ঢাকা ০৯:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সাংবাদিকদের সাথে ডা. শাহ আলম তালুকদারের মতবিনিময় Logo ডামুড্যায় সুধীজনের সাথে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভা Logo দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দুঃস্থ পরিবারের মাঝে নগরকান্দায় ত্রাণ সামগ্রী ঢেউটিন ও চেক বিতরণ Logo বান্দরবান সরকারি কলেজে জুলাই শহীদ দিবস উদযাপন Logo জামালপুর গোয়েন্দা শাখা ডিবি-২ পুলিশ কর্তৃক জুয়া মাদক সহ আটক-৬ Logo আলোচিত শিশু আছিয়ার পরিবারকে গাভী, বাছুর ও পাকা গোয়ালঘর উপহার জামায়াতের আমিরের Logo তানোরে বৃদ্ধার চুরি যাওয়া ১১ লক্ষ টাকা উদ্ধার পুলিশের Logo ফেনীতে এনজিওর পাওনা আদায়ে কাবুলি ওয়ালার ভুমিকায়! অগ্যতা নিরুপায়ী আত্বহননে গৃহবধূ Logo সরিষাবাড়ীতে “কবি কাজী নজরুল ইসলাম গোল্ডেন অ্যাওয়ার্ড ২০২৫” পেলেন নাজমুল ইসলাম Logo দাগনভূঞায় সড়ক সংস্কার কাজে বাধা চাঁদাবাজির অভিযোগে ঠিকাদারের জিডি

দগ্ধ শিশুদের আর্তনাদ আর স্বজনদের আহাজারি

হালিম মোহাম্মদ
  • আপডেট সময় : ৬৮ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭ জন শিশু ঢাকা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
চিকিৎসকদের তথ্যানুযায়ী রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭ জন শিশু ঢাকা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। এছাড়া, আরও ১২ জন শিক্ষার্থী অতিমাত্রায় দগ্ধ অবস্থায় ভর্তি রয়েছে। গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডাক্তার শাওন বিন রহমান এই উদ্বেগজনক তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বার্ন ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, দগ্ধ শিক্ষার্থীদের সবার বয়স ৯ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে আবিরের ৯০ ভাগ এবং আনিজন ও মেহেরিন চৌধুরির শরীরের ১০০ ভাগ দগ্ধ হয়েছে, যা তাদের অবস্থাকে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক করে তুলেছে। মাসুম ও আয়েন ৬০ ভাগ, আরিয়ান ৫৫ ভাগ, মকিন ৬২ ভাগ, মাহতাব ৪০ ভাগসহ অন্যদের শরীরেরও উল্লেখযোগ্য অংশ দগ্ধ হয়েছে। চিকিৎসকদের তথ্যানুযায়ী আইসিইউতে থাকা ৭ শিশু হলো নাফিস, শামীম, শায়ান ইউসুফ, মাহিয়া, আফনান, ফাইয়াজ ও সামিয়া। তাদের অবস্থাও গুরুতর বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এছাড়া, আরও ১২ জন শিক্ষার্থী অতিমাত্রায় দগ্ধ অবস্থায় ভর্তি রয়েছে। বিকেল সাড়ে ৫টায় ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডাক্তার শাওন বিন রহমান এই উদ্বেগজনক তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বার্ন ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, দগ্ধ শিক্ষার্থীদের সবার বয়স ৯ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে আবিরের ৯০ ভাগ এবং আনিজন ও মেহেরিন চৌধুরির শরীরের ১০০ ভাগ দগ্ধ হয়েছে, যা তাদের অবস্থাকে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক করে তুলেছে। মাসুম ও আয়েন ৬০ ভাগ, আরিয়ান ৫৫ ভাগ, মকিন ৬২ ভাগ, মাহতাব ৪০ ভাগসহ অন্যদের শরীরেরও উল্লেখযোগ্য অংশ দগ্ধ হয়েছে।
জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ইনটেনসিফ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ৭ শিশু মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। উত্তরা মাইল স্টোন স্কুল এন্ড কলেজে যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এই ৭ শিক্ষার্থী গুরুতর ভাবে দদগ্ধ হয়। তাদের শরীরের সিংহভাগ ঝলসে গেছে। চিকিৎসকের মতে, তাদেও ৬০ থেকে ৮৫ ভাগ শরীর ঝলসে গেছে। তারা জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়াই করে চলছেন। তাদের বেঁচে থাকার অবস্থা ক্ষীণ। আল্লহর উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহতদের জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনা হয়। তাদের খবর শুনে ছুটে এসেছেন স্বজনেরা। তাঁদের চোখে মুখে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। কারও কারও মাঝে আছে স্বজন হারানোর বেদনা ।
বার্ন ইনষ্টিটিউটে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় হৃদয়বিদারক দৃশ্য। কেউ সন্তান বাঁচাতে ওষুধের দোকানে দৌড়াচ্ছেন। কেউ হাসপাতালের মেঝেতে বসে সন্তানের জীবন ভিক্ষা চাইছেন আল্লাহর কাছে। কেউ স্বজনদের এক অপরকে ধরে বিলাপ করছেন। কেউ আহাজারি করছেন। কেউ দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমড়ে কাঁদছেন। প্রতিদিনের মতো করে অন্যান্য দিনের মতো সোমবার সকালে স্কুলে পাঠিয়েছিলেন প্রিয় সন্তানকে। স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে সেই সন্তানের করুণ পরিণতি মেনে নিতে পারছেন না স্বজনেরা। তাঁদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠছে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট।
মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চারতলায় উঠে দেখলাম, সিঁড়ির কাছে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি মেঝেতে বসে কাঁদছেন। সেখানে একটু দাঁড়াতে পাশের এক ব্যক্তি বললেন, ‘ভাই, ডিস্টার্ব (বিরক্ত) কইরেন না, প্লিজ। তার ছেলে আইসিইউতে। অবস্থা ভালো না। পাশেই ১০-১২ জন স্বজন আইসিইউর (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) মুল ফটকে বাইরে অপেক্ষা করছেন। দগ্ধ শিশু শিক্ষার্থীর মা মেঝেতে বসে কাঁদছিলেন। একজন ফোনে কথা বলছিলেন, আর কাঁদছিলেন। দাঁড়িয়ে থাকা অন্যরা হতবিহ্বল, কারও মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। কিছু দুরে করিডোরে এক নারী মেঝেতে বসে বিলাপ করছিলেন। পাশে তিন-চারজন নারী তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে আইসিইউ থেকে ডাক আসে ওই নারীর, তিনি হুড়মুড় করে ছুটে যান। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আইসিইউর সামনে থাকা আহতদের স্বজনরা কথা বলেনি।
ভবনের পাঁচতলায় প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অনেক আহত শিক্ষার্থীর এখানে চিকিৎসা চলছে। আহত শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই শিশু।
বিকেলে পাচতলার ৫২০ নম্বর কক্ষের সামনে মেঝেতে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেহরিনের স্কুলড্রেস ধরে কাঁদছিলেন ফাহাদ নিয়ন। পাশে একজন নারী নিয়নকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নিজেও কাঁদছিলেন। নিয়ন বলছিলেন, ‘ও (মেহরিন) খুব নিষ্পাপ। ও সারা দিন পড়াশোনা করে। ওর দুই হাত ও মুখ পুড়ে গেছে। এর পাশেই ছেলেকে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন ইয়াসমিন আক্তার। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে তাঁর পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়ে নুরে জান্নাতের কপাল পুড়ে গেছে, মুখ ঝলসে গেছে, মাথা ফেটে গেছে। পুড়েছে পিঠও। ইয়াসমিন কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আমার মেয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেছে। মেয়ে বলে যে মা, আমার সব জ্বলে। আমাকে ঠান্ডা পানি দেও।
ইয়াসমিনের পাশে মেঝেতে বসে বিড়বিড় করে একা একা কথা বলছিলেন আর কাঁদছিলেন নাসিমা বেগম। তিনি বিলাপ করছিলেন, এমন দশা ক্যামনে হইছেরে। কত মায়ের বুক খালি হইছেরে। আমার রোহান যন্ত্রণায় কাতরাইতাছেরে। নাসিমা বেগমের সপ্তম শ্রেণিপড়ুয়া ছেলে রবিউল হাসান রোহানের শরীর পুড়ে গেছে।
স্বজনদের আহাজারি যেন থামছিলই না। এক বেদনাবিদুর পরিবেশ। চিকিৎসকদের কেউ ডাক দেবেন, এ অপেক্ষায় ৫২০ নম্বর কক্ষের সামনে থেকে স্বজনেরা সরতে চাইছিলেন না। ভিড়ের কারণে নতুন কোনো আহত ব্যক্তিকে ৫২০ নম্বর কক্ষে ঢোকাতে বেগ পেতে হচ্ছিল। স্বেচ্ছাসেবকেরা জটলা সরিয়ে যাতায়াতের রাস্তাও তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন। এই কক্ষ থেকে বের হয়ে কিছুক্ষণ পর পর চিকিৎসকেরা ভিড় না করার জন্য অনুরোধ করছিলেন। আর সতর্ক করে বলছিলেন, এত লোক ভিড় করলে চিকিৎসা দেওয়া কঠিন। তা ছাড়া রোগীর ইনফেকশন (সংক্রমণ) হতে পারে।
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় আহতদের জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনা হয়। একসময় পাঁচতলা থেকে নিচে নেমে দেখলাম প্রচ- ভিড়। জরুরি বিভাগের সামনে মানুষ আর মানুষ। পুলিশ, র‌্যাব, ফায়ার সার্ভিস, আনসার সদস্যরা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। কেউ রক্ত দেওয়ার জন্য দৌড়াচ্ছিলেন, কেউ রক্ত দিতে অপেক্ষা করছিলেন। অনেকেই রক্ত সংগ্রহের জন্য প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আবার স্বজনেরা আহত ব্যক্তিদের খোঁজে ছুটছিলেন।
দুপুরের পর থেকেই সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা হাসপাতালে আসছিলেন আহতদের খোঁজ নিতে। সব মিলিয়ে হাসপাতালে চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তবে সন্ধ্যার আগে আগে প্রয়োজন ছাড়া কাউকে হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল না। পরিস্থিতি সামাল দিতে একপর্যায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও তৎপর হতে দেখা যায়।
এদিকে আইএসপিআর বলেছেন, রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আজ (গতকাল) মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোট ৩১ জন নিহত ও ১৬৫ জন আহত হয়েছেন। নিহত ৩১ জনের মধ্যে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১০, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ , সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১৬ , লুবনা জেনারেল হাসপাতালে ২ , উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ১ ও ইউনাইটেড হাসপাতালে ১ জন রয়েছেন। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই আগুন ধরে যায় স্কুল ভবনে। তখন দগ্ধ শিশুদের আর্তনাদ, সন্তানের খোঁজে পাগলপ্রায় মা-বাবা ও স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ। আইএসপিআরের তালিকা অনুযায়ী এ ঘটনায় মোট আহত হয়েছেন ১৬৫ জন। তাঁদের মধ্যে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ৮, বার্ন ইনস্টিটিউটে ৪৬ , ঢাকা মেডিকেলে ৩ , সিএমএইচে ২৮ , লুবনা জেনারেল হাসপাতালে ১৩ , উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ৬০ , উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১ , শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ , ইউনাইটেড হাসপাতালে ২ এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কলেজের শিক্ষক মাসুকা বেগমের লাশ নিয়ে যাচ্ছে স্বজনরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

দগ্ধ শিশুদের আর্তনাদ আর স্বজনদের আহাজারি

আপডেট সময় :

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭ জন শিশু ঢাকা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
চিকিৎসকদের তথ্যানুযায়ী রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭ জন শিশু ঢাকা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। এছাড়া, আরও ১২ জন শিক্ষার্থী অতিমাত্রায় দগ্ধ অবস্থায় ভর্তি রয়েছে। গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডাক্তার শাওন বিন রহমান এই উদ্বেগজনক তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বার্ন ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, দগ্ধ শিক্ষার্থীদের সবার বয়স ৯ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে আবিরের ৯০ ভাগ এবং আনিজন ও মেহেরিন চৌধুরির শরীরের ১০০ ভাগ দগ্ধ হয়েছে, যা তাদের অবস্থাকে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক করে তুলেছে। মাসুম ও আয়েন ৬০ ভাগ, আরিয়ান ৫৫ ভাগ, মকিন ৬২ ভাগ, মাহতাব ৪০ ভাগসহ অন্যদের শরীরেরও উল্লেখযোগ্য অংশ দগ্ধ হয়েছে। চিকিৎসকদের তথ্যানুযায়ী আইসিইউতে থাকা ৭ শিশু হলো নাফিস, শামীম, শায়ান ইউসুফ, মাহিয়া, আফনান, ফাইয়াজ ও সামিয়া। তাদের অবস্থাও গুরুতর বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এছাড়া, আরও ১২ জন শিক্ষার্থী অতিমাত্রায় দগ্ধ অবস্থায় ভর্তি রয়েছে। বিকেল সাড়ে ৫টায় ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডাক্তার শাওন বিন রহমান এই উদ্বেগজনক তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বার্ন ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, দগ্ধ শিক্ষার্থীদের সবার বয়স ৯ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে আবিরের ৯০ ভাগ এবং আনিজন ও মেহেরিন চৌধুরির শরীরের ১০০ ভাগ দগ্ধ হয়েছে, যা তাদের অবস্থাকে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক করে তুলেছে। মাসুম ও আয়েন ৬০ ভাগ, আরিয়ান ৫৫ ভাগ, মকিন ৬২ ভাগ, মাহতাব ৪০ ভাগসহ অন্যদের শরীরেরও উল্লেখযোগ্য অংশ দগ্ধ হয়েছে।
জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ইনটেনসিফ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ৭ শিশু মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। উত্তরা মাইল স্টোন স্কুল এন্ড কলেজে যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এই ৭ শিক্ষার্থী গুরুতর ভাবে দদগ্ধ হয়। তাদের শরীরের সিংহভাগ ঝলসে গেছে। চিকিৎসকের মতে, তাদেও ৬০ থেকে ৮৫ ভাগ শরীর ঝলসে গেছে। তারা জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়াই করে চলছেন। তাদের বেঁচে থাকার অবস্থা ক্ষীণ। আল্লহর উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহতদের জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনা হয়। তাদের খবর শুনে ছুটে এসেছেন স্বজনেরা। তাঁদের চোখে মুখে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। কারও কারও মাঝে আছে স্বজন হারানোর বেদনা ।
বার্ন ইনষ্টিটিউটে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় হৃদয়বিদারক দৃশ্য। কেউ সন্তান বাঁচাতে ওষুধের দোকানে দৌড়াচ্ছেন। কেউ হাসপাতালের মেঝেতে বসে সন্তানের জীবন ভিক্ষা চাইছেন আল্লাহর কাছে। কেউ স্বজনদের এক অপরকে ধরে বিলাপ করছেন। কেউ আহাজারি করছেন। কেউ দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমড়ে কাঁদছেন। প্রতিদিনের মতো করে অন্যান্য দিনের মতো সোমবার সকালে স্কুলে পাঠিয়েছিলেন প্রিয় সন্তানকে। স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে সেই সন্তানের করুণ পরিণতি মেনে নিতে পারছেন না স্বজনেরা। তাঁদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠছে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট।
মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চারতলায় উঠে দেখলাম, সিঁড়ির কাছে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি মেঝেতে বসে কাঁদছেন। সেখানে একটু দাঁড়াতে পাশের এক ব্যক্তি বললেন, ‘ভাই, ডিস্টার্ব (বিরক্ত) কইরেন না, প্লিজ। তার ছেলে আইসিইউতে। অবস্থা ভালো না। পাশেই ১০-১২ জন স্বজন আইসিইউর (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) মুল ফটকে বাইরে অপেক্ষা করছেন। দগ্ধ শিশু শিক্ষার্থীর মা মেঝেতে বসে কাঁদছিলেন। একজন ফোনে কথা বলছিলেন, আর কাঁদছিলেন। দাঁড়িয়ে থাকা অন্যরা হতবিহ্বল, কারও মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। কিছু দুরে করিডোরে এক নারী মেঝেতে বসে বিলাপ করছিলেন। পাশে তিন-চারজন নারী তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে আইসিইউ থেকে ডাক আসে ওই নারীর, তিনি হুড়মুড় করে ছুটে যান। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আইসিইউর সামনে থাকা আহতদের স্বজনরা কথা বলেনি।
ভবনের পাঁচতলায় প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অনেক আহত শিক্ষার্থীর এখানে চিকিৎসা চলছে। আহত শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই শিশু।
বিকেলে পাচতলার ৫২০ নম্বর কক্ষের সামনে মেঝেতে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেহরিনের স্কুলড্রেস ধরে কাঁদছিলেন ফাহাদ নিয়ন। পাশে একজন নারী নিয়নকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নিজেও কাঁদছিলেন। নিয়ন বলছিলেন, ‘ও (মেহরিন) খুব নিষ্পাপ। ও সারা দিন পড়াশোনা করে। ওর দুই হাত ও মুখ পুড়ে গেছে। এর পাশেই ছেলেকে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন ইয়াসমিন আক্তার। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে তাঁর পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়ে নুরে জান্নাতের কপাল পুড়ে গেছে, মুখ ঝলসে গেছে, মাথা ফেটে গেছে। পুড়েছে পিঠও। ইয়াসমিন কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আমার মেয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেছে। মেয়ে বলে যে মা, আমার সব জ্বলে। আমাকে ঠান্ডা পানি দেও।
ইয়াসমিনের পাশে মেঝেতে বসে বিড়বিড় করে একা একা কথা বলছিলেন আর কাঁদছিলেন নাসিমা বেগম। তিনি বিলাপ করছিলেন, এমন দশা ক্যামনে হইছেরে। কত মায়ের বুক খালি হইছেরে। আমার রোহান যন্ত্রণায় কাতরাইতাছেরে। নাসিমা বেগমের সপ্তম শ্রেণিপড়ুয়া ছেলে রবিউল হাসান রোহানের শরীর পুড়ে গেছে।
স্বজনদের আহাজারি যেন থামছিলই না। এক বেদনাবিদুর পরিবেশ। চিকিৎসকদের কেউ ডাক দেবেন, এ অপেক্ষায় ৫২০ নম্বর কক্ষের সামনে থেকে স্বজনেরা সরতে চাইছিলেন না। ভিড়ের কারণে নতুন কোনো আহত ব্যক্তিকে ৫২০ নম্বর কক্ষে ঢোকাতে বেগ পেতে হচ্ছিল। স্বেচ্ছাসেবকেরা জটলা সরিয়ে যাতায়াতের রাস্তাও তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন। এই কক্ষ থেকে বের হয়ে কিছুক্ষণ পর পর চিকিৎসকেরা ভিড় না করার জন্য অনুরোধ করছিলেন। আর সতর্ক করে বলছিলেন, এত লোক ভিড় করলে চিকিৎসা দেওয়া কঠিন। তা ছাড়া রোগীর ইনফেকশন (সংক্রমণ) হতে পারে।
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় আহতদের জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনা হয়। একসময় পাঁচতলা থেকে নিচে নেমে দেখলাম প্রচ- ভিড়। জরুরি বিভাগের সামনে মানুষ আর মানুষ। পুলিশ, র‌্যাব, ফায়ার সার্ভিস, আনসার সদস্যরা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। কেউ রক্ত দেওয়ার জন্য দৌড়াচ্ছিলেন, কেউ রক্ত দিতে অপেক্ষা করছিলেন। অনেকেই রক্ত সংগ্রহের জন্য প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আবার স্বজনেরা আহত ব্যক্তিদের খোঁজে ছুটছিলেন।
দুপুরের পর থেকেই সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা হাসপাতালে আসছিলেন আহতদের খোঁজ নিতে। সব মিলিয়ে হাসপাতালে চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তবে সন্ধ্যার আগে আগে প্রয়োজন ছাড়া কাউকে হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল না। পরিস্থিতি সামাল দিতে একপর্যায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও তৎপর হতে দেখা যায়।
এদিকে আইএসপিআর বলেছেন, রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আজ (গতকাল) মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোট ৩১ জন নিহত ও ১৬৫ জন আহত হয়েছেন। নিহত ৩১ জনের মধ্যে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১০, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ , সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১৬ , লুবনা জেনারেল হাসপাতালে ২ , উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ১ ও ইউনাইটেড হাসপাতালে ১ জন রয়েছেন। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই আগুন ধরে যায় স্কুল ভবনে। তখন দগ্ধ শিশুদের আর্তনাদ, সন্তানের খোঁজে পাগলপ্রায় মা-বাবা ও স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ। আইএসপিআরের তালিকা অনুযায়ী এ ঘটনায় মোট আহত হয়েছেন ১৬৫ জন। তাঁদের মধ্যে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ৮, বার্ন ইনস্টিটিউটে ৪৬ , ঢাকা মেডিকেলে ৩ , সিএমএইচে ২৮ , লুবনা জেনারেল হাসপাতালে ১৩ , উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ৬০ , উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১ , শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ , ইউনাইটেড হাসপাতালে ২ এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কলেজের শিক্ষক মাসুকা বেগমের লাশ নিয়ে যাচ্ছে স্বজনরা।