ঢাকা ০২:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫

চোখ রাঙাচ্ছে শীতকালীন রোগ

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ২৪ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

শীতের আসার আগেই মৌসুমজনিত রোগীর চাপ চোখে পড়ার মতো। রাজধানীর শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসা শিশুদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, অ্যাজমা, স্ক্যাবিস ও ডায়রিয়ার মতো শীতজনিত রোগে আক্রান্ত। হাসপাতালের এ চিত্রই বলে দিচ্ছে সামনে আসছে শীতকালীন নানা রোগের প্রকোপ।

প্রকৃতিতে বিরাজ এখন শীতের আমেজ। এরই মধ্যে পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা নেমেছে ১২ ডিগ্রিতে। রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও দেখা দিয়েছে শীতের আনাগোনা। একদিকে যেমন শীতের আগমন ঘটছে, আরেকদিকে তেমনি শঙ্কা বাড়ছে শীতকালীন রোগ নিয়ে। এরই মধ্যে হাসপাতালগুলোতে শীতকালীন রোগ নিয়ে ভিড় করছেন রোগীরা। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে শীতকালীন নানা রোগের প্রকোপ বেড়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, গরম থেকে শীতের আগমন- হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তনের এ সময়টিকে বলা হয় ‘ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড’। এ সময়ে সামান্য অসতর্কতা বড় ধরনের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। সে কারণে এখনই শীতের প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
শিশু হাসপাতালের এপিডেমিওলজি ও রিসার্চ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা এবং সাধারণ সর্দি-কাশির রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে এই সময় খুবই ‘সংবেদনশীল’ বা ‘ক্রিটিক্যাল’। একটু সচেতন থাকলে অনেক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। অসুস্থ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ না খাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

রাজধানীর শ্যামলীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, সামনে শীতের মৌসুম। গরম থেকে শীতে যাওয়ার এ ঋতু পরিবর্তনের সময় ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশি লেগেই থাকে। সকালে ঠাণ্ডা, দুপুরে গরম, আবার রাতে ঠাণ্ডা-এমন আবহাওয়ায় সতর্কভাবে চলতে হয়। হঠাৎ গরম থেকে শীতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। সিভিয়ার নিউমোনিয়া হলে মৃত্যু ঝুঁকিও বেশি, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে।
এই সময়ে করণীয় নিয়ে তিনি বলেন, শীতে সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, রাতে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। ব্যায়াম করা, খোলা বাতাসে থাকা এবং গাছ লাগানোর মাধ্যমে শরীরে অক্সিজেন গ্রহণ বাড়ানো উচিত, এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শিশুদের পোশাকের ক্ষেত্রে সকালে গরম জামা পরানো, আবার দুপুরে খেলাধুলার সময় হালকা-পাতলা পোশাক পরানো দরকার। ঠাণ্ডা লাগলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিজের মতো করে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া বিপজ্জনক, চিকিৎসক পরামর্শ দিলে তবেই খাওয়া উচিত। সবমিলিয়ে এখন থেকেই শীতের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলা প্রয়োজন।

রাজধানীর দারুস সালামের হিউম্যান এইড বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শেখ মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, শীতের রোগ বয়স ভেদে ভিন্ন হয়। শীতকালে শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়া ও রোটা ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। তরুণদের টনসিলাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ব্রঙ্কাইটিস হতে পারে। বয়স্কদের জয়েন্ট পেইন বা আর্থ্রাইটিস দেখা দেয়। ত্বকের ক্ষেত্রে স্ক্যাবিস বেশি হয়, কারণ শীতে জামাকাপড় ও বিছানাপত্র কম ধোয়ার কারণে এর সংক্রমণ বাড়ে। আবার যাদের আগে থেকেই হাঁপানি বা অ্যাজমা আছে, শীতে তা বেড়ে যায়। এখন শীতকালেও ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি রয়ে গেছে, এ বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে।
করণীয় বিষয়ে তিনি বলেন, খাদ্যাভ্যাসে হাই এনার্জি ডায়েট নেওয়া উচিত। প্রোটিন ও ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দরকার। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার (লেবু, পেয়ারা, কমলা ইত্যাদি) খেলে উপকার পাওয়া যায়। নিয়মিত জামাকাপড় পরিষ্কার রাখা, হালকা কুসুম গরম পানি পান করা, ঠাণ্ডা না লাগার ব্যবস্থা নেওয়া ও গরম পোশাক পরা জরুরি। যাদের কিডনি বা লিভার ট্রান্সপ্লান্ট হয়েছে, অথবা যারা জটিল রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য শীতের ঠাণ্ডা বিশেষভাবে ক্ষতিকর, তাদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। চিকিৎসকরা বলছেন, ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে সামান্য সতর্কতা ও সচেতনতা শীতকালীন নানা রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাদ্য, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলাই এখন সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

চোখ রাঙাচ্ছে শীতকালীন রোগ

আপডেট সময় :

শীতের আসার আগেই মৌসুমজনিত রোগীর চাপ চোখে পড়ার মতো। রাজধানীর শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসা শিশুদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, অ্যাজমা, স্ক্যাবিস ও ডায়রিয়ার মতো শীতজনিত রোগে আক্রান্ত। হাসপাতালের এ চিত্রই বলে দিচ্ছে সামনে আসছে শীতকালীন নানা রোগের প্রকোপ।

প্রকৃতিতে বিরাজ এখন শীতের আমেজ। এরই মধ্যে পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা নেমেছে ১২ ডিগ্রিতে। রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও দেখা দিয়েছে শীতের আনাগোনা। একদিকে যেমন শীতের আগমন ঘটছে, আরেকদিকে তেমনি শঙ্কা বাড়ছে শীতকালীন রোগ নিয়ে। এরই মধ্যে হাসপাতালগুলোতে শীতকালীন রোগ নিয়ে ভিড় করছেন রোগীরা। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে শীতকালীন নানা রোগের প্রকোপ বেড়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, গরম থেকে শীতের আগমন- হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তনের এ সময়টিকে বলা হয় ‘ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড’। এ সময়ে সামান্য অসতর্কতা বড় ধরনের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। সে কারণে এখনই শীতের প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
শিশু হাসপাতালের এপিডেমিওলজি ও রিসার্চ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা এবং সাধারণ সর্দি-কাশির রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে এই সময় খুবই ‘সংবেদনশীল’ বা ‘ক্রিটিক্যাল’। একটু সচেতন থাকলে অনেক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। অসুস্থ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ না খাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

রাজধানীর শ্যামলীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, সামনে শীতের মৌসুম। গরম থেকে শীতে যাওয়ার এ ঋতু পরিবর্তনের সময় ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশি লেগেই থাকে। সকালে ঠাণ্ডা, দুপুরে গরম, আবার রাতে ঠাণ্ডা-এমন আবহাওয়ায় সতর্কভাবে চলতে হয়। হঠাৎ গরম থেকে শীতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। সিভিয়ার নিউমোনিয়া হলে মৃত্যু ঝুঁকিও বেশি, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে।
এই সময়ে করণীয় নিয়ে তিনি বলেন, শীতে সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, রাতে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। ব্যায়াম করা, খোলা বাতাসে থাকা এবং গাছ লাগানোর মাধ্যমে শরীরে অক্সিজেন গ্রহণ বাড়ানো উচিত, এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শিশুদের পোশাকের ক্ষেত্রে সকালে গরম জামা পরানো, আবার দুপুরে খেলাধুলার সময় হালকা-পাতলা পোশাক পরানো দরকার। ঠাণ্ডা লাগলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। নিজের মতো করে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া বিপজ্জনক, চিকিৎসক পরামর্শ দিলে তবেই খাওয়া উচিত। সবমিলিয়ে এখন থেকেই শীতের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলা প্রয়োজন।

রাজধানীর দারুস সালামের হিউম্যান এইড বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শেখ মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, শীতের রোগ বয়স ভেদে ভিন্ন হয়। শীতকালে শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়া ও রোটা ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। তরুণদের টনসিলাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ব্রঙ্কাইটিস হতে পারে। বয়স্কদের জয়েন্ট পেইন বা আর্থ্রাইটিস দেখা দেয়। ত্বকের ক্ষেত্রে স্ক্যাবিস বেশি হয়, কারণ শীতে জামাকাপড় ও বিছানাপত্র কম ধোয়ার কারণে এর সংক্রমণ বাড়ে। আবার যাদের আগে থেকেই হাঁপানি বা অ্যাজমা আছে, শীতে তা বেড়ে যায়। এখন শীতকালেও ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি রয়ে গেছে, এ বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে।
করণীয় বিষয়ে তিনি বলেন, খাদ্যাভ্যাসে হাই এনার্জি ডায়েট নেওয়া উচিত। প্রোটিন ও ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দরকার। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার (লেবু, পেয়ারা, কমলা ইত্যাদি) খেলে উপকার পাওয়া যায়। নিয়মিত জামাকাপড় পরিষ্কার রাখা, হালকা কুসুম গরম পানি পান করা, ঠাণ্ডা না লাগার ব্যবস্থা নেওয়া ও গরম পোশাক পরা জরুরি। যাদের কিডনি বা লিভার ট্রান্সপ্লান্ট হয়েছে, অথবা যারা জটিল রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য শীতের ঠাণ্ডা বিশেষভাবে ক্ষতিকর, তাদের অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। চিকিৎসকরা বলছেন, ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে সামান্য সতর্কতা ও সচেতনতা শীতকালীন নানা রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাদ্য, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলাই এখন সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ।