ঢাকা ০৮:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo নরসিংদীতে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা Logo ‘দুর্গা পূজায় সৌজন্যে ইলিশ ভারতে পাঠানোর অনুমোদন’ Logo চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারাগার থেকে ভারতীয় নাগরিক রামদেবকে স্বাদেশে প্রত্যাবাসন Logo নিউট্রিশন ইন সিটি ইকোসিস্টেমস প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের চুক্তি স্বাক্ষর Logo বিহারীবস্তিতে দুস্কৃতিকারীর হামলায় শালিসি ব্যক্তিত্ব পূর্ব আহত Logo শিবগঞ্জের দ্বিতীয় দফায় ভাঙ্গনের কবলে পদ্মা পাড়ের মানুষ, ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ Logo কক্সবাজারে ইউনিয়ন হাসপাতালের সাথে ভোরের পাখি সংগঠনের স্বাস্থ্য সেবা চুক্তি Logo জকসু ও সম্পূরক বৃত্তিসহ জবি শাখা বাগছাসের ৫ দাবি Logo ইঞ্জিনিয়ার হারুন উর রশিদ গার্লস কলেজের শিক্ষার্থীদের নবীন বরন Logo জাতীয়তাবাদী তাঁতীদল সিলেট জেলা শাখার প্রচার মিছিল সম্পন্ন

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার আমতলী-জয়নাতলী-চাপড়ী সড়কের বেহালদশা

মনোয়ার সাদাৎ ফারুক, মধুপুর (টাঙ্গাইল)
  • আপডেট সময় : ৩১ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

‘দুঃখের কথা কারে কমু। আমি মালকোছা দিয়া বাজারে গেছি। অহন পোলারে কান্দে নিয়া স্কুলে নেই-আনি। চেয়ারম্যানের পর চেয়ারম্যান যায় আমগোর সড়কের উন্নয়ন অয়না। শুকনার সোম শান্তিতে যাই আহি। বর্ষা আইলেই কষ্টে বুকটা ফাইট্টা যায়। সাইকেল হুন্ডা ঘরে থুইয়া কাদা পারাইয়া যাওন আহন নাগে। খেতের ফসল বাজারে নিতে অটো-ভ্যানের সাথে ৩-৪ কামলায় ধাক্কান নাগে। আমগর এই দূর্ভোগ কবে কোমবো জানিনা।’ কথাগুলো বলছিলেন আশ্রাগ্রামের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম। কামরুলের মতোই এমন ভোগান্তি শিকার টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার মহিষমারা ও কুড়ালিয়া ইউনিয়নের ৩ গ্রামের বাসিন্দারা।
জানা যায়, মধুপুরের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইউনিয়ন ছিল আউশনারা ইউনিয়ন। ২০১৫ সালে এই ইউনিয়ন ভেঙ্গে মহিষমারা ও কুড়ালিয়া নামে দুইটি নতুন ইউনিয়ন গঠিত হয়। এই তিনটি ইউনিয়নের প্রধান অর্থকরি ফসল হলো আনারস। এছাড়াও কাঁঠাল, কলা, কচু, পেঁপেঁ, বিভিন্ন প্রকার সবজি ও ধান আবাদ হয় ওই ইউনিয়ন গুলোতে। আগের দিনে ওই এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বের হতে একসেট কাপড় বাজারের ব্যাগে নিয়ে বের হতে হতো। মধুপুর এসে নদী বা নলকূপে হাতমুখ ধুয়ে বা গোসল করে নতুন কাপড় পড়ে কর্মের প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে যেতে হতো। বিগত সময়গুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। তারপরও কিছুু কিছু সড়ক এখনো উন্নয়নের অপেক্ষায় রয়েছে।
তেমনি এক সড়কের নাম আমতলী-জয়নাতলী-চাপড়ী সড়ক। নবগঠিত মহিষমারা ও কুড়ালিয়া ইউনিয়নকে বিভাজনকরে চলে যাওয়া ওই সড়কটি কখনো রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আবার কখনও চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্বে উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে। এই সড়কের আমতলী থেকে ছালাম মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার চলাচলের জন্য একেবারেই অনুপযোগি। এই সড়ক দিয়েই ধলপুর হাইস্কুল, আশ্রা ফাযিল মাদরাসা, আলহাজ কিন্ডার গার্টেন একাডেমি, আশ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুইটি নূরানী মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আসাযাওয়া করে থাকে। এলাকার উৎপাদিত ফসল হাটে-বাজারে আনানেওয়া করতে হয়। স্থানীয়রা জানান, যখন আউশনারা ইউনিয়ন ছিল তখন বরাদ্দের অপ্রতূলতা দেখিয়ে অবহেলায় ফেলে রাখতো সড়কটি। ইউনিয়ন বিভাজিত হওয়ার পর তৎকালীন মহিষমারা ও কুড়ালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদ্বয়ের দ্বন্দ্বে উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছেন ওই এলাকাবাসী। নির্বাচন এলে দফায় দফায় প্রতিশ্রুতি পেলেও উন্নয়নের স্পর্শ লাগেনি সড়কটিতে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হাকিম জানান, আমরা দফায় দফায় আমতলী সড়কের উন্নয়নেয়র জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে দৌড়ঝাপ করেছি। কিন্তু ফল হয়নি। আশাপাশের হাইস্কুল, মাদরাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুইটি নূরানী মাদরাসার শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। সড়কটির নাজুক অবস্থার কারণে অনেকেই মানুষের বাড়ির আঙ্গিনা, খেতের আইল দিয়ে চলাচল করে।
অটো রিক্সা চালক জরিপ হোসেন জানান, আমতলী থিকা ছালাম মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত আধামাইল সড়ক বেওয়ারিশ। কেউ এইডার দায়িত্ব নেয়না। যাতায়াতের যে ভোগান্তি তা বইলা শেষ করা যাবোনা। সাইকেল হুন্ডা ঘরে থুইয়া কাঁদা পারাইয়া যাওন আহন নাগে। শুকনার সোম সমস্যা নাই। বর্ষা আইলে ভোগান্তির শেষ নাই। আনারসসহ বিভিন্ন পণ্য আনা-নেওয়া করতে ৩/৪জন সাথে নিয়া অটোরিক্সা ঠেইলা ধাক্কাইয়া নেওন নাগে। আধামাইল সড়ক পার অইতে দম বাইর অইয়া যায়।
ধলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল হাকিম বলেন, আমতলী থেকে ছালাম মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত উন্নয়ন করাটা খুবই জরুরী। শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর ভোগান্তি অবর্ণনীয়। দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
এব্যাপারে মহিষমারা ইউনিয়ন পরিষদরে প্রশাসক মো. ইমরান হোসেন বলেন, আমতলী থেকে ছালাম মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাজীব আল রানা বলেন, আমি সরেজমিনে গিয়ে কর্দমাক্ত ওই সড়ক পর্যবেক্ষণ করে এসেছি। খুব দ্রুতই এই সড়ক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে এবং সাময়িক ভোগান্তি দূর করার জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার আমতলী-জয়নাতলী-চাপড়ী সড়কের বেহালদশা

আপডেট সময় :

‘দুঃখের কথা কারে কমু। আমি মালকোছা দিয়া বাজারে গেছি। অহন পোলারে কান্দে নিয়া স্কুলে নেই-আনি। চেয়ারম্যানের পর চেয়ারম্যান যায় আমগোর সড়কের উন্নয়ন অয়না। শুকনার সোম শান্তিতে যাই আহি। বর্ষা আইলেই কষ্টে বুকটা ফাইট্টা যায়। সাইকেল হুন্ডা ঘরে থুইয়া কাদা পারাইয়া যাওন আহন নাগে। খেতের ফসল বাজারে নিতে অটো-ভ্যানের সাথে ৩-৪ কামলায় ধাক্কান নাগে। আমগর এই দূর্ভোগ কবে কোমবো জানিনা।’ কথাগুলো বলছিলেন আশ্রাগ্রামের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম। কামরুলের মতোই এমন ভোগান্তি শিকার টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার মহিষমারা ও কুড়ালিয়া ইউনিয়নের ৩ গ্রামের বাসিন্দারা।
জানা যায়, মধুপুরের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইউনিয়ন ছিল আউশনারা ইউনিয়ন। ২০১৫ সালে এই ইউনিয়ন ভেঙ্গে মহিষমারা ও কুড়ালিয়া নামে দুইটি নতুন ইউনিয়ন গঠিত হয়। এই তিনটি ইউনিয়নের প্রধান অর্থকরি ফসল হলো আনারস। এছাড়াও কাঁঠাল, কলা, কচু, পেঁপেঁ, বিভিন্ন প্রকার সবজি ও ধান আবাদ হয় ওই ইউনিয়ন গুলোতে। আগের দিনে ওই এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বের হতে একসেট কাপড় বাজারের ব্যাগে নিয়ে বের হতে হতো। মধুপুর এসে নদী বা নলকূপে হাতমুখ ধুয়ে বা গোসল করে নতুন কাপড় পড়ে কর্মের প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে যেতে হতো। বিগত সময়গুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। তারপরও কিছুু কিছু সড়ক এখনো উন্নয়নের অপেক্ষায় রয়েছে।
তেমনি এক সড়কের নাম আমতলী-জয়নাতলী-চাপড়ী সড়ক। নবগঠিত মহিষমারা ও কুড়ালিয়া ইউনিয়নকে বিভাজনকরে চলে যাওয়া ওই সড়কটি কখনো রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আবার কখনও চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্বে উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে। এই সড়কের আমতলী থেকে ছালাম মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার চলাচলের জন্য একেবারেই অনুপযোগি। এই সড়ক দিয়েই ধলপুর হাইস্কুল, আশ্রা ফাযিল মাদরাসা, আলহাজ কিন্ডার গার্টেন একাডেমি, আশ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুইটি নূরানী মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আসাযাওয়া করে থাকে। এলাকার উৎপাদিত ফসল হাটে-বাজারে আনানেওয়া করতে হয়। স্থানীয়রা জানান, যখন আউশনারা ইউনিয়ন ছিল তখন বরাদ্দের অপ্রতূলতা দেখিয়ে অবহেলায় ফেলে রাখতো সড়কটি। ইউনিয়ন বিভাজিত হওয়ার পর তৎকালীন মহিষমারা ও কুড়ালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদ্বয়ের দ্বন্দ্বে উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছেন ওই এলাকাবাসী। নির্বাচন এলে দফায় দফায় প্রতিশ্রুতি পেলেও উন্নয়নের স্পর্শ লাগেনি সড়কটিতে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হাকিম জানান, আমরা দফায় দফায় আমতলী সড়কের উন্নয়নেয়র জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে দৌড়ঝাপ করেছি। কিন্তু ফল হয়নি। আশাপাশের হাইস্কুল, মাদরাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুইটি নূরানী মাদরাসার শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। সড়কটির নাজুক অবস্থার কারণে অনেকেই মানুষের বাড়ির আঙ্গিনা, খেতের আইল দিয়ে চলাচল করে।
অটো রিক্সা চালক জরিপ হোসেন জানান, আমতলী থিকা ছালাম মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত আধামাইল সড়ক বেওয়ারিশ। কেউ এইডার দায়িত্ব নেয়না। যাতায়াতের যে ভোগান্তি তা বইলা শেষ করা যাবোনা। সাইকেল হুন্ডা ঘরে থুইয়া কাঁদা পারাইয়া যাওন আহন নাগে। শুকনার সোম সমস্যা নাই। বর্ষা আইলে ভোগান্তির শেষ নাই। আনারসসহ বিভিন্ন পণ্য আনা-নেওয়া করতে ৩/৪জন সাথে নিয়া অটোরিক্সা ঠেইলা ধাক্কাইয়া নেওন নাগে। আধামাইল সড়ক পার অইতে দম বাইর অইয়া যায়।
ধলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল হাকিম বলেন, আমতলী থেকে ছালাম মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত উন্নয়ন করাটা খুবই জরুরী। শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর ভোগান্তি অবর্ণনীয়। দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
এব্যাপারে মহিষমারা ইউনিয়ন পরিষদরে প্রশাসক মো. ইমরান হোসেন বলেন, আমতলী থেকে ছালাম মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাজীব আল রানা বলেন, আমি সরেজমিনে গিয়ে কর্দমাক্ত ওই সড়ক পর্যবেক্ষণ করে এসেছি। খুব দ্রুতই এই সড়ক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন হবে এবং সাময়িক ভোগান্তি দূর করার জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।