ডাকসুতে ভোট আজ

- আপডেট সময় : ৯ বার পড়া হয়েছে
দীর্ঘ ছয় বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু। চলবে বেলা ৪ টা পর্যন্ত। ইতোমধ্যে নির্বাচন উপলক্ষে সব কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। নির্বাচন ঘিরে কোনও শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন ডিএমপি’র ডিসি অপারেশনস মোল্লা আজাদ হোসেন। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় নির্বাচন ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। এদিকে সোমবার রাত সাড়ে আটটা থেকে ১০ সেপ্টেম্বর ভোর ছয়টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না বহিরাগতরা। বৈধ পরিচয় পত্র দেখিয়েই প্রবেশ করতে পারবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী- শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গতকাল সোমবার থেকেই ক্যাম্পাসের ৮টি প্রবেশপথে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট।
এবারের নির্বাচনে ডাকসুর ২৮টি পদের বিপরীতে ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী ৬২ জন। সহসভাপতি (ভিপি) পদে ৪৫, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ৬২ নারী প্রার্থীর মধ্যে ভিপি পদে ৫, জিএস পদে ১, এজিএস পদে ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এবারের নির্বাচনে ভোটার ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ২০ হাজার ৮৭৩ এবং ছাত্রী ১৮ হাজার ৯০২ জন। নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, ৮টি কেন্দ্রের ৮১০টি বুথে ভোটগ্রহণ হবে। সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত (৮ ঘণ্টা) ভোটগ্রহণের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। বিকেল ৪টার মধ্যে ভোটকেন্দ্রের লাইনে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীরা ভোট দিতে পারবেন।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে ব্যালট হবে ৫ পৃষ্ঠার, আর হল সংসদে থাকবে এক পৃষ্ঠার ব্যালট। উভয় নির্বাচনে ব্যালট দিতে হবে অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) শিটে। ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৭১ জন প্রার্থী। অন্যদিকে ১৮টি হলে ২৩৪টি পদের বিপরীতে রয়েছেন ১ হাজার ৩৫ জন প্রার্থী। সব মিলিয়ে একজন ভোটারকে দিতে হবে ৪১টি ভোট।
ভোট প্রদানের নিয়মকানুন ইতোমধ্যেই ভিডিওচিত্র আকারে প্রকাশ করেছে চিফ রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি নতুন ভোটারদের সচেতন করতে বিভিন্ন অনুষদ ও ইনস্টিটিউটে সভার আয়োজন করেছে প্রশাসন।
ভোটের দিনে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা লাইব্রেরি কার্ড বা পে-ইন স্লিপ দিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করবেন। অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য থাকবে হল আইডি কার্ড বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত পরিচয়পত্র। পরিচয় যাচাইয়ের পর ভোটার তালিকায় স্বাক্ষর দিয়ে, আঙুলে অমোচনীয় কালি মেখে, ব্যালট নিয়ে প্রবেশ করবেন গোপন কক্ষে। সেখানে মোবাইল ফোন বা কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নেওয়া যাবে না। পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশে ঘরে ক্রস চিহ্ন দিয়ে ব্যালট জমা দিতে হবে নির্ধারিত বাক্সে।
প্রথমবারের মতো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য চালু হচ্ছে ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোটদানের সুযোগ। সাতটি হল থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থীর তালিকা পেয়েছে নির্বাচন কমিশন, যারা এবার ব্রেইল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন। ব্রেইল ব্যালট হবে একটি পাতলা বুকলেটের মতো, যেখানে ডাকসুর জন্য থাকবে ৩০ পৃষ্ঠা এবং সূচিপত্র। এতে প্রতিটি পদের অবস্থান সহজে খুঁজে পাওয়া যাবে। হল সংসদের জন্য থাকবে তিন থেকে চার পৃষ্ঠার ব্রেইল ব্যালট। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কিন্তু ব্রেইল পড়তে অক্ষম শিক্ষার্থীরা আগের নিয়মে অন্যের সহযোগিতা নিয়ে ভোট দিতে পারবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক শারমীন কবীর জানান, যাঁরা ব্রেইল পড়তে পারেন, তাঁরা এভাবে ভোট দেবেন। আর যাঁরা পারেন না, তাঁরা পোলিং অফিসারের সহায়তায় ভোট দিতে পারবেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, বিগত সময়ে তাঁরা তেমন কোনো নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। তাই এবারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচন তাঁদের জীবনে প্রথম কোনো ভোটাধিকার প্রয়োগের উপলক্ষ হতে যাচ্ছে। এ জন্য তাঁরা খুবই উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত। শিক্ষার্থীরা একটু সুষ্ঠু পরিবেশে তাঁদের জীবনের প্রথম ভোট প্রয়োগের প্রত্যাশা করছেন। ভোটদানের মাধ্যমে তাঁরা যোগ্য নেতৃত্ব বাছাই করতে চাইছেন।
শিক্ষার্থীরা আরো জানান, এবারের ডাকসু নির্বাচন অন্য সব নির্বাচনের চেয়ে আলাদা হতে যাচ্ছে। কেননা এবার একচ্ছত্র আধিপত্য ধারণ করা কোনো ছাত্রসংগঠনই ক্যাম্পাসে নেই। তাই সব ছাত্রসংগঠন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সমান প্রচার-প্রচারণার সুযোগ পাচ্ছেন এবং শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। এতে করে শিক্ষার্থীরাও তাঁদের ইশতেহার সম্পর্কে এবং নির্বাচিত হলে প্রার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কী কী কাজ করবেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারছেন। এতে করে শিক্ষার্থীদের বাছাই করতে সুবিধা হচ্ছে যে তাঁরা কাকে ভোট দেবেন। প্রার্থীদের ইশতেহারগুলো শুনে নিজেরাই সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন। আর এ জন্য তাঁদের মধ্যে আলাদা একটি উৎসাহ কাজ করছে।