ঢাকা ০৮:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫

জয়পুরহাটে কৃষক আলু নিয়ে চিন্তিত!

মোঃ জহুরুল ইসলাম, জয়পুরহাট
  • আপডেট সময় : ০৩:২৪:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫ ৭ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

জয়পুরহাট জেলার আলুর গুণগত মান ভালো হওয়ায় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। আলু উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম। এই জেলায় চলতি মৌসুমের প্রায় দুই মাস আগে জেলার মাঠে-মাঠে আগাম জাতের আলু উত্তোলন করছে স্থানীয় কৃষকরা। আবহাওয়ায় অনুকূলে থাকায় এবারও আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু দাম আসানূরুপ না হওয়ায় চিন্তিত আলু চাষিরা। বর্তমানে বাজারে আলুর দাম অত্যন্ত কম হওয়ায় অনেক কৃষক জমি থেকে আলু উত্তোলনের বয়স হওয়ার পরও বন্ধ রেখেছে আলু উত্তোলন। আবার অনেকে লোকসানের মধ্যেও আলু তুলছেন। লাভের আশায় আলু রোপণ করে উল্টো বেকায়দায় পড়েছেন আলু চাষিরা। লাভ তো দূরের কথা, এবার খরচের টাকাই উঠছেনা। উৎপাদন বেশি হলেও বাজার মূল্যের অভাবে কৃষকরা লাভের মুখ দেখতে পারছেন না।

জয়পুরহাট জেলার আলু চাষিরা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার আলু চাষে প্রায় তিনগুণ বেশি খরচ হয়েছে। এ বছর আলুর ফলনও বেড়েছে কিন্তু বিক্রি করে লোকশান গুনতে হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে যারা আলু বিক্রি করেছেন তারা অল্প হলেও লাভের মুখ দেখেছেন কিন্তু বর্তমানে প্রতি বিঘায় আলু বিক্রি করে প্রায় ১০-১৫ হাজার টাকা লোকশান গুনতে হচ্ছে। চাষাবাদ, সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ ও শ্রমসহ সব খরচ বাদ দিয়ে এবার আলুতে মোটা অংকের লোকশান গুনতে হচ্ছে।

গত সপ্তাহে বিভিন্ন জাতের আলু প্রতিমণ (৪০ কেজি) ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। সেই আলু মঙ্গলবার (২১ জানুযারি) বিক্রি হয়েছে প্রকারভেদে ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। প্রথম আলোর দিকে দাম বেশি ছিল কিন্তু ফলন কম হয়েছে। এখন দাম কমেছে কিন্তু ফলন বেশি হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার জয়পুরহাটে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে ৪৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। আর এরমধ্যে ৯ হাজার হেক্টরে আগাম জাতের আলু রোপণ করা হয়েছে। উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ৯ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টন। গত বছরের তুলনায় এবার ৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বেশি আলু রোপণ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৯ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ মে.টন আলু আশা করা হচ্ছে। ১৯টি হিমাগারে প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি আলু সংরক্ষণ হবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জয়পুরহাট সদর উপজেলার মেলাচাঁপুর, হেলকুন্ডা সোটাহার ধারকী, হিচমী, কালাইয়ের হারুঞ্জা, পুনট, কাদিরপুর ও বেগুন সহ বিভিন্ন মাঠে মহিলা শ্রমিক নিয়ে আগাম জাতের আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আলু চাষিরা। এসব মাঠে ফাটা পাকরি,মিউজিকা, সাদা সেভেন, বার-তের, ক্যারেজ, রোমানা, ফুলপাকরি, লাল পাকরি ও কার্ডিনাল জাতের আলু তুলছেন। পুরুষ শ্রমিকরা সেই আলু জমি থেকে রাস্তার পাশে বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন। পাইকাররা দর-দাম করে আলু ট্রাকে করে মহাজনদের ঘরে নিয়ে যাচ্ছেন। এক বিঘা জমিতে আগাম জাতের মিউজিকা আলুর চাষ করেছেন উপজেলার বানিয়াপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, রোপণের ৬৫ দিন বয়সে আলু তুলেছি। প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে প্রায় ৭০ মণ। সবমিলে প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ৫৬ হাজার টাকা। ৬৫০ টাকা মণ দরে আলু বিক্রি করেছি ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা। নিজের শ্রম তো আছেই। লোকশান হয়েছে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। মাঠে আরও আগাম জাতের আড়াই বিঘা জমিতে আলু আছে, সেগুলোও তুলতে হবে। দাম যেভাবে কমে যাচ্ছে তাতে ভয় পিছু ছাড়ছে না।

জয়পুরহাট জেলার সুন্দরপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ১২০ টাকা কেজি দরে বীজআলু ও বেশি দামে সার কিনে আলু রোপণ করেছি, অথচ আলু তুলে ১৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচই পড়েছে ১৯-২০ টাকা কেজি। আমি ১০ বিঘা জমিতে আগাম জাতের মিউজিকা আলু রোপণ করছি। প্রতিদিন দাম কমছে। আলুর বয়স হওয়ায় বাধ্য হয়ে জমি থেকে আলু তুলতে শুরু করেছি। লোকসানে দিয়েই আলু বিক্রি করছি। আলু ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, আগাম জাতের আলু বিভিন্ন মোকামে সরবরাহ করা হচ্ছে। কাঁচা মালের মূল্য সঠিকভাবে বলা যায় না। আমদানীর উপর দাম ওঠা-নামা করে। বর্তমানে আলুর আমদানি বেশি, তাই দাম কম। পাইকারি বাজারে ১৩থেকে ১৫টাকা কেজি দরে আলু ক্রয় করছি। খরচ বাদ দিয়ে প্রতি কেজিতে ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা লাভ হয়। জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বলেন রাহেলা বেগম বলেন আবহাওয়া ভালো অনুকূলে থাকায় আলুর ফলন ভালো হয়েছে এবং লক্ষ্যমাত্রার অধিক জমিতে আলু চাষ হয়েছে। বর্তমানে আলুর উৎপাদন ও সরবরাহ বেশি হওয়ায় বাজার কিছুটা নিম্নমুখী। হিমাগার মালিকর, ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা পুরো দমে আলু কিনতে শুরু করলে আলুর দাম কিছুটা বাড়বে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

জয়পুরহাটে কৃষক আলু নিয়ে চিন্তিত!

আপডেট সময় : ০৩:২৪:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫

 

জয়পুরহাট জেলার আলুর গুণগত মান ভালো হওয়ায় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। আলু উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম। এই জেলায় চলতি মৌসুমের প্রায় দুই মাস আগে জেলার মাঠে-মাঠে আগাম জাতের আলু উত্তোলন করছে স্থানীয় কৃষকরা। আবহাওয়ায় অনুকূলে থাকায় এবারও আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু দাম আসানূরুপ না হওয়ায় চিন্তিত আলু চাষিরা। বর্তমানে বাজারে আলুর দাম অত্যন্ত কম হওয়ায় অনেক কৃষক জমি থেকে আলু উত্তোলনের বয়স হওয়ার পরও বন্ধ রেখেছে আলু উত্তোলন। আবার অনেকে লোকসানের মধ্যেও আলু তুলছেন। লাভের আশায় আলু রোপণ করে উল্টো বেকায়দায় পড়েছেন আলু চাষিরা। লাভ তো দূরের কথা, এবার খরচের টাকাই উঠছেনা। উৎপাদন বেশি হলেও বাজার মূল্যের অভাবে কৃষকরা লাভের মুখ দেখতে পারছেন না।

জয়পুরহাট জেলার আলু চাষিরা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার আলু চাষে প্রায় তিনগুণ বেশি খরচ হয়েছে। এ বছর আলুর ফলনও বেড়েছে কিন্তু বিক্রি করে লোকশান গুনতে হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে যারা আলু বিক্রি করেছেন তারা অল্প হলেও লাভের মুখ দেখেছেন কিন্তু বর্তমানে প্রতি বিঘায় আলু বিক্রি করে প্রায় ১০-১৫ হাজার টাকা লোকশান গুনতে হচ্ছে। চাষাবাদ, সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ ও শ্রমসহ সব খরচ বাদ দিয়ে এবার আলুতে মোটা অংকের লোকশান গুনতে হচ্ছে।

গত সপ্তাহে বিভিন্ন জাতের আলু প্রতিমণ (৪০ কেজি) ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। সেই আলু মঙ্গলবার (২১ জানুযারি) বিক্রি হয়েছে প্রকারভেদে ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। প্রথম আলোর দিকে দাম বেশি ছিল কিন্তু ফলন কম হয়েছে। এখন দাম কমেছে কিন্তু ফলন বেশি হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার জয়পুরহাটে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে ৪৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। আর এরমধ্যে ৯ হাজার হেক্টরে আগাম জাতের আলু রোপণ করা হয়েছে। উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ৯ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টন। গত বছরের তুলনায় এবার ৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বেশি আলু রোপণ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৯ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ মে.টন আলু আশা করা হচ্ছে। ১৯টি হিমাগারে প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি আলু সংরক্ষণ হবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জয়পুরহাট সদর উপজেলার মেলাচাঁপুর, হেলকুন্ডা সোটাহার ধারকী, হিচমী, কালাইয়ের হারুঞ্জা, পুনট, কাদিরপুর ও বেগুন সহ বিভিন্ন মাঠে মহিলা শ্রমিক নিয়ে আগাম জাতের আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আলু চাষিরা। এসব মাঠে ফাটা পাকরি,মিউজিকা, সাদা সেভেন, বার-তের, ক্যারেজ, রোমানা, ফুলপাকরি, লাল পাকরি ও কার্ডিনাল জাতের আলু তুলছেন। পুরুষ শ্রমিকরা সেই আলু জমি থেকে রাস্তার পাশে বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন। পাইকাররা দর-দাম করে আলু ট্রাকে করে মহাজনদের ঘরে নিয়ে যাচ্ছেন। এক বিঘা জমিতে আগাম জাতের মিউজিকা আলুর চাষ করেছেন উপজেলার বানিয়াপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, রোপণের ৬৫ দিন বয়সে আলু তুলেছি। প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে প্রায় ৭০ মণ। সবমিলে প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ৫৬ হাজার টাকা। ৬৫০ টাকা মণ দরে আলু বিক্রি করেছি ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা। নিজের শ্রম তো আছেই। লোকশান হয়েছে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। মাঠে আরও আগাম জাতের আড়াই বিঘা জমিতে আলু আছে, সেগুলোও তুলতে হবে। দাম যেভাবে কমে যাচ্ছে তাতে ভয় পিছু ছাড়ছে না।

জয়পুরহাট জেলার সুন্দরপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ১২০ টাকা কেজি দরে বীজআলু ও বেশি দামে সার কিনে আলু রোপণ করেছি, অথচ আলু তুলে ১৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচই পড়েছে ১৯-২০ টাকা কেজি। আমি ১০ বিঘা জমিতে আগাম জাতের মিউজিকা আলু রোপণ করছি। প্রতিদিন দাম কমছে। আলুর বয়স হওয়ায় বাধ্য হয়ে জমি থেকে আলু তুলতে শুরু করেছি। লোকসানে দিয়েই আলু বিক্রি করছি। আলু ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, আগাম জাতের আলু বিভিন্ন মোকামে সরবরাহ করা হচ্ছে। কাঁচা মালের মূল্য সঠিকভাবে বলা যায় না। আমদানীর উপর দাম ওঠা-নামা করে। বর্তমানে আলুর আমদানি বেশি, তাই দাম কম। পাইকারি বাজারে ১৩থেকে ১৫টাকা কেজি দরে আলু ক্রয় করছি। খরচ বাদ দিয়ে প্রতি কেজিতে ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা লাভ হয়। জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বলেন রাহেলা বেগম বলেন আবহাওয়া ভালো অনুকূলে থাকায় আলুর ফলন ভালো হয়েছে এবং লক্ষ্যমাত্রার অধিক জমিতে আলু চাষ হয়েছে। বর্তমানে আলুর উৎপাদন ও সরবরাহ বেশি হওয়ায় বাজার কিছুটা নিম্নমুখী। হিমাগার মালিকর, ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা পুরো দমে আলু কিনতে শুরু করলে আলুর দাম কিছুটা বাড়বে।