খুলে গেলো অর্থনীতির উত্তর দুয়ার

- আপডেট সময় : ১১:০৪:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫ ৩১ বার পড়া হয়েছে
বহুল কাঙ্খিত যমুনা রেলসেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে খুলে গেলো অর্থনীতির উত্তর দুয়ার। বাংলাদেশের পশ্চিম-উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে উৎপাদিত পণ্যের সময় সাশ্রয়ী পরিবহণে উপকৃত হবে সাধারণ মানুষ। ন্যায্যমূল্য পাবেন কৃষক। অর্থনীতি গতিশীল হওয়ার পাশাপাশি উত্তরজনপদের সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান
বহুল কাঙ্খিত যমুনা রেলসেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে খুলে গেলো অর্থনীতির উত্তর দুয়ার। বাংলাদেশের পশ্চিম-উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে উৎপাদিত পণ্যের সময় সাশ্রয়ী পরিবহণে উপকৃত হবে সাধারণ মানুষ। ন্যায্যমূল্য পাবেন কৃষকরা। তাতে অর্থনীতি গতিশীল হবার পাশাপাশি উত্তরজনপদের কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে। যমুনা নদীতে রেলসেতু নির্মাণ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়। জাপানের অর্থায়নে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রেলসেতু দেশের দীর্ঘতম প্রথম ডাবল ট্রাকের ডুয়েল গেজের সেতু। এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা। যার ৭২ দশমিক ৪ শতাংশ ঋণ হিসেবে দিয়েছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) এবং বাকি অর্থ সরকার দিয়েছে। জাপানের ওটিজি এবং আইএইচআই যৌথভাবে সেতুটি নির্মাণ করেছে। ২০২১ সালের মার্চে পিলার নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। উদ্বোধনী বিশেষ ট্রেনটি ঘণ্টায় ১০০ মিটার গতিতে ১২টা ১৫ মিনিটে পূর্ব প্রান্ত থেকে ছেড়ে ১২টা ১৮ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে মাত্র সাড়ে তিন মিনিটে সেতুটি পাড়ি দেয়।
সিরাজগঞ্জ প্রান্তে সায়দাবাদে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রেলওয়ের মহাপরিচালক এম আফজাল হোসেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব এম ফাহিমুল ইসলাম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। আয়োজনের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি ও জাপানের বৈদেশিক উন্নয়ন সংস্থা জাইকার দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মহাপরিচালক ইতো তেরুয়ুকি। এই সেতু উদ্বোধনের পর তারা সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে একটি বিশেষ ট্রেনে যমুনা সেতুর পশ্চিমে সিরাজগঞ্জে সায়দাবাদ স্টেশনে সংবাদ সম্মেলন করে। এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী থেকে সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস ট্রেন প্রথমবারের মতো যাত্রী নিয়ে যমুনা রেলসেতু পার হয়ে ঢাকায় পৌঁছায়। পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানোর সময় একটি ট্রেন ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে সেতুটি অতিক্রম করে।
যমুনা রেলসেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, রেল সেতুতে দুটি লাইন রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে একটি লাইনে প্রতিদিন ৩৪টি ট্রেন চলাচল করছে। এখন থেকে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে দিনে কমপক্ষে ৮৮টি ট্রেন দ্রুত গতিতে সেতু পারাপার হতে পারবে। এতে অবশ্যই সময় সাশ্রয় হবে। কারণ পুরোনো সেতুতে ওঠার আগে ট্রেন থামতে হতো। বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রেন পাসিং না হওয়া পর্যন্ত ট্রেনটিকে অপেক্ষা করতে হতো। এভাবে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট কেটে যেত। নতুন সেতু চালুর কারণে এই অপেক্ষা আর রইলো না।
রেল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী থেকে যমুনা রেলসেতু পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ১৩৪ কিলোমিটার। এরমধ্যে নাটোরের আব্দুলপুর জংশন থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রেলপথ ডাবল লাইন। আর ঈশ্বরদী থেকে রেলসেতু পর্যন্ত ৭১ কিলোমিটার এবং রাজশাহী থেকে আব্দুলপুর পর্যন্ত ৪৩ কিলোমিটার মিলে মোট ১১৪ কিলোমিটার রেলপথ সিঙ্গেল লাইন। এই ১১৪ কিলোমিটারে ট্রেন পাসিংয়ের জন্য দাঁড়াবে। ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগ ঠিকই হবে। যদিও জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত রেললাইনকে ডাবল লাইনে উন্নীত করতে রেলওয়ের একটি প্রকল্প থাকলেও কাজ চলছে না।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম বলেন, ১৯৯৮ সালে নির্মিত যমুনা বহুমুখী সেতুটি রেললাইনের জন্য নির্মিত না হলেও একটি রেলসেতু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনে আরেকটি রেলসেতুর দরকার হওয়ায় আমাদের বন্ধু জাইকার অর্থায়নে সেটি নির্মাণ করা হলো এবং আজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হলো। সচিব বলেন, আগে যমুনা সেতুর রেললাইন দিয়ে পণ্যবাহী ভারী ট্রেন চলাচল করতে পারতো না। কিন্তু এখন এই রেলসেতু দিয়ে তা করতে পারবে। এ সময় নিয়মানুযায়ী ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধি পাবে বলেও জানান তিনি। বর্তমানে ট্রেনে চলাচল করা যাত্রীদের সেবা বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে এক প্রশ্নের জবাবে যমুনা রেলসেতুতে এখন পর্যন্ত কোনও দুর্নীতির তথ্য বা অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।