ঢাকা ০৯:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::

গোলাম মাওলা সেতু দ্রুত নির্মাণের দাবি: জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ৪৫ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

১১ নভেম্বর সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গোলাম মাওলা সেতু বাস্তবায়ন আন্দোলন ও অগ্রযাত্রা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের উদ্যোগে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ এক দশক ধরে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া ও সখিপুরের মধ্যে কীর্তিনাশা নদীর উপর নির্মাণাধীন গোলাম মাওলা সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তারা সেতুটির দ্রুত নির্মাণের দাবি জানান।

আলোচনা সভায় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক জনাব পারভেজ মোশারফ বলেন, আজ আমরা দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে নড়িয়া-সখিপুরবাসীর প্রাণের দাবি নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়েছি। বাংলাদেশের অনেক স্থানে মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হলেও কীর্তিনাশা নদীর উপর নির্মাণাধীন গোলাম মাওলা সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন নারী, শিশু, বয়স্ক ও শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে নদী পার হচ্ছে। রাতে কেউ অসুস্থ হলে সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া যায় না। এতে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। নড়িয়া বাজারের ব্যবসায়ীরাও মারাত্মক ক্ষতির মুখে—তাদের বিক্রির হার ৫০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে, অনেকে দোকান ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।”

জনাব পারভেজ মোশারফ আরও বলেন, এই সেতু শুধু একটি অবকাঠামো নয়, এটি দুই পাড়ের মানুষের জীবনরেখা। আমাদের একটাই দাবি—আগামী বর্ষার আগেই যেন গোলাম মাওলা সেতুর কাজ সম্পন্ন করা হয়।

মানববন্ধনে অগ্রযাত্রা ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ড. মাহবুবুর রহমান, প্রচার সম্পাদক কাওসার আহমেদসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিজ না থাকায় নড়িয়া ও সখিপুরের মানুষকে এখনও ট্রলার বা নৌকার মাধ্যমে নদী পার হতে হয়, যা বর্ষাকালে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। জরুরি অবস্থায় যেমন-রোগী হাসপাতালে নেওয়া, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে যাওয়া—এসব ক্ষেত্রেও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। রাতে নদী পারাপার প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

কৃষকরা উৎপাদিত ফসল সময়মতো বাজারে নিতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা সহজে পণ্য পরিবহন করতে না পারায় স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। বিনিয়োগকারীরাও নতুন উদ্যোগ নিতে অনাগ্রহী। অনেক শিক্ষার্থী প্রতিদিন নদী পেরিয়ে স্কুল-কলেজে যায়, যা সময়সাপেক্ষ ও ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে মেয়েদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কমে গেছে, অভিভাবকরা ঝুঁকি নিতে চান না। শিক্ষক ও কর্মচারীদের যাতায়াতে অসুবিধা হওয়ায় শিক্ষার মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জরুরি রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ায় দেরি হয়, অনেক সময় নৌকা না পেয়ে রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত রোগী দেখতে যেতে পারেন না। নড়িয়া ও সখিপুরের মানুষ পারস্পরিক সামাজিক ও পারিবারিক যোগাযোগ রাখতে পারছে না। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, সামাজিক অনুষ্ঠান বা জরুরি কাজে যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়েছে। সেতু না থাকায় সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, যোগাযোগ—সব খাতে সমন্বিত উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।

গোলাম মাওলা সেতু শুধু একটি অবকাঠামো নয়-এটি নড়িয়া-সখিপুরের মানুষের জীবনরেখা। সেতু না থাকায় মানুষ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে, জীবন ঝুঁকিতে ফেলছে এবং উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয়দের একটাই প্রত্যাশা-অতি দ্রুত গোলাম মাওলা সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে জনগণের ভোগান্তি দূর করা হোক।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

গোলাম মাওলা সেতু দ্রুত নির্মাণের দাবি: জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধন

আপডেট সময় :

১১ নভেম্বর সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গোলাম মাওলা সেতু বাস্তবায়ন আন্দোলন ও অগ্রযাত্রা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের উদ্যোগে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ এক দশক ধরে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া ও সখিপুরের মধ্যে কীর্তিনাশা নদীর উপর নির্মাণাধীন গোলাম মাওলা সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তারা সেতুটির দ্রুত নির্মাণের দাবি জানান।

আলোচনা সভায় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক জনাব পারভেজ মোশারফ বলেন, আজ আমরা দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে নড়িয়া-সখিপুরবাসীর প্রাণের দাবি নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়েছি। বাংলাদেশের অনেক স্থানে মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হলেও কীর্তিনাশা নদীর উপর নির্মাণাধীন গোলাম মাওলা সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন নারী, শিশু, বয়স্ক ও শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে নদী পার হচ্ছে। রাতে কেউ অসুস্থ হলে সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া যায় না। এতে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। নড়িয়া বাজারের ব্যবসায়ীরাও মারাত্মক ক্ষতির মুখে—তাদের বিক্রির হার ৫০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে, অনেকে দোকান ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।”

জনাব পারভেজ মোশারফ আরও বলেন, এই সেতু শুধু একটি অবকাঠামো নয়, এটি দুই পাড়ের মানুষের জীবনরেখা। আমাদের একটাই দাবি—আগামী বর্ষার আগেই যেন গোলাম মাওলা সেতুর কাজ সম্পন্ন করা হয়।

মানববন্ধনে অগ্রযাত্রা ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ড. মাহবুবুর রহমান, প্রচার সম্পাদক কাওসার আহমেদসহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিজ না থাকায় নড়িয়া ও সখিপুরের মানুষকে এখনও ট্রলার বা নৌকার মাধ্যমে নদী পার হতে হয়, যা বর্ষাকালে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। জরুরি অবস্থায় যেমন-রোগী হাসপাতালে নেওয়া, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে যাওয়া—এসব ক্ষেত্রেও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। রাতে নদী পারাপার প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

কৃষকরা উৎপাদিত ফসল সময়মতো বাজারে নিতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা সহজে পণ্য পরিবহন করতে না পারায় স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। বিনিয়োগকারীরাও নতুন উদ্যোগ নিতে অনাগ্রহী। অনেক শিক্ষার্থী প্রতিদিন নদী পেরিয়ে স্কুল-কলেজে যায়, যা সময়সাপেক্ষ ও ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে মেয়েদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কমে গেছে, অভিভাবকরা ঝুঁকি নিতে চান না। শিক্ষক ও কর্মচারীদের যাতায়াতে অসুবিধা হওয়ায় শিক্ষার মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জরুরি রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ায় দেরি হয়, অনেক সময় নৌকা না পেয়ে রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত রোগী দেখতে যেতে পারেন না। নড়িয়া ও সখিপুরের মানুষ পারস্পরিক সামাজিক ও পারিবারিক যোগাযোগ রাখতে পারছে না। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, সামাজিক অনুষ্ঠান বা জরুরি কাজে যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়েছে। সেতু না থাকায় সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, যোগাযোগ—সব খাতে সমন্বিত উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।

গোলাম মাওলা সেতু শুধু একটি অবকাঠামো নয়-এটি নড়িয়া-সখিপুরের মানুষের জীবনরেখা। সেতু না থাকায় মানুষ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে, জীবন ঝুঁকিতে ফেলছে এবং উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয়দের একটাই প্রত্যাশা-অতি দ্রুত গোলাম মাওলা সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে জনগণের ভোগান্তি দূর করা হোক।