খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা, রাজনীতিতে নয়া মেরুকরণ

- আপডেট সময় : ০৩:১৭:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫ ১৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশে বেশ কয়েকবার গণতন্ত্র ফিরেছে বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরে। গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠাকরণ হয়েছে তার হাত ধরে।
নব্বইয়ের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছেন এই দেশনেত্রী , গত ১৫ বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছেন তিনি
২০১৮ সাল থেকে কারাজীবন, পরে অসুস্থ্যতা সব মিলিয়ে গত সাত বছরে কোনো জনসমাবেশে সশরীরে অংশ নিতে পারেননি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া । এবার তাঁর দেশে ফেরাকে ঘিরে কার্যত বিশাল শোডাউন করল বিএনপি। এর মধ্যদিয়ে উজ্জীবিত করা হলো নেতাকর্মীদেরও। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে দলটি । এবার সে দাবি আরও জোড়ালো হওয়ার পালা। খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে সহজ করবে। দেশনেত্রীর আগমন আমাদের জন্য শুধু আবেগ নয়, এটি একটি রাজনৈতিক শক্তির প্রকাশ বলে জানান দলের সিনিয়র নেতারা।
খালেদা জিয়াকে একনজর দেখার জন্য ও প্রিয় নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে গত মঙ্গলবার সকাল থেকেই হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর সড়ক থেকে গুলশানের বাসভবন পর্যন্ত জড়ো হয় হাজার হাজার নেতাকর্মী। কেউ হাতে ফুল, কেউ ব্যানার-প্ল্যাকার্ড, কেউবা খালেদা জিয়ার ছবিসংবলিত টি-শার্ট পরেছিলেন। স্বাগত জানাতে আসা বেশির ভাগ নেতাকর্মীর হাতে জাতীয় পতাকা ও বিএনপিদলীয় পতাকা ছিল। বিমানবন্দর থেকে বাসায় ফেরার পথে বিএনপি নেত্রীও গাড়ি থেকে হাত নেড়ে নেতাকর্মীকে শুভেচ্ছার জবাব দেন। এ সময় সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের পাশাপাশি তারেকের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের নামে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। কারও কারও ব্যানারে খালেদা-তারেকের পাশাপাশি জোবাইদার ছবি স্থান পেয়েছে। খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে সারাদেশ থেকে আসা নেতাকর্মী স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নামে। এদিন শুধু ঢাকা মহানগর বিএনপি ও দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীই নন, ঢাকার আশপাশের অনেক জেলা থেকেও নেতাকর্মী খালেদা জিয়াকে বরণ করে নিতে আসেন। দূর-দূরান্তের জেলার নেতাকর্মীও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
বাসায় ফেরার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, লন্ডনে চিকিৎসার পর শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেকটা সুস্থ আছেন খালেদা জিয়া। তবে ১৪ ঘণ্টার বিমানযাত্রার কারণে তিনি শারীরিকভাবে একটু অবসন্ন। তারপরও মানসিকভাবে তাঁর অবস্থা অত্যন্ত স্থিতিশীল আছে। এই সুস্থতা যাতে অব্যাহত থাকে, সে জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান এ নেতা। দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর পুত্রবধূ ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানও দেশে ফিরেছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মামলা ও হয়রানির কারণে তিনি দেশে ফিরতে পারেননি। তাঁর এই ফেরা নিয়েও স্বজন এবং দলীয় নেতাকর্মী উচ্ছ্বসিত। খালেদা জিয়া বাসায় পৌঁছানোর পর এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এক নেতা জানান অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দেশে ফিরবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। খুব শিগগির এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে, যাতে করে তিনিও দেশে ফিরে জাতির নেতৃত্বে যোগ দিতে পারেন।
খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে নেতা-কর্মীরা বলেন, গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়া আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন। তাঁর নেতৃত্বে আমরা সব বাধা অতিক্রম করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব। দীর্ঘদিন কারা ও গৃহবন্দী থাকার পর অসুস্থ নেত্রী সুস্থ হয়ে দেশে ফিরেছেন। এটাই আপাতত সবচেয়ে বড় স্বস্তির বিষয়। নেতাকর্মীরা বলেন, বিগত ১৭ বছর বিএনপির চেয়ারপারসনসহ আমরা দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছি। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে। যে কোন সময়ের চেয়ে দলের নেতা-কর্মীরা এখন বেশি চাঙ্গা হবে।
খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, গণতন্ত্রে উত্তরণের এই সময়ে ম্যাডাম খালেদা জিয়ার উপস্থিতি একটি উল্লেখযোগ্য দিক। তার ফিরে আসা আমাদের গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে আরও সহজ করবে। দেশকে সঠিক ও বৈষম্যহীন পথে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘকাল ফ্যাসিবাদের নির্যাতনের শিকার। ফ্যাসিবাদ বিদায় নেওয়ার পর কারাবন্দিত্ব থেকে মুক্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছিলেন। সেখানে প্রায় চার মাস চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন। এটা আমাদের জন্য, জাতির জন্য একটি আনন্দের দিন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশে বেশ কয়েকবার গণতন্ত্র ফিরেছে বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরে। গণতন্ত্রকে সরকারিভাবে প্রাতিষ্ঠাকরণ হয়েছে তার হাত ধরে। নব্বইয়ের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছেন, গত ১৫ বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছেন। ওইখানে এক দশক, এখানে ১৫ বছর-দুই যুগ লড়াই করেছেন গণতন্ত্রের জন্য। আবার তিনি তিনবার ক্ষমতায় থেকেও কিন্তু গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য লড়াই করেছেন। তিনি বারবার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই এখন জনগণের কাছে একটি আইকন, একটি ভরসার জায়গায় চলে গেছেন। এখন এবার ফিরে আসাটাই তাকে একেবারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে। এতটা অসুস্থ অবস্থায়ও সন্তানের কাছে থেকে যাওয়াটাকে ভালো মনে করেননি, জণগণের কাছে ফিরে আসাটাকেই তিনি ভালো মনে করেছেন। এটি খুব কম রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে পাওয়া যাবে।
সম্প্রতি একটি ভারতীয় সাময়িকী তারেক রহমানকে ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী’ বলে প্রতিবেদন বের করেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে মাঠে থাকা দলগুলোর মধ্যে বিএনপিই সবচেয়ে ভালো করবে এমন ধারণা রয়েছে বৈ কি! তারেক রহমান দেশে ফিরলে সে সম্ভাবনা আরও বাড়বে। তারেক রহমান দেশে ফিরলে গণতন্ত্রে উত্তরণ প্রক্রিয়াটি আরও জোরদার হবে বলে ধারণা।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুই মামলায় কারাগারে যান খালেদা জিয়া। রাজনীতিতে তাঁর অনুপস্থিতিতে দলের হাল ধরেন বড় ছেলে তারেক রহমান। এখন পর্যন্ত তিনিই সেই দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২০ সালের করোনাকালে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। তবে মুক্ত হলেও রাজনীতিতে অংশ না নিতে পারাসহ নানা শর্তের বেড়াজালে থাকতে হয়েছে তাঁকে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পরদিন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের এক আদেশে মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপারসন। এর পর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দি ছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।