ঢাকা ০৮:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo `জুলাই চেতনায় ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিক সমাজের অঙ্গীকার’ Logo ডামুড্যায় গরীব ও অসহায়দের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ Logo বিশ্বনাথে আলোকিত সুর সাংস্কৃতিক ফোরাম অভিষেক ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা Logo বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের এমডিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহে মামলা Logo সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম শিক্ষক নিয়োগের দাবীতে ঝিনাইদহে মানববন্ধন Logo ঝিনাইদহে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিএনপির মতবিনিময় সভা Logo ভালো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে অরবিন্দ শিশু হাসপাতাল ভূমিকা রাখছে Logo বন্ধু একাদশ হাকিমপুরকে হারিয়ে মুন্সিপাড়া ওয়ারিয়ার্স দিনাজপুর চ্যাম্পিয়ান Logo জয়পুরহাটে স্ত্রীকে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা স্বামীর Logo ব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিমা শিল্পীরা

ঘরে ঘরে জ্বর ঠাই নেই সরকারী হাসপাতালে

হালিম মোহাম্মদ
  • আপডেট সময় : ১১২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
  • কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত ভুক্তভোগীদের

  • আগস্ট-সেপ্টেম্বর পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা

  • অফিস-আদালতে উপস্থিতি কম

রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতিটি ঘরে পরিবারের সদস্যদের কেউ না কেউ অসুস্থ রয়েছে। বিছানায় পড়ে আছেন বেশ কয়েকদিন। অভিভাবকের দেয়া তথ্য মতে, পরিবারে প্রতিটি সদস্যই কমবেশি অসুস্থ। জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা লেগেই আছে। একজনের অসুস্থতা কিছুটা কমলে অন্যজনের বাড়ে। সাত দিন সুস্থ তো আট দিন অসুস্থ। সারাদেশের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাল ফিভার বা জ্বর। কিছু কমন ওষুধ খেয়ে দিনাতিপাত করছেন পরিবারের সবাই। হাসপাতালে রোগীর এতা চাপ। মিলছে না বিছানা। মেঝেতে রেখেই চলছে চিকিৎসা। এ ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত অনেক ভুক্তভোগী কর্মক্ষমতা কমে গেছে। স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতেও পারছেন না। ডেঙ্গু কিংবা চিকুনগুনিয়া হতে পারে। বিছানা সংকটে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না। এসব রোগের তো কোনো চিকিৎসা নেই। হাসপাতালে ভর্তি হলে যে ওষুধ দিবে সেগুলো আমরা বাসায় বসেই খাচ্ছি।
চিকিৎসকদের মতে, রাজধানী ঢাকার ঘরে ঘরে এখন জ্বর-সর্দি-কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত মানুষ। অফিস-আদালতে উপস্থিতি কম। ওষুধের দোকানে ক্রেতার বাড়তি উপস্থিতি। হাসপাতালে রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। ভাইরাল ফিভার বা জ্বরের পাশাপাশি রয়েছে করোনা, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, টাইফায়েসহ নানা ব্যাধি। ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া এবং মৌসুমী জ্বর ছড়িয়ে গেছে সারাদেশে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা রাজধানী ঢাকা ও বরগুনায়।
জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তাদের অধিকাংশের শরীরে মিলছে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া কিংবা করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি। চিকিৎসকদের মতে, এ বছর মৌসুমি রোগ আগেভাগেই দেখা দিয়েছে। ফলে আক্রান্তের হারও বেশি।
রাজধানীর বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বারাকাহ জেনারেল হাসপাতালের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলতাফ হোসেন বলেন, জ্বর-কাশি নিয়ে আমাদের কাছে অনেক রোগীই আসছেন। পরীক্ষা করলেই ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া কিংবা করোনা শনাক্ত হচ্ছে। অনেক রোগী সুস্থ হচ্ছেন। তবে হাসপাতালে আগতদের অধিকাংশই ভর্তি হতে চান না জানিয়ে তিনি বলেন, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে নিজ বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিতে বেশি আগ্রহী রোগীরা।
গত কয়েক মাসের তুলনায় ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা অনেকে বেশি হলেও জ্বর, কাশি, সর্দি, গলা ব্যথ্যা, মাথা ব্যথায় আক্রান্ত এসব রোগীর অনেকেই মৌসুমি জ্বরে ভুগছেন বলেও জানান আলতাফ হোসেন। ডাক্তাররা তাদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জ্বর-ব্যাথার ট্যাবলেট দিচ্ছেন আর পর্যাপ্ত পানি পান এবং বিশ্রামের পরামর্শ দিচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, গত বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল চার হাজার ৩৩৬ জন। চলতি বছর একই সময়ে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৮৮০ জন। গত বছর এসময়ে ডেঙ্গুতে মারা যান ৪৭ জন রোগী। আর চলতি বছর একই সময়ে মারা গেছেন ৫৬ জন। গত বছরের শুরু থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয় ৪২৩ জনের শরীরে।
চলতি বছর একই সময়ে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭৫ জনে। গত বছর একই সময়ে করোনায় ২১ জনের মৃত্যু হলেও চলতি বছরের শুরু থেকে এপর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যুর সংবাদ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সংশ্লিষ্টদের মত, এবছর আগেভাগেই ডেঙ্গু-করোনা বেশি ছড়াচ্ছে। আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হারও বেশি। কাজেই অধিক সাবধানতা অবলম্বন প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে করোনায় কেউ মারা না গেলেও ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এসময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪২০ জন। ২০২৩ সালে সারাদেশে ডেঙ্গুতে এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। ২০২৪ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৫৭৫ জনের এবং আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মোট এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন। এ যাবত দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৫২ হাজার ২২০ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২৬ জনের। যদিও এসব রোগ সম্পর্কে জনমনে সচেতনতা তৈরি হয়েছে খুব সামান্যই।
চিকিৎসকদের মতে, এডিস মশাবাহিত এ রোগে মোট আক্রান্তের ৭৮ শতাংশই এখন ঢাকার বাইরের। এর আগে দেশে কখনো এ সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু এত এলাকায় ছড়ায়নি। ঢাকার বাইরে এত মৃত্যুও হয়নি। ঢাকার বাইরে কোনো কোনো অঞ্চলে এবার অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ডেঙ্গু, যা আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তারা জানান, ঢাকায় ভালো হাসপাতাল আছে। এখানকার চিকিৎসকরা ডেঙ্গুর সঙ্গে মোটামুটি পরিচিত। কিন্তু ঢাকার বাইরে এমন অভিজ্ঞতা তো অনেকেরই নেই। কাজেই এবছর যে প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে ঢাকার বাইরের রোগীদের জন্য অনেক ভয়াবহ দিন আসছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩ সালে দেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। ওই বছরের জুলাইয়ের ১২ তারিখ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ২৬৪। এর মধ্যে ঢাকায় আক্রান্ত ছিল ৮ হাজার ৪০২ জন, বাকি ৩ হাজার ৮৬২ জন ঢাকার বাইরে। মোট আক্রান্তের প্রায় ৬৮ শতাংশ ছিল ঢাকার, বাকিটা বাইরের। ঢাকার বাইরে এবার শুধু সংক্রমণের সংখ্যাই এখন পর্যন্ত বেশি নয়, মৃত্যুও বেশি।
গত বছর এ সময় পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছিল ৪৭ জনের। এর মধ্যে ৩৪ জন মারা গিয়েছিলেন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। বাকি ১৩ জন ঢাকার বাইরে। মোট মৃত্যুর ৭২ শতাংশই ছিল ঢাকায়। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৫৫ জনের। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে মারা গেছেন ২৯ জন, ২৬ জন ঢাকার বাইরে। এবার মোট মৃত্যুর ৫৩ শতাংশ ঢাকায়, ৪৭ শতাংশ বাইরে। তাছাড়া, ঢাকার হাসপাতালে যেসব মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ঢাকার বাইরের রোগী।
মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর সাবেক মুখ্য কীটতত্ত্ববিদ তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অব্যবস্থাপনাকে ডেঙ্গু বিস্তারের কারণ হিসেবে অবশ্যই ধরতে পারি। কিন্তু ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিসের বিস্তারে বৃষ্টি, তাপমাত্রা ও আদ্রতা এই তিনের মিলিত ভূমিকা আছে। কয়েক দশক ধরে এসবের মধ্যে একধরনের অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে। তাই জলবায়ু পরিবর্তন দেশের ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রাখছে। দেশজুড়ে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটছে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। এখন রোগটির প্রকোপ দেখে ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশি হচ্ছে, এমন এলাকায় বাড়ি বাড়ি অভিযান চালানোর পরামর্শ দিয়ে তারা বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এটা করতে না পারলে আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বর নাগাদ পরিস্থিতি খুবই খারাপ হবে। ঢাকার দুই সিটি কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করছে, ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বছরব্যাপী মশা নিধন কাজ করেছে তারা। পাশাপাশি বিশেষ কিছু কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে মশার প্রজননস্থলের সন্ধান ও তা ধ্বংসে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে সভা, সেমিনার, প্রচারপত্র বিতরণ, স্বেচ্ছাসেবী সম্পৃক্ত করাসহ নানা উদ্যোগের মাধ্যমে নগরবাসীকে ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেনের মতে, ডেঙ্গু আমাদের জন্য পুরানো রোগ হলেও আমরা এ থেকে কিছু শিখছি না। চেষ্টাও করছি না যথাযথভাবে। তাই একে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। তাই ডেঙ্গুর বিস্তারে এ রোগ এবং মশার নিয়ন্ত্রণ জরুরি। এর সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় সরকারের সক্রিয়তা, সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ঘরে ঘরে জ্বর ঠাই নেই সরকারী হাসপাতালে

আপডেট সময় :
  • কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত ভুক্তভোগীদের

  • আগস্ট-সেপ্টেম্বর পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা

  • অফিস-আদালতে উপস্থিতি কম

রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতিটি ঘরে পরিবারের সদস্যদের কেউ না কেউ অসুস্থ রয়েছে। বিছানায় পড়ে আছেন বেশ কয়েকদিন। অভিভাবকের দেয়া তথ্য মতে, পরিবারে প্রতিটি সদস্যই কমবেশি অসুস্থ। জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা লেগেই আছে। একজনের অসুস্থতা কিছুটা কমলে অন্যজনের বাড়ে। সাত দিন সুস্থ তো আট দিন অসুস্থ। সারাদেশের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাল ফিভার বা জ্বর। কিছু কমন ওষুধ খেয়ে দিনাতিপাত করছেন পরিবারের সবাই। হাসপাতালে রোগীর এতা চাপ। মিলছে না বিছানা। মেঝেতে রেখেই চলছে চিকিৎসা। এ ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত অনেক ভুক্তভোগী কর্মক্ষমতা কমে গেছে। স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতেও পারছেন না। ডেঙ্গু কিংবা চিকুনগুনিয়া হতে পারে। বিছানা সংকটে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না। এসব রোগের তো কোনো চিকিৎসা নেই। হাসপাতালে ভর্তি হলে যে ওষুধ দিবে সেগুলো আমরা বাসায় বসেই খাচ্ছি।
চিকিৎসকদের মতে, রাজধানী ঢাকার ঘরে ঘরে এখন জ্বর-সর্দি-কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত মানুষ। অফিস-আদালতে উপস্থিতি কম। ওষুধের দোকানে ক্রেতার বাড়তি উপস্থিতি। হাসপাতালে রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। ভাইরাল ফিভার বা জ্বরের পাশাপাশি রয়েছে করোনা, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, টাইফায়েসহ নানা ব্যাধি। ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া এবং মৌসুমী জ্বর ছড়িয়ে গেছে সারাদেশে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা রাজধানী ঢাকা ও বরগুনায়।
জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তাদের অধিকাংশের শরীরে মিলছে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া কিংবা করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি। চিকিৎসকদের মতে, এ বছর মৌসুমি রোগ আগেভাগেই দেখা দিয়েছে। ফলে আক্রান্তের হারও বেশি।
রাজধানীর বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বারাকাহ জেনারেল হাসপাতালের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলতাফ হোসেন বলেন, জ্বর-কাশি নিয়ে আমাদের কাছে অনেক রোগীই আসছেন। পরীক্ষা করলেই ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া কিংবা করোনা শনাক্ত হচ্ছে। অনেক রোগী সুস্থ হচ্ছেন। তবে হাসপাতালে আগতদের অধিকাংশই ভর্তি হতে চান না জানিয়ে তিনি বলেন, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে নিজ বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিতে বেশি আগ্রহী রোগীরা।
গত কয়েক মাসের তুলনায় ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা অনেকে বেশি হলেও জ্বর, কাশি, সর্দি, গলা ব্যথ্যা, মাথা ব্যথায় আক্রান্ত এসব রোগীর অনেকেই মৌসুমি জ্বরে ভুগছেন বলেও জানান আলতাফ হোসেন। ডাক্তাররা তাদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জ্বর-ব্যাথার ট্যাবলেট দিচ্ছেন আর পর্যাপ্ত পানি পান এবং বিশ্রামের পরামর্শ দিচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, গত বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল চার হাজার ৩৩৬ জন। চলতি বছর একই সময়ে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৮৮০ জন। গত বছর এসময়ে ডেঙ্গুতে মারা যান ৪৭ জন রোগী। আর চলতি বছর একই সময়ে মারা গেছেন ৫৬ জন। গত বছরের শুরু থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয় ৪২৩ জনের শরীরে।
চলতি বছর একই সময়ে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭৫ জনে। গত বছর একই সময়ে করোনায় ২১ জনের মৃত্যু হলেও চলতি বছরের শুরু থেকে এপর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যুর সংবাদ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সংশ্লিষ্টদের মত, এবছর আগেভাগেই ডেঙ্গু-করোনা বেশি ছড়াচ্ছে। আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হারও বেশি। কাজেই অধিক সাবধানতা অবলম্বন প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে করোনায় কেউ মারা না গেলেও ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এসময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪২০ জন। ২০২৩ সালে সারাদেশে ডেঙ্গুতে এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়। আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। ২০২৪ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৫৭৫ জনের এবং আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মোট এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন। এ যাবত দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৫২ হাজার ২২০ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২৬ জনের। যদিও এসব রোগ সম্পর্কে জনমনে সচেতনতা তৈরি হয়েছে খুব সামান্যই।
চিকিৎসকদের মতে, এডিস মশাবাহিত এ রোগে মোট আক্রান্তের ৭৮ শতাংশই এখন ঢাকার বাইরের। এর আগে দেশে কখনো এ সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু এত এলাকায় ছড়ায়নি। ঢাকার বাইরে এত মৃত্যুও হয়নি। ঢাকার বাইরে কোনো কোনো অঞ্চলে এবার অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ডেঙ্গু, যা আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তারা জানান, ঢাকায় ভালো হাসপাতাল আছে। এখানকার চিকিৎসকরা ডেঙ্গুর সঙ্গে মোটামুটি পরিচিত। কিন্তু ঢাকার বাইরে এমন অভিজ্ঞতা তো অনেকেরই নেই। কাজেই এবছর যে প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে ঢাকার বাইরের রোগীদের জন্য অনেক ভয়াবহ দিন আসছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩ সালে দেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। ওই বছরের জুলাইয়ের ১২ তারিখ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ২৬৪। এর মধ্যে ঢাকায় আক্রান্ত ছিল ৮ হাজার ৪০২ জন, বাকি ৩ হাজার ৮৬২ জন ঢাকার বাইরে। মোট আক্রান্তের প্রায় ৬৮ শতাংশ ছিল ঢাকার, বাকিটা বাইরের। ঢাকার বাইরে এবার শুধু সংক্রমণের সংখ্যাই এখন পর্যন্ত বেশি নয়, মৃত্যুও বেশি।
গত বছর এ সময় পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছিল ৪৭ জনের। এর মধ্যে ৩৪ জন মারা গিয়েছিলেন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। বাকি ১৩ জন ঢাকার বাইরে। মোট মৃত্যুর ৭২ শতাংশই ছিল ঢাকায়। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৫৫ জনের। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে মারা গেছেন ২৯ জন, ২৬ জন ঢাকার বাইরে। এবার মোট মৃত্যুর ৫৩ শতাংশ ঢাকায়, ৪৭ শতাংশ বাইরে। তাছাড়া, ঢাকার হাসপাতালে যেসব মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ঢাকার বাইরের রোগী।
মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর সাবেক মুখ্য কীটতত্ত্ববিদ তৌহিদ উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অব্যবস্থাপনাকে ডেঙ্গু বিস্তারের কারণ হিসেবে অবশ্যই ধরতে পারি। কিন্তু ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিসের বিস্তারে বৃষ্টি, তাপমাত্রা ও আদ্রতা এই তিনের মিলিত ভূমিকা আছে। কয়েক দশক ধরে এসবের মধ্যে একধরনের অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে। তাই জলবায়ু পরিবর্তন দেশের ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রাখছে। দেশজুড়ে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটছে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। এখন রোগটির প্রকোপ দেখে ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশি হচ্ছে, এমন এলাকায় বাড়ি বাড়ি অভিযান চালানোর পরামর্শ দিয়ে তারা বলছেন, এডিস মশার বিস্তার এখনই নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এটা করতে না পারলে আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বর নাগাদ পরিস্থিতি খুবই খারাপ হবে। ঢাকার দুই সিটি কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করছে, ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বছরব্যাপী মশা নিধন কাজ করেছে তারা। পাশাপাশি বিশেষ কিছু কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে মশার প্রজননস্থলের সন্ধান ও তা ধ্বংসে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে সভা, সেমিনার, প্রচারপত্র বিতরণ, স্বেচ্ছাসেবী সম্পৃক্ত করাসহ নানা উদ্যোগের মাধ্যমে নগরবাসীকে ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেনের মতে, ডেঙ্গু আমাদের জন্য পুরানো রোগ হলেও আমরা এ থেকে কিছু শিখছি না। চেষ্টাও করছি না যথাযথভাবে। তাই একে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। তাই ডেঙ্গুর বিস্তারে এ রোগ এবং মশার নিয়ন্ত্রণ জরুরি। এর সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় সরকারের সক্রিয়তা, সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি।