তিস্তা প্রকল্পে চীন-ভারত আগ্রহী, লাভজনক প্রস্তাবই নেবেন শেখ হাসিনা
- আপডেট সময় : ০৫:৪৫:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০২৪ ১৭১ বার পড়া হয়েছে
তিস্তা প্রকল্পে চীন-ভারত দু’দেশই আগ্রহী। তবে লাভজনক প্রস্তাবই নেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ভারত ও চীন দুই দেশই প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে যে প্রস্তাব বেশি গ্রহণযোগ্য, লাভজনক হবে, সেটিই বাংলাদেশ নেবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (২৫ জুন) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ভারত সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা জানান।
তিস্তা প্রকল্প নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, চীন প্রস্তাব দিয়েছে, ভারতও প্রস্তাব দিয়েছে। অবশ্যই আমরা বিবেচনা করব। যে প্রস্তাব আমার দেশের মানুষের কল্যাণে আসবে, সেটিই নেব। সবকিছু বিবেচনা করেই তো নিতে হবে। সেক্ষেত্রে ভারত যেমন বলেছে, তারা করতে চায়, তাদের রিডার গ্রুপ পাঠাবে, অবশ্যই আমরা যৌথভাবে তা দেখব।
তিনি বলেন, চীনও ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছে, ভারতও করবে। আমাদের কাছে যেটি সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য, লাভজনক হবে, আমরা সেটিই নেব। আর যেহেতু ভারতের সঙ্গে আমাদের তিস্তার পানির দাবিটা অনেক দিনের, ভারত যদি আমাদের তিস্তা প্রকল্পটা করে দেয়, তাহলে আমাদের সব সমস্যারই সমাধান হয়ে গেল। এটা আমাদের জন্য বেশি সহজ হলো না? আপনারা নিজেরাই বিবেচনা করে দেখবেন। তবে ভারত প্রকল্পটি করে দিলে সব সমস্যারই সমাধান হয়ে যাবে বলেও তিনি জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের সঙ্গে যদি আমরা তিস্তা প্রকল্পটা করি, আমার দেশের এই পানি নিয়ে আর প্রতিদিন প্যাঁ প্যাঁ করতে হবে না, আমরা সে সুবিধা পাব। আমি তো কোনো সমস্যা দেখি না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী (নরেন্দ্র মোদী) আমাকে দাওয়াত দিলেন তার শপথ অনুষ্ঠানে যেতে, আমি গেলাম। এরপর তিনি রাষ্ট্রীয় সফরের দাওয়াত দিলেন, আমি রাষ্ট্রীয় সফরও করে এলাম। চীন আমাকে দাওয়াত দিয়েছে, আমি চীনে যাব। আমি যাব না কেন? আমার বাংলাদেশ সার্বভৌম দেশ। আমি সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়ে চলি। আমার দেশের মানুষের জন্য কতটা কী করতে পারি, সেটাই আমার লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের যে পররাষ্ট্রনীতি দিয়ে গেছেন, ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’, এ নীতি মেনেই আমি টানা চতুর্থবার এবং এ নিয়ে পঞ্চমবার রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। এ নীতি মেনেই কিন্তু চলছি।
শেখ হাসিনা বলেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখার ফলে যে সুযোগ এসেছে, দেশের উন্নয়ন করার জন্য, আমার কাছে তা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মানুষের কল্যাণে এবং মানুষের উন্নয়নে, দেশের উন্নয়নের জন্য, যার সঙ্গে যতটা বন্ধুত্ব করা দরকার, ততটা আমি করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ভারত আমাদের চরম দুঃসময়ের বন্ধু। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তারা কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রক্ত দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। সুতরাং তাদের সঙ্গে সম্পর্ক সবসময় আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আবার চীনের যে উন্নয়ন, চীন যেভাবে নিজেদের উন্নত করেছে, তা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। এসব চিন্তায় রেখেই কিন্তু আমরা সম্পর্ক বজায় রেখে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, কেউ বলল, আমরা এদিকে ঝুঁকলাম, না ওদিকে ঝুঁকলাম, এসব কিন্তু আমলে নিইনি। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমাকে অনেকে জিজ্ঞেস করেন, এমনকি বিদেশি অনেকে বলে, আপনি কীভাবে ব্যালেন্স করেন। ব্যালেন্স কোনো বিষয় নয়। তাদের দুই দেশের মধ্যে কী সম্পর্ক, সেটা তাদের বিষয়। আমি কেন নাক গলাব? আমি বন্ধুত্ব রেখে আমার দেশের কল্যাণে কাজ করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিস্তা নিয়ে প্রস্তাব আছে। একটা কথা আমি বলতে চাই, যেখান থেকে যে প্রস্তাবই আসুক না কেন, সে প্রস্তাব কতটা আমার দেশের জন্য প্রযোজ্য, যে টাকা আমি লোন করব, তা শোধ করার মতো সক্ষমতা আমার আছে কি না, আর যে প্রকল্পে আমি দেব, তা সম্পন্ন হওয়ার পর রিটার্ন কী আসবে, আমার দেশের মানুষের কল্যাণে কতটা কাজে লাগবে, তা বিবেচনা করেই আমরা প্রতিটা কাজ করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫৪টি নদীর পানি বণ্টনে ভারতের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের সমস্যা রয়ে গেছে। এখানে শুধু ভারত নয়, ওদিকে আবার চীনেরও কিন্তু পানি তুলে নেওয়ার ঘটনা আছে। নদীগুলো নিয়ে কিন্তু নানা ধরনের দ্বন্দ্ব আছে, সমস্যাও আছে, আবার সমাধানের পথও আছে।