গুম-খুনের মাস্টারমাইন্ড জিয়াউল আহসান
- আপডেট সময় : ০৪:৫৭:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৪ ১৭৫ বার পড়া হয়েছে
আটদিনের পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। ঢাকার নিউমার্কেট থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর আটদিনের পুলিশ হেফাজতে আনা হয়।
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা আয়নাঘরের জনক, গুম-খুনের মাস্টারমাইন্ড, ফোনকলে আড়িপাতা, মানুষের ব্যক্তিগত আলাপ রেকর্ড ছাড়াও হেফাজতের ঘটনায় যৌথ অভিযানে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে। যদিও আদালতে আয়নাঘরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার কথা অস্বীকার করেছেন মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান।
১০ বছর আগে নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের সঙ্গেও যুক্ত এই জিয়া। কিন্তু তৎকালীন সরকারের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের কারণে রক্ষা পায়।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এরপর দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয় বলে জানায় বিমান বন্দর সূত্র।
৩ বছরের ব্যবধানে ২০১৩ সালে জিয়াউল আহসান পদোন্নতি পেয়ে কর্নেল হয়ে যান এবং একই সময়ে তাকে র্যারের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। আড়াই বছর পর ২০১৬ সালের এপ্রিলে পদোন্নতি পেয়ে বিগ্রেডিয়ার হয়ে গেলে তাকে এনএসআইতে (ইন্টারনাল অ্যাফেয়ার্স) পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
২০১৭ সালে জিয়াউলকে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) অধীন এনটিএমসির পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০২২ সালের ২১ জুলাই এনটিএমসিতে মহাপরিচালক (ডিজি) পদ তৈরি করা হয় এবং জিয়াউলকে মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
তিনি এনটিএমসির প্রথম মহাপরিচালক হন। এই এনটিএমসির কাজ হচ্ছে, তথ্য ও যোগাযোগের ডেটা পর্যবেক্ষণ, সংগ্রহ ও রেকর্ড করার পাশাপাশি ইলেকট্রনিক যোগাযোগ যেমন ফোনকল, ই-মেইল ও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ইন্টারসেপ্ট করা। এই পদে থাকা অবস্থায় গত ৬ আগস্ট তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
আয়নাঘরের জনক জিয়াউল
সরকার বিরোধী মতাবলম্বীদের তুলে নিয়ে বছরের পর বছর গুম করে গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ তৈরির অভিযোগ রয়েছে জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে করা আবেদনে পুলিশেরও দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জিয়াউল আহসান আয়নাঘর এবং ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ ও হত্যার সঙ্গে থাকার কথা স্বীকার করেছেন। যদিও আদালতে শুনানির সময় এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জিয়াউল আহসান।
মানুষের ব্যক্তিগত আলাপ রেকর্ড
অভিযোগ রয়েছে এনটিএমসিতে দায়িত্ব পাওয়ার পর জিয়াউল আহসান সরকারদলীয় ও বিরোধীদলীয় হাইপ্রোফাইল নেতাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্যক্তিগত ফোনালাপ রেকর্ড করতেন। এমনকি বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের ব্যক্তিগত ফোনকল ফাঁস করে তা বিভিন্ন টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রচার করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সর্বশেষ ছাত্র আন্দোলনের সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কয়েকজন মন্ত্রীর ফোনালাপ রেকর্ডের সারাংশ গণভবন থেকে উদ্ধার হয়। তাতে আন্দোলন দমনে ইন্টারনেট বন্ধসহ নানা কৌশলের তথ্য উঠে আসে।
কোটা সংস্কারের দাবি বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের ব্যানারে আন্দোলন চলাকালে গত ১৭ জুলাই থেকে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ১৮ জুলাই থেকে ব্রডব্র্যান্ড ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ করা হয়। পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়।
ইন্টারনেট শাটডাউনেও জড়িত ছিল জিয়াউল আহসান।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ও মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান ডাটা সেন্টারগুলো বন্ধ করতে নির্দেশ দেন।
গুম-খুনের মাস্টারমাইন্ড জিয়াউল আহসান
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের শতাধিক নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হন। এই তালিকায় ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সাজেদুল ইসলামসহ একাধিক হাইপ্রোফাইল নেতাও ছিলেন। অভিযোগ আছে, বিচারবর্হিভূত এসব হত্যাকান্ডের মিশন বাস্তবায়ন করেছেন পুলিশের এলিটে ফোর্স র্যাব।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গুম ও বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন জিয়াউল আহসান। তার ইন্ধনে ঢাকা মহানগরীতে গুম ও বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল।
২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় জিয়াউল আহসান হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, কিন্তু তৎকালীন সরকারের আস্থাভাজন হওয়ায় তিনি বেঁচে যান।