গাইবান্ধার এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত

- আপডেট সময় : ১২:২৬:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫ ৩৮ বার পড়া হয়েছে
অসুস্থ জনিত কারনে কর্মস্থলে এক দিন অনুপস্থিত থাকায় গাইবান্ধা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ছাবিউল ইসলামকে শোকজসহ ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে জবাব দাখিলের আদেশ দেন প্রধান প্রকৌশলী। সেই সাথে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গাইবান্ধা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করেছেন।
নাটোরের সিংড়ায় নগদ টাকাসহ গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. নিজাম উদ্দিনের স্বাক্ষরিত পত্র জারি করে। সাময়িক বরখাস্তের আদেশে বলা হয়, কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম কর্মস্থল ত্যাগ ও গাড়িতে অবৈধ অর্থ বহনের সময় পুলিশী তল্লাশিহে উদ্ধার।
এদিকে কারন দর্শানোর শোকজের জবাবের সময় থাকতে তাকে সরাসরি সাময়িক বরখাস্ত করায় বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অপরদিকে নির্বাহী প্রকৌশলীর পরিবারের সদস্যরা বলছেন, কোন তদন্ত না করেই শুধু মাত্র গণমাধ্যমের প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে একজন কর্মকর্তার সাময়িক বরখাস্ত করা দুঃখ জনক এবং মানসিক ভাবে বিপদগ্রস্ত করার সামিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রকৌশলী জানান, এ ধরনের ঘটনায় বিচারের আগে সাময়িক বরখাস্ত ব্যক্তির উপর মানসিক চাপ তৈরি করে। ঘটনা যাইহোক সুষ্ঠ তদন্ত এবং বিচারিক রায়ের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া উচিৎ কিন্তু যে কোন ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের ধর্য্যশীল হওয়া দরকার। গণমাধ্যমের খবরের ভিত্তিতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিলে ওই ব্যক্তির সামাজিকতায় নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়। প্রকৃত অপরাধের শাস্তি হোক সেটা যথাযথ ভাবে কিন্তু তড়িঘড়ি করে আচমকাই কর্ম থেকে বিরত রাখা এটা কখনই ইতিবাচক হতে পারে না।
উন্নয়ন সংগঠকদের মতে, কোন ঘটনা ঘটলেই তড়িৎ সাময়িক বরখাস্তের এমন ঘটনা সরকারি দফতরের রীতিতে পরিনত হয়ে গেছে। দোষ সাব্যস্ততায় বিচার হওয়া উচিৎ, সেখানে অপরাধী যেমন শাস্তি পাবে অপরপক্ষে নিরপরাধীরা মুক্তি পাবে। ঘটনার দিন থেকে প্রকৌশলী মো. ছাবিউল ইসলাম তল্লাশিতে জব্দকৃত টাকা পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করেছেন এটা তার দাবি কিন্তু সেই দাবির স্বপক্ষে প্রমানের জন্য অবশ্যই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিকে সময় দেয়া উচিৎ ছিল। তড়িঘড়ি সাময়িক বরখাস্তের এমন সিদ্ধান্ত অনেকক্ষেত্রে অপরাধ করেনি এরুপ ব্যক্তিকে বিপদগ্রস্ত করতে পারে।
প্রসঙ্গত: গাইবান্ধার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ
(এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ছাবিউল ইসলাম পৈত্রিক জমি বিক্রির টাকা সহ বাড়ি ফেরার সময় নাটোরের চলনবিল গেটে পুলিশ তল্লাশিতে তার প্রাইভেট কারটি জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় নেয় সিংড়া থানা পুলিশ। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন তার পরিবার। তবে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নিজেকে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবেই পরিচয় দেন এবং তল্লাশির আগে প্রাইভেট কারে থাকা টাকাগুলো বৈধ তা নিশ্চিত করেন বলে প্রাইভেট কারের ড্রাইভার জানান। প্রাইভেট কারে ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার তিনশ টাকা ছিল বলে সূত্র থেকে জানা যায়।
এরই মধ্যে পুলিশের তল্লাশির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। জানতে চাইলে গাইবান্ধা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ছাবিউল ইসলাম বলেন, ন্যায় বিচারের স্বার্থে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আমি,জব্দকৃত টাকা চুরির টাকা নয়।
পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রির টাকা এবং মিডলাইফ ইন্সুইরেন্সের জমানো টাকাসহ আমার বাসা রাজশাহীতে ফেরার পথে চলন বিল গেটে পুলিশ আমার গাড়ীর গতি থামিয়ে পরিচয়সহ গন্তব্য জানতে চায় এবং তল্লাশির আগেই গাড়ীতে থাকা আমার বৈধ টাকার বিষয়টি তাদের জানানোয় আচমকাই তাদের মধ্যে নানাবিধ কথা চলতে থাকে ও টাকা গাড়ির কোথায় রেখেছি সে তথ্যও তাদের বলেছি।
যেখানে জেলা শহরে এক শতাংশ জমির দাম ২০ লক্ষাধিক টাকা সেখানে পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রির টাকা ৩৬-৩৭ লাখ মোটেও অস্বাভাবিক পরিমান হতে পারে না। তিনি আরও জানান, আমি তো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি,পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষের জীবনে ঘাতপ্রতিঘাত রয়েছে এবং তা থাকবেই। আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা অবগত হয়েছি। তবে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে সাময়িক বরখাস্তের এই শাস্তি আমাকে মানসিক ভাবে আঘাত করেছে। অপরাধ করিনি এবং ন্যায় বিচারে আমি খালাস পাবো ইনশাআল্লাহ।