ঢাকা ০৭:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo আধুনিক কেবিন ব্লক ও দৃষ্টিনন্দন পানির ফোয়ারা উদ্বোধন Logo ঝিনাইদহে ১০ ও ১৬ মাসে হিফজ সম্পন্ন, দুই শিক্ষার্থী ওমরাহ হজে পাঠাবে মাদ্রাসা Logo গাইবান্ধা-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক ডা. ময়নুল হাসান সাদিক Logo কক্সবাজার-৩ আসনে বিএনপির আস্থা লুৎফুর রহমান কাজল Logo উখিয়ায় শিশু ধর্ষণ মামলার পলাতক আসামি গ্রেফতার Logo শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক কর্মশালা Logo মহেশপুরে মোটরসাইকেল ও আলমসাধুর সংঘর্ষে কলেজ ছাত্র নিহত Logo কেশবপুরে বিএনপির প্রার্থী তালিকায় রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ Logo যশোরে তরিকুল ইসলাম স্মরণে সাংবাদিক ইউনিয়নের দোয়া মাহফিল Logo সাদুল্লাপুরে হলুদক্ষেতে বৃদ্ধাকে ধর্ষণ ঘটনায় যুবক গ্রেফতার

জয়পুরহাটে অসময়ের বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি ৪৬৯ হেক্টর

এম.এ. জলিল রানা, জয়পুরহাট
  • আপডেট সময় : ১৯ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জয়পুরহাটে অসময়ের বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি ৪৬৯ হেক্টর। অসময়ের লাগাছাড়া তিনদিনের বৃষ্টিতে জেলাব্যাপী রোপা আমন, আগাম জাতের আলু, পেঁয়াজ ও শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। তিন দিন লাগাছাড়া, আবার কখনো মুষুলধারে হওয়া বৃষ্টিতে দিগন্তজোড়া রোপা আমন মাঠের ধানগাছ পানিতে শুয়ে পড়েছে। এছাড়াও নষ্ট হয়েছে আগাম জাতের আলু ও পেঁয়াজের ক্ষেত। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।
চাষীরা বলছেন, মাঠে রোপা আমন ধান পাকতে শুরু করেছে, অনেক কৃষক ধান কাটাতেও শুরু করেছে। আবার অনেক কৃষক ধান কেটে জমিতে আলু বীজ রোপণ শুরু করেছেন। বিভিন্ন জাতের সবজিও চাষ করছেন ‍কৃষকেরা। কিন্তু হঠাৎ অসময়ের বৃষ্টিতে সেই ফসলও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে আবহাওয়া অনুকূলে না এলে রোপা আমন ও আগামজাতের আলু দুই ফসলেই বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা তৈরি হবে। আর এতে করে কৃষি নির্ভর এ জেলার অর্থনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলেও তাদের আশঙ্কা ।
এবিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালকের কার্যালয় জয়পুরহাট, ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এমন ফসলি জমির একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, জেলাব্যাপী ৩৩৭ হেক্টর রোপা আমন , ২৭ হেক্টর শাক সবজি, ১৩ হেক্টর পেঁয়াজ (কন্দ), সাড়ে ৭ হেক্টর মরিচ ও ৮৫ হেক্টর জমির আগাম জাতের আলুসহ মোট ৪৬৯ দশমিক ৫ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে জেলার সদর উপজেলায় রোপা আমন , শাক সবজি, পেঁয়াজ ও মরিচের বেশি ক্ষতি হয়েছে, আর আগাম জাতের আলুর বেশি ক্ষতি হয়েছে জেলার আক্কেলপুর উপজেলায়।
জেলার বিভিন্ন ফসলি মাঠে সরেজমিন দেখা গেছে, অসময়ের এই বৃষ্টিতে বেশিরভাগ ফসলি মাঠের পাকা-আধা পাকা ধান গাছ হেলে পড়েছে,আবার কোথাও কোথাও আধা পাকা ও কাচা ধানগাছ পানিতে শুয়ে গেছে। কৃষকরা কোথাও কোথাও হেলে পড়া আধাপাকা ওই ধানগাছ-ই কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। আগাম জাতের আলু ও পেঁয়াজের খেতে পানি জমর কারণে কৃষকরা বাধ্য হয়ে রোপণ করা ওই আলু ও পেঁয়াজ এর বীজ তুলে নিচ্ছেন।
সদরের ধারকি গ্রামের চাষী আ: বাকি ৪৫ হাজার টাকা খরচে দুই বিঘা জমি স্টিক ও ক্যারেজ জাতের আলু বীজ রোপণ করেছে। তিনি বলেন, অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় জমিতে পানি জমেছে। এতে করে আলু বীজ পচে নষ্ট হয়ে যাবে। এজন্য আলুর বীজগুলো আবার জমি থেকে উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
একই এলাকার চাষী মো: মশিউর রহমান বলেন, দু’বিঘা জমি রোপা আমন ধান আবাদ করেছি, ধান ও পেকেছে, আর মাত্র কয়েক দিন পরেই ধান কাটবো। এজন্য শ্রমিকও ঠিক করেছি। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে জমিতে ধান গাছ হেলে পড়েছে,জমিতে পানি জমেছে,দ্রুত ধান কাটতে না পারলে পানিতে ধান নষ্ট হবে।
জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার মিনিগাড়ী গ্রামের চাষী মো: হাফিজার রহমান বলেন, দেড় বিঘা জমি আগাম আলু রোপণ করেছিলাম। এখন সব জমি পানিতে ডুবে আছে। যদি রোদ না হয় তবে একটা গাছও আর বাঁচবে না। আগের লোকসান পুষিয়ে নিতেই এবার আলু দিয়েছিলাম। এখন দেখছি সব শেষ।
জেলার আক্কেলপুর উপজেলার আওয়ালগাড়ী এলাকার চাষী সাইফুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন ধরে আগাম জাতের আলু রোপণ করলাম। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে সেগুলো ঢুবে গেছে। বছরের এ সময় এমন বৃষ্টি আগে কখনো দেখিনি। এছাড়াও কিছু রসুন ও পেঁয়াজ বীজ রোপণ করেছি। সেগুলোও পঁচে যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) এ.কে.এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত হিসেবে প্রায় ২০ মি:মি:, শনিবারে ৬৪.৪ মি:মি: এবং রোববারে ৪ মি:মি: বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময়ের ঝড় ও বৃষ্টিতে জেলায় রোপা আমন ধান, আগাম জাতের আলু, পেঁয়াজ, মরিচ ও শাক-সবজির বেশ ক্ষতি হয়েছে। আমরা পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

জয়পুরহাটে অসময়ের বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি ৪৬৯ হেক্টর

আপডেট সময় :

জয়পুরহাটে অসময়ের বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি ৪৬৯ হেক্টর। অসময়ের লাগাছাড়া তিনদিনের বৃষ্টিতে জেলাব্যাপী রোপা আমন, আগাম জাতের আলু, পেঁয়াজ ও শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। তিন দিন লাগাছাড়া, আবার কখনো মুষুলধারে হওয়া বৃষ্টিতে দিগন্তজোড়া রোপা আমন মাঠের ধানগাছ পানিতে শুয়ে পড়েছে। এছাড়াও নষ্ট হয়েছে আগাম জাতের আলু ও পেঁয়াজের ক্ষেত। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।
চাষীরা বলছেন, মাঠে রোপা আমন ধান পাকতে শুরু করেছে, অনেক কৃষক ধান কাটাতেও শুরু করেছে। আবার অনেক কৃষক ধান কেটে জমিতে আলু বীজ রোপণ শুরু করেছেন। বিভিন্ন জাতের সবজিও চাষ করছেন ‍কৃষকেরা। কিন্তু হঠাৎ অসময়ের বৃষ্টিতে সেই ফসলও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে আবহাওয়া অনুকূলে না এলে রোপা আমন ও আগামজাতের আলু দুই ফসলেই বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা তৈরি হবে। আর এতে করে কৃষি নির্ভর এ জেলার অর্থনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলেও তাদের আশঙ্কা ।
এবিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালকের কার্যালয় জয়পুরহাট, ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এমন ফসলি জমির একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, জেলাব্যাপী ৩৩৭ হেক্টর রোপা আমন , ২৭ হেক্টর শাক সবজি, ১৩ হেক্টর পেঁয়াজ (কন্দ), সাড়ে ৭ হেক্টর মরিচ ও ৮৫ হেক্টর জমির আগাম জাতের আলুসহ মোট ৪৬৯ দশমিক ৫ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে জেলার সদর উপজেলায় রোপা আমন , শাক সবজি, পেঁয়াজ ও মরিচের বেশি ক্ষতি হয়েছে, আর আগাম জাতের আলুর বেশি ক্ষতি হয়েছে জেলার আক্কেলপুর উপজেলায়।
জেলার বিভিন্ন ফসলি মাঠে সরেজমিন দেখা গেছে, অসময়ের এই বৃষ্টিতে বেশিরভাগ ফসলি মাঠের পাকা-আধা পাকা ধান গাছ হেলে পড়েছে,আবার কোথাও কোথাও আধা পাকা ও কাচা ধানগাছ পানিতে শুয়ে গেছে। কৃষকরা কোথাও কোথাও হেলে পড়া আধাপাকা ওই ধানগাছ-ই কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। আগাম জাতের আলু ও পেঁয়াজের খেতে পানি জমর কারণে কৃষকরা বাধ্য হয়ে রোপণ করা ওই আলু ও পেঁয়াজ এর বীজ তুলে নিচ্ছেন।
সদরের ধারকি গ্রামের চাষী আ: বাকি ৪৫ হাজার টাকা খরচে দুই বিঘা জমি স্টিক ও ক্যারেজ জাতের আলু বীজ রোপণ করেছে। তিনি বলেন, অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় জমিতে পানি জমেছে। এতে করে আলু বীজ পচে নষ্ট হয়ে যাবে। এজন্য আলুর বীজগুলো আবার জমি থেকে উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
একই এলাকার চাষী মো: মশিউর রহমান বলেন, দু’বিঘা জমি রোপা আমন ধান আবাদ করেছি, ধান ও পেকেছে, আর মাত্র কয়েক দিন পরেই ধান কাটবো। এজন্য শ্রমিকও ঠিক করেছি। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে জমিতে ধান গাছ হেলে পড়েছে,জমিতে পানি জমেছে,দ্রুত ধান কাটতে না পারলে পানিতে ধান নষ্ট হবে।
জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার মিনিগাড়ী গ্রামের চাষী মো: হাফিজার রহমান বলেন, দেড় বিঘা জমি আগাম আলু রোপণ করেছিলাম। এখন সব জমি পানিতে ডুবে আছে। যদি রোদ না হয় তবে একটা গাছও আর বাঁচবে না। আগের লোকসান পুষিয়ে নিতেই এবার আলু দিয়েছিলাম। এখন দেখছি সব শেষ।
জেলার আক্কেলপুর উপজেলার আওয়ালগাড়ী এলাকার চাষী সাইফুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন ধরে আগাম জাতের আলু রোপণ করলাম। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে সেগুলো ঢুবে গেছে। বছরের এ সময় এমন বৃষ্টি আগে কখনো দেখিনি। এছাড়াও কিছু রসুন ও পেঁয়াজ বীজ রোপণ করেছি। সেগুলোও পঁচে যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) এ.কে.এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত হিসেবে প্রায় ২০ মি:মি:, শনিবারে ৬৪.৪ মি:মি: এবং রোববারে ৪ মি:মি: বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময়ের ঝড় ও বৃষ্টিতে জেলায় রোপা আমন ধান, আগাম জাতের আলু, পেঁয়াজ, মরিচ ও শাক-সবজির বেশ ক্ষতি হয়েছে। আমরা পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।