ঢাকা ০৩:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo হাজারো মানুষের নদী পারাপারের একমাত্র মাধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো Logo সাংবাদিক আলতাফ হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া মাহফিল Logo চত্রা নদীতে গোসল করতে নেমে প্রবীণ ব্যক্তির মৃত্যু Logo গোলাপগঞ্জে ঢাকাদক্ষিণ সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মঞ্জু গ্রেপ্তার Logo শতভাগ পদোন্নতি যোগ্য পদে প্রেষণে কর্মকর্তা নিয়োগের প্রতিবাদে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডে কর্মচারীদের বিক্ষোভ Logo রামগতিতে বেড়েছে চুরি-ডাকাতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি Logo মানিকছড়িতে মাছের মিশ্রচাষ বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত Logo ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাকের চালক ও হেলাপার নিহত Logo শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া বাড়ল ১৫ শতাংশ, পাবেন দুই ধাপে Logo ফেনীর ঐতিহাসিক ঘাটলা এখন জেলা জুড়ে

ঝটিকা মিছিল, অর্থের উৎস খুঁজছে ডিএমপি

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ৯৩ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল রাজধানীতে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানে মিছিলের সংখ্যা কমলেও, দলটির নেতাকর্মীদের সক্রিয়তা পুরোপুরি থামানো যায়নি। এই পরিস্থিতিতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা তাদের নজরদারিকে মাঠপর্যায় থেকে সরিয়ে এখন দলের আর্থিক উৎসের দিকে ঘুরিয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় দলটির প্রচুর নেতাকর্মী অবস্থান করছেন, যাদের অধিকাংশই বাইরে থেকে আসা। এছাড়া, ঢাকায় থাকা নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের জন্য বিদেশে আত্মগোপনে থাকা প্রভাবশালী নেতারা নিয়মিতভাবে অর্থের জোগান দিচ্ছেন। তাই আপাতত মিছিল কিছুটা কমলেও তাদের সক্রিয়তা কমেনি। এ কারণে ঢাকার বাইরে থেকে আসা নেতাকর্মী এবং অর্থের জোগান বিষয়ে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহে কাজ করছে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আসে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশে দলটির কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এক বছরের মাথায় সেই নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ আবারও মাঠে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে ‘ঝটিকা মিছিলের’ মাধ্যমে। গত কয়েকটি ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রাজধানীর রাস্তায় হঠাৎ শত শত নেতাকর্মীর ব্যানার হাতে নামা, স্লোগান দেওয়া এবং মুহূর্তেই অদৃশ্য হয়ে যাওয়া— এসব কৌশলই এখন তাদের শক্তি প্রদর্শনের নতুন মাধ্যম। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে মিছিলের পরিমাণ কিছুটা কমে এসেছে। কিন্তু গোয়েন্দা তথ্য বলছে, ঢাকায় আত্মগোপনে থাকা বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী এখনও বিভিন্ন মাধ্যমে সক্রিয়।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিদেশে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে মাঠের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। ঢাকায় ঝটিকা মিছিলের আয়োজন এবং মাঠের উপস্থিতি টিকিয়ে রাখার জন্য তারা নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং অর্থ পাঠাচ্ছেন। মিছিল আয়োজন, ব্যানার তৈরি, পরিবহন ও ভাড়া বাবদ খরচ মেটানোর জন্য বিদেশ থেকে পাঠানো এই অর্থ ব্যবহৃত হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডিএমপি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে অর্থ লেনদেনের উৎস ও চ্যানেল শনাক্তে কাজ শুরু করেছে। কোন কোন বিদেশি অবস্থান থেকে অর্থ আসছে এবং কারা দেশে তা গ্রহণ করছে— এসব বিষয়েও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত একাধিক ঝটিকা মিছিল থেকে প্রায় ২৫০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শুধু ২৪ সেপ্টেম্বরের অভিযানে ২৪৪ জন নেতাকর্মী আটক হন। ওই সময় পুলিশ ১৪টি ককটেল ও সাতটি ব্যানার উদ্ধার করে। এরপর থেকেই রাজধানীতে টানা নজরদারি বাড়ানো হয় এবং মিছিলের সংখ্যা দৃশ্যত কমে আসে।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা যায়, মিছিলের সংখ্যা কমলেও সংগঠনের সক্রিয়তা একদম থেমে যায়নি। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছদ্মবেশে বা ছত্রভঙ্গ অবস্থায় সংগঠনের নেতাকর্মীরা সক্রিয় আছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাইরের নেতাকর্মীর সংখ্যা বেশি, যাতে স্থানীয়ভাবে সহজে শনাক্ত করা না যায়। তাই অর্থের জোগান বন্ধ করা না গেলে যেকোনো সময় আবারও মাঠে তাদের তৎপরতা দেখা যেতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঢাকার বাইরে থেকে আসা তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এখন এসব আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। যারা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, তারাই এখন ঢাকায় এসে এসব কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের মধ্যে অনেক নেতাকর্মী আছেন যারা তেমন পরিচিত নন। তাই তাদের সহজে শনাক্ত করা যাচ্ছে না এবং তাদের সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্যও কম আসছে। ফলে গ্রেপ্তারে কিছুটা সময় লাগছে।
গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা যায়, গ্রেপ্তারের অভিযান বেড়ে যাওয়ায় ঢাকার যেসব নেতাকর্মী আছেন, তারা আরও সতর্ক হয়ে গেছেন। তাই ঢাকার বাইরের নেতাকর্মীরাই এখন কর্মসূচি পালনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তবে, এর মূলে রয়েছে বিদেশ থেকে আসা টাকা। বিদেশে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের নির্দেশনা অনুযায়ী এবং তাদের দেওয়া অর্থ বিভিন্ন চ্যানেলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশি গ্রেপ্তারের ফলে কার্যক্রম কিছুটা থমকে গেলেও তাদের অর্থের উৎস এবং অর্থ আসার চ্যানেল ধ্বংস করার জন্য ইতোমধ্যে গোয়েন্দারা ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। স্থানীয় এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ঢাকায় থাকা নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি অভিযান থেকে শুরু করে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, শুরুতে ঝটিকা মিছিল নিয়ে পুলিশসহ সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিপাকে পড়েছিল। পরে যথাযথ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো এবং গ্রেপ্তারি অভিযান দ্রুত করে এসব মিছিলের সঙ্গে জড়িত অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে, অর্থের জোগান এখনও বন্ধ করা যায়নি এবং বাইরের অনেক নেতাকর্মী এখনও ঢাকায় অবস্থান করছেন। আত্মগোপনে থাকা ঢাকার নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কোন কোন উপায়ে এবং কোন কোন চ্যানেলে অর্থ আসছে, সে সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। সেই তথ্য অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে, যাতে তারা নতুনভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে এবং কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে। কারণ, তাদের কার্যক্রম এখনও নিষিদ্ধ রয়েছে— বলেন ওই কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিদেশে থাকা আওয়ামী লীগের নেতারা অনলাইনে সক্রিয়। তারা হোয়াটসঅ্যাপে কয়েকটি গ্রুপ খুলে দেশে থাকা নেতাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। বিদেশ থেকে টাকা পাঠিয়ে মাঠে মিছিলের আয়োজন করানো হচ্ছে। আমরা এসব লেনদেন ও যোগাযোগের বিষয়টি অনুসন্ধান করছি।
অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর পুলিশও আওয়ামী লীগের মিছিল ঠেকাতে বেশ তৎপর। যারা মিছিল করতে আসছে তাদেরকে শুধু গ্রেপ্তারই নয়, বরং দায়িত্বে অবহেলা করলে নিজ সদস্যদের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নিচ্ছে তারা। সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনার শেখ মোহাম্মদ সাজ্জাত আলী এক বার্তায় সব সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, যেসব এলাকায় ‘ঝটিকা মিছিল’ আয়োজনের চেষ্টা করা হবে বলে পর্যালোচনায় আসবে, সেই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও পরিদর্শকদের বিরুদ্ধে দায়বদ্ধতা আরোপ করা হবে। তার ওই ঘোষণার পর ১৯ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুর এলাকায় একটি রাজনৈতিক মিছিল হতে পারে— এমন সম্ভাব্য কারণে ওই সময় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। তারা হলেন- মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মেহেদী হাসান, মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল আলিম ও ডিউটি অফিসার এসআই মাসুদুর রহমান। অভিযোগ উঠেছে, মিছিল হতে পারে এমন সময়ে তারা খাবার খেতে ও বিশ্রাম নিতে ব্যস্ত ছিলেন। ডিএমপি কমিশনারের এই কঠোর নির্দেশনা ও পদক্ষেপগুলো পুলিশ বাহিনীর ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ঝটিকা মিছিল, অর্থের উৎস খুঁজছে ডিএমপি

আপডেট সময় :

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল রাজধানীতে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানে মিছিলের সংখ্যা কমলেও, দলটির নেতাকর্মীদের সক্রিয়তা পুরোপুরি থামানো যায়নি। এই পরিস্থিতিতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা তাদের নজরদারিকে মাঠপর্যায় থেকে সরিয়ে এখন দলের আর্থিক উৎসের দিকে ঘুরিয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় দলটির প্রচুর নেতাকর্মী অবস্থান করছেন, যাদের অধিকাংশই বাইরে থেকে আসা। এছাড়া, ঢাকায় থাকা নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের জন্য বিদেশে আত্মগোপনে থাকা প্রভাবশালী নেতারা নিয়মিতভাবে অর্থের জোগান দিচ্ছেন। তাই আপাতত মিছিল কিছুটা কমলেও তাদের সক্রিয়তা কমেনি। এ কারণে ঢাকার বাইরে থেকে আসা নেতাকর্মী এবং অর্থের জোগান বিষয়ে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহে কাজ করছে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আসে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশে দলটির কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এক বছরের মাথায় সেই নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ আবারও মাঠে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে ‘ঝটিকা মিছিলের’ মাধ্যমে। গত কয়েকটি ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রাজধানীর রাস্তায় হঠাৎ শত শত নেতাকর্মীর ব্যানার হাতে নামা, স্লোগান দেওয়া এবং মুহূর্তেই অদৃশ্য হয়ে যাওয়া— এসব কৌশলই এখন তাদের শক্তি প্রদর্শনের নতুন মাধ্যম। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে মিছিলের পরিমাণ কিছুটা কমে এসেছে। কিন্তু গোয়েন্দা তথ্য বলছে, ঢাকায় আত্মগোপনে থাকা বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী এখনও বিভিন্ন মাধ্যমে সক্রিয়।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিদেশে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে মাঠের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। ঢাকায় ঝটিকা মিছিলের আয়োজন এবং মাঠের উপস্থিতি টিকিয়ে রাখার জন্য তারা নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং অর্থ পাঠাচ্ছেন। মিছিল আয়োজন, ব্যানার তৈরি, পরিবহন ও ভাড়া বাবদ খরচ মেটানোর জন্য বিদেশ থেকে পাঠানো এই অর্থ ব্যবহৃত হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডিএমপি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে অর্থ লেনদেনের উৎস ও চ্যানেল শনাক্তে কাজ শুরু করেছে। কোন কোন বিদেশি অবস্থান থেকে অর্থ আসছে এবং কারা দেশে তা গ্রহণ করছে— এসব বিষয়েও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত একাধিক ঝটিকা মিছিল থেকে প্রায় ২৫০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শুধু ২৪ সেপ্টেম্বরের অভিযানে ২৪৪ জন নেতাকর্মী আটক হন। ওই সময় পুলিশ ১৪টি ককটেল ও সাতটি ব্যানার উদ্ধার করে। এরপর থেকেই রাজধানীতে টানা নজরদারি বাড়ানো হয় এবং মিছিলের সংখ্যা দৃশ্যত কমে আসে।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা যায়, মিছিলের সংখ্যা কমলেও সংগঠনের সক্রিয়তা একদম থেমে যায়নি। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছদ্মবেশে বা ছত্রভঙ্গ অবস্থায় সংগঠনের নেতাকর্মীরা সক্রিয় আছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাইরের নেতাকর্মীর সংখ্যা বেশি, যাতে স্থানীয়ভাবে সহজে শনাক্ত করা না যায়। তাই অর্থের জোগান বন্ধ করা না গেলে যেকোনো সময় আবারও মাঠে তাদের তৎপরতা দেখা যেতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঢাকার বাইরে থেকে আসা তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এখন এসব আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। যারা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, তারাই এখন ঢাকায় এসে এসব কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের মধ্যে অনেক নেতাকর্মী আছেন যারা তেমন পরিচিত নন। তাই তাদের সহজে শনাক্ত করা যাচ্ছে না এবং তাদের সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্যও কম আসছে। ফলে গ্রেপ্তারে কিছুটা সময় লাগছে।
গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা যায়, গ্রেপ্তারের অভিযান বেড়ে যাওয়ায় ঢাকার যেসব নেতাকর্মী আছেন, তারা আরও সতর্ক হয়ে গেছেন। তাই ঢাকার বাইরের নেতাকর্মীরাই এখন কর্মসূচি পালনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তবে, এর মূলে রয়েছে বিদেশ থেকে আসা টাকা। বিদেশে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের নির্দেশনা অনুযায়ী এবং তাদের দেওয়া অর্থ বিভিন্ন চ্যানেলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশি গ্রেপ্তারের ফলে কার্যক্রম কিছুটা থমকে গেলেও তাদের অর্থের উৎস এবং অর্থ আসার চ্যানেল ধ্বংস করার জন্য ইতোমধ্যে গোয়েন্দারা ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। স্থানীয় এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ঢাকায় থাকা নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি অভিযান থেকে শুরু করে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, শুরুতে ঝটিকা মিছিল নিয়ে পুলিশসহ সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিপাকে পড়েছিল। পরে যথাযথ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো এবং গ্রেপ্তারি অভিযান দ্রুত করে এসব মিছিলের সঙ্গে জড়িত অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে, অর্থের জোগান এখনও বন্ধ করা যায়নি এবং বাইরের অনেক নেতাকর্মী এখনও ঢাকায় অবস্থান করছেন। আত্মগোপনে থাকা ঢাকার নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কোন কোন উপায়ে এবং কোন কোন চ্যানেলে অর্থ আসছে, সে সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। সেই তথ্য অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে, যাতে তারা নতুনভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে এবং কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে। কারণ, তাদের কার্যক্রম এখনও নিষিদ্ধ রয়েছে— বলেন ওই কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিদেশে থাকা আওয়ামী লীগের নেতারা অনলাইনে সক্রিয়। তারা হোয়াটসঅ্যাপে কয়েকটি গ্রুপ খুলে দেশে থাকা নেতাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। বিদেশ থেকে টাকা পাঠিয়ে মাঠে মিছিলের আয়োজন করানো হচ্ছে। আমরা এসব লেনদেন ও যোগাযোগের বিষয়টি অনুসন্ধান করছি।
অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর পুলিশও আওয়ামী লীগের মিছিল ঠেকাতে বেশ তৎপর। যারা মিছিল করতে আসছে তাদেরকে শুধু গ্রেপ্তারই নয়, বরং দায়িত্বে অবহেলা করলে নিজ সদস্যদের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নিচ্ছে তারা। সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনার শেখ মোহাম্মদ সাজ্জাত আলী এক বার্তায় সব সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, যেসব এলাকায় ‘ঝটিকা মিছিল’ আয়োজনের চেষ্টা করা হবে বলে পর্যালোচনায় আসবে, সেই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও পরিদর্শকদের বিরুদ্ধে দায়বদ্ধতা আরোপ করা হবে। তার ওই ঘোষণার পর ১৯ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুর এলাকায় একটি রাজনৈতিক মিছিল হতে পারে— এমন সম্ভাব্য কারণে ওই সময় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। তারা হলেন- মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মেহেদী হাসান, মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল আলিম ও ডিউটি অফিসার এসআই মাসুদুর রহমান। অভিযোগ উঠেছে, মিছিল হতে পারে এমন সময়ে তারা খাবার খেতে ও বিশ্রাম নিতে ব্যস্ত ছিলেন। ডিএমপি কমিশনারের এই কঠোর নির্দেশনা ও পদক্ষেপগুলো পুলিশ বাহিনীর ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে।