তরুণদের মাঝেই ভরসা খুঁজছে বিএনপি

- আপডেট সময় : ১৬০ বার পড়া হয়েছে
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবার বিশেষভাবে ভরসা রাখছে তরুণ ভোটারদের ওপর। বিশেষ করে যারা প্রথমবারের মতো ভোট দিতে যাচ্ছেন, তাদের আকৃষ্ট করতে নানা কৌশল হাতে নিয়েছে দলটি। বিএনপির নেতারা বলছেন, এই তরুণ প্রজন্ম দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের প্রধান চালিকাশক্তি হতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের মোট ভোটারের মধ্যে প্রায় দুই কোটির বেশি তরুণ ভোটার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তরুণ ভোটাররা আগামী নির্বাচনে নির্ণায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে নতুন প্রজন্মকে রাজনীতির মূলধারায় সম্পৃক্ত করা। তারা দেশের ভবিষ্যৎ, তাদের হাতেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব। তরুণরা পরিবর্তন চায়, আমরা সেই পরিবর্তনের অঙ্গীকার করছি।
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি তরুণ ভোটারদের কাছে টানতে কয়েকটি বিষয়কে প্রাধান্য দিচ্ছে-কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি, শিক্ষার মানোন্নয়ন, প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ, উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে সহায়তা। এছাড়া তরুণদের আগ্রহের বিষয়-ডিজিটাল প্রচারণা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়তা এবং সাংস্কৃতিক আঙ্গিকেও বিএনপি নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা হচ্ছে একটি কর্মমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থা। আওয়ামী লীগ তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের বিপুল সুযোগ তৈরি করবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তরুণ ভোটাররা প্রথাগত রাজনীতির বাইরে গিয়ে বাস্তব সমস্যা ও সমাধানের দিকে বেশি মনোযোগী। তারা বলেন, যদি বিএনপি তরুণদের জন্য বাস্তবায়নযোগ্য নীতি ঘোষণা করতে পারে, তাহলে তারা উল্লেখযোগ্য ভোট টানতে সক্ষম হবে। তবে তরুণরা শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, কাজের নিশ্চয়তা দেখতে চায়। বিশ্লেষক ফরিদুল ইসলাম বলেন, তরুণ ভোটাররা বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আস্থা হারিয়েছে। তাদের অনেকেই নিরপেক্ষ থাকতে চায়। বিএনপিকে বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য ধারাবাহিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিএনপির বিভিন্ন জেলা ও মহানগর কমিটি তরুণদের সম্পৃক্ত করতে নানা কর্মসূচি নিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্র সংগঠন সক্রিয় করার পাশাপাশি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ক্যাম্পেইন জোরদার করা হচ্ছে।একজন জেলা পর্যায়ের নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা প্রত্যেক উপজেলায় তরুণ ভোটারদের সঙ্গে বৈঠক করছি। তাদের চাহিদা বুঝে সে অনুযায়ী বার্তা তৈরি করা হচ্ছে।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থেকেও আওয়ামী লীগ তরুণদের জন্য প্রত্যাশিত কর্মসংস্থান ও শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। উচ্চশিক্ষা, বিদেশে গমন ও চাকরির সুযোগ সীমিত হওয়ায় তরুণরা হতাশ। বিএনপি এই হতাশাকে পরিবর্তনের ইন্ধন হিসেবে কাজে লাগাতে চাইছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীম খান বলেন, আমরা শুধু স্লোগান চাই না, আমরা কাজ দেখতে চাই। যে দল কর্মসংস্থান ও সুশাসনের নিশ্চয়তা দেবে, আমরা তাদের পক্ষে ভোট দেব। অন্যদিকে প্রথমবারের ভোটার আয়েশা আক্তা বলেন, ভবিষ্যতের স্বপ্ন পূরণ করতে হলে রাজনীতিতে স্বচ্ছতা দরকার। তরুণদের জন্য যেই দল পরিকল্পনা দেবে, আমরা তাদের সমর্থন করব। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা মনে করছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের ভূমিকা যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে, এ নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। বিএনপি এখন সেই তরুণ জনগোষ্ঠীকে সঙ্গে নিতেই বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত তরুণরা কোন দিকে ঝুঁকবে, তা-ই হয়তো নির্ধারণ করবে দেশের আগামী রাজনৈতিক সমীকরণ।