ঢাকা ১১:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

গাইবান্ধায় ২০ বছর ধরে কোরআন শিক্ষা দিচ্ছেন অন্ধ হাফেজ মশিউর

সাদুল্লাপুর প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৫:৩০:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫ ১৫ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিজের চোখের আলো না থাকলেও ২০ বছর ধরে কোরআন শিক্ষা দিচ্ছেন অন্ধ হাফেজ মশিউর। ছোটবেলা থেকে অন্ধ হওয়ার কারণে নিজে দেখে দেখে কুরআন না পড়তে পারলেও শুনে শুনে মুখস্থ করে ফেলেছেন হাফেজ। কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন ৭শ থেকে ৮’শত এয়াতিমখানার মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদেরকে।আবার কোরআনের আলো ছড়িয়ে দিতে ছুটে চলেন বিভিন্ন ইসলামী জলসায় ও লোকজনের বাড়ি বাড়ি।
জানা যায়, ভোর হওয়ার পরপরই মাদ্রাসার দিকে তড়িঘড়ি করে ছুটে যান অন্ধ হাফেজ মশিউর রহমান লিমন (৪২)। কখনো একা আবার কখনো বা কারো সাহায্য নিয়ে পায়ে হেঁটে মাদ্রাসার দিকে বের হন।এরপর মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের দেন কোরআনের শিক্ষা।হাফেজ মশিউর রহমান লিমনের বাড়ি সাদুল্যাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ভাতগ্রাম এলাকায়।২০০১ সালে মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে হাফেজ হন তিনি। এরপর মনের আনন্দে প্রায় ২০ বছর ধরে দুটি মাদ্রাসায় কুরআন শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।বর্তমানে এই হাফেজ ভাতগ্রাম( পঁচার বাজার) জামিয়াতুল হোসাইনিয়া মারকাজুল উলুম হাফিজিয়া কওমী মাদ্রাসা ও এতিমখানায় সামান্য কিছু হাদিয়া নিয়েই সংসার চালান ।
তিন ছেলে সন্তান, স্ত্রী ও তার মাকে নিয়ে তার পরিবার।পেশায় মাদ্রাসা শিক্ষক হলেও এলাকার মানুষের কাছে অন্ধ হাফেজ নামে পরিচিত সে।এলাকা ও তার আশপাশের গ্রামে যেকোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলে সবার আগে তাকে দাওয়াত করা হয়। সেই সাথে বিনা পারিশ্রমীকে ইসলামী জলসায় কুরআনের আলো ছড়িয়ে দেন তিনি। কোরআন প্রচারের জন্য এলাকার মানুষের কাছে তার আগ্রহ দৃষ্টান্ত।
হাফেজ মশিউর রহমান লিমন বলেন,মূলত শিক্ষার্থীদের কোরআন তিলোওয়াত শেখাই ও বিভিন্ন ইসলামী জলসায় দিনে কথা বলে থাকি। এসব করতে পেরে অনেক ভাল লাগে।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোরআনের শিক্ষা দিতে চাই।তিনি আরও বলেন,যে ব্যক্তি দুঃখকে জয় করতে পারবে তার কাছে আপনা আপনি সুখ ধরা দিবে।আমি দুঃখকে জয় করেছি।এজন্যই তো বর্তমান সময়ের বাজারে মাদ্রাসা থেকে ৪ হাজার টাকার হাদিয়া নিয়েই পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে সুখে আছি।
মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থী নাঈম বলেন, হুজুরের ক্লাশ করে অনেক ভাল লাগে সেই সাথে কন্ঠ শুনে মুগ্ধ আমরা।বিশেষ করে তার আজান।এছাড়া স্থানীয় ও শিক্ষকরা বলছেন তার জীবন খুবই সংগ্রামী সে খুব কষ্ট করে পায়ে হেঁটে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করান।
স্থানীয় হামিদ মিয়া বলেন, মশিউর আমার বন্ধু। আমার চোখ থাকতেও আমি কোরআন পরতে জানি না, তবে সে জানে।সে অন্ধ হয়েও যেভাবে আখিরাতের জন্য কাজ করছে তা দেখে আমি অবাক হই।সে আমাদের গ্রামের অহংকার। তার মাধ্যমে শত শত ছাত্র কোরআন শিখেছে।
সাদুল্যাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজার রহমান মাফু বলেন, সে অত্যান্ত শান্ত স্বভাবের লোক।বাবা মার আছে কিছু তবে তার কিছু নাই। অভাবের সাথে যুদ্ধ করেই চলতে হয়।ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সবসময় পাশে ছিলাম আগামীতেও সহযোগিতা করব।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

গাইবান্ধায় ২০ বছর ধরে কোরআন শিক্ষা দিচ্ছেন অন্ধ হাফেজ মশিউর

আপডেট সময় : ০৫:৩০:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

নিজের চোখের আলো না থাকলেও ২০ বছর ধরে কোরআন শিক্ষা দিচ্ছেন অন্ধ হাফেজ মশিউর। ছোটবেলা থেকে অন্ধ হওয়ার কারণে নিজে দেখে দেখে কুরআন না পড়তে পারলেও শুনে শুনে মুখস্থ করে ফেলেছেন হাফেজ। কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন ৭শ থেকে ৮’শত এয়াতিমখানার মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদেরকে।আবার কোরআনের আলো ছড়িয়ে দিতে ছুটে চলেন বিভিন্ন ইসলামী জলসায় ও লোকজনের বাড়ি বাড়ি।
জানা যায়, ভোর হওয়ার পরপরই মাদ্রাসার দিকে তড়িঘড়ি করে ছুটে যান অন্ধ হাফেজ মশিউর রহমান লিমন (৪২)। কখনো একা আবার কখনো বা কারো সাহায্য নিয়ে পায়ে হেঁটে মাদ্রাসার দিকে বের হন।এরপর মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের দেন কোরআনের শিক্ষা।হাফেজ মশিউর রহমান লিমনের বাড়ি সাদুল্যাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ভাতগ্রাম এলাকায়।২০০১ সালে মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে হাফেজ হন তিনি। এরপর মনের আনন্দে প্রায় ২০ বছর ধরে দুটি মাদ্রাসায় কুরআন শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।বর্তমানে এই হাফেজ ভাতগ্রাম( পঁচার বাজার) জামিয়াতুল হোসাইনিয়া মারকাজুল উলুম হাফিজিয়া কওমী মাদ্রাসা ও এতিমখানায় সামান্য কিছু হাদিয়া নিয়েই সংসার চালান ।
তিন ছেলে সন্তান, স্ত্রী ও তার মাকে নিয়ে তার পরিবার।পেশায় মাদ্রাসা শিক্ষক হলেও এলাকার মানুষের কাছে অন্ধ হাফেজ নামে পরিচিত সে।এলাকা ও তার আশপাশের গ্রামে যেকোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলে সবার আগে তাকে দাওয়াত করা হয়। সেই সাথে বিনা পারিশ্রমীকে ইসলামী জলসায় কুরআনের আলো ছড়িয়ে দেন তিনি। কোরআন প্রচারের জন্য এলাকার মানুষের কাছে তার আগ্রহ দৃষ্টান্ত।
হাফেজ মশিউর রহমান লিমন বলেন,মূলত শিক্ষার্থীদের কোরআন তিলোওয়াত শেখাই ও বিভিন্ন ইসলামী জলসায় দিনে কথা বলে থাকি। এসব করতে পেরে অনেক ভাল লাগে।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোরআনের শিক্ষা দিতে চাই।তিনি আরও বলেন,যে ব্যক্তি দুঃখকে জয় করতে পারবে তার কাছে আপনা আপনি সুখ ধরা দিবে।আমি দুঃখকে জয় করেছি।এজন্যই তো বর্তমান সময়ের বাজারে মাদ্রাসা থেকে ৪ হাজার টাকার হাদিয়া নিয়েই পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে সুখে আছি।
মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থী নাঈম বলেন, হুজুরের ক্লাশ করে অনেক ভাল লাগে সেই সাথে কন্ঠ শুনে মুগ্ধ আমরা।বিশেষ করে তার আজান।এছাড়া স্থানীয় ও শিক্ষকরা বলছেন তার জীবন খুবই সংগ্রামী সে খুব কষ্ট করে পায়ে হেঁটে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করান।
স্থানীয় হামিদ মিয়া বলেন, মশিউর আমার বন্ধু। আমার চোখ থাকতেও আমি কোরআন পরতে জানি না, তবে সে জানে।সে অন্ধ হয়েও যেভাবে আখিরাতের জন্য কাজ করছে তা দেখে আমি অবাক হই।সে আমাদের গ্রামের অহংকার। তার মাধ্যমে শত শত ছাত্র কোরআন শিখেছে।
সাদুল্যাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজার রহমান মাফু বলেন, সে অত্যান্ত শান্ত স্বভাবের লোক।বাবা মার আছে কিছু তবে তার কিছু নাই। অভাবের সাথে যুদ্ধ করেই চলতে হয়।ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সবসময় পাশে ছিলাম আগামীতেও সহযোগিতা করব।