জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের ডেটলাইন আজ, প্রজ্ঞাপন জারি করবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়
- আপডেট সময় : ০১:৪৫:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ জুলাই ২০২৪ ২৫০ বার পড়া হয়েছে
নির্বাহী আদেশে স্বাধীনতা বিরোধি দল জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের ডেটলাইন আজ। বুধবার (৩১ জুলাই) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
এর আগে আজ বুধবারের মধ্যে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হবে বলে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এদিন বিকালেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন।
কখন নাগাদ জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হচ্ছে, বুধবার সকালে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, একটু অপেক্ষা করেন। জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে।
শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার পুলিশসহ দেড়শ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী এ সংখ্যা দুই শতাধিক। আন্দোলনের সময় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভি, বনানীর সেতুভবন, মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, মেট্রোরেল মিরপুর ১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায়। সরকারের তরফের দাবি, বিএনপি ও জামায়াত-শিবির এ সহিংসতায় যুক্ত।
এর আগে সোমবার (২৯ জুলাই) ক্ষমতসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সভায় জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়। সেদিন সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি-জামায়াত নৈরাজ্যের মাধ্যমে দেশকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। জাতীয় স্বার্থে দেশবিরোধী অপশক্তি নির্মূলের জন্য ১৪ দলের বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নির্বাহী আদেশে বুধবারের মধ্যে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, গত ১৬ জুলাই থেকে কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে যে সহিংসতা চালানো হয়েছে, যারা কোটাবিরোধী আন্দোলন করছেন তারা কিন্তু জানিয়েছেন, এ সহিংসতার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
সেক্ষেত্রে আমাদের কাছে তথ্য-উপাত্ত আছে, জামায়াত-বিএনপি ও ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্রদলের যারা জঙ্গি, তারাই এটা করেছেন। আইনমন্ত্রী আরও বলেন, যদি দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা এবং দেশের রাজনীতিরও অনেক উন্নতি হবে।
মঙ্গলবার বিকেলে আইনমন্ত্রীসহ সাতজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বৈঠক শেষে কোন প্রক্রিয়ায় জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি আইনমন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, এটি প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল জামায়াত। যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মামলায় দলটির সাবেক বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
এর মধ্যে মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, আবদুল কাদের মোল্লা এবং মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মতো পাঁচজন রয়েছেন।
জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলার রায়ে জামায়াতকে একটি ‘ক্রিমিনাল সংগঠন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, জামায়াত একটি অপরাধী সংগঠন। একাত্তরে তাদের ভূমিকা ছিল দেশের স্বার্থের পরিপন্থি।
বাংলাদেশে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল জামায়াত। রাজনৈতিক নানা পট পরিবর্তনের পর দেশের রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হয় জামায়াত। ১৯৮৬ সালে প্রথম বাংলাদেশে নির্বাচনে অংশ নেয় দলটি। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার গঠন করলে জামায়াতের কয়েকজন নেতা মন্ত্রিসভায়ও স্থান পান, যা তখন ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
২০০৮ সালে জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেওয়া হয়। এরপর দলটির নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদন করেন তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি।
২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় ঘোষণা করেন। ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।