ঢাকা ০৩:১৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৫

ছুটির ফাঁদে দেশ যাত্রী সংকটে গনপরিবহন

বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৮:১৯:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল ২০২৫ ৯৪ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ফাঁকা ঢাকায় নির্মল পরিবেশে ঘুরছে মানুষ

মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে টানা ৯ দিনের ছুটির ফাঁদে পড়েছে দেশ। সরকারি ছুটি অনুযায়ী, আগামী ৫ এপ্রিল শনিবার পর্যন্ত ছুটি উপভোগ করবেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। লম্বা ছুটির কারণে ঢাকায় বসবাসরত মানুষের সিংহভাগ চলে গেছেন নিজ গ্রামে। ফাঁকা রাজধানীতে নির্মল পরিবেশে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরছে মানুষ। জন সাধারন কম থানায় যাত্রী সংকটে ভুগছে গন পরিবহন।
তবে ছুটি শেষ হতে শুরু হওয়ায় ভোগান্তি এড়াতে ছুটির মধ্যেই কিছু মানুষ ফিরতে শুরু করেছেন মেগা সিটি ঢাকায়। তবে সেটি সংখ্যায় খুবই সামান্য। ঢাকাবাসীও তেমন ঘর থেকে বের হননি। ফলে আজ বুধবার সকালেও ঢাকা কার্যত ফাঁকাই ছিল। রাজধানীর সড়কে বাড়তে শুরু করেছে গণপরিবহন ও সাধারণ মানুষের চলাচল। তবে সেটি যানজটের পর্যায়ে পৌঁছায়নি। এর ফলে দ্রুত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরে উচ্ছ্বসিত নগরবাসী। কিন্তু যাত্রী সংকটে মন খারাপ পরিবহন শ্রমিকদের।
যাত্রীরা বলছেন, তারা ১ থেকে দেড় ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে পারছেন ১৫ মিনিটের মধ্যেই। এমন ঢাকা সব সময় থাকলে ভালোই হতো। অন্যদিকে পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, যে পরিমাণ যাত্রী পাচ্ছেন তাতে তেলের খরচই উঠবে না।
সরেজমিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, শ্যামলী, কলেজগেট, আসাদ গেট, ধানমন্ডি, কারওয়ান বাজার ও বাংলামোটর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত দুই দিনের তুলনায় রাজধানীর সড়কে বৃদ্ধি পেয়েছে সাধারণ মানুষের চলাচল ও যানবাহনের সংখ্যা। তবে অধিকাংশ গণপরিবহনে থাকছে আসন ফাঁকা। কর্মদিবসের ঢাকার মতো নেই যানজট। সেই সঙ্গে গণপরিবহনে গেটে যাত্রী ঝোলার চিত্রও দেখা মেলেনি।
এছাড়াও বাস স্টপেজগুলোতে এসে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা যানবাহনের শ্রমিকদের যাত্রী খোঁজার চিত্র ছিল চোখে পড়ার মতো। যাত্রীর অভাবে গণপরিবহনগুলো রাজধানীর বিভিন্ন স্টপেজে এসে কিছু সময়ের জন্য অপেক্ষায় থাকতেও দেখা যায়। এছাড়া সড়কের কোথাও যানজটের চিত্র দেখা মেলেনি।
রাজধানীর কল্যাণপুরে কথা হয় বাসের যাত্রী মো. রাশেদের সঙ্গে। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে মিরপুর-১০ নম্বর থেকে কল্যাণপুরে এসেছেন তিনি। তিনি বলেন, রাস্তা ফাঁকা। খুব কম সময়ে চলে আসতে পেরেছি। কোথাও যানজটে পড়তে হয়নি।
অন্য এক যাত্রী মিজানুর রহমান বলেন, কলাবাগান থেকে এখানে এসেছি। সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট সময় লেগেছে আসতে। কোনো যানজটে পড়তে হয়নি। সাধারণত যদি অফিস খোলা থাকতো বা ছুটির দিন না হতো তাহলে এই রাস্তাটুকু আসতেই সর্বনি¤œ ১ থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগতো। সব সময় যদি ঢাকার সড়ক এমন ফাঁকা থাকতো তাহলে ঢাকাবাসীর জন্য নির্বিঘেœ চলাচল সহজ হতো। কত সময় বেঁচে যেত মানুষের।
রাজধানীর শ্যামলী বাস স্টপেজে কথা হয় পল্টনগামী যাত্রী জহিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে রাস্তাঘাট ফাঁকা। কোনো যানজট নেই। এ ঢাকায় চলাচল করতেও ভালো লাগে। আগে শ্যামলী থেকে পল্টন যেতে হলে ২ ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে বের হতে হয়েছে। আর আজ মাত্র ৪০ মিনিট সময় হাতে নিয়ে বের হয়েছি।
এদিকে রাজধানীর কল্যাণপুরে কথা হয় পরিস্থান পরিহনের চালকের সহকারী সাইফুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাস্তায় যাত্রী নেই বললেই চলে। গাড়ি ফাঁকা। তবে গত দুই দিনের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে।
গুলিস্তান ধামরাই পরিবহনের চালকের সহকারী খাইরুল বলেন, রাস্তায় কোনো যাত্রী নেই ভাই। তেল খরচও উঠবে না। সাভার থেকে কল্যাণপুর এসেছি মাত্র ২০-২৫ জন যাত্রী নিয়ে। এই যাত্রীতে গাড়ির খরচ উঠবে না। রইচ পরিবহনের চালকের সহকারী ইমদাদুল বলেন, ঈদের দুই দিন আগে থেকে আজ পর্যন্ত তেমন কোনো যাত্রী নেই। গাড়ি নিয়ে বের হলেই ছিট ফাঁকা পড়ে থাকছে। কোনো ট্রিপে গাড়ি ফুল যাত্রী পাইনি।
এদিকে প্রথমে ঈদ উপলক্ষে পাঁচদিন ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। পরে সেখানে নির্বাহী আদেশে ৩ এপ্রিলও ছুটি ঘোষণা করা হয়। এর ফলে এবার ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা নয়দিন ছুটি ভোগ করছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ছুটির ফাঁদে দেশ যাত্রী সংকটে গনপরিবহন

আপডেট সময় : ০৮:১৯:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল ২০২৫

ফাঁকা ঢাকায় নির্মল পরিবেশে ঘুরছে মানুষ

মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে টানা ৯ দিনের ছুটির ফাঁদে পড়েছে দেশ। সরকারি ছুটি অনুযায়ী, আগামী ৫ এপ্রিল শনিবার পর্যন্ত ছুটি উপভোগ করবেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। লম্বা ছুটির কারণে ঢাকায় বসবাসরত মানুষের সিংহভাগ চলে গেছেন নিজ গ্রামে। ফাঁকা রাজধানীতে নির্মল পরিবেশে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরছে মানুষ। জন সাধারন কম থানায় যাত্রী সংকটে ভুগছে গন পরিবহন।
তবে ছুটি শেষ হতে শুরু হওয়ায় ভোগান্তি এড়াতে ছুটির মধ্যেই কিছু মানুষ ফিরতে শুরু করেছেন মেগা সিটি ঢাকায়। তবে সেটি সংখ্যায় খুবই সামান্য। ঢাকাবাসীও তেমন ঘর থেকে বের হননি। ফলে আজ বুধবার সকালেও ঢাকা কার্যত ফাঁকাই ছিল। রাজধানীর সড়কে বাড়তে শুরু করেছে গণপরিবহন ও সাধারণ মানুষের চলাচল। তবে সেটি যানজটের পর্যায়ে পৌঁছায়নি। এর ফলে দ্রুত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরে উচ্ছ্বসিত নগরবাসী। কিন্তু যাত্রী সংকটে মন খারাপ পরিবহন শ্রমিকদের।
যাত্রীরা বলছেন, তারা ১ থেকে দেড় ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে পারছেন ১৫ মিনিটের মধ্যেই। এমন ঢাকা সব সময় থাকলে ভালোই হতো। অন্যদিকে পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, যে পরিমাণ যাত্রী পাচ্ছেন তাতে তেলের খরচই উঠবে না।
সরেজমিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, শ্যামলী, কলেজগেট, আসাদ গেট, ধানমন্ডি, কারওয়ান বাজার ও বাংলামোটর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত দুই দিনের তুলনায় রাজধানীর সড়কে বৃদ্ধি পেয়েছে সাধারণ মানুষের চলাচল ও যানবাহনের সংখ্যা। তবে অধিকাংশ গণপরিবহনে থাকছে আসন ফাঁকা। কর্মদিবসের ঢাকার মতো নেই যানজট। সেই সঙ্গে গণপরিবহনে গেটে যাত্রী ঝোলার চিত্রও দেখা মেলেনি।
এছাড়াও বাস স্টপেজগুলোতে এসে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা যানবাহনের শ্রমিকদের যাত্রী খোঁজার চিত্র ছিল চোখে পড়ার মতো। যাত্রীর অভাবে গণপরিবহনগুলো রাজধানীর বিভিন্ন স্টপেজে এসে কিছু সময়ের জন্য অপেক্ষায় থাকতেও দেখা যায়। এছাড়া সড়কের কোথাও যানজটের চিত্র দেখা মেলেনি।
রাজধানীর কল্যাণপুরে কথা হয় বাসের যাত্রী মো. রাশেদের সঙ্গে। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে মিরপুর-১০ নম্বর থেকে কল্যাণপুরে এসেছেন তিনি। তিনি বলেন, রাস্তা ফাঁকা। খুব কম সময়ে চলে আসতে পেরেছি। কোথাও যানজটে পড়তে হয়নি।
অন্য এক যাত্রী মিজানুর রহমান বলেন, কলাবাগান থেকে এখানে এসেছি। সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট সময় লেগেছে আসতে। কোনো যানজটে পড়তে হয়নি। সাধারণত যদি অফিস খোলা থাকতো বা ছুটির দিন না হতো তাহলে এই রাস্তাটুকু আসতেই সর্বনি¤œ ১ থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগতো। সব সময় যদি ঢাকার সড়ক এমন ফাঁকা থাকতো তাহলে ঢাকাবাসীর জন্য নির্বিঘেœ চলাচল সহজ হতো। কত সময় বেঁচে যেত মানুষের।
রাজধানীর শ্যামলী বাস স্টপেজে কথা হয় পল্টনগামী যাত্রী জহিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে রাস্তাঘাট ফাঁকা। কোনো যানজট নেই। এ ঢাকায় চলাচল করতেও ভালো লাগে। আগে শ্যামলী থেকে পল্টন যেতে হলে ২ ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে বের হতে হয়েছে। আর আজ মাত্র ৪০ মিনিট সময় হাতে নিয়ে বের হয়েছি।
এদিকে রাজধানীর কল্যাণপুরে কথা হয় পরিস্থান পরিহনের চালকের সহকারী সাইফুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাস্তায় যাত্রী নেই বললেই চলে। গাড়ি ফাঁকা। তবে গত দুই দিনের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে।
গুলিস্তান ধামরাই পরিবহনের চালকের সহকারী খাইরুল বলেন, রাস্তায় কোনো যাত্রী নেই ভাই। তেল খরচও উঠবে না। সাভার থেকে কল্যাণপুর এসেছি মাত্র ২০-২৫ জন যাত্রী নিয়ে। এই যাত্রীতে গাড়ির খরচ উঠবে না। রইচ পরিবহনের চালকের সহকারী ইমদাদুল বলেন, ঈদের দুই দিন আগে থেকে আজ পর্যন্ত তেমন কোনো যাত্রী নেই। গাড়ি নিয়ে বের হলেই ছিট ফাঁকা পড়ে থাকছে। কোনো ট্রিপে গাড়ি ফুল যাত্রী পাইনি।
এদিকে প্রথমে ঈদ উপলক্ষে পাঁচদিন ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। পরে সেখানে নির্বাহী আদেশে ৩ এপ্রিলও ছুটি ঘোষণা করা হয়। এর ফলে এবার ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা নয়দিন ছুটি ভোগ করছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।