কেশবপুররে বৃদ্ধি পেয়েছে পানিফলের চাষ
জলাবদ্ধ জমিতে নতুন সম্ভাবনার মুখ দেখছেন কৃষকরা
- আপডেট সময় : ১৪ বার পড়া হয়েছে
যশোর জেলার কেশবপুরে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পানিফল চাষ। একসময় এই অঞ্চলের কৃষকরা ধান, পাট কিংবা প্রচলিত ফসলের ওপর নির্ভরশীল থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তারা ঝুঁকছেন বিকল্প উচ্চমূল্যের ফসলে। জলাবদ্ধ জমিতেও চাষ করা যায় বলে কেশবপুরে দ্রুত বিস্তৃত হচ্ছে পানিফলের আবাদ। এতে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ।
কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। পানিফল একটি জলজ উদ্ভিদ। জলাবদ্ধ ও পতিত জমিতেই বেশি ভালো ফলন দেয়, যা কেশবপুর এলাকার কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাষাবাদে খরচ কম হওয়ায় এবং বাজারে যথেষ্ট চাহিদা থাকায় কৃষকরা স্বল্প সময়ে ভালো আয়ের মুখ দেখছেন।
উপজেলার প্রতাপপুর এলাকার কৃষক মো. ইয়াসিন আলী জানান, সাড়ে তিন বিঘা জমি লিজ নিয়ে তিন বছর ধরে পানিফল চাষ করছি। আগে জমিটা ফেলানো পড়ে ছিল। এখন এই পানিফলই আমার জীবিকার প্রধান ভরসা। যা খরচ হয় তার দ্বিগুণ লাভ পাই।
তিনি বলেন, এ বছর প্রায় এক লাখ টাকা খরচ করেছি। ফলন খুবই ভালো। ইঁদুরের ক্ষতি না থাকলে লাভ আরও বেশি হতো। তারপরও আশা করছি কমপক্ষে এক লাখ টাকা লাভ থাকবে।
চাষিদের মতে, পানিফলের গাছ লাগানোর তিন মাস পরই ফলন পাওয়া যায়। এরপর আরও তিন মাস ধরে ফলন অব্যাহত থাকে। ফলে ছয় মাসে এক বিঘা জমিতে ১০–১৫ হাজার টাকা খরচ করে ৭০–৮০ হাজার টাকার পানিফল বিক্রি করা সম্ভব হয়। ফলে অন্যান্য প্রচলিত ফসলের তুলনায় কম পরিশ্রমে লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা ক্রমেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
পানিফল চাষের বিস্তার শ্রমিকদের জন্যও তৈরি করেছে নতুন উপার্জনের সুযোগ। প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা কাজ করে একজন শ্রমিক সাড়ে ৩০০ টাকা আয় করতে পারছেন। এতে স্থানীয় পরিবারগুলো আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ সালে ১০৬ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ হয়ে উৎপাদিত হয় ২ হাজার ৭৫৫ টন ফল।২০২২-২৩ অর্থবছরে আবাদ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৪২ হেক্টরে। ২০২৩-২৪ সালে জেলায় প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ হয়েছে। গত বছর ১৩৬ হেক্টর জমিতে আবাদ হলেও চলতি বছর আরও ২৮ হেক্টর বেড়ে দাঁড়িয়েছে১৬৪ হেক্টর।
উৎপাদন বৃদ্ধির এই ধারাবাহিকতায় কৃষি বিভাগ মনে করছে, আগামী বছরগুলোতে কেশবপুরসহ পুরো যশোর জেলায় পানিফলের আবাদ আরও বিস্তৃত হবে।
স্বাস্থ্যগুনে চাহিদা বাড়ছে এই কারণে ডায়াবেটিস প্রতিরোধসহ নানা রোগের উপকারী খাদ্য উপাদান রয়েছে পানিফলে। ফলে শুধু স্থানীয় বাজারেই নয়, আশপাশের জেলাতেও এর চাহিদা বাড়ছে। কৃষকরা বলছেন, বাজারদর ভালো থাকায় তাদের লাভও বাড়ছে।
কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা রয়েছে বলে পানিফল চাষের বিস্তারে একদিকে যেমন জলাবদ্ধ জমির ব্যবহার বাড়ছে, অন্যদিকে কৃষকদের আর্থিক স্থিতিশীলতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সামান্য পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পেলে এই অঞ্চলে পানিফল হতে পারে একটি লাভজনক বাণিজ্যিক ফসল, যা কৃষকদের জীবনমান উন্নত করতে বড় ভূমিকা রাখবে।




















