খুঁজে ফিরছে প্রিয় সন্তানের চিহ্ন

- আপডেট সময় : ১০৮ বার পড়া হয়েছে
দুর্ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও সন্তানের খোঁজ করছেন অভিভাবক ও স্বজনরা। হাসপাতাল বা মর্গ কোথাও খুঁজে না পেয়ে আবারো ফিরে আসছেন মাইলস্টোনে। ধ্বংসস্তূপের মাঝে খুঁজে ফিরছেন প্রিয় সন্তানের চিহ্ন
ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও সন্তানের খোঁজ করছেন অভিভাবক ও স্বজনরা। হাসপাতাল বা মর্গ কোথাও খুঁজে না পেয়ে আবারো ফিরে আসছেন মাইলস্টোনে। ধ্বংসস্তূপের মাঝে খুঁজে ফিরছেন প্রিয় সন্তানের চিহ্ন।
রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের পর সন্তানদের খোঁজে ছুটে বেড়াচ্ছেন অভিভাবক ও স্বজনরা। কেউ ছুটছেন স্কুল ভবনের সামনে, কেউ ছুটছেন এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে। আহত শিক্ষার্থীদের অবস্থান নিশ্চিত না হতে পেরে আতঙ্ক আর কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অনেকেই।
গত সোমবার দুপুর সোয়া ১টা ১৬ মিনিটে বিমানটি মাইলস্টোন স্কুলের একটি দোতলা ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। এখনও অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী হতাহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এখন পর্যন্ত অন্তত ৩১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে বলা যায়, গতকাল মঙ্গলবার সকালটা আর দশটা সকালের মতো ছিল না মাইলস্টোন স্কুল প্রাঙ্গণে। ক্লাসরুমে নেই শিশুদের কোলাহল, নেই চঞ্চল দৌড়ঝাঁপ, তার বদলে রয়েছে এক অসহনীয় নীরবতা। বিমান দুর্ঘটনায় চেনা ক্লাসরুমগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত। ধ্বংসস্তূপে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কোমলমতি শিশুদের বই-খাতা ও খেলার সামগ্রি।
মঙ্গলবার সকালে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের চারপাশ ঘিরে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কাজ করছে বিমান বাহিনীর অনুসন্ধান দল। অন্যদিকে স্কুল গেটের বাইরে সকাল থেকে ভিড় করেছে স্বজন আর উদ্বিগ্ন জনতার। কেউ খুঁজছে তার সন্তান, কেউ বা দাঁড়িয়ে আছে হারিয়ে যাওয়ার দুঃসহ প্রহর গুণে। ক্লাসরুম ধ্বংসস্তূপ রয়েছে বইখাতা খেলার সামগ্রী পড়ে আছে।
তৃতীয় শ্রেণির শিশু শিক্ষার্থী আফিয়া উম্মে মরিয়মকে খুঁজে পেতে রাজধানীর এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে পাগলের মতো ছুটেছেন মা তানিয়া আক্তার তবে সব জায়গা থেকেই ফিরেছেন শূণ্য হাতে। সন্তানকে না পেয়ে পাগল প্রায় মা। সকালে আফিয়ার খোঁজে ধসে যাওয়া স্কুল ভবনে এসে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তিনি। প্রতিটি ইট, প্রতিটি ধুলোর স্তূপে খুঁজে বেড়াচ্ছেন নিখোঁজ সন্তানকে।
সন্তানকে না পেয়ে অভিভাবকদের আহাজারিতে বার্ন ইউনিটের বাতাস ভারী হয়ে উঠে। অভিভাবকদের আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরাও থামাতে পারছিলেন না। গতকালও স্কুল চত্বরে জড়ো হন অভিভাবকরা। সন্তানদের নাম ধরে কান্না করছেন, কেউ কেউ ফোনে হাসপাতালে খোঁজ নিচ্ছেন, কেউ আবার অ্যাম্বুলেন্সের পেছনে দৌড়ে যাচ্ছেন।
আয়েশা বেগম বলেন, আমার মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ক্লাস শেষে কোচিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছিল। এখন ওর খোঁজ পাচ্ছি না। কোথাও নাম নেই, কেউ কিছু বলতে পারছে না। আমি কোথায় যাবো?
সাবিনা ইয়াহা নামে এক শিক্ষার্থীর বাবা আব্দুর রহমান বলেন, স্কুলে আসার সময় মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছিলাম, বলেছিল সে ক্লাস শেষ করে কোচিংয়ে যাবে। এখন ওর ফোন বন্ধ, স্কুলে নেই, হাসপাতালে খোঁজ নেই। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।
রাশেদা খানম নামে এক শিক্ষার্থীর চাচি বলেন, আমার ভাতিজা মারুফ সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলের সামনে ছুটে এলাম। কেউ কিছু জানে না। একবার বলছে বার্ন ইনস্টিটিউটে, আবার বলছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। কোথায় যাবো বুঝতে পারছি না। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার শোক এ পরিবারগুলোকে বয়ে বেড়াতে হবে আজীবন।
এদিকে রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখনও ৬ মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। গতকাল মঙ্গলাবার রাতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, এখনও ছয়টা মৃতদেহের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। যারা তাদের সন্তান বা স্বজনকে খুঁজে পাচ্ছেন না, তাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ- আমাদের দেওয়া তালিকায় যদি তাদের সন্তানের বা স্বজনের নাম না থাকে, তাহলে দয়া করে মালিবাগ সিআইডি ভবনে গিয়ে যোগাযোগ করুন। সেইসঙ্গে ডিএনএ স্যাম্পলিংয়ের জন্য সহযোগিতা করুন। এ ছাড়া সিএমএইচে শনাক্ত হয়নি এমন মৃতদেহের ডিএনএ টেস্ট স্যাম্পল কালেক্ট করা হয়েছে বলেও জানানো হয়।