ঢাকা ০৪:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫

পাইকগাছায় খেজুর রস আহরণ

জন্য গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা

পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১০ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রকৃতিতে শীতের আমেজ শুরু হয়েছে। আর তাই প্রতি বছরের ন্যায় এবারও খুলনার পাইকগাছা অঞ্চলের গাছিরা খেজুরের রস আহরণের জন্য তোড়জোড় শুরু করেছে। খেজুরের রসের জন্য শুরু করেছেন তারা গাছের প্রাথমিক পরিচর্যা। স্থানীয় ভাষায় এটাকে বলা হয় “গাছ তোলা”। এক সপ্তাহ পরই আবার চাছ দিয়ে নলি ও গুজা লাগাতে হবে। খেজুর গাছ থেকে রস বের করতে তিন স্তর পেরিয়ে পক্ষ কাল পরেই রস আহরণ শুরু করতে হয়। গ্রাম বাংলায় এখন চোখে পড়ছে খেজুর গাছ তোলা (চাছার) দৃশ্য। গাছিরা এখন মাঠে মাঠে মহা ব্যস্ত সময় পার করে চলেছে।
আর কিছুদিন পরই গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষ থেকে সু-মধুর রস বের করে গ্রামের ঘরে ঘরে শুরু হবে নতুন গুড় আর পাটালি তৈরির মহা উৎসব। গ্রামে গ্রামে খেজুরের রস জ্বালিয়ে পিঠা, পায়েস, মুড়ি মুড়কি ও নানা রকমের মুখরোচক খাবার তৈরির করার ধুম পড়বে। আর রসে ভেজা কাচি পোড়া পিঠার (চিতই পিঠা) স্বাদই আলাদা। নলেন গুড়, ঝোলা গুড় ও দানা গুড়ের সুমিষ্ট গন্ধেই যেন অর্ধভোজন। রসনা তৃপ্তিতে এর জুড়ি নেই। নলেন গুড় পাটালির মধ্যে নারিকেল কোরা ও তিল ভাজা মিশালে আরো সুস্বাদু লাগে। খেজুরের গুড় থেকে ‘ব্রাউন সুগার’ উৎপাদনেরও সুনাম রয়েছে। অবশ্য খেজুর গাছ অন্যান্য গাছের মতো বপন করা বা সার মাটি দিতে হয় না। প্রাকৃতিক নিয়মেই মাঠে পড়ে থাকা খেজুরের আঁটি (বিচি) থেকে চারা জন্মায়। সৃষ্টি হয় খেজুরের বাগান।
তবে বর্তমানে খেজুর গাছ ইট ভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় বেশ আগে থেকে এ অঞ্চলে গুড়, পাটালির উৎপাদন বহুলাংশে কমে গেছে। এখন আর আগের মতো মাঠ ভরা খেজুর বাগানও নেই। নেই মাঠে মাঠে রস জ্বালানো বান (চুলো)। যা আছে তা নিতান্তই কম। নলেন গুড় ও পাটালি পাওয়া দু:ষ্কর। এ মৌসুমে যা তৈরি হয় তা রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে যায়। আবহমান কাল থেকে এই বাংলায় নবান্নের উৎসব পালনে খেজুর গুড়ের কদর বেশি।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, গাছিরা গাছ পরিষ্কার বা তোলা চাচা করার জন্য গাছি দা ও দড়ি তৈরিসহ ভাড় (মাটির ঠিলে) ক্রয় ও রস জ্বালানো জায়গা ঠিক করাসহ বিভিন্ন কাজে রয়েছে ব্যতি ব্যস্ত।
তবে সংশিষ্টরা জানান গাছ কাটা, রস জ্বালানো ও গুড়-পাটালি তৈরির উপকরণের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার অন্য বছর গুলোর তুলনায় গুড়-পাটালির দাম বেশি হবে।
খেজুর গাছ তোলার গাছি আববাস, রবিন আকবার সহ একাধিক গাছিরা বলেন, শীত চলে আসছে। এখন খেজুর গাছ তোলার সময়।
সচেতন মহল বলছেন, ইট ভাটায় খেজুর গাছ মেরে জ্বালাানি কাজে ব্যবহার করার কারণে এ ঐতিহ্য বিলীন হতে চলেছে। সরকারিভাবে উদ্যোগ না নিলে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হতে হবে। তবে ইট ভাটায় খেজুর গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার সরকারিভাবে নিষিদ্ধ না করলে এক সময় খেজুর গাছ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে শুধু আরব্য উপনাসের গল্পে পরিণত হবে বলেও জানান সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, খেজুর গাছ রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমরা ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। ইট ভাটায় খেজুর গাছ জ্বালানি হিসেবে ব‍্যবহারে সরকারিভাবে বন্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃকক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে। এছাড়া গুড়ের ন‍্যায‍্য মূল‍্য পাওয়ার নানা উদ‍্যােগও নেয়া হবে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

পাইকগাছায় খেজুর রস আহরণ

জন্য গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা

আপডেট সময় :

প্রকৃতিতে শীতের আমেজ শুরু হয়েছে। আর তাই প্রতি বছরের ন্যায় এবারও খুলনার পাইকগাছা অঞ্চলের গাছিরা খেজুরের রস আহরণের জন্য তোড়জোড় শুরু করেছে। খেজুরের রসের জন্য শুরু করেছেন তারা গাছের প্রাথমিক পরিচর্যা। স্থানীয় ভাষায় এটাকে বলা হয় “গাছ তোলা”। এক সপ্তাহ পরই আবার চাছ দিয়ে নলি ও গুজা লাগাতে হবে। খেজুর গাছ থেকে রস বের করতে তিন স্তর পেরিয়ে পক্ষ কাল পরেই রস আহরণ শুরু করতে হয়। গ্রাম বাংলায় এখন চোখে পড়ছে খেজুর গাছ তোলা (চাছার) দৃশ্য। গাছিরা এখন মাঠে মাঠে মহা ব্যস্ত সময় পার করে চলেছে।
আর কিছুদিন পরই গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষ থেকে সু-মধুর রস বের করে গ্রামের ঘরে ঘরে শুরু হবে নতুন গুড় আর পাটালি তৈরির মহা উৎসব। গ্রামে গ্রামে খেজুরের রস জ্বালিয়ে পিঠা, পায়েস, মুড়ি মুড়কি ও নানা রকমের মুখরোচক খাবার তৈরির করার ধুম পড়বে। আর রসে ভেজা কাচি পোড়া পিঠার (চিতই পিঠা) স্বাদই আলাদা। নলেন গুড়, ঝোলা গুড় ও দানা গুড়ের সুমিষ্ট গন্ধেই যেন অর্ধভোজন। রসনা তৃপ্তিতে এর জুড়ি নেই। নলেন গুড় পাটালির মধ্যে নারিকেল কোরা ও তিল ভাজা মিশালে আরো সুস্বাদু লাগে। খেজুরের গুড় থেকে ‘ব্রাউন সুগার’ উৎপাদনেরও সুনাম রয়েছে। অবশ্য খেজুর গাছ অন্যান্য গাছের মতো বপন করা বা সার মাটি দিতে হয় না। প্রাকৃতিক নিয়মেই মাঠে পড়ে থাকা খেজুরের আঁটি (বিচি) থেকে চারা জন্মায়। সৃষ্টি হয় খেজুরের বাগান।
তবে বর্তমানে খেজুর গাছ ইট ভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় বেশ আগে থেকে এ অঞ্চলে গুড়, পাটালির উৎপাদন বহুলাংশে কমে গেছে। এখন আর আগের মতো মাঠ ভরা খেজুর বাগানও নেই। নেই মাঠে মাঠে রস জ্বালানো বান (চুলো)। যা আছে তা নিতান্তই কম। নলেন গুড় ও পাটালি পাওয়া দু:ষ্কর। এ মৌসুমে যা তৈরি হয় তা রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে যায়। আবহমান কাল থেকে এই বাংলায় নবান্নের উৎসব পালনে খেজুর গুড়ের কদর বেশি।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, গাছিরা গাছ পরিষ্কার বা তোলা চাচা করার জন্য গাছি দা ও দড়ি তৈরিসহ ভাড় (মাটির ঠিলে) ক্রয় ও রস জ্বালানো জায়গা ঠিক করাসহ বিভিন্ন কাজে রয়েছে ব্যতি ব্যস্ত।
তবে সংশিষ্টরা জানান গাছ কাটা, রস জ্বালানো ও গুড়-পাটালি তৈরির উপকরণের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার অন্য বছর গুলোর তুলনায় গুড়-পাটালির দাম বেশি হবে।
খেজুর গাছ তোলার গাছি আববাস, রবিন আকবার সহ একাধিক গাছিরা বলেন, শীত চলে আসছে। এখন খেজুর গাছ তোলার সময়।
সচেতন মহল বলছেন, ইট ভাটায় খেজুর গাছ মেরে জ্বালাানি কাজে ব্যবহার করার কারণে এ ঐতিহ্য বিলীন হতে চলেছে। সরকারিভাবে উদ্যোগ না নিলে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হতে হবে। তবে ইট ভাটায় খেজুর গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার সরকারিভাবে নিষিদ্ধ না করলে এক সময় খেজুর গাছ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে শুধু আরব্য উপনাসের গল্পে পরিণত হবে বলেও জানান সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, খেজুর গাছ রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমরা ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। ইট ভাটায় খেজুর গাছ জ্বালানি হিসেবে ব‍্যবহারে সরকারিভাবে বন্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃকক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে। এছাড়া গুড়ের ন‍্যায‍্য মূল‍্য পাওয়ার নানা উদ‍্যােগও নেয়া হবে।