চির স্মরণীয় এক বিপ্লব

- আপডেট সময় : ১০:২৫:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫ ১৬ বার পড়া হয়েছে
ফিরে এলো ২৪-এর সেই রক্তাক্ত জুলাই। কোটা বাতিলের দাবিকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানীর রাজপথ। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী। এই জুলাইয়ে স্বৈরাচার হাসিনার নির্দেশে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও বিপথগামী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিষ্ঠুর-নির্দয়ভাবে পাখির মতো মানুষকে গুলি করে, কুপিয়ে, পুড়িয়ে গণহত্যা চালায়। ছাদের ওপর, ঘরের জানালায়, হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে নারী-শিশুদের হত্যা করা হয়।
আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার বুকে গুলি লেগে শরীরের একপাশ দিয়ে ঢুকে আরেকপাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। গণহত্যা চালানোর পর পুড়িয়ে ফেলা হয় মৃতদেহ। দেওয়া হয় গণকবর। শোকে-ক্ষোভে ফেটে পড়ে সারাদেশ। অবশেষে দম্ভের পতন ঘটে। ৩৬ দিনের টানা আন্দোলনে ক্ষমতা ছেড়ে স্বৈরাচার হাসিনা পালিয়ে যান ভারতে। রক্তক্ষোভের দিনগুলোকে স্মরণ করতে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার, দেশের সব রাজনৈতিক দল ও জুলাইয়ের অংশীজনরা।
১ জুলাই বাংলাদেশ এক অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী হয়। এদিন শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ রূপ নেয়। এটি ছিল প্রায় ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনাবিন্দু। ১ জুলাই এই আন্দোলন পুরো মাত্রায় শুরু হলেও এর গোড়াপত্তন ঘটে ৫ জুন। ওইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাস্তায় নামে। ৩০ জুন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা না আসায় ১ জুলাই ঢাবি, জগন্নাথ, জাবি, রাবি, চবি, বরিশাল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল বের করে, যা রাজু ভাস্কর্যে শেষ হয়। সমাবেশ থেকে নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পরীক্ষা বর্জন চলবে। তিনি তিন দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেন ২ জুলাই দেশব্যাপী মহাসড়কে মিছিল, ৩ ও ৪ জুলাই রাজধানীর রাজু ভাস্কর্যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সমাবেশ।
নতুন দেশ গড়ার ডাক দিয়ে গাইবান্ধা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জুলাই পথযাত্রা কর্মসূচি শুরু করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে গাইবান্ধা পৌরপার্কে আয়োজিত এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এ কর্মসূচির উদ্বোধন ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ২০২৪ সালে আমরা শেখ হাসিনাকে উৎখাত করার জন্য রাজপথে নেমেছিলাম। সেই সরকার পতন হয়েছে। কিন্তু নতুন দেশ গঠন এখনও হয়নি। এবার আমরা সেই নতুন দেশ গড়ার আন্দোলনে নেমেছি।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, জুলাই অভ্যুত্থানে জুলাই-আগস্ট মাসে সাড়ে ১৪শ’র ওপর মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। অধিকাংশই নিহত হয়েছেন রাইফেল এবং শটগানের গুলিতে এবং এই সময়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বয় কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাদের নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এই অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ইতোমধ্যে অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন মাসব্যাপী নিজেদের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচি দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি। ১ থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত তারা ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ নামে কর্মসূচি পালন করবে। এ ছাড়া ১৬ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী শহীদ দিবস’ উপলক্ষে দোয়া-মাহফিল ও স্মরণসভা, ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ছাত্র জনতার জুলাই ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার পাঠ ও ৫ আগস্ট ‘ছাত্র জনতার মুক্তি দিবস’ উদযাপন করবে দলটি। অভ্যুত্থানের বর্ষফূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপিও। ৩০ জুন শহীদ মিনারে (রাত) ছাত্রদলের উদ্যোগে আলোয় আলোয় স্মৃতি সমুজ্জ্বলের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হবে।
মাসব্যাপী কর্মসূচি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীও। ১ জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ, আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের জন্য দেশব্যাপী দোয়া করার মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হবে। এরপর ২ থেকে ৪ জুলাই দরিদ্র, অসহায়, দুস্থ ও এতিমদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হবে। ৮ থেকে ১৫ জুলাই শহীদ পরিবার এবং আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, মতবিনিময় ও দোয়া করা হবে। ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ স্মরণে রংপুরে আলোচনা সভার আয়োজন করবে জামায়াত। এ ছাড়া ১৯ জুলাই জামায়াতের ৭ দফা বাস্তবায়নে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ করা হবে। একই দিনে শহীদ পরিবারের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন জামায়াত আমির। এ ছাড়া সভা-সিম্পোজিয়াম, তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ একাধিক কর্মসূচি রয়েছে জামায়াতের। ৫ আগস্ট দেশব্যাপী গণমিছিলের ঘোষণা দিয়েছে দলটি। এ ছাড়া ছাত্রশিবির, আপ বাংলাদেশসহ একাধিক সংগঠনের পক্ষ থেকে অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।