জয়পুরহাটে ৫৬ দিনে ৫৭ ট্রান্সফরমার চুরি, চরম বিপদে কৃষকরা
- আপডেট সময় : ০৩:২৯:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫ ১১ বার পড়া হয়েছে
জয়পুরহাটে ৫৬ দিনে ৫৭ ট্রান্সফরমার চুরি,চরম বিপদে কৃষকরা। জেলায় গভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও মিটার চুরি যেন থামছেই না। জেলাব্যাপী গেল বছরের নভেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর-২০২৪ পর্যন্ত ৫৭টি ট্রান্সফরমার ও ১০ টি মিটার চুরি যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে চরম বিপদে পড়েছেন কৃষকরা। কালাই উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ট্রান্সফরমার চুরির তথ্য পাওয়া গেছে। মিটার চুরির স্থানে চোর চক্রটি চিরকুটে মোবাইল ও বিকাশ নম্বর লিখে ফেলে রাখাখেন। ওই নম্বরে যোগাযোগ করে বিকাশে টাকা পাঠানোর পর চুরি যাওয়া মিটার ফেরত পাওয়া যাচ্ছে। তবে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। চোরেরা ট্রান্সফরমারের তামার তার খুলে নিয়ে বোতল রেখে যাচ্ছেন। ফলে ট্রান্সফরমার কোনো কাজে লাগছে না। এতে চুরি যাওয়া গভীর নলকূপ মালিকদের ক্ষতি হচ্ছে লাখ লাখ টাকা ।
চোরদের ধরা কঠিন হলেও মোবাইল ও বিকাশ নম্বরের সূত্র ধরে চক্রটিকে শনাক্ত করা অনেকটাই সহজ। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়ে জোরালো কো নপদক্ষেপ নিচ্ছে না এমন অভিযোগ রয়েছে কৃষকদের।এমনকি থানায় এজাহারের আবেদন করলে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয় না। এ কারণে পরিস্থিতি এমন পর্যায় পৌছেছে যে, কৃষকদের মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ করতে হয়েছে। তবে পুলিশ বলছেন, চুরি ঠেকাতে তারা তৎপর।ইতোমধ্যে চোর চক্রের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার কার্যালয় তথ্যমতে গেল নভেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর-২০২৪পর্যন্ত ৫৬ দিনে ৫৭টি ট্রান্সফরমার ও ১০ টি মিটার চুরি গেছে। এরমধ্যে জেলার সদর উপজেলায় ৩টি ট্রান্সফরমার,একটি মিটার, পাঁচবিতে ১৫ টি ট্রান্সফরমার,আক্কেলপুরে ৬ টি ট্রান্সফরমার, ৫টি মিটার, কালাই ২৩ টি ট্রান্সফরমার, ৩টি মিটার এবং ক্ষেতলাল উপজেলায় ১০ টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, একটি গভীর নলকূপের ১০ কেভি ৩ টি ট্রান্সফরমার থাকে। প্রতিটির দাম ৮০ হাজার টাকা। ১০ কেভি ৩টি ট্রান্সফরমারের দাম ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। ৩ ফেজের মিটারের দাম ১৩ হাজার ৫শ টাকা। চুরি যাওয়া ৫৭ টি ট্রান্সফরমারের দাম প্রায় ৪৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ৫ ডিসেম্বর-২০২৪ রাতে আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নে ৪টি গভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক মিটার খুলে নিয়ে চিরকুটে মোবাইল নম্বর লিখে রেখে যায় চক্রটি। ওই নম্বরে যোগাযোগ করলে চক্রটি মিটারপ্রতি বিকাশে ১০-২০ হাজার টাকা দাবি করে।ভুক্তভোগী কালাই উপজেলার গুডুম্বা গ্রামের গভীর নলকূপের মালিক আবু কালাম বলেন, আমার নলকূপের ঘরে দুইজন নৈশপ্রহরী ছিলেন। রাতে বাইরে থেকে দরজা আটকিয়ে মিটার খুলে নিয়েছে। মিটারের স্থানে একটি চিরকুটে মোবাইল নম্বর পেয়েছি। ওই নম্বরে কল করেছিলাম। তারা বিকাশে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। পরে ১০ হাজার টাকায় রফা হয়। টাকা পাঠানোর পরে আর মিটার ফেরত পাইনি। ৩দিন পর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিতে ১৭ হাজার টাকা দিয়ে আবার মিটার কিনেছি। এর আগে আমার নলকূপের মিটার চুরি হয়েছিল। তবে চিরকুটে লেখা নম্বরে যোগাযোগ করে ৬ হাজার টাকা বিকাশে পাঠিয়ে মিটার ফেরত পেয়েছিলাম।
অপরদিকে ১৩ ডিসেম্বর-২০২৪ রাতে সদর উপজেলার কেন্দুল গ্রামে শাহিনুর রহমানের ফসলি মাঠের গভীর নলকূপের ১০ কেভির ৩টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়। এ ঘটনার পর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন।
শাহিনুর রহমান বলেন, চোর শনাক্তে থানা পুলিশের তেমন তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। আবার পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। পল্লী বিদ্যুতে এসে কোনো মালামাল পাওয়া যাচ্ছে না।চরম ভোগান্তি পোহাতে আমাদের হচ্ছে।
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন বলেন, সম্প্রতি একটি নলকূপের ট্রান্সফরমার চুরির চেষ্টার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। দুইজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। নলকূপের মালিকদের নিজ উদ্যোগে পাহারার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।চক্রটি ধরতে পুলিশ তৎপর।
জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আবু উমাম মো: মাহবুবুল হক বলেন, গভীর নলকূপের ট্রান্সফরমার ও মিটার চুরি হচ্ছে। নভেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর-২০২৪ পর্যন্ত জেলায় ৫৭ টি ট্রান্সফরমার ও ১০টি মিটার চুরি গেছে। পুলিশ চোর চক্রকে ধরতে তৎপর। চুরি ঠেকাতে সমিতির পক্ষ থেকে সচেতনতা বাড়াতে নিজ উদ্যোগে গভীর নলকূপ মালিকদের পাহারার ব্যবস্থা করতে মাইকিং করা হয়েছে।
উল্লেখিত চুরির ঘটনায় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে আরও তৎপর ও প্রতিটি চুরির ঘটনায় মামলা গ্রহনের মদ্যদিয়ে দোষীদের শাস্তি হলে চুরির প্রবণতা কমে আসবে বলে মনে করেণ সচেতন এলাকাবাসী।