গোলাপগঞ্জে টানা বৃষ্টিতে মাটি ধস যেন রাক্ষসী রুপ ধারণ

- আপডেট সময় : ০৪:১৭:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫ ২৩ বার পড়া হয়েছে
সিলেটের গোলাপগঞ্জে টিলা ধসে মাটিচাপা পড়ে একই পরিবারের চার জন মারা যান। খবরটি দিনভর ছিলো নিউজ অব দ্যা কান্ট্রি। শুধু তাই নয়, এছাড়াও যেসব নিউজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে পাহাড় বা মাটি ধস যেন রাক্ষসী রুপ ধারণ করছে। গোলাপগঞ্জ উপজেলা মূলত টিলা পাহাড় বেষ্টিত। টিলার পাদদেশে ঘর বাড়িগুলো এখন অরক্ষিত। স্থানীয় সাংবাদিকরা আগেই ঝুঁকিপূর্ণ টিলার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ায় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছে।
টানা বৃষ্টিতে সিলেটের গোলাপগঞ্জে টিলা ধসে শিশুসহ একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (৩১ মে) দিবাগত রাত আনুমানিক ২টা ৪৫ মিনিটে উপজেলার লাক্ষণাবন্দ ইউনিয়নের বখতিয়ারঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই এলাকার রিয়াজ উদ্দিন (৫০), তার স্ত্রী রহিমা বেগম (৪০), মেয়ে সামিয়া খাতুন (১৫) ও ছেলে আব্বাস উদ্দিনের (১৩) মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরে একটি টিলার নিচু অংশে বসবাস করে আসছিল। টানা ভারী বৃষ্টির কারণে রাত আনুমানিক ২টা ৪৫ মিনিটে টিলার একটি বড় অংশ ধসে পড়ে তাদের বাড়ির ওপর, এতে তারা ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে যায়।
এছাড়া গত কয়েকদিন থেকে মুষালধারে বৃষ্টি হওয়াতে মুকিতলা কৈলাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানান। বাঘা ইউনিয়নের উত্তর বাঘা মদিনাবাদ (বেদাইর টুল) এলাকার আব্দুল কুদ্দুসের বাড়ি টিল্লা ভেঙ্গে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যায়!
টিলা ধ্বসে ঢাকাদক্ষিন ইউনিয়ন ২নং ওয়ার্ড দক্ষিণ কানিশাইল এলাকায় ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের ঘোগারকুল দক্ষিণ পাড়া গ্রামের আপন দুই ভাই শামিম আহমদ ও আমির উদ্দিন। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে রবিবার রাতে টিলা ধ্ব—সে ঘরের উপর পড়ে। ঝু—কি—পূ—র্ণ অবস্থায় আজ এই দুই পরিবারের সদস্যরা রাত কাটাবেন।
টিলা ধ্ব—সে মাটির সাথে মিশে গেছে তিন ভাইয়ের ঘর। গোলাপগঞ্জ উপজেলার ৯নং পশ্চিম আমুড়া ইউপির ৫ নং ওয়ার্ডের কদমরসূল গ্রামের শেখ ইউসুফ, শেখ আহমদ, মৃ—ত আব্দুস সালাম। পেশায় দুই ভাই দিনমজুর। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ঘর ভেঙে এখন সবার ঠাঁই হয়েছে অন্যের ঘরে। মৃ—ত্যু—র মুখ থেকে বেঁচে ফিরলেন গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের ঘোগারকুল দক্ষিণ পাড়া গ্রামের রাজু আহমদ। পেশায় একজন রিকশাচালক। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে রবিবার রাতে দুই কক্ষের ঘর টিলা ধ্বসে ভে—ঙে পড়ে। মা—থা—য় ৯টি সে—লা—ই নিয়ে বর্তমানে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ঠাঁই হয়েছে অন্যের ঘরে।
উপজেলার পশ্চিম আমুড়া ইউপির ১নং ওয়ার্ডের নয়াটুল গ্রামের শামীম আহমদ। পেশায় একজন দিনমজুর। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে রবিবার রাতে ঘর ভে—ঙে আজ নেই ঘুমানোর মতো জায়গা। পরিবারের ৯ সদস্য নিয়ে দি—শে—হা—রা।
গোলাপগঞ্জ উপজেলার আমুড়া ইউপির ৪নং ওয়ার্ডের ইসলামটুল গ্রামের মজলু মিয়া। পেশায় একজন রিকশাচালক। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে রবিবার রাত ৩ ঘটিকার সময় ঘরের পাশ ভে—ঙ্গে ঝুঁ—কি—তে আছে পরিবারটি। পরিবারটিতে শি—শুসহ রয়েছেন আর ৪ জন।
উপজেলার আমুড়া ইউপির ৫ নং ওয়ার্ডের আমনিয়া পশ্চিম পাড়ার প্রবাস ফেরত আব্দুস সামাদ। রাত ২ ঘটিকার সময় টিলার মাটি ধ্বসে পড়ে ঘরে। এখনও ঝুঁ—কি—তে পরিবারটি! নিজের ঘর ও পরিবার রক্ষা করতে, রাত থেকে এখনও মাটি সরাতে ব্যস্ত আব্দুস সামাদ।
গত তিনদিন থেকে উপজেলার অধিকাংশ গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অনলাইন সতর্কতা সাধারণ মানুষ জানতে পারেনি। প্রশ্ন উঠছে, ‘শুধুমাত্র অনলাইনে সতর্কবার্তা দিয়ে কতটা কার্যকর সতর্কতা সম্ভব?’ সাধারণ মানুষ মনে করছেন, বিদ্যুৎহীন এলাকায় বাড়ি বাড়ি মাইকিং এবং সরাসরি সতর্কবার্তা প্রদানসহ প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এমন প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন।