ঢাকা ০৩:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo হাজারো মানুষের নদী পারাপারের একমাত্র মাধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো Logo সাংবাদিক আলতাফ হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া মাহফিল Logo চত্রা নদীতে গোসল করতে নেমে প্রবীণ ব্যক্তির মৃত্যু Logo গোলাপগঞ্জে ঢাকাদক্ষিণ সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মঞ্জু গ্রেপ্তার Logo শতভাগ পদোন্নতি যোগ্য পদে প্রেষণে কর্মকর্তা নিয়োগের প্রতিবাদে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডে কর্মচারীদের বিক্ষোভ Logo রামগতিতে বেড়েছে চুরি-ডাকাতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি Logo মানিকছড়িতে মাছের মিশ্রচাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত Logo ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাকের চালক ও হেলাপার নিহত Logo শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া বাড়ল ১৫ শতাংশ, পাবেন দুই ধাপে Logo ফেনীর ঐতিহাসিক ঘাটলা এখন জেলা জুড়ে

চত্রা নদীতে গোসল করতে নেমে প্রবীণ ব্যক্তির মৃত্যু

শাহাবুল আলম, ফরিদপুর
  • আপডেট সময় : ৪১ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের মরাবিলা গ্রামের পূর্ব পাশে চত্রা নদীতে গোসল করতে নেমে এক প্রবীণ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ হওয়ার একদিন পর স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত ব্যক্তির নাম হাজী মোহাম্মদ মিরাপ আলী মোল্লা (৮০)। তিনি মরাবিলা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ ইউসুফ আলী মোল্লার পুত্র। পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিনি ২০২২ সাল থেকে ডিমেনশিয়া নামের মস্তিষ্কজনিত রোগে ভুগছিলেন। ডিমেনশিয়া কোনো একক রোগ নয়; এটি একাধিক স্নায়ুরোগের সম্মিলিত রূপ, যা ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি, চিন্তাভাবনা ও দৈনন্দিন কাজের সক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
পরিবারের সদস্যরা জানান, হাজী মোহাম্মদ মিরাপ আলী মোল্লা শারীরিকভাবে বেশ সক্রিয় ছিলেন এবং প্রায়ই বাড়ির লোকজনের অজান্তে বাইরে বেরিয়ে পড়তেন। তিনি বাড়ি থেকে বের হলে পথ হারিয়ে ফেলতেন এবং স্থানীয়দের সহায়তায় বাড়ি ফিরতেন।
গত ১৮ অক্টোবর দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার দিকে তিনি বাথরুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হন। সকাল হলেই গোসল করা ছিল তাঁর অভ্যাস। সেদিন ভোরে, সকাল ভেবে তিনি বাড়ির পেছনের চত্রা নদীতে গোসল করতে নামেন। নদীতে হালকা স্রোত থাকায় গোসল শেষে তিনি আর তীরে উঠতে পারেননি।
পরিবারের সদস্যরা সকালে তাকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। সকাল সাড়ে দশটার পর নদীর পাড়ে তাঁর টুপি ও কাদামাটিতে হাত-পায়ের ছাপ দেখে স্বজনরা ধারণা করেন তিনি নদীতে পড়েছেন। এরপর এলাকাবাসী নদীতে জাল ফেলে এবং স্থানীয় ডুবুরি দিয়ে দুই মাইল এলাকাজুড়ে তল্লাশি চালান। অবশেষে দুপুরে নদীর ভাটিতে ব্রিজ থেকে প্রায় দুইশ ফুট দূরে তাঁর মরদেহ ভেসে ওঠে।
পরদিন ১৯ অক্টোবর বাদ মাগরিব জানাজা শেষে মরহুমকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজা পরিচালনা করেন তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রফেসর মো. মাহবুবুর রহমান। দাফনের আগে বালিয়াকান্দি থানা পুলিশ আইন অনুযায়ী সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে।
এলাকাবাসী জানান, ২০১৭ সালে হাজী মোহাম্মদ মিরাপ আলী পবিত্র হজব্রত পালন করেন। তিনি ধর্মপ্রাণ, মিশুক ও সদালাপী ব্যক্তি ছিলেন। জীবদ্দশায় দীর্ঘদিন তিনি মরাবিলা পূর্বপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অসুস্থতার পর তাঁর ছোট ছেলে মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ওই দায়িত্ব পালন করছেন।
স্থানীয়দের ভাষায়, “এমন সদাচারী মানুষ জীবনের শেষ সময়েও পবিত্র নদীতে মৃত্যুবরণ করেছেন—যা একজন শহীদের মর্যাদাস্বরূপ মৃত্যু।”

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

চত্রা নদীতে গোসল করতে নেমে প্রবীণ ব্যক্তির মৃত্যু

আপডেট সময় :

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের মরাবিলা গ্রামের পূর্ব পাশে চত্রা নদীতে গোসল করতে নেমে এক প্রবীণ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ হওয়ার একদিন পর স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত ব্যক্তির নাম হাজী মোহাম্মদ মিরাপ আলী মোল্লা (৮০)। তিনি মরাবিলা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ ইউসুফ আলী মোল্লার পুত্র। পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিনি ২০২২ সাল থেকে ডিমেনশিয়া নামের মস্তিষ্কজনিত রোগে ভুগছিলেন। ডিমেনশিয়া কোনো একক রোগ নয়; এটি একাধিক স্নায়ুরোগের সম্মিলিত রূপ, যা ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি, চিন্তাভাবনা ও দৈনন্দিন কাজের সক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
পরিবারের সদস্যরা জানান, হাজী মোহাম্মদ মিরাপ আলী মোল্লা শারীরিকভাবে বেশ সক্রিয় ছিলেন এবং প্রায়ই বাড়ির লোকজনের অজান্তে বাইরে বেরিয়ে পড়তেন। তিনি বাড়ি থেকে বের হলে পথ হারিয়ে ফেলতেন এবং স্থানীয়দের সহায়তায় বাড়ি ফিরতেন।
গত ১৮ অক্টোবর দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার দিকে তিনি বাথরুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হন। সকাল হলেই গোসল করা ছিল তাঁর অভ্যাস। সেদিন ভোরে, সকাল ভেবে তিনি বাড়ির পেছনের চত্রা নদীতে গোসল করতে নামেন। নদীতে হালকা স্রোত থাকায় গোসল শেষে তিনি আর তীরে উঠতে পারেননি।
পরিবারের সদস্যরা সকালে তাকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। সকাল সাড়ে দশটার পর নদীর পাড়ে তাঁর টুপি ও কাদামাটিতে হাত-পায়ের ছাপ দেখে স্বজনরা ধারণা করেন তিনি নদীতে পড়েছেন। এরপর এলাকাবাসী নদীতে জাল ফেলে এবং স্থানীয় ডুবুরি দিয়ে দুই মাইল এলাকাজুড়ে তল্লাশি চালান। অবশেষে দুপুরে নদীর ভাটিতে ব্রিজ থেকে প্রায় দুইশ ফুট দূরে তাঁর মরদেহ ভেসে ওঠে।
পরদিন ১৯ অক্টোবর বাদ মাগরিব জানাজা শেষে মরহুমকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজা পরিচালনা করেন তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র প্রফেসর মো. মাহবুবুর রহমান। দাফনের আগে বালিয়াকান্দি থানা পুলিশ আইন অনুযায়ী সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে।
এলাকাবাসী জানান, ২০১৭ সালে হাজী মোহাম্মদ মিরাপ আলী পবিত্র হজব্রত পালন করেন। তিনি ধর্মপ্রাণ, মিশুক ও সদালাপী ব্যক্তি ছিলেন। জীবদ্দশায় দীর্ঘদিন তিনি মরাবিলা পূর্বপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অসুস্থতার পর তাঁর ছোট ছেলে মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ওই দায়িত্ব পালন করছেন।
স্থানীয়দের ভাষায়, “এমন সদাচারী মানুষ জীবনের শেষ সময়েও পবিত্র নদীতে মৃত্যুবরণ করেছেন—যা একজন শহীদের মর্যাদাস্বরূপ মৃত্যু।”