহ আকার নিয়েছে। লবণাক্ততার আগ্রাসনে এই সংকট প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফলে উপকূলের জীবন-জীবিকা ও প্রাণ-প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়েছে। এই হুমকি মোকাবেলায় লবণ পানি নিয়ন্ত্রণ ও সুপেয় পানি নিশ্চিত করা জরুরি।

কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারি নারীরা জানান, উপকূলের নারীদের অনেক দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। দস্তার কলসে দূর থেকে এই পানি সংগ্রহ করার ফলে তাদেরকে সারাবছর কোমরে ব্যাথা ও হাড় ক্ষয়ে যাওয়া, কিডনির সমস্যাসহ অনেক রকম শারীরিক সমস্যায় ভুগতে হয়। অনেক সময় মেয়েদের ইভটিজিং ও নানাধরণের লাঞ্চনার শিকার হতে হয়। তারা আরো বলেন, পানি নিয়ে উপকূলবাসীর দূর্ভোগের সীমা নেই। চারদিক লবণ পানি দ্বারা বেষ্টিত। পান করার উপযোগী না হলেও অনেকটা বাধ্য হয়ে এলাকার অনেকে লবণ পানি পান করে থাকে। ফলে তাদের নানা ধরনের পানি বাহিত রোগে ভুগতে হয়। নারী ও শিশুরা বেশি সমস্যায় ভোগে।

অবস্থান কর্মসূচিতি যুক্ত হয়ে আরও বক্তব্য রাখেন, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ হ ম তারেক উদ্দিন, নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে, স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের ব্যবস্থাপক মো. হেলাল উদ্দিন, ব্যাংক কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন, ঢাকাস্থ পাইকগাছা সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, ইঞ্জিনিয়ার তুহীন পারভেজ, সাবেক ছাত্র নেতা মৃত্যুঞ্জয় দাশ প্রমূখ।

 

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

খালি কলস নিয়ে অবস্থান, পানি দাও শান্তি নাও

আপডেট সময় :

 

খালি কলস নিয়ে অবস্থান: উপকূলে লবণ পানি নিয়ন্ত্রণ ও সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিতের দাবি

পানি দাও, শান্তি নাও এই স্লোগানকে ধারণ করে সুপেয় পানীয় জলের দাবিতে খালি কলস নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন হলো ঢাকায়।

শুক্রবার ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে নাগরিক সংগঠন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন আয়োজিত খালি কলসি হাতে নারীদের অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।

বাইট শরীফ জামিল বলেন,  সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন আয়োজিত পানির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি থেকে বলা হয়, জলশূন্য তিস্তার বুকে ঘোড়া গাড়ি চলে। শুষ্কমৌসুমে পদ্মায় হাটু জল। ফারাক্কার বাঁধের প্রভাবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে জলের হাহাকার। বিশেষ করে উজানের নদ-নদী থেকে পানি প্রত্যাহার এবং শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় জলের অভাবে বাংলাদেশ জুড়ে ভয়াবহ চিত্র ফুটে ওঠে। এমন চিত্র তুলে ধরেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল।

বাইট মোস্তাফা আলমগীর রতন বলেন,  এবারের পানি দিবসের স্লোগান হচ্ছে, ‘ওয়াটার ফর পিস’ শান্তির জন্য পানি। পানির প্রাপ্যতা নিয়ে যখন নানামুখী কর্মসূচি পালন হচ্ছে, তখনই দেখা যায় বাংলাদেশের সঙ্গে একমাত্র গঙ্গাচুক্তি রয়েছে। তাছাড়া ভারতের সঙ্গে ৫৪টি নদী রয়েছে, তার কোনটার সঙ্গেই চুক্তি নেই। তিস্তা চুক্তি কথা বার বার বলা হলেও তার কোন কার্যকরি পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ভাটির দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তাসহ অন্যান্য নদীর পানি চুক্তির দাবি তোলেন বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির সাবেক সভাপতি মোস্তাফা আলমগীর রতন।

সচেতন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও সমাজচিন্তক সাকিলা পারভীন বলেন, পানির জন্য উপকূলের নারীরা ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার পথ হেটে খাবার পানি সংগ্রহ করে থাকেন। লবনজলে কাজ করে বহুনারী নানা রকমের জটিল ব্যধিতে ভুগছেন। কোন কোন নারীর জরায়ু পর্যন্ত কেটে ফেলতে হচ্ছে। তেমনটিই তুলে ধরেন সচেতন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও সমাজচিন্তক সাকিলা পারভীন।

সভাপতির বক্তব্যে সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র উপকূল অঞ্চলে লবণ পানি নিয়ন্ত্রণ ও সুপেয় পানির সরবরাহ নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের পাশাপাশি মনুষ্য সৃষ্ট নানা কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট ভয়াবহ আকার নিয়েছে। লবণাক্ততার আগ্রাসনে এই সংকট প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফলে উপকূলের জীবন-জীবিকা ও প্রাণ-প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়েছে। এই হুমকি মোকাবেলায় লবণ পানি নিয়ন্ত্রণ ও সুপেয় পানি নিশ্চিত করা জরুরি।

কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারি নারীরা জানান, উপকূলের নারীদের অনেক দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। দস্তার কলসে দূর থেকে এই পানি সংগ্রহ করার ফলে তাদেরকে সারাবছর কোমরে ব্যাথা ও হাড় ক্ষয়ে যাওয়া, কিডনির সমস্যাসহ অনেক রকম শারীরিক সমস্যায় ভুগতে হয়। অনেক সময় মেয়েদের ইভটিজিং ও নানাধরণের লাঞ্চনার শিকার হতে হয়। তারা আরো বলেন, পানি নিয়ে উপকূলবাসীর দূর্ভোগের সীমা নেই। চারদিক লবণ পানি দ্বারা বেষ্টিত। পান করার উপযোগী না হলেও অনেকটা বাধ্য হয়ে এলাকার অনেকে লবণ পানি পান করে থাকে। ফলে তাদের নানা ধরনের পানি বাহিত রোগে ভুগতে হয়। নারী ও শিশুরা বেশি সমস্যায় ভোগে।

অবস্থান কর্মসূচিতি যুক্ত হয়ে আরও বক্তব্য রাখেন, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ হ ম তারেক উদ্দিন, নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে, স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের ব্যবস্থাপক মো. হেলাল উদ্দিন, ব্যাংক কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন, ঢাকাস্থ পাইকগাছা সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, ইঞ্জিনিয়ার তুহীন পারভেজ, সাবেক ছাত্র নেতা মৃত্যুঞ্জয় দাশ প্রমূখ।