দখল আর দূষণে হারিয়ে যাচ্ছে নওগাঁর ছোট যমুনা নদী

- আপডেট সময় : ১২:৪৯:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫ ১০০ বার পড়া হয়েছে
নওগাঁ শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদী শহরকে দুইভাগ করলেও বর্তমান এর অবস্থা শোচনীয়। নদীর উভয় তীরে প্রভাবশালীরা দখল করে বানিয়েছে বাড়ি ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আর স্থানীয়রা ফেলছেন ময়লা আবর্জনা। দিনাজপুরের ইছামতি নদী পাবর্তীপুর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নে ছোট যমুনা নাম ধারণ করে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের শুটকিগাছা নামক স্থানে আত্রাই নদীতে পতিত হয়েছে। ছোট যমুনার দুই পাশে অপরিকল্পিত ভাবে যত্রতত্র চালকল গড়ে ওঠায় এসবের ছাই ও বর্জ্য নদীর পানিতে মিশে এর পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। পানির রং কালো হয়ে গেছে। নদীর পানি শুকিয়ে গেলেও রেহাই নাই। তখনও বয়লারের বর্জ্য নদীতে ফেলে দিয়ে নদীর তলদেশ ভরাট করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এই নদী একদিন জনপদে মিলিয়ে যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা আফজাল হোসেন প্রামাণিক বাসস’কে বলেন, ‘আগে নদীতে গোসল করতাম। নদীর পানি দিয়ে ভাত রান্না করতাম। আর এখন গোসল তো দূরের কথা নদীর ধারে গেলে দুর্গন্ধে দাঁড়ানো যায় না। একদিকে দখল অন্যদিক দূষণে ভরা। যেন মরার উপর খারার ঘা।’
শহরের বাসিন্দা জানে আলম ও মুনকিল আলী বাসস’কে জানান, সকালে ঘুম থেকে উঠলেই দেখা যাবে নদীর ধারে ময়লার ভাগাড়। সকালে মহিলারা আর সন্ধ্যার পর ছেলেরা বাড়ি ও দোকানের ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলেন। এতে পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি রোগ ছড়াচ্ছে। যেন দেখার কেউ নেই। নদী দখল আর দূষণ থেকে রক্ষার জন্য তারা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
নদী পাড়ে বসবাসকারী পার-নওগাঁর উকিল চন্দ্র দেবনাথ বাসস’কে বলেন, ‘ছোট যমুনা নদীতে এক সময় ঢেউয়ের তালে তালে অসংখ্য পাল তোলা নৌকা চলাচল করেছে। নদীর পানিতে ধান, গম, সবজি চাষ, বাড়ির কাজ, কাপড় ধোয়াসহ সকল কাজ করেছি। অথচ গত কয়েক বছর ধরে বছরের অর্ধেক সময় পানি থাকে না। এতে নদী তীরবর্তী মানুষকে খুবই অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।’
নওগাঁ সদর উপজেলার সুলতানপুর মহল্লার জেলে পাড়ার মৎস্যজীবী ধীরেন্দ্রনাথ ও কাইয়ুম উদ্দিন বাসস’কে জানান, বছরের অর্ধেক সময় নদীতে পানি না থাকায় তারা মাছ ধরতে পারেন না। এতে অনেক মৎস্যজীবীর পথে বসতে হয়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাতে হয়। তাই বাধ্য হয়ে ইতোমধ্যে বেশকিছু মৎস্যজীবী তাদের পূর্বপুরুষদের আদি পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন।
নওগাঁর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদের সভাপতি এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সদস্য অ্যাডভোকেট ডিএম আব্দুল বারী বাসস’কে বলেন, ‘ছোট যমুনার দুই তীরে অবৈধভাবে দখল করে স্থাপনা নির্মাণ ও ময়লা ফেলা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একদিন মানচিত্র থেকে ছোট যমুনা হারিয়ে যাবে।’
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল বাসস’কে বলেন, ছোট যমুনা নদীর অবৈধ দখলদারদের তালিকা ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। জয়পুরহাটের সুগারমিলসহ শহরবাসীর বাসা-বাড়ির ময়লা নদীতে ফেলার জন্য পানি কালো হচ্ছে। দূষণ প্রতিরোধে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বাসস’কে বলেন, ছোট যমুনা নদীতে ৫৮টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি পরিবেশ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বয়ে কাজ করা হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য মন্ত্রণালয়ে বাজেট পাঠানো হয়েছে। দ্রুত এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি দূষণের বিষয়ে মাইকিং করা হচ্ছে।
নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী ছোট যমুনা নদীটিকে দূষণ আর দখলের হাত থেকে রক্ষা করার জোর দাবি জানান শহরবাসী।