দাগনভূঞা বাজারে ব্যবসায়ীদের ‘ফুটপাত বাণিজ্য’

- আপডেট সময় : ৩৬ বার পড়া হয়েছে
দাগনভূঞা বাজারে ফুটপাত ও সড়ক দখল করে হকারদের পসরা বসানো এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। শুধু হকার নয়, বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান দখল করে রেখেছে সড়কের পাশে থাকা ফুটপাত। ফলে রাস্তায় চলতে গিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়েন পথচারীরা। একারনে প্রতিদিন তীব্র যানজট আর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
ফুটপাত দখলমুক্ত করতে প্রশাসন একাধিকবার ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালালেও পরে আবার দখল করে নেয় হকাররা।
সরেজমিনে দাগনভূঞা বাজার ঘুরে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে বিভি-ন্ন পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী তাদের দোকানের সামনের ফুটপাত দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় ভাড়া দেন হকারদের কাছে। ফলে রাস্তায় চলাচলে নেমেছে দুর্বিসহ অবস্থা। পৌর শহরের ফাজিলের ঘাট রোড়, চৌধুরী হাট রোড় জিরো পয়েন্ট থেকে পর্যন্ত পুরো সড়কের দুই পাশ দখল করে গড়ে উঠেছে ফলের দোকান, কাঁচাবাজার, মাছের বাজার, ডাব বিক্রেতা, আখ মাড়াই মেশিনসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা। ফুটপাত ও গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা জবরদখলের কারণে শুধু পথচারীই নয়, যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচলও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট, বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি। দাগনভূঞা বাসস্ট্যান্ডের কয়েকটি অংশজুড়ে প্রতিনিয়ত দাঁড়িয়ে থাকে বাস, সিএনজি ও অটোরিক্সা বিশেষ করে জিরো পয়েন্ট এলাকাটি সর্বদা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দখলে থাকে, যা যানজটকে আরও প্রকট করে তুলছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্রতিদিন হকারদের কাছে ২শ-৩শ টাকা ভাড়ায় ফুটপাত ছেড়ে দেয়। ফলে হকাররাও নির্ভয়ে বসে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের লোক দেখানো অভিযান হয়, কিন্তু স্থায়ীভাবে কিছুই হয় না।
দাগনভূঞা সরকারি ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী আবরার জাওয়াদ জানান, ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সুযোগ নেই। কয়েকদিন আগে স্কুলে যাওয়ার সময় চৌধুরী হাট একটি বেপরোয়া ইজিবাইক আমার ব্যাগ ছিঁড়ে দেয় ও আমাকে টেনে ফেলে দেয়। স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুল শিক্ষিকা আকলিমা আক্তার বলেন, প্রতিদিন যানজটের কারণে আমি হটতে বাধ্য হই। কিন্তু এখন পায়ে হেটেও স্বস্তি নেই। ফুটপাত দখল আর যানজট থেকে মুক্তি চাই। ফনল বিক্রেতা আব্দুস সালাম জানান, আমরা গরীব মানুষ, ফুটপাতে বসি তাই আমাদের তাড়ানো হয়। সবাই গরীবের পেটে লাথি মারতে পারে। অথচ যেসব দোকানদার আমাদের কাছ থেকে দৈনিক ১শ, ২শ, ৩শ টাকা নেয়, তাদের বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নেয় না।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (নিসচা ) শাখার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক সোহেল বলেন, দাগনভূঞা বাজারের ফুটপাত ও সড়ক দখলজনিত সমস্যা শুধু যানজট বা ভোগান্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি বড় ধরনের সড়ক নিরাপত্তা ঝুঁকি। পথচারীদের ফুটপাত না পেয়ে মূল সড়ক ব্যবহার করতে হচ্ছে। যার ফলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত এই ঝুঁকির মুখে পড়ছে। আমরা বারবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি, কিন্তু দৃশ্যমান পরিবর্তন খুবই সীমিত। নিরাপদ সড়কের জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো ফুটপাত হকারমুক্ত করা।
ব্যাংক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফুটপাত দখলের কারণেই যানজট সৃষ্টি হয়। প্রশাসনের কার্যকর কোনও উদ্যোগ নেই। মাঝে মাঝে লোক দেখানো অভিযান হয়, কিন্তু সেটা টিকে না। দাগনভূঞা বাজার ব্যাবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন লিটন বলেন, উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ফুটপাত দখলমুক্ত করার বিষয়টি শতবার জানিয়েছি। কিন্তু কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান হকারদের ভয় ধরাতে পারছে না। হকারদের পাশাপাশি দোকানীদের জরিমানা করতে হবে এবং জরিমানার টাকা বাড়ালে তবেই কিছু হতে পারে। আমরা চাই, দাগনভূঞা বাজারে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত রাখা হোক। পাশাপাশি বিকল্প স্থানে হকারদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনাও থাকা জরুরি, যাতে মানবিকতা বজায় থাকে এবং সড়কও নিরাপদ হয়।
এ বিষয়ে দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কম্বকর্তা ও দাগনভূঞা পৌর প্রশাসক। শাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি কয়েকদিন হল এ উপজেলায় যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার সৃষ্টিগোচর হয়েছে এবং এটি আমি গুরুত্ব সহকারে দেখব। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।