ঢাকা ০৯:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo `জুলাই চেতনায় ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিক সমাজের অঙ্গীকার’ Logo ডামুড্যায় গরীব ও অসহায়দের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ Logo বিশ্বনাথে আলোকিত সুর সাংস্কৃতিক ফোরাম অভিষেক ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা Logo বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের এমডিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহে মামলা Logo সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম শিক্ষক নিয়োগের দাবীতে ঝিনাইদহে মানববন্ধন Logo ঝিনাইদহে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিএনপির মতবিনিময় সভা Logo ভালো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে অরবিন্দ শিশু হাসপাতাল ভূমিকা রাখছে Logo বন্ধু একাদশ হাকিমপুরকে হারিয়ে মুন্সিপাড়া ওয়ারিয়ার্স দিনাজপুর চ্যাম্পিয়ান Logo জয়পুরহাটে স্ত্রীকে হত্যার পর আত্মহত্যার চেষ্টা স্বামীর Logo ব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিমা শিল্পীরা

জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ

বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১৪০ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
  • পানিতে ডুবে থাকা খানাখন্দকে ঘটছে দুর্ঘটনা

  • চরম ভোগান্তিতে নিম্মআয়ের মানুষ

থেমে থেমে হচ্ছে বৃষ্টি। টানা তিনদিনে অতিবৃষ্টিতে গরমের তীব্রতা কমলেও রাজধানীবাসীর জন্য দেখা দিয়েছে নতুন দুর্ভোগ, জলজট, যানজট আর কর্মদিবসে অচলাবস্থা। চরমদুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন নিম্নআয়ের মানুষ। গতকাল মঙ্গলবারও বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি ও মাঝারি বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারেননি। কেউ কেউ আবার পুরোদিনের কাজই করতে পারেননি। বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, রিকশাচালকসহ খেটে খাওয়া মানুষগুলো।
গভীর নিম্ন চাপ ও মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সারাদেশে মুষলধারে বৃষ্টিপাতের ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত। রাজধানীতে টানা দুইদিনের রেকর্ড ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে তালিয়ে গেছে বিভিন্ন নিম্ম এলাকার রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি ও দোকানপাট। কোথাও কোথাও কোমড় পানি পর্যন্ত হয়েছে। এতে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। খানাখন্দে ভরা রাজধানীর অনেক সড়ক, হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা।
এদিকে ধানমন্ডি, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মালিবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় পানি জমতে শুরু করেছে। নগরবাসীর আশঙ্কা, এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে অল্প সময়ের মধ্যেই এসব এলাকার অনেক জায়গা পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে। ধানমন্ডির ঝিগাতলার বাসিন্দা নিলয় জানান, সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি আর কখনো টানা বৃষ্টি হচ্ছে। ভিজতে ভিজতে অফিসে যেতে হয়েছে। ঠান্ডা-জ্বর হওয়ার ভয় রয়েছে। নতুন রাস্তায় যেভাবে পানি জমে, তাতে এভাবে বৃষ্টি চললে কোমর পর্যন্ত পানি উঠবে।
রিকশাচালক হামিদ বলেন, বৃষ্টিতে মানুষ কম বের হয়, তাই ভাড়াও কমে যায়। রিকশা চালাতে না পারলে খাবারও জুটবে না। কয়েকদিন ধরেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে, আর এমন চললে খুব বিপদে পড়ব। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, সকাল থেকে যানবাহন পেতে খুব কষ্ট হয়েছে। এর মধ্যেই আবার রাস্তায় প্রচ- যানজট। মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে যাত্রা করা এক যাত্রী জানান, বৃষ্টির কারণে এত যানজট ছিল যে শাহবাগেই থেমে যেতে হয়েছে। সঙ্গে থাকা মোটরসাইকেল চালক জানান, গতকাল থেকে বৃষ্টিতে ভিজে রাইড করছি। আজও ভাড়া পাচ্ছি না, আর শরীরটাও খারাপ হয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা শাহিনুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতি বছর এই সময় এমন সমস্যায় পড়ি। একটু বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাট নদীর মতো হয়ে যায়। বাসা থেকে বের হওয়া যায় না। সিটি করপোরেশন শুধু আশ্বাস দেয়, কাজের কাজ কিছুই করে না।
অতিবৃষ্টির ফলে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে চাকুরজীবিসহ সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীরা। টানা অতি বর্ষণে দেশের লাইফ লাইন খ্যাত ভিআইপি সড়কের বিভিন্ন অংশে বৃষ্টির পানিতে জলাবন্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানি জমে রাজধানীর কোথাও আবার সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অসংখ্য গর্তের। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে রাজধানীতে যাতায়াত করা যাত্রী ও জনসাধারণের। এদিকে অতিবৃষ্টির কারণে রাজধানীর প্রবেশদ্বরগুলোতে জলাবদ্ধতায় যানবাহন চলাচল করছে ধীরগতিতে। ফলে সড়কের মোড়ে মোড়ে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। প্রবল বর্ষণে বিপর্যস্থ জনজীবন। গত ৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। প্রবল বৃষ্টিপাতের জন্য জলাবদ্ধতায় অনেক স্কুলের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বৃষ্টিপাতের ফলে রাজধানীসহ সারাদেশের সড়কে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দে মানুষের দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। জনসাধারনের অভিযোগ, খানাখন্দে ভরা রাস্তা, হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা, অভিযোগ জানানোর পরও টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের। রাজধানীতে এমন সড়কের সংখ্যা কম নয়। সড়কের দুরবস্থার জন্য ওয়াসা ও রাজউককে দুষছে সিটি করপোরেশন।
রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগর ও মিরপুরের ৬০ ফিট এলাকায় গিয়ে দেখা যায় নিম্ম আয়ের মানুষের করুনচিত্র। স্থানীয় ক্ষুদে ব্যবসায়ি রাসেল জানান, আট বছর ধরে মুদি দোকান চালাচ্ছেন তিনি। এই দোকানের আয় থেকেই সংসার চলে। তবে দেড় বছর ধরে দেখছেন না লাভের মুখ। এর মূল কারণ রাস্তার দুরবস্থা। বড় বড় গর্ত এর মাঝে অতিবৃষ্টি। বৃষ্টির পানি জমে তৈরি হয়েছে খানাখন্ধ। দোকানি রাসেল খান বলেন, রাস্তার বাজে অবস্থার কারণে ক্রেতা কম আসছেন। গত দেড় বছর ধরে লোকসান গুনতে হচ্ছে। রাসেল আরও জানান, রাস্তা মেরামতের দাবিতে বিভিন্ন সময় কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। দোকানের মালিকরা গিয়ে সিটি করপোরেশনে অভিযোগ জানানো হয়েছে। তবে টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। ফলে নিরুপায় হয়ে দোকান বিক্রি করে ৬০ ফিট এলাকা ছেড়েছেন অনেকে। খানাখন্দে ভরা রাস্তার কারণে অতিষ্ঠ নিয়মিত যাতায়াতকারীদের। তারা বলেন, খানাখন্দের জন্য প্রায়ই রাস্তার গর্তে পানি জমে থাকে। রিকশা-ভ্যান আটকে যায় গর্তে।
রাজধানীতে ভাঙাচোরা আরও অনেক সড়ক রয়েছে। রাজধানীর লালবাগ, ইসলামবাগ, ও বেড়িবাঁধ এবং গুলশানের লেক রোডও বেহাল। নির্মাণের পর একবারও সংস্কার করা হয়নি সড়কটি। এলাকাবাসী জানান, গত ১০-১২ বছর ধরে রাস্তার তেমন কোনো সংস্কার কাজই হয়নি। এতে অনেক সড়কেরই বেহাল দশা। একাধিকবার অভিযোগ জানানোর পরও অবহেলিত পড়ে রয়েছে রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকার সড়ক। ফলে সীমাহীন ভোগান্তিতে এলাকাবাসী। হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা। তবে কেন বছরের পর বছর রাজধানীর অনেক সড়কের দুরবস্থা?
উত্তর সিটি করোরেশন বলছে, ৬০ ফিটে ভাঙাচোরা রাস্তার জন্য দায়ী ওয়াসা। আর লেক রোডের দায় রাজউকের। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ৬০ ফিটে ভাঙাচোরা রাস্তার জন্য দায়ী ওয়াসা। কারণ ওয়াসার একটি সুপেয় পানির প্রজেক্ট ধীরগতিতে চলার কারণে এই অবস্থা। এছাড়া সিটি করপোরেশনের আওতায় আসা নতুন ওয়ার্ডগুলোর মধ্যেও রয়েছে অনেক অবহেলিত সড়ক। মেরামতে চার হাজার কোটি টাকার মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্প নেয়া হলেও এখনও কাজ শুরু হয়নি।
এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপের কারণে এই বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির জানান, এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ু চাপের তারতম্য দেখা দিয়েছে। ফলে বৃষ্টিপাত কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। গরমের পর স্বস্তির বৃষ্টি হলেও রাজধানীর যাতায়াত ব্যবস্থা, সড়ক নালার দুরবস্থা, আর খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট—সব মিলিয়ে এই বর্ষা আবারও নগরের ব্যর্থ ব্যবস্থাপনার চিত্র চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ

আপডেট সময় :
  • পানিতে ডুবে থাকা খানাখন্দকে ঘটছে দুর্ঘটনা

  • চরম ভোগান্তিতে নিম্মআয়ের মানুষ

থেমে থেমে হচ্ছে বৃষ্টি। টানা তিনদিনে অতিবৃষ্টিতে গরমের তীব্রতা কমলেও রাজধানীবাসীর জন্য দেখা দিয়েছে নতুন দুর্ভোগ, জলজট, যানজট আর কর্মদিবসে অচলাবস্থা। চরমদুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন নিম্নআয়ের মানুষ। গতকাল মঙ্গলবারও বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি ও মাঝারি বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারেননি। কেউ কেউ আবার পুরোদিনের কাজই করতে পারেননি। বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, রিকশাচালকসহ খেটে খাওয়া মানুষগুলো।
গভীর নিম্ন চাপ ও মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সারাদেশে মুষলধারে বৃষ্টিপাতের ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত। রাজধানীতে টানা দুইদিনের রেকর্ড ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে তালিয়ে গেছে বিভিন্ন নিম্ম এলাকার রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি ও দোকানপাট। কোথাও কোথাও কোমড় পানি পর্যন্ত হয়েছে। এতে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। খানাখন্দে ভরা রাজধানীর অনেক সড়ক, হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা।
এদিকে ধানমন্ডি, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মালিবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় পানি জমতে শুরু করেছে। নগরবাসীর আশঙ্কা, এভাবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে অল্প সময়ের মধ্যেই এসব এলাকার অনেক জায়গা পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে। ধানমন্ডির ঝিগাতলার বাসিন্দা নিলয় জানান, সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি আর কখনো টানা বৃষ্টি হচ্ছে। ভিজতে ভিজতে অফিসে যেতে হয়েছে। ঠান্ডা-জ্বর হওয়ার ভয় রয়েছে। নতুন রাস্তায় যেভাবে পানি জমে, তাতে এভাবে বৃষ্টি চললে কোমর পর্যন্ত পানি উঠবে।
রিকশাচালক হামিদ বলেন, বৃষ্টিতে মানুষ কম বের হয়, তাই ভাড়াও কমে যায়। রিকশা চালাতে না পারলে খাবারও জুটবে না। কয়েকদিন ধরেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে, আর এমন চললে খুব বিপদে পড়ব। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, সকাল থেকে যানবাহন পেতে খুব কষ্ট হয়েছে। এর মধ্যেই আবার রাস্তায় প্রচ- যানজট। মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে যাত্রা করা এক যাত্রী জানান, বৃষ্টির কারণে এত যানজট ছিল যে শাহবাগেই থেমে যেতে হয়েছে। সঙ্গে থাকা মোটরসাইকেল চালক জানান, গতকাল থেকে বৃষ্টিতে ভিজে রাইড করছি। আজও ভাড়া পাচ্ছি না, আর শরীরটাও খারাপ হয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা শাহিনুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতি বছর এই সময় এমন সমস্যায় পড়ি। একটু বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাট নদীর মতো হয়ে যায়। বাসা থেকে বের হওয়া যায় না। সিটি করপোরেশন শুধু আশ্বাস দেয়, কাজের কাজ কিছুই করে না।
অতিবৃষ্টির ফলে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে চাকুরজীবিসহ সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীরা। টানা অতি বর্ষণে দেশের লাইফ লাইন খ্যাত ভিআইপি সড়কের বিভিন্ন অংশে বৃষ্টির পানিতে জলাবন্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানি জমে রাজধানীর কোথাও আবার সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অসংখ্য গর্তের। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে রাজধানীতে যাতায়াত করা যাত্রী ও জনসাধারণের। এদিকে অতিবৃষ্টির কারণে রাজধানীর প্রবেশদ্বরগুলোতে জলাবদ্ধতায় যানবাহন চলাচল করছে ধীরগতিতে। ফলে সড়কের মোড়ে মোড়ে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। প্রবল বর্ষণে বিপর্যস্থ জনজীবন। গত ৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। প্রবল বৃষ্টিপাতের জন্য জলাবদ্ধতায় অনেক স্কুলের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বৃষ্টিপাতের ফলে রাজধানীসহ সারাদেশের সড়কে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দে মানুষের দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। জনসাধারনের অভিযোগ, খানাখন্দে ভরা রাস্তা, হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা, অভিযোগ জানানোর পরও টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের। রাজধানীতে এমন সড়কের সংখ্যা কম নয়। সড়কের দুরবস্থার জন্য ওয়াসা ও রাজউককে দুষছে সিটি করপোরেশন।
রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগর ও মিরপুরের ৬০ ফিট এলাকায় গিয়ে দেখা যায় নিম্ম আয়ের মানুষের করুনচিত্র। স্থানীয় ক্ষুদে ব্যবসায়ি রাসেল জানান, আট বছর ধরে মুদি দোকান চালাচ্ছেন তিনি। এই দোকানের আয় থেকেই সংসার চলে। তবে দেড় বছর ধরে দেখছেন না লাভের মুখ। এর মূল কারণ রাস্তার দুরবস্থা। বড় বড় গর্ত এর মাঝে অতিবৃষ্টি। বৃষ্টির পানি জমে তৈরি হয়েছে খানাখন্ধ। দোকানি রাসেল খান বলেন, রাস্তার বাজে অবস্থার কারণে ক্রেতা কম আসছেন। গত দেড় বছর ধরে লোকসান গুনতে হচ্ছে। রাসেল আরও জানান, রাস্তা মেরামতের দাবিতে বিভিন্ন সময় কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। দোকানের মালিকরা গিয়ে সিটি করপোরেশনে অভিযোগ জানানো হয়েছে। তবে টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। ফলে নিরুপায় হয়ে দোকান বিক্রি করে ৬০ ফিট এলাকা ছেড়েছেন অনেকে। খানাখন্দে ভরা রাস্তার কারণে অতিষ্ঠ নিয়মিত যাতায়াতকারীদের। তারা বলেন, খানাখন্দের জন্য প্রায়ই রাস্তার গর্তে পানি জমে থাকে। রিকশা-ভ্যান আটকে যায় গর্তে।
রাজধানীতে ভাঙাচোরা আরও অনেক সড়ক রয়েছে। রাজধানীর লালবাগ, ইসলামবাগ, ও বেড়িবাঁধ এবং গুলশানের লেক রোডও বেহাল। নির্মাণের পর একবারও সংস্কার করা হয়নি সড়কটি। এলাকাবাসী জানান, গত ১০-১২ বছর ধরে রাস্তার তেমন কোনো সংস্কার কাজই হয়নি। এতে অনেক সড়কেরই বেহাল দশা। একাধিকবার অভিযোগ জানানোর পরও অবহেলিত পড়ে রয়েছে রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকার সড়ক। ফলে সীমাহীন ভোগান্তিতে এলাকাবাসী। হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা। তবে কেন বছরের পর বছর রাজধানীর অনেক সড়কের দুরবস্থা?
উত্তর সিটি করোরেশন বলছে, ৬০ ফিটে ভাঙাচোরা রাস্তার জন্য দায়ী ওয়াসা। আর লেক রোডের দায় রাজউকের। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ৬০ ফিটে ভাঙাচোরা রাস্তার জন্য দায়ী ওয়াসা। কারণ ওয়াসার একটি সুপেয় পানির প্রজেক্ট ধীরগতিতে চলার কারণে এই অবস্থা। এছাড়া সিটি করপোরেশনের আওতায় আসা নতুন ওয়ার্ডগুলোর মধ্যেও রয়েছে অনেক অবহেলিত সড়ক। মেরামতে চার হাজার কোটি টাকার মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্প নেয়া হলেও এখনও কাজ শুরু হয়নি।
এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপের কারণে এই বৃষ্টি হচ্ছে। আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির জানান, এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ু চাপের তারতম্য দেখা দিয়েছে। ফলে বৃষ্টিপাত কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। গরমের পর স্বস্তির বৃষ্টি হলেও রাজধানীর যাতায়াত ব্যবস্থা, সড়ক নালার দুরবস্থা, আর খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট—সব মিলিয়ে এই বর্ষা আবারও নগরের ব্যর্থ ব্যবস্থাপনার চিত্র চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।