১৬ বছর ধরে একই কর্মস্থলে মনিরের সাম্রাজ্য
জামালপুর বিএডিসিতে একচ্ছত্র আধিপত্য
- আপডেট সময় : ১৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) জামালপুর বীজ বিপণন কেন্দ্র সরকারি দপ্তর হলেও এর ভেতরের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। অফিসে ঢুকলেই মনে হয় যেন কোনো ব্যক্তিগত কো¤পানি। কারণ কেন্দ্রটির উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) মনিরুল ইসলাম মনির গত ১৬ বছর ধরে একই কর্মস্থলে অস্বাভাবিক ভাবে স্থায়ী থেকে এমন একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা এখন স্থানীয় ভাবে তার ব্যক্তিগত সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিত।
অফিসের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, মনিরুল ইসলামের অনুমতি ছাড়া অফিসে কোনো কাগজ নড়ে না, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না। তিনি না থাকলে ডিলারদের ফাইলও নড়াচড়া হয় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, এটা সরকারি অফিস নয়, এটা মনিরের রাজমহল। সূত্র আরও জানায়, গত ১৬ বছরে অন্তত তিনবার তার বদলির প্রস্তাব উঠেছিল। কিন্তু প্রতিবারই রহস্য জনকভাবে ফাইল অদৃশ্য হয়ে যায় অথবা প্রভাবশালী মহলের নির্দেশে স্থগিত হয়ে যায়। এতে স্থানীয় মহলে প্রশ্ন কারা তাকে রক্ষা করছে। কেন তিনি এত বছর একই পদে অটল। অনুসন্ধানী দল অফিসে গিয়ে দেখে অফিসের ভেতরে একটি নামবিহীন লোহার গ্রিলের কক্ষ যেখানে বসেই মনির সব সিদ্ধান্ত দেন। পুরো অফিস কার্যত এই কক্ষ ঘিরেই পরিচালিত হয়। ডিলার নির্বাচন, বীজ বরাদ্দ ও স্টকে গোপন হিসেব অনুসন্ধানে উঠে এসেছে আরও গুরুতর তথ্য। অভিযোগ রয়েছে, ডিলার নির্বাচন, বীজ বরাদ্দ, স্টক ব্যবস্থাপনা, বড় চালান অনুমোদন এসব ক্ষেত্রেই চলে গোপন লেনদেন, বিশেষ সুবিধা ও প্রভাবশালী নেটওয়ার্কিং।
কয়েকজন ডিলার অভিযোগ করেন, স্বজনপ্রীতি ও অর্থনৈতি সুবিধার বিনিময়ে সুযোগ দেওয়ার ফলে মনিরের অনুগত গোষ্ঠী সবসময় সুবিধা পায়। অফিসের কাগজে স্টক নেই দেখানো হলেও স্থানীয় বাজারে পর্যাপ্ত বীজ পাওয়া যায়। পরে দেখা যায়, মনিরপন্থী কিছু পাইকার একসঙ্গে বড় পরিমাণ বীজ কিনে নিচ্ছেন। ফলে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। কৃষকেরা সময়মতো বীজ না পেয়ে হয়রানির শিকার হন। এতে একটি গোপন চক্র লাভবান হয়। বিষয়টি জানতে চাইলে উপ-সহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম মনির এ প্রতিবেদক’কে বলেন, আপনার যা ইচ্ছে করেন গিয়ে, আমি কোনো বক্তব্য দিতে পারব না। তার সংক্ষিপ্ত ও অনীহা প্রকাশক মন্তব্য আরও বহু প্রশ্নের জন্ম দেয়।
একজন সরকারি কর্মকর্তা কীভাবে এত দীর্ঘ সময় একই কর্মস্থলে থেকে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত কর্তৃত্ব কায়েম করেন তা এখন বড় প্রশ্ন। এদিকে স্থানীয় কৃষক, ডিলার ও কর্মচারীদের অভিযোগ জামালপুর বীজ বিপণন কেন্দ্র আজ একজন ব্যক্তির লোহার চাবির নিচে বন্দি। জামালপুর কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) বীজ বিপণন কেন্দ্রের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) মনিরুল ইসলাম মনির দীর্ঘদিন একই স্থানে দায়িত্ব পালন করায় তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় প্রশ্ন উঠেছে। এ অবস্থায় তারা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে দাবি জানিয়েছেন, প্রশাসনে সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে মনিরকে অবিলম্বে অন্যত্র বদলি করা হোক।
পরবর্তী পর্ব আসছে,মনিরের ঘনিষ্ঠ ডিলার চক্র, বরাদ্দ বাণিজ্যের নেপথ্যে টাকা লেনদেন, রাজনৈতিক প্রভাবে বদলি আটকে যাওয়ার মূল রহস্য এবং ১৯ বছরে কীভাবে স¤পদের পাহাড় গড়লেন সব তথ্য নিয়ে শীঘ্রই প্রকাশিত হবে পর্ব-২।















